যাদুর আয়না
——————
আমার ধারনা রিহানের আম্মু আমাকে তাবিজ করেছে! যাদুবিদ্যা ছাড়া কোনভাবেই এটা সম্ভব না। নিশ্চয়ই গোপনে তন্ত্রমন্ত্র রপ্ত করেছে। তাকে প্রায়ই দেখি পদ্মাসনে বসে গভীর ধ্যানযোগে মোবাইল চালায়। যাদুর রাণী অনলাইনে কামরূপ কামাখ্যার আধ্যাত্মিক তান্ত্রিকদের কাছ থেকে অপশক্তি অর্জন করেছে।
দৈবশক্তি দিয়ে সবকিছু জেনে যাচ্ছে। আমার কোনকিছুই আর গোপন থাকছেনা। বাসা আর অফিস ছাড়া কোথাও গেলেই ধরে ফেলছে। মতি মিয়ার বিড়ির দোকানে জীন বসিয়ে নজরদারি করছে, বিড়ি খাইলেই তার কাছে খবর চলে আসে।
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে প্রীতি ভাবির সাথে দু’মিনিট কথা বলছিলাম তাও জেনে গেছে।
বাসার ঘটনা জেনে যায় মানলাম কিন্তু ৫০ কিমি দূরের ঘটনা জেনে যায় কেমনে? এই মহিলা নিশ্চই জীন সাধনা করে।
গতকাল সকাল সকাল অফিস শেষ করে ভাবলাম ডিঙ্গি ক্লাব থেকে একটু ঘুরে আসি। কতোদিন হয়ে গেল ডিঙ্গি ক্লাবের মিহি আলোয় ফারমেন্টেশন করা ফলের জুস খাইনা। ছোট ছোট গ্লাসে বর্ণিল জুস খুব মিস করি।
কিন্তু হায় ডিঙ্গিক্লাবে পৌঁছার আগেই বউয়ের ফোন
– এই তুমি কোথায়?
– এইতো অফিসে, একটা জরুরী কাজ করছি।
– টঙ্গির তুরাগ তীরে কিসের অফিস তোমার?
– কি বলো! টঙ্গি যাবো কেন আমি তো উত্তরা।
– অনি আমার সাথে চালাকি করবেনা। আমি তোমাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। সন্ধ্যার আগে বাসায় না পৌঁছালে তোমার কপালে খারাপি আছে।
এমনিতে ডেঞ্জারাস মহিলা তার উপর শিখছে কালো যাদু। দুর্বিপাকের ঘূর্ণিপাকে আমার জীবন অতিষ্ঠ। ঘোর অমানিশায় নিমজ্জিত আমার নিরীহ জীবন।
তাড়াতাড়ি গাড়ি ঘুরিয়ে রামপুরার দিকে রওয়ানা দিলাম। পথিমধ্যে শাহজাদপুরে আমার বন্ধবী লুনার সাথে দেখা। লুনা অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষ তাই ওর কাছে ঘটনাটা খুলে বললাম,
– জানিস বন্ধু, তোর ভাবি আমাকে তাবিজ করেছে?
– বলিস কী?
– হুম, যেখানে যাই, যা কিছু করি সব জেনে যায়।
– বলিস কী?
– বাসায় বসে অনলাইনে তন্ত্রবিদ্যা আর জিন সাধনা করে। বাসা আর অফিস ছাড়া কোথাও যেতে পারিনা, পোষা জীনের মাধ্যমে সব খবর পেয়ে যায়। জীবনটা পুরাই আলিফ লায়লা হয়ে গেছে রে। এক দুর্ধর্ষ যাদুর রাণী মালেকা হামিরার হাতে আমার জীবন প্রদীপ বন্দি। আমাকে বাঁচা দোস্ত।
আমার দুর্দশার কথা শুনে লুনা হাসছে। এজন্যই মেয়ে মানুষের সাথে সিরিয়াস ইস্যু শেয়ার করতে নাই।
– গাঁধা এটা কালো যাদু না এটা হচ্ছে “যাদুর আয়না”
– যাদুর আয়না মানে ?
– হুম “যাদুর আয়না” হচ্ছে বাংলাদেশি মেয়েদের দ্বারা উদ্ভাবিত একটা মোবাইল এ্যাপস। এটির সাহায্যে মেয়েরা তাদের বজ্জাত হাসবেন্ডদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখে। আমি নিজেও এ্যাপসটি ইউজ করি।
– বলিস কী?
– হুম এই দেখ আমার হাসবেন্ডের অবস্থান দেখাচ্ছে তেজগাঁও কিন্তু সে আছে বনানী। কতোবড় শয়তান চিন্তা কর!
– একসাথে দুজায়গায় কেমনে সম্ভব?
– আমার হাসবেন্ড তোর থেকেও বড় বদমাইশ। চালাকি করে এন্ড্রয়েড ফোন অফিসে রেখে বনানী গেছে কিন্তু সে তো আর জানেনা যে সাপোজিটর দিয়ে একটা জিপিএস ওর ভিতরেও ইন্সটল করে দিয়েছি।
– হায় হায় এসব কি বলিস! আমিও তো সেদিন রিহানের আম্মুর পরামর্শে সাপোজিটর নিলাম!
তবে কি রিহানের আম্মু সাপোজিটর দিয়ে আমার ভিতরেও জিপিএস ঢুকিয়ে দিছে! হায় ঈশ্বর এসব কি হচ্ছে জগতে!
উদ্বাস্তু অনিকেত