সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে পর্ব ৩
গল্পঃ কুল-বড়ই (পর্ব : ৩)
যেহেতু লোকমানের স্ত্রী একাই বাড়ির সমস্ত গৃহাস্থালি কাজ সামলাতো,বাড়ির কাজে এদিক সেদিক যেতে হত তাই মেয়ের উপর বাড়তি নজর দিতে পারতোনা।তাই বাচ্চার কমরে একটি পিতলের ঘুঙুর লাগিয়ে দেয় যাতে সে যেখানে যায় ঝুনুরঝুনুর শব্দ হয়।এখন আর লামিয়াকে খুঁজে পেতে সমস্যা হয় না।এভাবে দিন কাটতে থাকে লামিয়াও হাঁটতে শিখে যায়।বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায়।ওর সমবয়সি শিশুদের সাথে সারাদিন খেলা করে বাড়ির উঠোনে বাগানে|একদিন সন্ধ্যার আগে লামিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।তন্য তন্য করে খোঁজা হল বাড়ির উঠোন,আঙ্গিনা, বাগান,পুকুর পাড়,সবখানে।
কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না লামিয়াকে।অনেক খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে লামিয়ার মৃত দেহ ভেসে উঠলো বাড়ির পুকুরে।কান্নার রোল পড়ে গেল।মুহূর্তে পুরো বাড়ি নেমে এলো শোকের মাতম।আশপাশের এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া।লোকমানের স্ত্রী তখন ছিলেন পাঁচ কি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।মেয়ে হারানোর শোকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিল।পরদিন সকালে গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তা করে তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হল।সে হাসপাতালে থাকার কারনে প্রাণপ্রিয় সন্তানের মুখখানা শেষ বারের মত দেখতে পায়নি।পরিশেষে সবার অতি আদরের লামিয়ার মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হয় বাড়ির বাগানের এক কোণে।
তাদের বাড়িটা ছোট বড় গাছে ভরা।দিনের বেলা যতটা না সুন্দর দেখায় রাতের বেলায় তার চেয়ে বেশি দেখায় ভয়ংকর।একদিন পর তার স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়।তার স্ত্রী সবসময় কান্নাকাটি করে বাগানের কোণে গিয়ে মেয়ের কবরের পাশে বসে থাকে এভাবে মাসখানিক যাওয়ার পর মেয়ে হারানোর শোক কিছুটা ভুলে যায়।একদিন মধ্যরাত লোকমানের স্ত্রীর হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায়।
তার কানে ঝুনুরঝুনুর ঝুনুরঝুনুর শব্দ ভেসে আসে।মনে হয় বাড়ির আঙ্গিনায় কেউ ঘুঙুর পরে হাঁটছে।যেমনটি তাদের মেয়ে লামিয়া হাঁটতো।সে ভালো করে শব্দটা শোনার চেষ্টা করে,একবার উঠোনের এপাশে আবার ওপাশে যায়।তার সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে।সে ভাবে একবার দরজা খুলে দেখবে কিনা।একসময় তার স্বামীকে জাগিয়ে দিয়ে বলল,এই তুমি শুনছো? লোকমান হাত দিয়ে চোখ দুটো কচলাতে কচলাতে বলল,কি হল কি শুনবো?তার স্ত্রী বলল,আমাদের লামিয়া যেভাবে হাঁটতো আর ঝুনুরঝুনুর শব্দ হত আমি ঠিক সেই শব্দ শুনতে পেলাম উঠোনে।একবার এদিকে যাচ্ছে আরেকবার ওদিকে যাচ্ছে।তারা দুজনে শব্দটা শুনার জন্য কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো কিন্তু আর কোনো শব্দ শুনতে পেলো না।লোকমান বলল,মেয়ের শোক তুমি এখনো ভুলতে পারনি, তাই হয়তো এমন শব্দ পাচ্ছো।তার স্ত্রীও বলল,কি জানি,হতে পারে ভুল শুনেছি।
পরের দিন গভীর রাতে আবারও লোকমানের স্ত্রীর ঘুম ভেঙ্গে যায় ঘুঙুরের শব্দে।এবার সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে উঠোনের ঐ প্রান্ত থেকে যদি একটি বাচ্চা তাদের ঘরের দিকে হেটে আসলে আর তার কমরে কোনো ঘুঙুর লাগানো থাকে তাহলে যেমনটি শব্দ হওয়ার কথা ঠিক তেমনটি হচ্ছে।সে ভাবলো জানালা খুলে দেখবে স্বামীকে কিছু না বলে।পরক্ষনে মনে হল যদি সে তাদের লামিয়াকেই দেখতে পায়,তাহলে সে কি করবে!
চলবে…
#কুল_বড়ই