ডেলিভারি ম্যান জামাল একটা বিয়ে করবে। ও ভাবল বড়োলোকের একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারলে জীবনটা সেট হয়ে যাবে।
একজন ডেলিভারি ম্যানের সাথে কে মেয়ে বিয়ে দিবে? জামাল বেশ কিছু টাকা জমিয়ে একটা নতুন এলাকায় আসল।
একটা ফ্লাট ভাড়া করে ফেলল। এই এলাকায় রাজন চৌধুরী নামে একজন আছেন। জামাল শুনেছে ওনার অবিবাহিত একটা মেয়ে আছে। কোনোভাবে চৌধুরির মেয়ে কে বিয়ে করা যায়। জীবনে আর কিছু করা লাগবে না।
চৌধুরীর ঢাকা শহরে তিনটা বাড়ি আছে। একটা বাড়ি ভাগে পেলে জামালের জীবনে আর কী লাগে?
রাস্তায় একটা ঘটকের অফিস দেখল জামাল। রইস ঘটকের নাম। জামাল একদিন রইস ঘটকের সাথে দেখা করতে গেল। কাঁচে ঘেরা সাজানো গুছানো অফিস। ভিতর ঢুকার সাথে একটা সুন্দরী মেয়ে এসে বলল,” কীভাবে সাহায্য করতে পারি স্যার?”
মেয়েটা কে দেখে জামালের পছন্দ হয়ে গেল। এ মেয়েটা কে বিয়ে করলে কেমন হয়? পরে এই সিদ্ধান্ত বাদ দিলো। এই মেয়ে বড়োলোকের মেয়ে না।
“রইস ঘটক আছে?”
“জি স্যার। আপনি একটু বসুন। আমি স্যারের সাথে কথা বলে আসছি।”
জামাল একটা সোফাসেটে বসে আছে। একটু পরে মেয়েটা এসে বলল,” চলুন স্যার।”
একটা বড়ো রুমে প্রবেশ করল জামাল। বড়ো একটা টেবিলের ওপাশে বসে আছেন একজন লোক। বয়স খুব একটা বেশি না। চল্লিশ পয়তাল্লিশ হবে। জামাল কে দেখে মিষ্টি হেসে বলল, “বসুন।”
সামনের একটা চেয়ারে জামাল বসল। মেয়েটা চলে গেল।
“আমি রইস।”
“আমার নাম জামাল।”
“বলুন আপনার জন্য কী করতে পারি?”
একটু লাজুক হেসে জামাল বলল,” আমি একটা বিয়ে করতে চাই।”
“আমি তো বিয়ে পরারনোর জন্যই বসে আছি। বলুন কেমন মেয়ে চাই?”
জামাল ঠিক বুঝতে পারছে না। সরাসরি চৌধুরীর মেয়ের কথা বলবে। না-কি এদের মেয়ে দেখবে। ওকে কনফিউজড দেখে রইস ঘটক বলল, “পছন্দের কোনো মেয়ে আছে বুঝি? থাকলে বলুন সমস্যা নাই। এই রইস ঘটক সব ব্যবস্থা করে দিতে পারে।”
জামাল চৌধুরীর মেয়ের কথা বলল। রইস ঘটক বলল, “সমস্যা নাই আমি দেখছি। টাকা লাগবে পাঁচ লাখ।”
“এত টাকা!”
অনেক ধরাধরি করে শেষমেশ এক লাখ টাকায় রাজি হলো রইস ঘটক। বিয়ের আগে পঞ্চাশ হাজার দিবে আর বাকিটা বিয়ের পরে।
গ্রামের বাড়ির একটা জমি বিক্রি করে লাখ পাঁচেক টাকা পেল জামিল। বিয়ের খরচ টরচ আছে। জামাল এখন একজন ক্যাডার! সরকারি বড়ো একজন অফিসারের বিয়ে তো খরচ আছে।
কিছুদিনের মধ্যেই ঘটক রইস চৌধুরীর মেয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করে ফেলল। লোকটা আসলেই কাজের। এত তাড়াতাড়ি কাজ হয়ে যাবে বুঝতে পারেনি জামাল।
চৌধুরী সাহেব আয়োজন ভালোই করেছেন। মেয়ে দেখা হলো। মেয়েটা একটু কালো। জামালের কপালটা খুব একটা ভালো না! ও ভেবেছিল রাজকন্যা আর রাজত্ব দুই পাওয়া যাবে। এখন তো দেখা যাচ্ছে শুধু রাজত্ব পাবে রাজকন্যা না! কী করার?
জামালের মতো এমন একজন বড়ো অফিসারের সাথে মেয়ে বিয়ে দিতে চৌধুরীর সাহেব কোনো আপত্তি থাকার কথা না। আজকাল বি সি এস ক্যাডার পাত্র মানে সোনার হরিণ!
এক মাসের মধ্যেই জামাল আর চৌধুরীর মেয়ে আসমার বিয়ে হয়ে গেল। মোটামুটি আয়োজন করেই বিয়েটা হয়ে গেল। বিয়ের কাবিন হলে বিশ লাখ টাকা। জামালের এ সব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। রাজত্বই ওর এ সব কাবিন টাবিন দিয়ে কী হবে? জামাল তো খুব খুশি জীবনে আর কোনো চিন্তা নাই!
জামাল ভেবেছিল চৌধুরী সাহেব বিয়ের পরে ওনার বাড়িতে থাকতে বলবেন। কিন্তু এমন কিছুই বলেননি। ভাড়া করা ফ্লাটে বউ নিয়ে উঠল জামাল। বিয়ের সময় জামালের কোনো চাহিদাও ছিলো না। রাজত্ব পাবে সেখানে কিছু চেয়ে ছোটো হওয়ার কী দরকার! এ সব ভেবে কিছুই চায়নি।
বিয়ের পরে জমান টাকা দিয়ে কোনোরকম চলছে জামাল। এভাবে বেশিদিন চলা যাবে না। সকালে অফিসের নাম করে বাইরে বের হয়। সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে।
জামাল ভেবেছিল চৌধুরী বাড়িতে উঠে গেল খরচ আর লাগবে না। ঘটকের টাকাটাও চৌধুরী দিয়ে দিবেন। কিন্তু এমন কিছুই হলো না। হাতে টাকাও বেশি নেই। এভাবে কয়দিন চলবে জামাল জানে না!
জামাল ঘটকের বাকি পঞ্চাশ হাজার টাকা শোধ করল না। ঘটক ফোন দিলে ধরে না। পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। ডেলিভারির কাজটাও আবার শুরু করতে হবে।
অন্য এক এলাকায় জামাল এখন ডেলিভারির কাজ করে। এক জায়গায় ডেলিভারিতে দিতে এসে দাঁড়িয়ে আছে জামাল। সামনের একটা দোকানে টিভি তে খবর চলছে, র্যাব একজন ভুয়া ঘটক ধরেছেন। ভুয়া পেশা দেখিয়ে মানুষের বিয়ে দেন। জামাল দেখল, ঘটক আর কেউ না রইস ঘটক। জামালের একটু ভালো লাগছে! যাক বেটা ধরা খেয়েছে। এখন আর ওকে পালিয়ে বেড়াতে হবে না। চৌধুরীর মেয়ের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে। এখন নিশ্চয়ই চৌধুরী নিজের মেয়ের জামাই কে পুলিশে ধরিয়ে দিবেন না।
ঘটক রইসের কাছ থেকে জানা গেল চৌধুরীর মেয়ের বিয়েও সে করিয়েছে। ছেলে ভুয়া অফিসার সেজে বিয়ে করেছে এ খবর আর গোপন থাকল না।
সাংবাদিকরা চৌধুরীর বাড়িতে হাজির হলো। রাজন চৌধুরী কে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করল,” স্যার, আপনি খোঁজ খবর না নিয়ে এমন একটা ভুয়া অফিসের সাথে মেয়ে বিয়ে দিলেন?”
চৌধুরী সাহেব বললেন, ” ঘটকের কথায় আমি বিশ্বাস করেছিলাম। খুব একটা খবর নেয়া হয়নি!”
“আপনার মতো এত বড়ো একজন ব্যবসায়ী মেয়ের বিয়ে দিলেন ভালো করে খবর নিলেন না?”
চৌধুরীর সাহেব বললেন,” আপনারা একটু ভুল জানেন। আসমা আমার মেয়ে না। আমার বাড়ির কাজের মেয়ে!”