নবদম্পতিরা রাতের বেলা ঝগড়া করেনা। রাতের বেলা তাদের রাগের পারদ হিমাঙ্কের নিচে অবস্থান করে। তবে বৃদ্ধবয়সে ঝগড়া ফ্যাসাদের কোনো টাইমটেবিল নাই। যেকোনো সময়ই ধুন্ধুমার লেগে যেতে পারে।
আমাদের বাড়িওয়ালা আঙ্কেল একটু আগে আন্টির সাথে এক পশলা ঝগড়া করেছেন এবং পৃথিবীর তাবৎ পুরুষের মতো শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন।
স্ত্রীর সাথে ঝগড়ায় হারা অসম্মানের কিছুনা। স্ত্রীদের জন্মই হয়েছে ঝগড়ায় জেতার জন্য। আর স্বামীদের জন্ম হয়েছে ঝগড়ায় হেরে বিষণ্ণ মনে বিড়ি খাওয়ার জন্য। প্রতিবছর যে বিড়ির দাম বাড়ে এর পিছনে আন্টির মতো বউদের একটা অবদান আছে।
ঝগড়ায় হেরে বাড়িওয়ালা আঙ্কেল আমার কাছে বিড়ি চাইতে এসেছেন। তাকে এই মুহূর্তে বিড়ি দেওয়াটা সমীচীন হবে না। আন্টি দেখলে গেঞ্জাম করবে।
একবার আঙ্কেলকে বিড়ি দেওয়ার অপরাধে আন্টি বাসা ভাড়া এক হাজার বাড়িয়ে দিছিল। আন্টির বিবেকবোধ কর্পোরের মতো সামান্য তাপে উবে যায়।
– আঙ্কেল চলেন ছাদে চলে যাই, আন্টি দেখলে সমস্যা হবে।
– তোমার আন্টিকে কি আমি ভয় পাই নাকি?
– তা ঠিক, তবে রিহানের আম্মু দেখলে ঝামেলা করবে!
আঙ্কেলকে নিয়ে ছাদে চলে আসছি। গোল্ডলিফ সুইচ অনেক হালকা সিগ্রেট। এ সিগ্রেট টানলে কণ্ঠনালী ক্লিয়ার থাকে। আঙ্কেল বিমর্ষ বদনে সিগ্রেটে লম্বা টান দিয়ে দার্শনিক ভঙ্গিমায় বললেন,
– বুঝলে অনিকেত, বিবাহিত জীবন হচ্ছে ফেরারী জীবন, সারাক্ষণ বউয়ের ভয়ে তটস্থ থাকতে হয়।
এ জীবনের কোন মানে হয় না।
– জি আঙ্কেল পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ জীবন, কোন স্বাধীনতা নাই!
– তোমার আন্টি ইদানীং বেশি উৎপাত করছে।অহেতুক ঝগড়াঝাঁটি করে। কী করা যায় বলতো?
– আরেকটা বিয়ে করে ফেলেন আঙ্কেল!
– বলো কী?
– জি আঙ্কেল বিষে বিষক্ষয়। আপনার তো আর টাকা পয়সার অভাব নাই। কাটা দিয়ে কাটা তোলা।
– তাই বলে এই বয়সে বিয়া?
– অসুবিধা কি আঙ্কেল, আমার যদি আপনার মতো একটা ছ’তালা বাড়ি থাকতো তাহলে ছয়টা বিয়া করতাম। ছয় তালায় ছয় বউ। একেকদিন একেক ফ্লোরে থাকতাম। ফ্রাইডে ছুটি!
– কী সব উল্টাপাল্টা কথা বলো?
– জি আঙ্কেল, লাইফ ইজ বিউটিফুল , উই শুড এনজয় ইট।
আঙ্কেল আমার কথা শুনে গলা খাকারি দিচ্ছেন। সাধারণত সিগ্রেটে লম্বা টান দিলে এমন কাশি হয়।
– কী হয়েছে আঙ্কেল?
আঙ্কেল কোন কথা বলছে না তিনি অনবরত কাশছেন। আঙ্কেলের কাশিতে সতর্কতার পূর্বাভাষ।বানর বাঘ দেখলে হরিণকে যেভাবে সতর্ক সংকেত দেয় আঙ্কেলের কাশিটা সেরকম।
কাশতে কাশতে আঙ্কেল ছাদ থেকে নেমে গেলেন। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন আমার শার্টের কলার ধরে ফেলছে। তার সুকঠিন হাতের নির্দয় টানে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
– কে! কে আপনি?
উত্তরে একটি সুপরিচিত কণ্ঠ বললো,
– আয় তোকে ছয়টা বিয়ে করাচ্ছি!
– একী প্রিয়তমা তুমি!!!
অনিকেতের ত্রিকালদর্শী বউ তার ষড়বিবাহ বিষয়ক সকল আলোচনা শ্রবণ করে ফেলেছে। ফলশ্রুতিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় অনিকেতকে অর্ধচন্দ্র দিতে দিতে গৃহকোণে নিয়ে যাচ্ছে। অনিকতের ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা। কে তাকে আশা দেবে কে তাকে ভরসা দেবে?
প্লিজ প্রে ফর হিম