রঞ্জু ওর গার্লফ্রেন্ড নিশি কে কল দিয়ে বলল, “বাবু আজ বের হতে পারবা?”
“কেন?”
“তোমাকে খাওয়াতাম। সব সময় তো তুমিই আমাকে খাওয়ায়। আজ আমি তোমাকে খাওয়াব।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ, তুমি জলদি চলে এসো। আমি টিউশনি শেষ করে মালিবাগ মোড়ে থাকব।”
নিশির মনটা ভালো হয়ে গেল! যাক একদিন অন্তত রঞ্জু ওকে খাওয়াবে। হয়ত কিছু গিফট টিফট দিবে। সুন্দর করে সেজেগুজে নিশি বাসা থেকে বের হলো।
নিশি দাঁড়িয়ে আছে মালিবাগ মোড়ে। রঞ্জু এখন আসেনি। একা দাঁড়িয়ে থাকতে নিশির একটু খারাপ লাগছে!
টিউশনি শেষ করে বের হতে রঞ্জুর একটু দেরি হয়ে গেল। নিশি কে আজ খাওয়াতে হবে! হয়ত গিফটও দিতে হবে। অনেকগুলো টাকা খরচ হয়ে যাবে। নিশি বড়োলোকের মেয়ে রঞ্জুর অবস্থা বুঝতে পারে না!
নিশি দেখল রঞ্জু হেঁটে হেঁটে আসছে। ওকে দেখতে বেশ ভালো লাগছে! রঞ্জু কাছে এসে বলল, “কখন এসেছ?”
“দশমিনিট হবে।”
“কোথায় যাবে বলো?”
নিশি একটু হেসে বলল, “তুমি বলো?”
“আচ্ছা চলো বসুন্ধরায় যাই। তুমি অনেকদিন থেকে একটা মোবাইলের কথা বলছ। তোমাকে একটা মোবাইল কিনি দিই। তারপর দুইজনে একটা রেস্টুরেন্টে খাব। তুমি চাইলে আমরা একটা মুভিও দেখতে পারি।”
“ওয়াও! তুমি আমায় মোবাইল কিনে দিবা? আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমার যে কী ভালো লাগছে! “
“কী বিশ্বাস হয় না?”
রঞ্জু মানিব্যাগটা বের করে নিশির সামনে ধরল।” দ্যাখ, আমার কাছে আজ কত টাকা।”
নিশি দেখল রঞ্জুর মানিব্যাগে অনেকগুলো এক হাজার টাজার নোট দেখা যাচ্ছে। নিশির খুব ভালো লাগছে! এতদিন ভেবেছিল রঞ্জু একটা ফকির! কিন্তু না রঞ্জুর মনটা বড়ো আছে।
রঞ্জু মানিব্যাগটা নিশির হাতে দিলো। “নাও দেখ।”
নিশি মানিব্যাগটা হাত বাড়িয়ে নিলো। রঞ্জু বলল,” তুমি দাঁড়াও, আমি একটা রিকশা ঠিক করি।”
রঞ্জু রিকশা ঠিক করার জন্য রাস্তার দিকে এগিয়ে গেল। এ সময় আচমকা একটা মোটরসাইকেল এলো। মোটর সাইকেলে দুইজন ছেলে বসা। পিছনে বসা ছেলেটা চিলের মতো নিশির হাত থেকে মানিব্যাগটা ছিনিয়ে নিলো।
নিশির চিৎকার শুনে রঞ্জু মোটরসাইকেলের পিছু নিলো। অনেকটা পথ দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে গেল! মোটরসাইকেল হাওয়া হয়ে গেল।
নিশি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল ঘটনাটা! কেন যে সে রঞ্জুর মানিব্যাগটা নিলো!
রঞ্জু মনখারাপ করে বসে রিকশায়। নিশি জোর করে নিয়ে আসল বসুন্ধরায়। একটা মোবাইল কিনল ওরা। টাকা নিশি দিলো।
দুইজনে খাওয়া-দাওয়া করল। রঞ্জুর মনটা এখন কিছুটা ভালো হয়েছে। যদিও সব খরচ নিশিই করছে। কী আর করার!
ফেরার সময় নিশি রঞ্জুর হাতে বিশ হাজার টাকা দিলো।
রঞ্জু অবাক হয়ে বলল, “এত টাকা কেন?”
“বাঃ! রে তোমার সব টাকা তো হারিয়ে গেল। এখন তুমি চলবে কী করে? একটুও মনখারাপ করো না। তুমি তো আমাকে দিতে চেয়েছিলে তা-ই না? “
রঞ্জু টাকা নিলো। যদিও টাকা নিতে তার ভালো লাগছে না!
রঞ্জু বসে আছে চায়ের দোকানে। আজকে রঞ্জু খাওয়াবে। তার ভালো আয় হয়েছে। কত হয়েছে তা অবশ্য বন্ধুরা জানে না।
মিলন বলল, “শালা! অমন দৌড় দিলি কেন?”
“আমার তো মনে হয়েছে বাইক ধরে ফেলবি!”
“দৌড়টা না দিলে নিশির মনটা গলতা না! এমনিতেই দুইমাস ধরে ঘুরাচ্ছি একটা মোবাইল কিনে দিব বলে! “
রইস বলল,” তোর কপালটাই ভালো! এমন মেয়ে পটাতে পেরিছিস।”
মিলন একটু হাসি দিয়ে বলল, “খেলাটা ভালোই ছিলো মামা! তোর জন্য এত বড়ো রিস্ক নিলাম কিছু মাল পানি ছাড়।”
রঞ্জু উঠে দাঁড়াল। “আমাকে একটু বের হতে হবে রে।”
“বললেই হলো! কোনো কথা শোনব না সোজা টাকা বের কর।”
“না মানে! নিশি কল দিয়েছে, ওর না-কি পরিচিত পুলিশ অফিসার আছে। ওনার কাছে আমাকে নিয়ে যাবে। রাস্তার বাইক চোর ধরা নাকি কোনো ব্যাপার না!”
“কোনো কিছু দেয়া লাগবে না দোস্ত। শুধু এ সব ঝামেলা যেন না হয় দেখিস।”
রঞ্জু বলল, “চায়ের বিলটা দিয়ে যাব?”
“না তুই যা আমরাই দিব! “