সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে পর্ব ৯
গল্পঃ কুল-বড়ই ( পর্ব : ৯ এবং শেষ পর্ব )
লোকমানের স্ত্রী লাবিবার পাশে লামিয়াকে এক ঝলক দেখেই চমকে উঠে! সাথে সাথে তার হাত থেকে গোসল শেষে বদলানো ভেজা নিংড়ানো কাপড়টি ফসকে মাটিতে পড়ে যায়! সে মাথা নিচু করে মাটি থেকে কাপড়টি তুলে আবার লাবিবার দিকে তাকায় সে আসলে এটা কি দেখলো ভালো করে দেখার জন্য! এবার সে দেখে বিছানায় লাবিবার পাশ থেকে তাদের পোষা বিড়ালটি লাফিয়ে মাটিতে নেমে সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়! সে ভাবে তাহলে কি আমি ভুল দেখেছি!? নাকি এ আমার দৃষ্টিভ্রম!? সে পুরো ঘর ভালো করে দেখে। না কোথাও লামিয়ার অস্তিত্ব নেই। সে লাবিবার পাশে এসে বসে। দেখে গোসল করতে যাওয়ার সময় যেভাবে ঘুম পাড়িয়ে গিয়েছিল সেভাবেই লাবিবা ঘুমাচ্ছে। এবার সে ভাবে নাকি এটা তার মনের ভুল!?
সন্ধ্যায় স্বামী বাড়ি আসার পর সে আজকের এই ঘটনার কথা বলে। তার স্বামী বলে, এ তোমার চোখের ভুল। সারাক্ষন মেয়ের কথা ভাবো তো তাই হয়তো সারাদিন খাটা খাটুনি করায় ক্লান্ত দেহের অবচেতন মনে বেখেয়ালে বিড়ালকে ভুল করে লামিয়া ভেবেছো।তার স্ত্রীও বলে, কি জানি হবে হয়তো! লোকমান আরও বলে, আর যদি সত্যি লামিয়া হয়েও থাকে তাহলেও আমার বিশ্বাস সে আমার মেয়ে, আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।
পরবর্তীতে অনেকেই লোকমানের বাগানে রাতের বেলা দূর থেকে আলো জ্বলতে নিভতে দেখেছে। কিন্তু কেউ কখনো সাহস করে কাছে গিয়ে দেখেনি। এতে কারো কোনো ক্ষতি হয়না বিধায় সবাই এটিকে স্বাভাবিক ঘটনা বলেই মেনে নেয়।
তাদের পরের মেয়েটিও আস্তে আস্তে হাঁটতে শিখে যায়। লাবিবাকেও তারা দোলনায় বসিয়ে লামিয়ার মত দোল খাওয়ায়। আদর যত্ন করে! সে হেঁসে খেলে বেড়ায় সারাক্ষন। লামিয়ার মত আবার পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখে! লাবিবার মাঝেই লোকমান পরিবার লামিয়াকে খোঁজে পায়।
একদিন দুপুর বেলা তার স্ত্রী রান্না ঘরে রান্না করছিল। এমন সময় ঐ পাগলটা আবার তাদের বাড়ি আসে। লোকমানের স্ত্রী পাগলটাকে বসতে বলে কিন্তু পাগল না বসে তার স্ত্রীকে বলে, তোকে না বলেছি বার বছর পর্যন্ত তোর সন্তানকে চোখে চোখে রাখবি, রাখিসনি কেন?
শোন তোর সন্তানের জানাজার নামাজ যে ইমাম সাহেবকে দিয়ে পড়িয়েছিস কোনো একটা কারনে একটা ঝামেলা হয়েছিল। তাই মেয়ের জানাজা ভালো মত পরিপূর্ণ হয়নি। শোন আরও একজন ইমামকে দিয়ে গায়েবি জানাজা পড়িয়ে নিস সব আল্লাহর রহমতে ঠিক হয়ে যাবে। আর এ মেয়েকেও একটু সাবধানে দেখে শুনে রাখবি। খবরদার একই ভুল আর করবিনা। লোকমানের স্ত্রী পাগলকে অনেক অনুরোধ করে ভাত খেয়ে যেতে কিন্তু পাগল বলে আমার ক্ষুধা নেই। ক্ষুধা থাকলে খেতাম তোর রান্না আমার খুব ভালো লেগেছে! সেদিন পেট পুরে খেয়েছি! এ বলে পাগলটি চলে যায়। লোকমানের স্ত্রী পেছন পেছন বাড়ির সামনে এসে খোঁজে কিন্তু কোথাও আর দেখা গেল না পাগলটিকে!
লোকমান বাড়ি আসার পর তাকে স্ত্রী পাগলের কথা বিস্তারিত বলে! পরে লোকমান আরেকজন ইমাম হুজুরকে দিয়ে মেয়ের গায়েবি জানাজা পড়িয়ে নেয় আর সব ঠিক হয়ে যায়। তারপর আর কোনো সমস্যা হয় না।
পরে যে মেয়ে হয় লাবিবা সেও ধীরে ধীরে বড় হয়! পূর্বের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা সাবধানতার সহিত লাবিবাকে বড় করে তোলে! একসময় তার বিয়ে হয়ে যায়। এখন অবশ্য তারা এ বাড়িতে আর থাকেনা!
এ বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যায়। আদরের সন্তানকে রেখে গেলেও সাথে নিয়ে যায় মায়া আর বুকভাঙা কষ্ট! একটুখানি অসতর্কতার খেসারত তাদেরকে যে এভাবে দিতে হবে তা কল্পনাও করেনি কোনো দিন লোকমান পরিবার!!
#Imran_Khan_Ratan
#কুল_বড়ই
( সমাপ্ত )
বিশেষ কৃতজ্ঞতা : প্রিয় পাঠকবৃন্দকে যারা ধৈর্যের সহিত গল্পটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং কমেন্ট লাইক দিয়ে আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন তাদের সকলের প্রতি রইল আমার অকৃত্তিম ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা! কারো কারো মনে প্রশ্ন বা কৌতুহল তৈরি হয়েছে গল্পটি আসলেই সত্যি কিনা!? প্রিয় পাঠকবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলছি, ঘটনাটি শতভাগ সত্যি| এখানে বানোয়াট কোনো কিছু উপস্থাপন করা হয়নি| এই বিচিত্র পৃথিবীতে অনেক বিচিত্র ঘটনাই ঘটে যার হিসাব বা ব্যাখ্যা এই বিজ্ঞানের যোগেও মিলেনা, অমীমাংসিতই থেকে যায় |
ধন্যবাদ সকলকে সাথে থাকার জন্য| ভালো থাকবেন||
Imran Khan Ratan