আমার স্ত্রী ঠিক কতটা ঘুমকাতুরে তার একটা উদাহরণ না দিলে পাপ হবে পাপ। প্রথম দিন বাসর রাইতে ঢুকে তার প্রমাণ পাইছি। রুমে ঢুকে দেখি সে ঘুমে অচেতন। দুইবার ডাকার পর যখন কোনো রেসপন্স পাইনি। তখন আস্তে করে আমার হাত ওর কাঁধের উপর রেখে যে ডেকেছি ঠিক তখনি এমন একটা থাপ্পড় দিয়েছে যে উল্টে আমি বিছানা থেকে নিচে পড়ে গেছি। আর সেই রাতে ওকে ঘুম থেকে জাগানোর রিস্ক দেইনি। কারণ ঘুমের সাথে সাথে তার শরীরে যে বিশেষ শক্তি আছে সেটা ওর থাপ্পড় খেয়ে বুঝেছি।ভয়ে আর ওকে ডাকার রিস্ক নেইনি। বাসর রাতে কোনো কেলেঙ্কারি কান্ড ঘটুক তা কোনোভাবেই চাচ্ছিলাম না।
অফিসে আমার বিয়ের কথা শুনে বস হাতে দুইটা সিনেমার টিকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো ” রিফাত সাহেব, খুব ভালো সিনেমা। নাম ” দ্য নোটবুক “। ভাবীকে নিয়ে দেখে আসুন দেখবেন আপনার প্রতি ভাবির ভালোবাসা বেড়ে যাবে”। নতুন বউকে নিয়ে সিনেমার হলে ঢুকেছি। পাশাপাশি সীটে দুজন বসে আছি। নায়ক নায়িকার প্রেম জমে উঠেছে ছবিতে। এই সময় দেখি পাশ থেকে বউয়ের গভীর ঘুমের নিশ্বাস আমার গলায় এসে লাগছে। চুপচাপ ছবি দেখালাম৷ ছবি শেষ হলেও দেখি বউয়ের ঘুম শেষ হয়নি। ডাকাডাকি করলাম না৷ আস্তে করে উঠে গিয়ে পরের শোয়ের টিকিট নিয়ে এলাম। কারণ ডাকাডাকি করলে বউ যদি আবার বাসার রাতের মতো কিছু করে বসে।
বিয়ের আগে ঢাকায় একাই এক বাসায় থাকতাম ( যদিও ব্যাচেলর ভাড়া দিতে চায় না। কিন্তু বাড়িওয়ালা বসের শ্বশুর হওয়ায় সমস্যা হয়নি)। এক বুয়া রান্না করে দিয়ে যেতো। আব্বা কইছিল বিয়ে যখন করছ তখন বুয়া রেখে লাভ নাই। বউয়ের হাতের রান্না খাওয়া শিখ। তাহলে বউয়ের প্রতি ভালবাসা বাড়বে। হ্যাঁ, এখন ভালবাসা বেড়ে গেছে। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাকে রান্না করে খেয়ে অফিস যেতে হয়। কারণ আমার বউ সকালে ঘুমে থাকে। তার সকালের রান্নার কথার হিসাব থাকে না।
কিছুদিন আগের কথা। বউ তার বাবার বাড়ি গাইবান্ধা যাবে। অফিসে ব্যস্ততা থাকায় আমি যেতে পারলাম না। ওকে একা একাই তুলে দিলাম বাসে। আমি অফিসে চলে এলাম। এরপর থেকে ওকে ফোন দিচ্ছি কিন্তু ওর কোনো খোঁজ নেই। আমি একটার পর একটা কল দিয়েই যাচ্ছি। ওর ওদিকে তার ফোন রিসিভ করার কোনো নাম নেই।
অবশেষে ফোন যখন রিসিভ হলো তখন তিনি পঞ্চগড়ের কাছাকাছি। অর্থ্যাৎ গাইবান্ধা থেকে কয়েক জেলার পরে। গাড়ি যে পঞ্চগড়ের সে খেয়াল আমারো ছিল না। সুপারভাইজার কে চেয়ে নিয়ে বললাম” আসার সময় যেন আমার বউকেও সাথে করে নিয়ে আসে। আর গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে যেন ঘুম থেকে ডেকে দেয় ( আমার বউকে ঘুমের মধ্যে ডাকলে কে থাপ্পড় মারে সেইটা অবশ্য সুপারভাইজার কে বলিনি)
আজ অনেক সিরিয়াস মুডে আছি। মনে মনে ভাবছি ওকে আজ ওর ঘুম নিয়ে কিছু বলা উচিৎ। পাশাপাশি শুয়ে আছি এমন সময় ওকে বললাম।
জান্নাত তোমাকে আমার কিছু কথা বলার ছিল।
হ্যাঁ বলো না, তুমি তো কিছুই বলো না।
না মানে, বলবো বলবো করে বলার সাহস পাচ্ছিলাম না।
আরে স্ত্রীর কাছে কিসের ভয়। বলে ফেলো।
না মানে তুমি যে এতো ঘুমাও তাতে আমার অনেক সমস্যা হয়। এই রোজ রোজ সকালে উঠে রান্না করা। তারপর একা একাই অফিসে যাওয়া। আমার সব কলিগদের টাই ওদের স্ত্রী লাগিয়ে দেয়। অথচ তুমি সেই সময় থাকো ঘুমে। টাই আমাকে একা একাই লাগাতে হয়। মা প্রত্যেকটা দিন জিজ্ঞেস করে বউমা সকালে কি রান্না করছে। আমাকে প্রত্যেকটা দিন মিথ্যে বলতে হয়। আমার সব কলিগরা ওদের বউকে নিয়ে প্রত্যেক সপ্তাহে ছবি দেখতে যায় অথচ তুমি সিনেমার হলের মধ্যে গিয়েও ঘুমাও। তুমি বলো এটা কি ঠিক?
ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।
জান্নাত? এই জান্নাত? তুমি কি ঘুমিয়ে গেছো? তারমানে তুমি কিছুই শুনো নি?
হঠাৎ বউয়ের নাক ডাকার শব্দ। ও হ্যাঁ বলতে ভুলে গেছি। ও যখন হ্যাপি মুডে ঘুমায় তখন আবার নাক ও ডাকে। এখন ও হ্যাপি মুডে ঘুমাচ্ছে। ওকে ডেকে ঘুম ভাঙ্গানোর রিস্ক নিলাম না। আবার যদি থাপ্পড় দেয়।
ঘুমকাতুরে বউ
রিফাত আহমেদ
আমাদের সকল হাসির গল্প এখানে