বাসর ঘরে ঢুকে রবিউল খাটে নতুন বউয়ের পাশে বসতেই তার পেট মোচড় দিয়ে উঠলে বউকে বললো, আমি একটু আসতেছি!
সে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে আবার খাটে বসে নতুন বউয়ের ঘোমটা তুলতে গিয়ে বললো, আমি একটু আসতেছি!
সে একটু পর পর আসি আসি করলে নতুন বউ জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে তোমার?
রবিউল বললো, ইয়ে মানে বুঝতেছি না। পেট খারাপ হয়েছে মনেহয়। একটু পরপর পেট মোচড় দিয়ে উঠছে!
সে ওষুধ খেলেও কিছুক্ষণ পরপর তার পেট ব্যথা যাচ্ছে না। খালি বাথরুম পাচ্ছে। তার বাসর গেলো বাথরুমে যেতে যেতে। তার বাসায় সবাই বলাবলি করলো বিয়ের খাবারে কোনো ঝামেলা ছিলো! মেয়ে বাড়ির খাবারে দোষ!
কিন্তু নানা ওষুধ খেয়েও রবিউলের পেট খারাপ ভালো না হলে ডাক্তার দেখালো সে! এন্টিবায়োটিক খেয়েও কাজ হচ্ছে না তার! আধা ঘন্টা পরপর বাথরুমে যাচ্ছে সে!
নতুন বিয়ে করা বউ পড়লো লজ্জায়! আদর সোহাগ হানিমুনের সময় স্বামী পড়ে থাকে বাথরুমে! তাও পেট খারাপের মতন গরিব রোগে!
আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সবার কানে গেলো রবিউলের অসুখের কথা! মাসখানেক হলেও তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হলো না! বড়ো বড়ো ডাক্তার দেখানো শেষ। কেউ তার কোনো অসুখ পেলো না! সবাই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছে একটা মানুষের একটু পরপর বাথরুম কেন পাবে?
রবিউলের পেট খারাপের কথা শুনে রবিউলের এক দূরসম্পর্কের দাদি বললেন, ডাক্তার কবিরাজ দিয়া কাম হবে না। ওরে কেউ তাবিজ করছে! নাইলে একটা মানুষ এতো হাগবো কেন? এত হাগার কী আছে? ওরে হাগার জ্বীনে ধরছে! ওরে ওঝা দেখা!
রবিউলের মাও ভাবলেন কথা সত্য! এক ওঝা সত্যি সত্যি এনেছেন তিনি। ওঝা রবিউলকে তার সামনে বসিয়ে প্রথমে নাকে মরিচ পোড়া ধরে কিছুক্ষণ ঝাড়ু দিয়ে পেটালেন। ঝাড়ুর বাড়ি খেয়েও রবিউল বললো, আমি বাথরুমে যাবো!
ওঝা তখন মন্ত্র পড়া শুরু করলেন! মন্ত্র পড়া শেষে বললেন, এতো ইচ্ছা ঠাকুরের অভিশাপ! সর্বনাশ!
রবিউলের মা, বাবা, বউ, আত্মীয় স্বজন বললেন, ইচ্ছা ঠাকুর? এটা আবার কী?
ওঝা বললেন, ইচ্ছা ঠাকুর হচ্ছেন যিনি দুঃখি মানুষের ইচ্ছা পূরণ করেন! এই ছেলে কাউকে কষ্ট দিয়েছে। তার অভিশাপেই এমন হচ্ছে! ছেলে আসছে বাথরুম থেকে?
রবিউল ক্লান্ত দেহে ভেজা লুঙি পরে ওঝার সামনে বসলে, ওঝা বললেন, তুমি কাউকে কোনো কষ্ট দিয়েছো? কারো মনে আঘাত?
তখন সে পেট ধরে বললো, আমার জানামতে দেই নাই! আমার কোনো শত্রু নাই তো!
ওঝা বললেন, অসম্ভব! এটা অভিশাপের ফল! আবার মনেকরো কাউকে আঘাত করেছো? কথা দিয়ে কথা রাখো নাই এমন হয়েছে?
তখন রবিউল মিটিমিটি চোখে সবার দিকে তাকিয়ে ওঝাকে ফিসফিস করে বললো, আমার বিয়ের আগে একটা প্রেম ছিলো। সেই মেয়েকে বলেছি আমার পরিবার তোমাকে মানবে না। মিথ্যা বলে ফেসবুকে পরিচিত এই মেয়েকে বিয়ে করেছি। কষ্ট দিলে আমার প্রেমিকাকেই দিয়েছি! আমাকে বাঁচান বাবা! দুইমাস হয় বাসর করতে পারি নাই! খালি হাগি আর হাগি আমি!
ওঝা বললেন, ওই মেয়ের কোনো ছবি আছে? তাহলে আমি মন্ত্র পড়ে সব দেখতে পাবো ঘটনা কী ঘটেছে!
রবিউল মোবাইল থেকে তার এক্সের ছবি বের করে দেখালে ওঝা মন্ত্র পড়া শুরু করলেন!
মন্ত্র পড়ে তিনি দেখলেন, রবিউলের এক্স রবিউলের বিয়ের দিন বারান্দায় বসে চিৎকার করে কাঁদতেছিলো। তখন তার বাড়ির সামনে দিয়ে ইচ্ছা ঠাকুর উড়ে যাচ্ছিলেন! মেয়ের কান্না দেখে তিনি থেমে বললেন, কে গো মা তুমি? কাঁদছো কেনো? কী এমন কষ্ট তোমার মনে?
রবিউলের এক্স প্রথমে ভয় পেলে ইচ্ছা ঠাকুর নিজের পরিচয় দিলে সে বললো, ঠাকুর, আমার একটা ভালোবাসা ছিলো! দীর্ঘদিন প্রেম করে সে একদিন আমাকে বললো তার পরিবার নাকি আমাকে মানবে না! সে আমাকে বিয়ে করতে পারবে না! আপনি বলেন ও কী প্রেম করার সময় এতিম ছিলো? ওরে রাস্তায় টোকায়া পাইছিলাম আমি? পরিবার না মানলে তুই প্রেম করছোস কেন? পরে দেখি বাসা না, তার সাথে ফেসবুকে আরেক মেয়ের রং ঢং ছিলো। তাকে বিয়ে করতেই আমার কাছে মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে সে!
ইচ্ছা ঠাকুর মেয়েটার কথা শুনে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলেন, হ্যাঁ মা। তুমি যা বলেছো তা সত্য বলেছো। সে তোমাকে ঠকিয়েছে! তুমি ভালোবাসায় সৎ ছিলে। এখন বলো আমি তোমার একটা ইচ্ছা পূরণ করে দিবো। কী চাও আমার কাছে?
হিরা মুক্তা? তুমি কি সিনেমার নায়িকা হতে চাও?
ধুর! ঠাকুর! সত্য আমি যা চাইবো দিবেন?
হ্যাঁ মা দিবো! তুমি পবিত্র! আমি তোমার কথা রাখবো! বলো মা কী চাও?
মেয়েটা বললো, তাহলে আমি যতবার আমার এক্সের নাম নিবো ততবার যেন হারামজাদার হাগু পায়! কিন্তু তাতে যেন সে অসুস্থ না হয়! খালি ওর নাম নিলেই যেন ওর হাগু ধরে! ওর বাসর আমি করাচ্ছি!
ইচ্ছা ঠাকুর মেয়েটার কথা শুনে কিছুক্ষণ হাসতে হাসতে আকাশে গড়াগড়ি খেলেন! তারপর বললেন, তোমার ইচ্ছা পূরণ হোক মা! এখন থেকে তুমি তার নাম নিলেই সে বাথরুমে দৌড়াবে! এই অভিশাপ কেবল তুমিই ফেরত নিতে পারবে অন্যকোন ইচ্ছায়। তবে কেবল একবারই! এরপর আর চেঞ্জ হবে না।
ওঝা সমস্ত ঘটনা চোখ বন্ধ করে দেখে রবিউলের বাসায় সবার কাছে ঘটনা খুলে বললেন। ওঝার কথা শুনে রবিউলের নতুন বউও কিছুক্ষণ ওঝার ঝাড়ু দিয়ে রবিউলকে পেটালো! রবিউল ঝাড়ুর বাড়ি খেতে খেতেই মেঝে ভাসিয়ে দিলো হাগু করে!
ওঝা বললেন, ওই মেয়ের পা ধরে ক্ষমা চাইলে যদি ওই মেয়ে ক্ষমা করে তবেই তোমার এই হাগু অভিশাপ বন্ধ হবে।
রবিউল তার এক্সের বাসায় গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তার পা ধরে ক্ষমা চাইলো। মাটিতে গড়াগড়ি খেলো। তখন তার এক্স বললো, ঠিক আছে বাসায় যাও। আমি তোমাকে ক্ষমা করবো। এখন সামনের থেকে দূর হও!
রবিউল বাসায় এসে দেখলো অনেকক্ষণ তার বাথরুম পাচ্ছে না! সে মহাআনন্দে খুশিতে লাফালাফি করতে লাগলো! নতুন বউয়ের কাছেও ক্ষমা চাইলো! বউ ক্ষমাও করে দিলো তাকে! রবিউল আদর করে বউকে জড়িয়ে ধরতে গেলে তার বউ বললো, দাঁড়াও আমি একটু বাথরুম থেকে আসতেছি!
এরপর রবিউল কাঁদতে কাঁদতে আবার তার এক্সকে কল দিয়ে বললো, তুমি কী করছো আবার? আমার বউকে আমি আদর সোহাগ করতে গেলেই বেচারির বাথরুম পায়!