রিহানের বালিকাবন্ধু তিফা ক্রোধের বশবর্তী হইয়া রিহানকে “বানর” বলিয়া ভৎসর্না করিয়াছে।
প্রিয়তমার নিকট এহেন বকা সে কষ্মিনকালেও প্রত্যাশা করে নাই। সেহেতু তীব্র মনোকষ্টে জর্জরিত রিহান একাকি ছাদের সিঁড়িতে বসিয়া ফুঁপাইয়া কাঁদিতে লাগিলো।
রিহানের দুঃখ ভারাক্রান্ত বদন দেখিয়া আমার পিতৃ হৃদয় হু হু করিয়া কাঁদিয়া উঠিল। আমি পুত্রের কাঁধে ভরসার হাত রাখিয়া নরম সুরে কহিলাম,
– ওহে পুত্র, এমন করিয়া চোখের জল খরচ করিতেছ কেন?
পুত্রধন তাহার অবনত মস্তক ঊর্ধ্বে তুলিয়া ক্রন্দনের হেতু সবিস্তারে বর্ণনা করিল। সে বড়ই মর্মান্তিক কাহিনী, শুনিলে পাষাণের হৃদয়ও বিদীর্ণ হইয়া যাইবে।
ছাদের উপর সিঁড়িঘরে রিহান আর তিফা পুতুল খেলিতেছিল। রিহানের পুতুলের সহিত তিফার পুতুলের বিবাহ বিষয়ক খেলা।
বিবাহ মানেই আবেগ ও ইমোশনের বাড়বাড়ন্ত। সঙ্গত কারণেই রিহান আবেগতাড়িত হইয়া তিফার কপালে আকষ্মিক চুম্বন আঁকিয়া দিলো। হতভম্ব তিফা সংবিৎ না পাইয়া রিহানকে হালকা থাপ্পড়ের সহিত “বানর” বলিয়া বকা দিলো।
এহেন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির ফলশ্রুতিতে মুহূর্তেই দুজনের মধ্যে বিচ্ছেদের সুকঠিন দেয়াল গজাইয়া উঠিল। তাহাদের ক্ষুদ্র হৃদয়ের পক্ষে এ বিচ্ছেদের দেয়াল বিচুর্ণ করা সহজ কর্ম নহে।
রিহান সিঁড়িতে বসিয়া কাঁদিতে লাগিল। তিফা অনতিদূরে দাঁড়াইয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে রিহানের ক্রন্দন দৃশ্য প্রত্যক্ষ করিতে লাগিল।
তিফার হৃদয় অনুতপ্ত কিন্তু বিচ্ছেদের অদৃশ্য দেয়ালের কারণে সে রিহানের নিকটস্থ হইতে পারিতেছে না।
আমি তিফাকে সন্নিকটে ডাকিয়া কহিলাম,
– মাগো সাধু ভাষার গল্পে তুমি আমার পুত্রকে চলিত ভাষায় বানর কেন বলিয়াছ? তুমি কি জাননা রচনায় সাধু চলিত মিশ্রণ হইলে তাহা গুরুচণ্ডালী দোষে দূষিত হইয়া যায়?
প্রত্যুত্তরে মা জননী তিফা জানাইল, বানর শব্দের সাধুরূপ তাহার অজানা হেতু এই ত্রুটি সাধিত হইয়াছে।
অতঃপর আমি তাহাকে বানর শব্দের সাধুরূপ বিষয়ে অবহিত করিলাম।
– মাগো এরপর কোনোদিন কাউকে বানর ডাকিতে হইলে তাহাকে অবশ্যই শাখামৃগ বলিয়া ডাকিবা!
– চাচাজি শাখামৃগ কাহাকে বলে?
– বানরকে সাধুরীতিতে শাখামৃগ বলিয়া সম্বোধন করিবার রেওয়াজ প্রচলিত রহিয়াছে।
আমাদের বানর বিষয়ক কথোপকথন শুনিয়া রিহান ক্রন্দন থামাইয়া ঊর্ধ্বাকাশে হা করিয়া তাকাইয়া রহিল।
আমি তিফাকে উদ্দেশ্য করিয়া কহিলাম,
– এবার যাও মা, আমার শাখামৃগ পুত্রের লেজ ধরিয়া ক্ষমা চাহিয়া লও।
শাখামৃগ