সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে পর্ব ৪
গল্পঃ কুল-বড়ই (পর্ব : ৪)
কিন্তু এত রাতে উঠোনে কে হবে কে এমন রাত করে ঘুঙুর বাজাবে?এ তো বাচ্চা মানুষের হাঁটার ছন্দ।তাহলে কোথা থেকে কোথাকার বাচ্চা আমাদের বাড়ি আসবে তাও আবার এত নিশি রাত?!এ অসম্ভব।আমার মনে হচ্ছে আমার বুকের ধন লামিয়াই।ঠিক লামিয়া যে ছন্দে হাঁটে দৌড়ায় ঠিক ঠিক তেমনি শব্দ আসছে।লোকমানের স্ত্রী কিছুতেই মনকে বুঝাতে পারছেনা,এ শব্দ এ ছন্দ অন্য কারো অন্য কিছুর।ধীরে ধীরে তার ভেতর তোলপাড় হতে শুরু করল।তার বুকের মানিক হয়তো তার কাছেই ফিরে আসছে।কিন্তু এটা কি করে সম্ভব?!
মানুষ মৃত্যুর পর আলমে বরজখে চলে যায়।মানুষ মারা যাওয়ার পর থেকে কিয়ামত সঙ্ঘটিত হওয়ার মধ্যবর্তী যে সময় তাই আলমে বরজখ।মৃত্যুর পর কাউকে যদি মাটি খুঁড়ে কবর দেয়া হয়,সমুদ্রে ফেলে দেয়া হয়,বাঘ বা হিংস্র প্রাণীও যদি খেয়ে ফেলে সেটাই তার জন্য আলমে বরজখ।সেখানেই তার উপর আজাব কিংবা নেয়ামতের ধারাবাহিতা শুরু হয়ে যায়।এ মহান সৃষ্টিকর্তার এমন এক বিস্ময়কর ব্যবস্থাপনা,যাতে মানুষের বিবেক বুদ্ধি পৌঁছাতে অক্ষম।মৃত্যুর পর কারো কারো রুহ থাকে কবরে,কারো থাকে জমজম কূপে।কারো আসমান জমিনের মধ্যবর্তী কোথাও।কারো থাকে প্রথম আসমানে,কারো দ্বিতীয়,কারো আবার তৃতীয়,চতুর্থ,পঞ্চম,ষষ্ঠ ও সপ্তম আসমানে।আবার কারো আলা ইল্লিয়্যিনে।এমনটাই বলা আছে মুসলিমদের বিভিন্ন হাদিসে।
কিন্তু লোকমানের স্ত্রী ভাবছে আল্লাহর কুদরতেই হয়তো লামিয়া ফিরে আসছে তার মায়ের কাছে।কিন্তু ভয়ও করছে কি না কি!?যদি লামিয়া না হয়ে অন্য অশুভ কোনো কিছু হয় তখন কি হবে?!ভাবছে সাহস করে দরজা খুলে একবার দেখবে।
আবার এটাও ভাবলো সাহস করে দরজা খুলে যদি সত্যিই কিছুনা কিছু দেখে ফেলে তাহলে হয়তো তার গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে।
নিজের গর্ভের অনাগত সন্তানের কথা ভেবে অবশেষে শান্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিল দরজা খোলার দুঃসাহস করা ঠিক হবেনা।নিজেকে সামলিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে আর ভাবছে এ তার মায়ের অবুঝ আকুল মনের আবেগী ভাবনা ছাড়া আর কিছুই না।
এভাবে তার স্ত্রী প্রায় রাতে প্রিয় সন্তান লামিয়ার কমরের ঘুঙুরের ঝুনুরঝুনুর শব্দ শুনতে পায়।একটু ভয় লাগলেও তার কাছে শব্দটা শোনা একটা নেশার মত পরিনত হয়।তার স্বামীকেও আর কিছু বলে না।তখনো তাদের এলাকায় বিদ্যুত পৌছায়নি।তাদের বাথরুমটা বাগানের একপাশে ছিল।প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হলে সে তার স্বামীকে নিয়ে যেত কিন্তু কোনো দিন কোনো কিছু দেখেনি।একদিন রাতে লোকমানের বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হয়।বাগান দিয়ে ঢুকতে কুল গাছটা চোখে পড়ে যায় সে দেখতে পায় ঐ কুল গাছে একটা ছায়া বাচ্চা মানুষের মত তাদের উঠোন দিয়ে দৌড়ে পুকুর পাড়ে চলে যায়।
লোকমান বাথরুমের কাজ শেরে ঘরে এসে আর স্ত্রীকে কিছু বলেনি অগত্যা স্ত্রী যদি ভয় পায়। তার ছোট ভাই লিয়াকতও একদিন রাতে ভাত খাওয়ার সময় বলল, সেও নাকি রাতে উঠোনে লামিয়ার হাটার শব্দের মত ঝুনুরঝুনুর শব্দ শুনতে পায়।মনে হয় যেন লামিয়া দৌড়িয়ে উঠোন মাড়িয়ে ঘরের কাছে এসে থামে।জানালা খুলে দেখে কিছু নেই।লোকমানের ভিতরটা একটা মোছড় দিয়ে উঠে!আমিও শুনি লামিয়ার হাঁটার শব্দ,আমার বউও শুনে,আজ ছোট ভাই বলছে সেও শুনে!তাহলে কি সত্যি লামিয়া নিশি রাতে এ বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়!?কিন্তু কেন?কি চায় সে?এত দিনে তো লামিয়ার কোমল দেহখানী পঁচে গলে মাটির সাথে মিশে যাওয়ার কথা!না না এ হতে পারেনা|এ অসম্ভব!লোকমানের নিরবতা দেখে তার ছোট ভাই নিরবতা ভেঙে জিজ্ঞেস করল, কিছু বলছো না যে ভাইয়া?লোকমান ছোট ভাইয়ের কথায় পাত্তা না দিয়ে তারা ভয় পাবে বিধায় বলে,আরে ওসব কিছুনা এসব তোদের মনের ভুল।
চলবে…
#ImranKhanRatan
#কুল_বড়ই