সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে পর্ব ৭
গল্পঃ কুল-বড়ই ( পর্ব : ৭ )
সুন্দর ফুটফুটে কন্যা সন্তানের বাবা হলেন লোকমান! সবার চোখে মুখে আনন্দ! ভাগ্যের কি পরিহাস একটি সন্তান বিদায় নিতে না নিতেই আরেকটি সন্তানের আগমন ঘটলো! তাদের সবার এতটা আনন্দ হচ্ছিল যে তারা তাদের প্রিয় সন্তান লামিয়ার কথা ভুলেই গেল! বাচ্চাটিকে ঘিরে সবার অবস্থান সবাই আদর করে কোলে নিয়ে আদর করে, কথা বলে, হাসে যার যেভাবে খুশি! আজ এমন আনন্দের দিনে লোকমানের পরিবারের সবাই হাসপাতালে অবস্থান করছিল। তাদের বাড়ি পুরোপরি খালি তাই ছোট ভাই লিয়াকত কে বাড়ি যেতে বলে লোকমান! হাসপাতাল থেকে বাড়ি যেতে সাইকেলে আধ ঘন্টা সময় লাগে। তার ছোট ভাই যখন হাসপাতালে থেকে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে হাসপাতালের গেটে যায় এক পাগল তার গতিপথ আগলে দাড়ায়। পাগল বলে, তোর কাছে বিড়ি আছে? একটা বিড়ি দে বিড়ি খাব। ছোট ভাই লিয়াকত জবাবে বলে, না আমি বিড়ি সিগারেট খাইনা। পাগল হাসতে হাসতে বলে, তুইনা বেটা মানুষ বিড়ি খাসনা কেন? তাইলে মিষ্টি দে মিষ্টি খাব।
লিয়াকত জিজ্ঞেস করে কিসের মিষ্টি দিব আপনাকে? পাগল বলে, কেন তুই চাচ্চু হলি মিষ্টি খাওয়াবি না?
এ বলে পাগল আবার হাসতে হাসতে চলে যায়।
লোকমানের ছোট ভাই লিয়াকতও সাইকেলে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আর মনে মনে ভাবে পাগলে কিনা বলে। আবার এটাও ভেবেও অবাক্ হয় পাগল কি করে জানলো আমি যে চাচ্চু হয়েছি!?
অনেক্ষন থেকে লিয়াকত সাইকেল চালায় কিন্তু কিছুতেই পথ ফুরায় না। হঠাৎ খেয়াল করে দেখে সে বাড়ির পথে না গিয়ে ভিন্ন পথে চলে গেছে। আবার সে সাইকেল ঘুরিয়ে বাড়ির পথে রওনা করে। পথিমধ্যে আবার সেই পাগলের সাথে দেখা! পাগল লিয়াকতকে বলে, কিরে ভুল পথে চলে গেলি? সাবধানে বাড়ি যা।
লিয়াকত এবার কিঞ্চিত্ ভয় পেয়ে যায়! তবুও সাহস করে জিজ্ঞেস করে, কে আপনি? পাগল জবাবে বলে, আমি পাগল। যাহ যাহ তাড়াতাড়ি বাড়ি যা। এই বলে পাগল উল্টা পথ ধরে হাটতে শুরু করে।
লিয়াকত দ্রুত সাইকেল চালাতে থাকে। কিছুটা ভয় ভয় লাগে তার! ভাবছে আরে পাগল কি করে জানে আমি ভুল পথে চলে গেছি আর কি করেইবা জানে আমি বাড়ি যাচ্ছি!? পাগলটাকে না হাসপাতালের গেটে দেখলাম! আমি সাইকেলে এখানে আসতে না আসতে সে এত তাড়াতাড়ি কি করে এত দূর চলে আসলো!? সে তো পায়ে হেঁটে আসলো!
লিয়াকত অনেক্ষন যাবত্ সাইকেল চালিয়েই যায় চালিয়েই যায় তবুও রাস্তা যেন আর শেষ হয়না! দ্বিতীয়বার পাগলের সাথে দেখা হওয়ার পরও প্রায় এক ঘন্টা সাইকেল চালায় তবুও সে বাড়ির রাস্তা খোজে পায়না। সাইকেল থেকে নেমে সে কিছুক্ষন জিরিয়ে নেয়। মনে মনে ভাবে এতক্ষন তো লাগার কথা না বাড়ি পৌঁছাতে। আজ কি হল!? ছোটবেলা থেকেই সাইকেল চালায় সে কখনো তো এমনটা ঘটেনি! পাগলটার কথাবার্তাও কেমন রহস্যজনক মনে হল! সবই আজব লাগে তার!
আবার সে সাইকেলে উঠে পেডেল মারতে থাকে। যেতে যেতে ভাবতে থাকে, ভাবীর বাচ্চা হল দেখতে ঠিক লামিয়ার মতই! আল্লাহ্ কি না পারেন! যেমনি পারেন পূর্ণকে অপূর্ণ করতে, তেমনি পারেন আবার অপূর্ণ কে পূর্ণ করে দিতে!
এমনটা ভাবতে ভাবতে অবশেষে সে বাড়ির আঙ্গিনায় চলে আসে। লিয়াকত যখন বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে তখন সে দূর থেকে দেখতে পায় তাদের ঘরের দরজার সামনে একটি ছোট্ট মেয়ে দাড়িয়ে আছে! সে জানতে চায়, কে তুমি? এখানে কি কর? মেয়েটি কোনো জবাব দেয়না! লিয়াকত মেয়েটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, এই মেয়ে কথা বলছনা কেন? কে তুমি?
এবার মেয়েটি তার দিকে ঘুরে দাড়ায়! সে স্পষ্ট দেখতে পায় মেয়েটি আর কেউ নয়, ও তাদের লামিয়া! ওর মুখটা পুকুর থেকে তোলার সময় যেমন ফেকাসে ছিল ঠিক তেমনি! পরনে ছোট একটা নীল রঙের ফ্রক হাটু পর্যন্ত! মৃত্যুর সময় তার পরনে যে ফ্রকটি ছিল সেটি! চুলগুলো ভেজা এলোমেলো! গায়ের ফ্রকটাও ভেজা! চুয়েচুয়ে পানি ঝরছে! হাটু পা বেয়ে পানি ঝরে তার চারিপাশের মাটি অনেকাংশে ভিজে আছে! চোখ দুটো লাল! কান্না করছে সে! ঠোট দুটো কালো ফুলে আছে! লামিয়া লিয়াকতের দিকে হাত বাড়িয়ে বলছে কোলে নিতে!!
চলবে….
#Imran_Khan_Ratan
#কুল_বড়ই