রিহানের আম্মুর বান্ধবী নৌমির বাসায় এসেছি। ওরা উত্তরার বাসিন্দা। নৌমির হাসবেন্ড জিবরুল ভাই টাকার ক্রোকোডাইল।
নৌমি তার স্বামীর অঢেল টাকা ঢেলে বাসাটা ভালোই সাজিয়েছে। এয়ারকন্ডিশন, টিভি, ফ্রিজ কাপড় কাচার মেশিন সবই নামি-দামি ব্রান্ডের।
নৌমির বাসার সব বিলাসী জিনিসের মধ্যে কাপড় কাচার মেশিনটা রিহানের আম্মুর মনে ধরেছে।
সে চাইছে আমরাও যেন এমন একটা মেশিন কিনি।
নৌমি তার বান্ধবীকে সাপোর্ট করে আমাকে ওয়াশিং মেশিন কেনার জন্য চাপ দিচ্ছে।
– অনি ভাই, আপনি অনেক কিপ্টা! আমার বান্ধবীকে একটা ওয়াশিং মেশিন কিনে দিচ্ছেন না কেন?
আমি বিমর্ষ বদনে বললাম,
– বাসার সব কাপড়চোপড় তো আমিই কাচি, ওয়াশিং মেশিন কিনার দরকার কী?
রিহানের আম্মু বললো,
– তোমার কথা চিন্তা করেই তো বললাম!
– আমার জন্য তোমার এতো চিন্তা !
নৌমি আমাকে কাপড় কাচা মেশিনের এডভান্টেজ সম্পর্কে লম্বা বক্তৃতা দিলো,
– অনিভাই ওয়াশিং মেশিনে কাপড় কাচলে কাপড়ের রঙ অটুট থাকে। এক কাপড়ের রঙ অন্য কাপড়ে লেগে নষ্ট হয়না। খুব অল্প সময়ে কাপড় ধুয়া যায়। আমারটা দিয়ে ‘হট ওয়াশ’ সিস্টেমে কাপড় পরিষ্কারের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া আর ফাঙ্গাসও দূর হয়। আপনি একটা ওয়াশিং মেশিন কিনেন অনি ভাই ।
ওয়াশিং মেশিনের এতো সুবিধা তাহলে তো একটা কিনতেই হয়। আমি রিহানের আম্মুর দিকে মুচকি হেসে ওয়াশিং মেশিন কেনার নিশ্চয়তা দিলাম।
নৌমিদের বাসা থেকে বেড়িয়ে আমি আমার ভার্সিটির বড় ভাই আজগর ভাইয়ের খিলক্ষেতের বাসায় চলে গেলাম। রিহানের আম্মুকে নিয়ে আজগর ভায়ের বাসায় এবারই প্রথম।
আমাদের দেখে আজগর ভাই খুবই খুশি। আমাদেরকে বসতে বলে তিনি অতি রাজকীয় ভঙ্গিতে একটা ডাক ছাড়লেন,
– কই গো তোমরা দেখে যাও কারা এসেছে।
আজগর ভাইয়ের ডাক শুনে তার তিন তিনজন বিবি এসে হাজির। আজগর ভাইয়ের তিন বিবির বড় জনের নাম সুলতানা।
সুলতানা ভাবি আমাকে অনেক স্নেহ করেন। মেজো ভাবির নাম শারমিন, তিনিও আমাকে অনেক আদর স্নেহ করেন। সবচেয়ে ছোটজনের নাম আনিকা।
আনিকা ভাবি অনেক মডার্ন, তিনি আমাকে আহ্লাদ করে নাম ধরে অনি বলে ডাকেন।
এজন্যই আজগর ভাইয়ের বাসায় আসলে আমার আর যেতে ইচ্ছে করেনা।
আজগর ভাইয়ের তিন বিবিই রিহানের আম্মুকে অনেক খাতিরযত্ন করছে। বড় বিবি সুলতানা ভাবি রিহানের আম্মুর চোখে ডার্ক সার্কেল দেখে খুবই মর্মাহত হলেন।
রিহানের আম্মু হতাশ ভঙ্গিতে জানালো,
– একা হাতে সংসার চালাই ভাবি, বাচ্চার স্কুল, অনির অফিস, রান্নাবান্না, ধুয়ামুছা সব একা একা করতে হয়। ঠিক মতো ঘুমাতে পারিনা!
সুলতানা ভাবি শাসনের ভঙ্গিতে রিহানের আম্মুকে বললেন,
– একা হাতে সংসার সামলানোর দরকার কী?
– কি করবো ভাবি কাজের মেয়ে তো পাই না!
– আরে কাজের মেয়ের দরকার কি? অনিকে আরেকটা বিয়ে দিলেই তো পারো!
– কি বলেন ভাবি?
– ঠিকই বলছি, আমিও তোমার মতো একা হাতে সংসার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম পরে তোমার ভাইয়াকে দুটো বিয়ে দিলাম। এখন দেখো আমি কতো নিশ্চিন্ত। বাসার কোনো কাজে হাত দিতে হয় না, সব ওরা করে। বড় বউ হিসাবে এখন পায়ের উপর পা তুলে খাই।
– ভাবি আমার মাথা ব্যথা করছে বাসায় চলে যাবো।
– শুনো, আমারও তোমার মতো মাথা ব্যথা হয়, কিন্তু মাথা ব্যথা হলে ছোট দুজন আমার মাথা টিপে দেয়।
– কী বলেন, ভাবি?
– আরে অনিকে বিয়ে দিলে তুমিও পারবে। তখন শুধু ওর্ডার দিবা, দেখবা সব কাজ হয়ে যাচ্ছে।
– অনিকে বিয়ে দিলে সেই মেয়ে আমার মাথা টিপে দিবে?
– না দিলে আরেকটা করাবা, সমস্যা কি? আমার মেজোটাও প্রথমে আমার কথা শুনতো না। পরে ছোটটারে আনছি। অবশ্য ছোটটাও ইদানীং ডিস্টার্ব দিচ্ছে, ভাবছি তোমার ভাইয়াকে আরেকটা বিয়ে দিবো?
রিহানের আম্মুর প্রচন্ড মাথা ধরেছে। তার কিছুই ভালো লাগছেনা, বমি বমি লাগছে।
তাই আমরা দ্রুত সিএনজি ডেকে রামপুরার দিকে রওয়ানা হলাম। সাঁ সাঁ করে আমাদের সিএনজি রামপুরার দিকে এগুচ্ছে।
রিহানের আম্মুর দুর্বল ভাবটা কাটতে শুরু করেছে।
সে আমার কাঁধে মাথা রেখে অতি মিহি সুরে বলল,
– শুনো, আমার ওয়াশিং মেশিন কেনা লাগবেনা। আর আজ থেকে বাসার সব কাপড়চোপড় আমিই কাচবো। তুমি শুধু আমাকে কথা দাও, জীবনেও আর তুমি আজগর ভাইয়ার বাসায় যাবেনা!
– আচ্ছা যাবো না, কথা দিলাম।
এখন ওয়াশিং মেশিন ছাড়াই আমার বাসার সব কাপড় ভালোভাবে প্রতিনিয়ত ধুয়া হয়। আমার হাতের খসখসে ভাবটা চলে গেছে।
মেনি মেনি থ্যাংস্ টু আজগর ভাই এন্ড হিজ থ্রী ওয়াইফ’স
ওয়াশিং মেশিন
উদ্বাস্তু অনিকেত