আব্বা চেয়ারে বসে থরথর করে কাঁপছেন! নাক মুখ ঘেমে ভিজে গেছে! একটু পরপর কপালের ঘাম মুছছেন তিনি।
আব্বার সামনে জারীন বসা। জারীনের হাতে একটা পিস্তল! আব্বার দিকে তাক করা!
জারীন এসেছে আব্বার মুখে অস্ত্র ধরে আমাকে তুলে নিতে! সে আজ আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করবে!
জারীন সম্পর্কে আমার মামাতো বোন হয়। আমাদের অনেক দিনের সম্পর্ক। প্রেম করার সময় থেকেই সবাই জানতো তখন দুই পরিবারের কেউ বাধা দেয় নাই কিন্ত বিয়ের কথা উঠতেই দুইজনের আব্বাই রাজি না!
মানে আমার মামা আর আব্বা দুইজন কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেন না। এমন না মারামারি কাটাকাটি তাদের মধ্যে বরং এক সময় তারা খুব ভালো বন্ধু ছিলেন!
সেই বন্ধুত্ব শত্রু হয় যখন আব্বা আমার আম্মাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন!
হা আব্বা আম্মার প্রেমের বিয়ে। আমার নানা বিয়েতে রাজি ছিলেন না দেখে আব্বা আম্মাকে নিয়ে পালান! পরে সবাই সব মেনে নিলেও বড়ো মামা আর আব্বা মধ্যে দূরত্ব বাড়ে! মামার একটাই কথা আমার বোনকে নিয়ে পালিয়েছে আমার মান সম্মান রইলো কই?
আমার নানা এলাকার কমিশনার ছিলেন আর মামার কথা কমিশনারের মেয়েকে নিয়ে যদি এলাকার ছোকরা পালায় তাহলে তখন এলাকায় মান সম্মান রইলো কই? নানা ধমক দিলে বলেন, এলাকার ছোকরা তো তোরই বন্ধু ছিলো! তুইতো নিজেই ভালো না গুণ্ডাপাণ্ডাদের সাথে তোর চলাফেরা আবার বড়ো বড়ো কথা!
আব্বা জারীনকে বললো, মা আমি কি দুই হাত উপড়ে তুলে বসবো? জারীন আব্বাকে বললো, ফুফা আপনার ভেতরে আমি ভয় ডর কিচ্ছু দেখছি না! পিস্তলের সামনে বসেও আপনি খালি নড়াচড়া করতেছেন! এটা কেমন কথা?
আব্বা বললেন, কই মা? ভয়ে আমার ঘাম বের হয়ে যাচ্ছে আর ভয় পাইতে পিস্তল লাগে? আমিতো তোরে এমনেই ভয় পাই! পিঠ চুলকাচ্ছে কখন থেকে চুলকাতে পারছি না তাই চেয়ারে পিঠ ঘষা দিচ্ছি! তুই পিস্তলটা রেখে আমার পিঠটা একটু চুলকায়া দে মা নাহয় তোর ফুফুকে ডাক দে! পিঠ চুলকানির জ্বালায় আজ আমার মৃত্যু হবে মনে হইতেছে!
আমি তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছি। বাসায় পরা প্যান্ট ছেড়ে প্যান্ট শার্ট পরলে আম্মা ধমক দিয়ে বললেন গাধার মতন শার্ট গায়ে দিচ্ছিস কেন? পাঞ্জাবি পর। মেয়েটা কত শখ করে আসছে তোকে তুলে নিতে আর তুই শার্ট গায়ে দিয়ে পালাবি? একটু চুলটা ঠিক কর। এমনে পাগল ছাগলের বেশে বাড়ি পালালে আশেপাশের মানুষ কী বলবে? আমি তোর বাপের সাথে পালানোর আগে কী সুন্দর করে না পার্লার থেকে সেজে এসেছিলাম! তোর নানা দেখে বলে কিরে মা হঠাৎ এমন সাজ? বলেছি, আব্বা একটু পরে টের পাবেন! আর তুই আমার ছেলে হয়ে এমনে খবিশ বেশে বাড়ি পালাবি? আয় একটু ক্রিম মেখে দেই মুখে!
আমি রেডি হচ্ছি আর শুনতেছি আব্বা জারীনকে বললেন, মা এই ভয়ভীতি প্রদর্শন না করে আমরা একটা সংলাপের আয়োজন করলে কেমন হয়? বিষয়টা বিবেচনা করে দেখ! আলোচনা করে সমাধান করি বিষয়টা। পিস্তলটা নিচে রাখ মা! আইন নিজের হাতে তুলে নিস না! আর এই গাধাটাকে তোর তুলে নেয়া লাগে? এরে ডাকলেই তো দৌড় দিতো তোর সাথে! এত কষ্ট তোর আমার সহ্য হচ্ছে নারে মা! তুই আয় আমরা সমাধান করি এই বিষয়ে!
জারীন আব্বাকে বললো, আইন আমার হাতে তুলে নিতে বাধ্য করেছেন ফুফা! সংলাপের অনেক সময় আপনারা পেয়েছেন কিন্তু আপনি বিয়েতে রাজি হন নাই! আমাকে বাধ্য হয়ে এই পথে আসতে হয়েছে ফুফা! এখন আর সংলাপ করার কোনো সুযোগ নাই ফুফা!
-বিয়েতে আমি রাজি হই নাই? আমি? তোর বাপ ওই চাকলাদার বেটা রাজি হয় নাই! আমি তো বলেছি আমি রাজি! চাকলাদার বলেছে আমার ঘরে মেয়ে বিয়ে দিবে না! আমার কী দোষ বল?
-আপনার দোষ আপনি আব্বাকে রাজি করাতে ব্যর্থ আর আব্বার কথা শুনে আপনিও খুশি হয়ে বলেছিলেন আপনি চাকলাদারের মেয়ে ঘরে আনবেন না! আমাকে অপমান করেছেন!
-ছিঃ ছিঃ মা! ওইটাতো আমি উত্তেজনা বশত বলে বসছিলাম! চাকলাদারকে দেখলেই আমার উত্তেজনা হয়! আসলেতো আমি রাজি তোদের বিয়েতে!
-এখন আর ওইসব বলে লাভ নাই ফুফা!
আমি রেডি হয়ে জারীনকে বললাম চল জারীন! আমার কথা শুনে আব্বা আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, গাধার গাধা! একটা মেয়ে পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে আর সে বলে আমি রেডি!
আমি আর জারীন বাসার বাহিরে তালা লাগিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় জারীনকে বললাম, জারীন আমি কি তোমার কাঁধে চেপে বসবো? জারীন রাগে নাক ফুলিয়ে বললো, আমার কাঁধে বসবা মানে?
-আরে ওই যে দেখো না সিনেমায় নায়ক নায়িকাকে কাঁধে তুলে নিয়ে পালায় এখানেতো তুমি আমাকে নিয়ে পালাচ্ছো! আমার কাঁধে উঠার কথা!
জারীনের রাগে লাল মুখ লাল হয়ে যাওয়া দেখে বললাম, চলো চলো তাড়াতাড়ি পালাই নাহয় আব্বার লেলিয়ে দেওয়া গুণ্ডারা আমাকে তোমার থেকে ছিনিয়ে নিবে! আমাদের পেছন নিবে! কী দরকার গোলাগুলি রক্তারক্তি হওয়ার! তাড়াতাড়ি পালাই!
জারীন বলল, তোমাকে ছুটানোর জন্যে ফুফা জীবনেও কাউকে লাগাবেন না আমাদের পেছনে বরং ফুফা খুশিই হয়েছেন আপদ বিদায় করে!
জারীনে কথায় মন খারাপ হলেও জারীন আমাকে নিয়ে পালাচ্ছে তা ভেবেই এক রকম উত্তেজনা কাজ করছে আমার ভেতরে! বাহিরের কড়া রোদটাও কি মিষ্টি লাগছে আজকে!
জারীন, আমরা যাচ্ছি কোথায়? জারীন বলল, আমাদের বাসায়!
-তোমাদের বাসায় মানে? মামার গুলি খাইতে?
-বাসায় চলো গেলেই বুঝবে!
আমি জারীন তাদের বাসায় ঢুকতে বড়ো মামা দৌড়ে আসেন আমাদের দেখে! এসেই বাংলা ছবির ভিলেনদের মতন আকাশ কাঁপিয়ে হো হো করে হেসে বললেন, আমার বুকে সাতাশ বছরের প্রতিশোধের আগুন আজ নিভেছে! শাবাশ মা শাবাশ! সরকারের ছেলেকে আজকে তুলে আনা হয়েছে সরকারের সামনে থেকে মুহাহাহাহা! দাউদাউ করে জ্বলা বুকের আগুন আজ নিভেছে!
আব্বা আম্মা দুজনেই জারীনদের বাসায় আসেন। আমার আর জারীনের বিয়ে পড়ানো হবে। আব্বা আসলেই মামা বলেন, কী সরকার সাহেব? তোর মুখের উপর অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার মেয়ে আজ তোর ছেলেকে তুলে এনেছে! সাতাশ বছর অপেক্ষা করেছিলাম প্রতিশোধ নিতে! মুহাহাহাহ! আমার বোনকে নিয়ে পালিয়েছিলি তুই আর আজ তোর ছেলেকে নিয়ে পালিয়েছে আমার মেয়ে! কাটাকাটি! খেলা এক এক গোলে শেষ! এখন তোর সাথে বন্ধুত্ব করতে আমার কোনো সমস্যা নাই!
আব্বা মামার সাথে মুখ কালো করে কোলাকুলি করলেও ওনার চোখ জারীনের বড়ো ভাইয়ের দুই বছরের ছেলের দিকে! জারীনের কানে আব্বা ফিসফিস করে বলতেছেন, বৌমা একটা নাতনী হোক আমার তারপর দেখবা চাকলাদারের এই নাতীকে যদি আমার নাতনি দিয়ে তুলে না এনেছি আমিও সরকার সাহেব না! দুই এক গোলে চাকলাদার বেটাকে উড়িয়ে দিবো দাদা নাতনী মিলে! মুহাহাহাহাহা!