Hercules নায়ক নাকি ভিলেন এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।আজ আমদের গল্প এই মহান ব্যক্তি Hercules কে নিয়ে। চলুন দেখি কে এই হারকিউলিস কেনই বা তাকে নিয়ে এত গুঞ্জন।
যুগে যুগে কিছু মানুষের আগমন ঘটে যারা তাদের সাহস,বিচক্ষণতা ও বাহুবলের মাধ্যমে বীরত্বের পরিচয় দিয়ে থাকে।একটি জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে হলে সঠিক দিক নির্দেশনার প্রয়োজন হয়।এই মানুষগুলোইতো সে দায়িত্ব পালন করে। তাঁরাই মহাবীর আর তাদের নিয়েই তৈরি হয় নানা গল্পকথা, যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে।
প্রিয় পাঠক বলছিলাম ২০১৪সালে মুক্তি পাওয়া Hercules মুভি এর কথা।
বীর তাঁর কর্মের মাধ্যমেই নিজের পরিচয় দিয়ে থাকে, ঐশ্বরিক কোন পরিচয় মুখ্য নয়,মুখ্য হচ্ছে সে মানুষের কাছে কতটা মর্যাদা পেয়েছে,বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করতে পেরেছে।
বর্ষন মূখ এক রাতে গ্রিস দেশের থিবস নামক নগরীতে জন্ম নেয় Hercules নামক এক শিশু।গ্রিক পূরাণ মতে আকাশ ও বর্জ্রের দেবতা জিউস; আর এই জিউসের পুত্রই হচ্ছে Hercules । গ্রিসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বীর হারকিউলিসের জন্ম হয় দেবতা ও মানুষের সম্মিলনে।দেবতা পুত্র হলেও তাঁর জন্ম হয়েছিল মানুষের গর্ভে। এই অবৈধ সন্তান হারকিউলিসকে জিউসের স্ত্রী দেবী হীরা মেনে নিতে পারলেন না।দেবী হিরাও ছিলেন প্রচুর ক্ষমতা ধর, স্বামির এই অবৈধ্য সম্পর্কের জন্য তিনি হারকিউলিস কে সহ্য করতে পারতেন না।যদিও হারকিউলিস এর মা তাঁর নাম রেখেছিল হীরার উপর ভিত্তি করেই,হারকিউলিস অর্থ হীরার গর্ব। কিন্তু এতেও দেবী হীরার মন নরম হলো না।
Hercules কে হত্যা করার জন্য দেবী হীরা প্রেরণ করলো দুইটি বিষধর সাপ। কিন্তু হারকিউলিস ছিল দেবরাজের সন্তান তাই সেও পেয়েছিল ঐশ্বরিক কিছু ক্ষমতা এবং সে ছিল প্রচন্ড শক্তিশালী। তাঁর হাতেই সাপ দুইটি মারা যায়।দেবী হিরার রাগ এতে আরো বেড়ে যায়,সে হারকিউলিসকে আর নিত্য নতুন উপায়ে মারার চেষ্টা করতে থাকে।
সময়ের সাথে Hercules যুবকে পরিণত হলে,সব দেবতারা মিলে হারকিউলিসকে দিলেন বারটি কাজের পরিক্ষা। এগুলোতে সফল হয়ে সে তাঁর বীরত্বের পরিচয় দিতে পারলো।আর দেব রাণী হিরাও তাঁর উপর থেকে আক্রমন সড়িয়ে নিলেন। হারকিউলিস একাধারে কয়েকটি মাথাওয়ালে সাপ কেটে ফেলল।বনের সেরা হিংস্র নেকড়ে টিকেও মেরে ফেললো।আর সবশেষে দুর্ভেদ চামড়ার অধিকারী বিশাল এক সিংহকে তাঁর মুখ চিড়ে মেরে ফেললো।আর এই সিংহরে দাঁত দিয়ে সে বানিয়ে নিল নিজের গলার লকেট।হারকিউলিসের এই লোকগাথা গ্রিস ছাড়াও আশাপাশের রাজ্যগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছিল।
গ্রিসের মেসেডনিয়া উপকূলে জলদস্যুরা এক তরুন বালককে বেঁধে রেখেছিল।তরুন ছেলটি ছিল হারকিউলিসের ভাতিজা। সে জলদস্যুদের হারকিউলিসের এই গল্প শুনাচ্ছিল। জলদস্যুরা এসব শুনে হাসি টাট্টা শুরু করে।পরে তারা ছেলেটিকে মেরে ফেলতেই ধরে আর তখনই সেখানে Hercules চলে আসে। Hercules তাঁর সাথিদের নিয়ে জলদস্যুদের সাথে যুদ্ধ করে এবং তাদের মেরে ফেলে।সে তাঁর ভাতিজাকে ওই জলদস্যুদের হাত থেকে বাঁচিয়ে নেয়।
জলদস্যুদের হত্যার বিনিময়ে হারকিউলিসরা অনেক স্বর্ণ্মুদ্রা পায় এবং রাজার পক্ষ থেকে রাজভোগের ও নিমন্ত্রণ পায়।বিলাসি সে খাবার গ্রহণের সময় সেখানে রাজা কটিস এর মেয়ে রাজকুমারী এরজিনিয়া সেখানে আসে এবং বলে হারকিউলিসকে তাদের প্রয়োজন। রাজা কটিসের সাথে তাঁর সেনাপতি সহ কাছের মানুষজন ষড়যন্ত্র করছে,গৃহযুদ্ধে তাদের ভূমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রামের নিরিহ মানুষজন সর্বহারা হচ্ছে।
Hercules ও তাঁর সাথীরা তাদের হয়ে যুদ্ধ করে রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে এনে দিতে পারলে তাদের ওজনের সমপরিমাণ স্বর্ণ মুদ্রা পুরস্কার দেয়া হবে।রাজকুমারির প্রস্তাবে রাজি হয়ে হারকিউলিস তাঁর সাথে ত্রেসে চলে আসে। ত্রেসের রাজ প্রাসাদের সামনে দেবী হীরার মুক্তিছিল যা নির্মাণ করতে একহাজার শ্রমিকের পাঁচ বছরের বেশি সময় লেগেছিল।
রাজকুমারী বলে লোক মুখে শুনা যায় দেবী হীরা হারকিউলিসকে মারার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে অথচ তাঁর সামনেই থাকা মানুষ হারকিউলিস বেঁচে গিয়েছিল। এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য বিষয়।হারকিউলিস এর এই লোকগাথা রাজ্যের অনেকেই মেনে নিতে পারছিলনা, তারা এটা কোন ভাবেই মানতে নারাজ যে হারকিউলিস দেবরাজ জিউসের সন্তান।
এই রাজ্যে হারকিউলিসের সবচেয়ে বড় ভক্ত ছিলেন রাজকুমারির ছোট্র ছেলে।সে হারকিউলিসের সব গল্পই জানতো।
রাজার সাথে হারকিউলিসের সাক্ষত হয়, রাজা জানায় তাদের দূর্গটিই ছিল ত্রেসের সুউচ্চ স্থান কিন্তু এখন তা দুইভাগে বিভক্ত হয়েছ।এর একটি তাদের দক্ষলে থাকলেও অন্যটি রিসেস নিয়ে রেখেছে।রাজার প্রিয় সেনাপতিই ছিলেন রিসেস কিন্তু সে রাজাকে ধোকা দিয়েছে।কিছু সৈন্য নিয়ে সে তার নিজের দল প্রতিষ্ঠা করেছে।লোকে বলে সে জাদুকর,সে তার যাদুকরী কথা বার্তায় সে মানুষকে বশ করে ফেলে।সে ভয়ঙ্কর এক দলের নেতৃত্ব দেয় যাদের দেহ অর্ধেক মানুষ অর্ধেক ঘোড়া দিয়ে তৈরি, তারা অশ্ব মানব।তাদের প্রতিহত করা সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
এতো দিনের যুদ্ধে রাজার সেনাবাহিনী অনেক কমে গেছে তাই যুদ্ধের জন্য এখন গ্রামের কৃষক ও কিছু ব্যাবসায়িকে নিয়োগ দেয়া হবে।আর এদেরকেই হারকিউলিস যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিবে।প্রতিনিয়ত রিসেসের তান্ডবে সাধারণ মানুষ সর্বহারা হয়ে রাজার কাছে এসে সাহায্য চাচ্ছে।যতো দ্রুত সম্ভব এই রেসেসকে দমাতেই হবে। হারকিউলিসের গল্পগাঁথা সত্য হোক আর না হোক এই বিশ্বাসটাই অনেক বড় আশা যার জন্য হলেও মানুষ লড়াইয়ের উদ্দিপনা পাবে।
বীরের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষও বিধ্বংসী যুদ্ধে জয়ী হতে পারে।পরের সকাল থেকেই বাহিনী তৈরির কাজ শুরু হয়। Hercules তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সময় বলে, ঢাল দিয়ে তোমাদের প্রথমে দূর্ভেদ্য দেয়াল তৈরি করতে হবে যাতে তোমরা শত্রুদের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকতে পার।হারকিউলিসের এক সাথির আঘাতে সৈন্যদের ঢাল দিয়ে তৈরি সে দেয়াল দ্রুতই ভেঙ্গে যায়। Hercules বলে ঢালই তোমাদের রক্ষা কবচ।যুদ্ধে টিকে থাকার উপরই জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়।
গ্রামের সাধারণ মানুষদের যোদ্ধাই পরিণত করতে সময়ের প্রয়োজন।কিন্তু রিসেস তার বাহিনী নিয়ে দ্রুতই পার্শবর্তী আদিবাসী গ্রামে হামলা করতে যাচ্ছে, রাজা গুপ্ত চরের মাধ্যমে এই খবর পেয়েছে।এই খবর যদি সত্য হয়ে থাকে তবে রিসেসের পরের টার্গেট তাদের রাজ্য; তাই দ্রুত সৈন্য বাহিনী গঠন করতে হবে।হারকিউলিস বলে দ্রুত সম্ভব নয়,এতে দূর্বল বাহিনী গঠিত হবে।ফলে সৈন্যবাহিনীর সাথে রাজ্যের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
রাজা বলেন যতো দ্রুত আমরা শিত্রুদের পরাজিত করতে পারব ততই দ্রুত রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তারা সবই সিদ্ধার্ন্ত নেয় পরের সকালে তারা পার্শ্ববর্তী গ্রামে যাবে;যেখানে রেসেস আক্রমনের জন্য আসতেছে।গ্রামের আদিবাসীদের নিয়ে তারা বেশ শক্তিশালী হতে পারবে,আর এতে রেসেসদের ও প্রতিহত করা সহজ হবে।
রাতে রাজকুমারির ছেলে হারকিউলিসের সাথে দেখা করতে আসে।সে বলে সেও বড় হয়ে হারকিউলিসের মতো রাজ্য রক্ষা করবে।এটা শুনে Hercules অনেক খুশি হয় এবং তার গলায় থাকা সিংহের দাঁতের লকেটটি ছেলেটিকে উপহার হিসাবে দেয়।হারকিউলিস এটি দানবিয় সিংহের পরাজয় ঘটিয়ে পেয়েছিল, যা বীরত্বের স্মৃতি।
পরের সকালে সকল সৈন্যদের একত্রিত করা হয়। Hercules বলে তোমাদের ঢাল হলো তোমাদের আশ্রয়স্থল,যখন তোমরা ঘুমাবে এই প্রতিরক্ষা ঢাল তোমাদের চাদর হবে।আর যখন তোমরা লড়াই করবে এটি তোমাদের প্রাণ রক্ষা করবে। যতক্ষন দেহে প্রাণ আছে এই ঢালের দেয়াল ভাঙ্গতে দেয়া যাবেনা।কথাগুলো মনে রেখ তাহলেই আমরা বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে পারব।
সৈন্য বাহিনী নিয়ে হারকিউলিস পার্শ্ববর্তী গেম চলে আসে।সেখানে কিউই ছিলনা তবে সেখানে কিছু মাথা কেটে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।রাজা বলেন,এর মানে হচ্ছে রিসেস আমাদের আগেই এখানে চলে এসেছে আর এসব খুলি দিয়ে আমাদের ভয় দেখানোর চেস্টা করছে।তারা আরো সামনে এগিয়ে যায়,যেয়ে দেখে নানা লাশ সেখানে পড়ে আছে। হারকিউলিসের মনে সংশয় দেখা দেয়,কেননা এখানে কিছু লাশ নতুন আর কিছু লাশ পুরাতন।হারকিউলিস বলে এরকম তো হবার কথা না,এর মানে হচ্ছে এটা একটা ফাদ।আর তখনই লাশ ভান করে থাকা আদিবাসিরা গর্জে অঠে,তারা হারকিউলিসদের চতুরদিক থেকে ঘিরে ফেলে।
হারকিউলিস এতে অবাক হয়,সে বলে আমরা তো তাদের সাহায্যের জন্যেই এসেছি তাহলে তারা আমাদের উপরেই আক্রমন করছে কেন।রাজা বলেন রিসেস হচ্ছে ছলনাময়ী জাদুকর, সে আমাদেরকে এই আদিবাসীদের কাছে শত্রু বানিয়ে দিয়েছে। হারকিউলিসের আদেশে সৈন্যরা প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরি করে।এরপর হারকিউলিসের জোড়ালো এক ঘুষিতে যুদ্ধের আরাম্ভ হয়।হারকিউলিসের সাথিরা একে একে সকল হিংস্র আদিবাসীদের কুপোকাত করতে শুরু করে। সৈন্যবাহিনী প্রতিরক্ষা দেয়ালের মাধ্যমে রাজাকে চারেদিক থেকে ঘিরে রেখেছিল।কিন্তু সদ্য সৈন্যতে পরিণত হওয়াই তারা আদিবাসিদের সাথে পেরে উঠিছিলনা।এতে রাজার অনেক সৈন্য মারা যায় এবং প্রতিরক্ষা দেয়ালও নিশ্বেস হয়ে যায়।
হারকিউলিস মহাবীরের মতো লড়াই করে যাচ্ছিল,সে বুঝতে পারে রাজার বাহিনী সংকটে।তাই সে ও তার এক সাথি যোদ্ধা মিলে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে আসে যার একপাশে ধারালো তরোয়াল ছিল আর অন্যপাশ দিয়ে হারকিউলিস বৃত্তাকার পথে ঘুরে আদিবাসীদের কুপকাত করে রাজাকে রক্ষা করে।অবশেষে আদিবাসীদের দমিয়ে যুদ্ধে জয় লাভ সম্ভব হয়।
কিন্তু এতে রাজার অর্ধেকের বেশি সৈন্য নিহত হয়;যার ফলে রাজা বেশ চিন্তিত ছিল।এতো ক্ষতি হয়ে গেল অথচ তারা রিসেসকে এখনো ছুতেই পারলোনা। হারকিউলিস তখন বলে আমি আগেই বলেছিলাম সৈন্যরা এখনো প্রস্তুত হয়নি যুদ্ধে গেলে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে।এবার যুদ্ধে যাবর আগে সৈন্যদের ভালোভাবে গড়ে তুলতে হবে।
হারকিউলিস বিশ্রামের সময় প্রায়ই দুর্স্বপ্ন দেখত।সে দেখত তার পরিবার নিহত হয়ে পড়ে আছে আর তিন মুখওয়ালা এক নেকড়ে তাদের খুপড়ে খাচ্ছে।গ্রিক পূরাণ মতে এই নেকড়েকে অন্ধকারের দেবতা বলা হয়।
লোকমুখে শুনা যায় হারকিউলিসের বসবাস ছিল গ্রিসের এথেন্সে।কোন এক কারণে সে নিজেই তার পুরো পরিবারকে হত্যা করেছিল।এজন্য সবাই হারকিউলিসকে হিংস্র ভাবতো।এজন্য এথেন্সের রাজা রাজ্যের সকলের কথা চিন্তা করে হারকিউলিসকে সেখানে থেকে বিতাড়িত করে দেয়। কিন্তু হারকিউলিস কেন তার পুরো পরিবারকে হত্যা করেছিল এ বিষয়ে সে কিছুই মনে করতে পারেনা।আর তাই হয়তো সে প্রতিনিয়ত ভয়ঙ্কর সব স্বপ্ন দেখতো।
হারকিউলিসের সাথীদের মধ্য একজন ছিল জ্যোতিষী , সে বলে এথেন্স থেকে চলে আসার সময় আমি ওরাকেলস(ওরাকেলস বলতে এমন কাউকে বুঝায় যে দেবতার সাথে কথা বলতে পারে) এর সাথে কথা বলেছি।সে জানিয়েছে হারকিউলিস এ ধরনের স্বপ্ন দেখতেই থাকবে যতদিন না সে তার অসম্পুর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করবে। সে হারকিউলিসকে আরো বলে তোমার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে আর পৃথিবীতে বিদ্যামান ওই নেকড়ের মতো পিশাচ মানুষদের শাস্তি দিতে হবে।
রাজার সৈন্যদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়,হারকিউলিস তার সাথীদের নিয়ে সৈন্যদের যুদ্ধের নানা বিষয়ে পারদর্শি করে তোলে।তাদের সৈন্য থেকে যোদ্ধায় পরিণত করা হয়।গুপ্তচরের মাধ্যমে খবর পাওয়া যায় রিসেসরা দূরের এস্টিকাস পর্বতে ঘাটি বেধেছে।সৈন্যরা যেহেতু প্রস্তুত হয়ে গেছে তাই হারকিউলিস তাদের নিয়ে এস্টিকাস পর্বতের দিকে রওনা দেয়।আর এখানেই তারা প্রথম রিসেস বাহিনীর ঝলক পায়,যার দেখতে আশ্বমানবের মতো।
লোকমুখে শোনা কথা শুধু যে গুজবই ছিল তা হারকিউলিস বুঝতে পারে।কেননা এদের দূর থেকে দেখে আশ্ব মানব মনে হলেও এরা অশ্বমানব না।এরাও আর দশ জনের মতোই সাধারন মানুষ।
রিসেস দের সৈন্য সংখ্যা রাজার সৈন্য সংখ্যার তিনগুন ছিল।রিসেস হারকিউলের সামনে এসে বলে, জিউস পুত্র হারকিউলিস তুমি দেবতার পুত্র হতে পারো কিন্তু এতো সৈন্যের ভিড়ে তুমি পেড়ে উঠবেনা।তাই সময় থাকতে এখনি ফিরে যাও, এতে তোমরা জানে বেঁচে যাবে।হারকিউলিস বলে রিসেস, আমার চোখে কি তুমি মৃত্যুর ভয় দেখতে পাচ্ছ।এরপর হারকিউলিসের এক তীব্র গর্জনে শুরু হয় যুদ্ধ।রিসেসরা সংখ্যায় অনেক বেশি হলেও হারকিউলিসের নেতৃত্বে তারা ধরাশায়ি যুদ্ধে মেতে উঠেছিল। হারকিউলিস আর তার সাথি যোদ্ধারা বড়াবড়ের মতই বিরত্বের পরিচয় দেয়।আজস্র তীরের আঘাত,ছুড়ি তলোয়ারের কুপঘাত এবং হারকিউলিসের বর্মের চোটে একের পর এক রিসেস বাহিনী বিধ্বংস হচ্ছিল।অবশেষে প্রলয়কারী এই যুদ্ধে হারকিউলিস বাহিনী অর্থাৎ রাজা কটিস জয় লাভ করে।
রিসেসকে বন্দি বানানো হয় এবং তাদের পাথর ছুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। হারকিউলিস রিসেসের কাছে আসলে সে নিজেকে নির্দোষ দাবী করে।সে আরো বলে গ্রামের কোন মানুষের উপরে সে নির্যাতন করেনি,এমনকি এর বেশির ভাগ ঘটনা তার ওজানা।রিসেস আরো বলে হারকিউলিস তুমি এমন এক রাজাকে সাহায্য করেছ যে পুরো জাতিকে তার দাষ বানিয়ে রেখেছে।তুমি ভুল দলের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করেছ, ভেবে দেখ এতো বড় রাজা কেন তোমাকে ভাড়া করলো,তার নিজের বাহিনী কোঠায়,কেন তোমার মাধ্যমে তার নতুন বাহিনী গঠন করতে হল, কেন ওইদিন আদিবাসীরা তোমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল।
রাতে বিজয়ী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।এখানে রাজার মাথায় মুকুট পড়ানো হয়,সে এখন একাধারে পুরো ত্রেসের রাজা হয়েছে।রিসেস বলে এই ত্রেস কোন রাজা বা দেবতার নয়,ত্রেস হচ্ছে এখানকার সাধারণ মানুষের।সবাই রেসেসকে কু নজরে তাকালেও রাজকুমারির বিষয়টা ছিল পুরো আলাদা; তাকে রিসেসের প্রতি দয়া দেখাতে দেখা যায়।হারকিউলিসের এতে সন্দেহ হয়,সে রাজকুমারীর কাছ থেকে জানতে পারে এই রাজ্যের রাজা ছিল স্বামী। রাজকুমারীর বাবা তাকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলেছে,তারপর সে এই রাজ্যের রাজা হয়েছেন।আর রিসেস ছিলেন তার স্বামির সেনাপতি,সে এসব মেনে নিতে পারেনি।তাই রিসেস আর কটিসের মধ্য যুদ্ধ শুরু হয়।আর রিসেস কোন গ্রামবাসিকে হত্যা করেনি,এসব তার বাবাই ছদ্মবেশে করেছে।রাজকুমারি মুখ বুজে সব কিছু সহ্য করে কেননা কটিস তার সন্তানকে জিম্মি করে রেখেছে।
এরপর হারকিউলিসকে রাজার কাছে ডাকা হয়,হারকিউলিস গিয়ে বলে রাজা কটিস তুমি একজন বিশ্বাস ঘাতক,তুমি আমাকে তোমার লালসার পথে ব্যবহার করেছ।কটিস তখন বলে তুমি আমাকে এসব কি ভাবে বলো,তুমি নিজেও তো লোভী। অধিক স্বর্ণের লোভে তুমি বাছবিচার ছেড়ে তুমি আমার দলে যোগদান করেছে।একজন বীর তো কখনই লোভে পড়ে এসব করেনা।আর আমাকে তুমি ন্যায় অন্যায় বলছ,তোমার কাজ এখানেই শেষ, তুমি স্বর্ণ নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে পার।
হারকিউলিস সেখান থেকে তার পাওনা স্বর্ণ নিয়ে বেড়িয়ে পরে।সে যখন চলে যাচ্ছিল গ্রামের সবাই তখন তার দিকে করুনার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল।তাদের দিকে চেয়ে হারকিউলিসের নিজেকে অপরাধি মনে হচ্ছিল।কেননা এসব কিছু তো তার মাধ্যমেই হয়েছে, তাই সে সির্দ্ধান্ত নেয় এসব অপরাধের দায়ভার সে নিজ কাঁধ থেকে তুলে নিবে।সে ফিরে যাবে এবং গ্রামবাসীকে ওই লোভী রাজার হাত থেকে রক্ষা করবে।তাদের সাথীদের মধ্য সবাই যেতে চাইলেও একসাথি যেতে চায়না।সে বলে এটা বোকামী, ওরা এখন সংখ্যায় অনেক আর প্রশিক্ষিত ওদের সাথে পেড়ে ওঠা এখন সম্ভব নয়; তাই সে ওখান থেকে চলে যায়।রাতে হারকিউলিস তার সাথীদের নিয়ে রাজপ্রাসাধে প্রবেশ করে।কিন্তু প্রবেশের সাথে সাথেই তাদের চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলা হয় কেননা রাজা কটিস আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল যে হারকিউলিস আবার ফিরে আসবেই। ওখানে রাজকুমারিকেও নিয়ে আসা হয় কেননা সেনাপতি তাকে হারকিউলিসের সাথে কথা বলতে দেখেছিল।সেনাপতি জানায় রাজুকুমারি হারকিউলিসকে রাজপ্রাসাধের গোপন সব কিছু জানিয়েছে। তাই হারকিউলিস রাতের আঁধারে রাজপ্রাসাধের ভিতরে প্রবেশ করতে পেরেছে। এরপর রাজকুমারীর কাছ থেকে তার ছেলেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়।আর হারকিউলিসের মাথায় আঘাত করে তাকে সেন্সলেস করা হয়। সেন্স ফিরলে হারকিউলিস দেখে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।সেখানে এথেন্সের রাজা ইথিরিয়াসকেও দেখা যায়; পাশে থেকে রাজা কটিস বলে রাজ্য জয় করতে সৈন্যর দরকার পরে আর সম্রাজ্য বিস্তার করতে হলে নানা শক্তিশালী বন্ধু তৈরি করতে হয়।হারকিউলিস বুঝতে পারে ইথিরিয়াস আর কটিস হাত মিলিয়েছে।তার এখন পুরো গ্রিসে রাজত্ব করবে।
ইউথিরিয়াস বলে সে তার স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করেছে, আর তাদের হত্যা করা হয়েছিল তিন হিংস্র নেকড়ে দাঁড়া, যা হারকিউলিস স্বপ্নে দেখত।এথেন্সে হারকিউলিসের সুনাম অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়েছিল।আর এই সুখ্যাতির বলে হারকিউলিস যেন কখনো এথেন্সের সিংহাসনে বসতে না পারে এজন্য ষড়যন্ত্র করা হয়।হারকিউলিসকে নেশাগ্রস্ত করিয়ে তার স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যা করা হয়।আর এই হত্যা ক্যান্ডের দায়ভার চাপিয়ে দেয়া হয় হারকিউলিসের উপরেই।এসব শুনে হারকিউলিস ক্রোধে ফেটে পড়ে কিন্তু সে দৃড় শিকলে বাঁধা ছিল।
এরপর রাজকুমারী সহ একে একে সবাইকে বলিদানের জন্য বীয়ে আশা হোয়। তখন পাশেই বন্দি থাকা জ্যোতিষী সাথী বলে হারকিউলিস তুমি কি শুধু তোমার গল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে,নাকি সবাইকে উদ্ধার করে তোমার প্রতিশোধের জ্বালা মিটিয়ে নিবে।দেখিয়ে দাও কে তুমি কি তোমার পরিচয়; তৈরি কর এক নতুন গল্প যা ভবিষৎ প্রজন্ম মনে রাখবে চিরকাল।হারকিউলিস চিৎকার করে ওঠে শিকল ভেঙ্গে ফেলে,হিংস্র সেই নেকড়েকে ধরে চিড়ে ফেলে।এরপর সব সাথী যোদ্ধাদের নিয়ে প্রাসাদের সৈন্যদের ঘায়েল করে ফেলে।এরপর সে এথিরিয়াসের কাছে আসে, ইথিরিয়াস বলে আমি তোমার রাজা ছিলাম,তুমি আমাকে রক্ষার প্রতিজ্ঞা করেছিলে এখন দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দাও।হারকিউলিস তখন বলে উপরে গিয়ে আমার পরিবারের কাছে চেয়ে নিও।
এরপর হারকিউলিস সবার সাথে প্রাসাদের বাহিরে চলে আসে,এখানে রাজা কটিস তার বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে দাড়িয়েছিল।হারকিউলিস সৈন্যদের বলে যুদ্ধে তোমরা যেমন আমার কথা শুনেছিলে এখনও তেমনি শুনো;এই রাজা একজন বিশ্বাস ঘাতক।কটিস সৈন্যদের বলে বোকামি করনা,হারকিউলিস কোন দেবতা পুত্র নয়,সে শুধুমাত্র রক্ত-মাংসের গড়া একজন মানুষ।যে তার স্ত্রী সন্তানদের ও হত্যা করেছে,সে একজন লোভি।এরপর রাজকুমারীর সন্তানকে সেখানে নিয়ে আসা হয় এবং বলা হয় হারকিউলিস যদি মাথানত না করে তবে ছেলেটিকে হত্যা করা হবে।
আর তখনই হারকিউলিস এর সেই চলে যাওয়া সাথী চলে আসে এবং ছেলেটিকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নেয় এবং অসংখ্য তীরের আঘাত থেকে রক্ষা করে।এরপর হারকিউলিসের সাথিরা মিলে বিশাল আকারের প্রদিপগুলো নিচে ফেলে দেয় ফলে রাজার সৈন্যদের আগুনের বেড়াজালে আটকানো সম্ভব হয়।এদিকে বাচ্চাটিকে বাচাতে গিয়ে হারকিউলিসের প্রিয় সাথী তার হাতেই মারা যায়।হারকিউলিস গর্জে ওঠে,সে প্রাসাধের সামনে থাকা দেবী হীরার বিশাল মুক্তি সমস্ত শক্তি দিয়ে উপড়ে নিচে ফেলে দেয়। মুক্তিটি নিচে পড়ে ভেঙ্গে যায় আর ভাঙা মুক্তির চাপা পড়ে রাজা কটিস সহ আরো অনেক সৈন্য মারা যায়,রাজার বাকি সৈন্যরা এতে ভয় পেয়ে যায়।তার হারকিউলিসের এই দানবীয় রুপ দেখে বুঝতে পারে হারকিউলিস দেব রাজ জিউসের পুত্র হোক আর না হোক সে একজন প্রলয়কারী মহাবীর।তারা সবাই হারকিউলিস এর কাছে নিজেকে সোপে দেয়,চারপাশ হারকিউলিস ধনিতে মুখরিত হয়।
হতে পারে হারকিউলিস সাধারণ মানুষ কিম্বা হতে পারে সে দেবতা তুল্য একজন মহান বীরযোদ্ধা। এরকম আরো মুভির গল্প পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
আমদের গল্প যদি আপনাদের ভাললাগে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাবেন এবং বেশি বেশি বন্ধু দের সাথে শেয়ার করে আমাদের উৎসাহ দিবেন যেন আমরা আপনাদের জন্য নতুন নতুন গল্প নিয়ে আসতে পারি।