রাসূল (সা.) মেরাজের রাতে এক মহিলাকে দেখলেন যে তাকে লোহার শিক দ্বারা ঝুলান্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে। অতঃপর রাসূল (সা.) জিব্রাইল (আ.) কে জিজ্ঞাস করলেন, এই মহিলাকে কি কারণে এই ভয়াবহ শাস্তি দেয়া হচ্ছে? জিব্রাইল (আ.) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, এই মহিলাটি তার স্বামির(Husband) সাথে আশ্লীল ভাষায় কথা বলতো এবং সে তার স্বামিকে কথায় কথায় কষ্ট দিতো এবং তার নাফারমানি করতো।
মুখের কথার কারণে বিয়ের মতো এতো সুন্দর মজবুত বন্ধন কিন্তু আজকাল ভেঙে যাচ্ছে খুব নিমিষেই। দুজনেই ভালো কিন্তু একজনের আচরণ এতো খারাপ যে আরেক জন তা সহজে মেনে নিতে পারছেনা।
মুখের কথায় হয়তো শারীরিক কষ্ট পাওয়া যায়না,কিন্তু মানুষিক যে কষ্ট পাওয়া হয় তা তার হৃদয় ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এক কাজটি অনেক স্ত্রী করে থাকেন। মাঝে মাঝে স্ত্রীরা এমন কথা বলে বসেন যার কারণে নিজের অজান্তে স্বামীর (Husband) মনে অনেক কষ্ট দিয়ে থাকেন।
তাই চলুন বন্ধুরা আজকে আলোচনা করবো যে পাঁচটি কাজ বা কথা আপনি আপনার স্বামীকে (Husband) ভূলেও বলবেন না।তাতে আপনার স্বামী বেশি কষ্ট পায় আর যদি স্বামী কষ্ট পায় তাহলে সে নারী কস্মিন কালেও জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
আর স্বামী যদি খুশি থাকে তাহলে তার ব্যাপারে রাসুল(সা.) কি বলেছেন? আসুন জেনে নিই।
হজরত উম্মে সালমা (রা.) বর্ণনা করেন রাসূল(সা.) এরশাদ করেশেন, “যে মহিলা এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট সে যেন জেনে রাখে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।“ (তিরমিযী শরীফঃ১১৬১)
যে পাঁচটি কথা আপনার স্বামীকে বলবেননাঃ
১.স্বামির অর্থনৈতিক ব্যাপারে কটাক্ষ না করা।
সংসার এবং স্ত্রী চালানোর মতো অর্থ যদি কোন পুরুষের না থাকে তাহলে তিনি নিজেই অনেক বেশি মাত্রায় বিষন্ন এবং হতাশ থাকেন।নিজের জীবনের উপরে তার প্রতি নিয়ত হতাশা এবং আত্মক্ষেতি মনোভাব সৃষ্ট হয়। তার উপর যদি স্ত্রী হয়ে আপনি তার অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে কিছু বলে ফেলেন, তাকে কটাক্ষ করেন, তাকে ছোট করেন তাহলে তার আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায় ওনিজের প্রতি আস্থা নষ্ট হয়ে যায়।মানুষিক কষ্ট পেতে থাকে অনেক বেশি।
২. অন্য কারো সামনে স্বামীর (Husband) কোন কিছু নিয়ে মজা না করা, তাকে কারো কাছে ছোট না করা।
পুরুষেরা এই কাজটি একেবারেই পছন্দ করেনা; বরং এই কাজের কারণে অনেক বেশি কষ্ট পেয়ে থাকেন। স্ত্রী যতোই কাছের মানুষ হয়ে থাকেনা কেনো স্বামির কোন বিষয় নিয়ে যদি মজা করে তখন তা অনেক সময় মজার পর্যায়ে থাকেনা। তখন সে এই বিষয়ে অন্তরে অনেক বেশি আঘাত পেয়ে যায়।
এই ব্যাপরটি নিয়ে সে নিজেকে ছোট ভাবতে থাকেন এবং অনেক স্বামী মনে মনে তার স্ত্রীকে লানত করতে থাকেন।তাই এই কাজটি করে আপনি মজা পেলেও আপনার অজান্তে আপনার স্বামী অনেক কষ্ট পান।যদিও সে প্রকাশ্যে হাসি তামাশা দিয়ে ব্যাপরটি উড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু ব্যাপরটি আসলে উড়ে যায়না। এই কর্মকাণ্ড, স্ত্রীর এই তাচ্ছিলতা প্রতিটী স্বামির হৃদয়ে ছুরিকাঘাতের মতো বিদ্ধ হয়ে যায়।
৩.. স্বামির কাজের ব্যাপারে কটাক্ষ না করা।
আপনার স্বামী (Husband) আপানকে ভালবাসেন বলেই আপনার জন্য কিছু করতে উতসাহী হন। কিন্তু আপনি যদি বার বার তার কাজের ভূল ধরে তা নিয়ে কটাক্ষ করতে থাকেন এবং ভূলগুলোকে সহজে মেনে নিতে নাআ পারেন, বার বার ভূলের আপনি তাকে দোষারোপ করতে থাকেন। তাহলে তিনি কাজের উৎসাহ তো হারাবেনই উপরোন্তে বেশ কষ্ট পাবেন। তার কাছে মনে হবে তিনি যাই করুন না কেন আপনার কাছে তার কোন মূল্য নেই। তাই স্বামী যা করেন তার প্রশংসা করুন।
যদি ভূল কাজ করে তা নিয়ে কটাক্ষ করার কিছু নেই।আপনি সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিন।তার ভূলটা ভাল করে বলে ধরিয়ে দিন এবং পাশাপাশি তাকে উৎসাহ দিন।
৪.. সব ব্যাপারে অভিযোগ করা।
প্রিয় পাঠক সব কিছুর ব্যাপারে যদি স্বামির কাছে অভিযোগ করতে থাকেন তাহলে তিনি মনে অনেক কষ্ট পেয়ে থাকেন।কারণ আপনার অভিযোগ তিনি নিজেকে অনেক বেশি ছোট ভাবতে থাকেন।
তাই তার কাছে ছোটখাটো সব বিষয়ে অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকুন।স্বামি নিজের আত্মবিশ্বাস হারাতে থাকেন যদি আপনি বেশি বেশি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
৫.. ছোট বড় সকল বিষয়ে অভিযোগ করা।
রাগ উঠলে অনেক সময় স্ত্রী মুখ ফসকে বলে ফেলেন এই অবস্থার জন্য তুমি দায়ী। কিন্তু এই কথাটি আপনার স্বামির মনে গভীর আঁচড় কাটে।ছোট বড় সকল ব্যাপারে আপনি যদি তাকে দোষারোপ করতে থাকেন, তাহলে তিনি অনেক বেশি হতাশ হয়ে পড়েন।
কারণ তখন তিনি ভাবতে থাকেন যে, তিনি হয়তো আপনার জন্য কিছুই করতে পারেননি। তখন তিনি নিজেকে কাপুরুষ মনে করতে থাকে।তাই প্রিয় বোনেরা আপনি আপনার স্বামীকে ভলেও এই পাঁচটি কথা বলে কষ্ট দিবেন না।
কোন পুরুষ যদি পরকীয়া বা জিনা,ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় তবে তার জন্যেই রয়েছে কঠিন শাস্তি। দুনিয়ার শাস্তি হিসাবে যে পুরুষ এসব ইসলাম বহির্ভুত কাজ করে সে কখনো মানসিক শান্তি পাবেনা। হয়তো সে সাময়িক ভাবে নিজেকে সুখী ভাববে কিন্তু চুড়ান্ত ভাবে সে জাহান্নামী হবে।একটা সময় সে এমন মানুষিক যন্ত্রণার মুখমুখী হবে যে এই দুনিয়াতে তা নিরাময়ে দুনিয়ার কোন ঔষধে কাজ হবে না;আখিরাতের কথা তো বলাই বাহুল্য।
এমন একটি যন্ত্রণার মুখমুখী সে হবে যে তার পাশে দাড়ানোর কাউকে খুঁজে পাবেনা।আরেকটি দুনিয়াবী শাস্তি হলো সে পুরুষ হঠাৎ করে মৃত্যুবরণ করবে বা পূর্ব অনুমান ছাড়াই কঠিন কোন বিপদ বা দুর্ঘঠনার কবলে পড়বে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা ব্যাভিচারের নিকটবর্তী হয়োনা।এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।“ (সূরা বনী ইসরায়েল-৩২)
রাসূল (সা.) বলেন, “ হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যাভিচার পরিত্যাগ কর।কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে, যা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও কঠিন।এর মধ্য তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখিরাতে।“
যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যায়, দেখতে মানুষরুপী জানোয়ারের মতো মনে হয়।তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে, আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ।–(বায়হাকিঃ৫৬৪)
হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো।(বুখারিঃ৭৬৫৮)
হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না। এক আনসার সাহাবী বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কি? অর্থ্যাৎ তার সাথে তো মনে হয় চলা ফেরা কথা বার্তায় কোন বাঁধা নেই। নবীজি (সা.) বললেন, দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।(মুসলিম,২৪৪৫)
হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ফতহুল বারিতে লিখেছেন, এখন মৃত্যুর সমতুল্যর অর্থ হলো ভয়ঙ্কর হারাম। আর ইসলামে এসবের শাস্তি ভয়াবহ। এসবের শাস্তি হিসাবে রজম ও দোররার নির্দেশে এসেছে হাদিসে। যাতে কোন নারী ও পুরুষ এই ধরণের ভয়াবহ কর্মে লিপ্ত না হয়।
তাই প্রিয় ভাই ও বোনেরা এধরণের কাজে লিপ্ত হয়ে থাকলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে আলোর পথে আসুন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পরম ক্ষমাশীল ও চরম দায়ালু।