- ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প।
- ইসলামিক হাদিস গল্প।
- হাদিসের গল্প ও শিক্ষা।
- ইসলামিক কষ্টের গল্প।
- কালো জাদু সম্পর্কে হাদিস।
ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প
আগুনের অধিবাসী হয়ে অন্যদের সর্তক করি আমরা-
একদিকে বাড়ছে শপিংমল, মার্কেট অন্যদিকে বাড়ছে বস্ত্রহীন মানুষ। বিক্রি হচ্ছে দামী দামী জামা কাপড়। যাকাতের শাড়ীর জন্য কাউকে আঘাত পেতে হচ্ছে। একদিকে বাড়ছে রেস্টুরেন্টগুলো (চাইনিজ, দেশী, বিদেশী), বিক্রি হচ্ছে দামী দামী খাবার। অন্যদিকে বাড়ছে ক্ষুধার্ত মানুষের আর্তনাদ, ডাস্টবিনের পরিত্যক্ত খাদ্যে কুকুর ও মানুষের যুদ্ধ। কারো নতুন ব্যবসা চালু হচ্ছে চাঁদার টাকায়, কারো ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে চাদা না দেওয়ায়।
একদিকে চলছে ভেজাল বিরোধী অভিযান অন্যদিকে বাড়ছে সিগারেট, বিদেশী মদের আমদানী, হচ্ছে লাইসেন্সকৃত মদের দোকান। কারণ হালাল হারাম (বৈধ, অবৈধ) বিধান এখন আর কুরআন হতে মানা হয় না, হচ্ছে মানবরচিত সংবিধান হতে। বাড়ছে মসজিদ, মাদ্রাসা আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বহুগুণে বাড়ছে পাপ, শিরক, বিদআত, কমছে মুসল্লি ও দ্বীনদার মুমিনের অভাব।
বাড়ছে ওয়াজ, বাড়ছে টাকার পরিমাণ। একটু জনপ্রিয় হলেও বছরখানেকের মধ্যে লাখ লাখ টাকা আয় করে যাচ্ছে। কেউ ওয়াজে পুলিশের নিরাপত্তায় বহুবিবাহের ফজিলতের মধুর ওয়াজ করছে, কারো সদ্যবিবাহ হয়েছে অথচ বাসর না হয়ে দিন কাটছে কারাগারে। কত যুবক মিথ্যা মামলায় স্বজন ছেড়ে প্রবাসে দিন কাটছে, অশ্রুসিক্ত প্রার্থনা দেশে ফিরবে মায়ের বুকে।
প্রিয় শায়েখ! কতদিন বউ, শিশু সন্তানের মুখ দেখেননি। অথচ সাহাবীদের বেশিরভাগ বহুবিবাহ করেছে মদীনার জীবনে যখন মুসলিমদের নিরাপদ স্হান হয়েছে ও ইসলাম পালন করা যেত। বহু সাহাবী শহীদ হতেন তাদের স্ত্রী, বোন, মায়ের দায়িত্ব নিতেন অন্য সাহাবীরা বিবাহ করে। আর মক্কার জীবন ছিল জুলুম, নির্যাতনে ভরা। সুমাইয়া (রা:) এর যৌনাঙ্গে বর্শা নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়েছিল, কতটা অসহায় ছিল মুসলিম।
স্বয়ং রসুলের (সা:) দুই কন্যাকে তালাক দিয়েছিল পিতা রসুলের (সা:) ইসলাম মানার কারনে। আর তারা যেন বলতে চায়- এটা মদীনার সময়ের ইসলাম মানার মতো উপযোগী রাষ্ট্র তাই বড় বড় ফরজ (সত্য দ্বীন প্রচার) ছেড়ে নফল নিয়ে বাড়াবাড়ি। কারো বাড়ি, জমি দখল হচ্ছে আর ভূমিদস্যুরা গড়ছে বড় বড় দালানকোঠা শপিংমল। নিরীহ ধর্ষিত মেয়েটা লজ্জায় কারো সাথে মিশতে পারে না সমাজ তাকে ঘৃনা করছে, আর স্বেচ্ছায় ইজ্জ্বত বিলিয়ে অনেক তারকা তরুনদের কাছে অতি প্রিয়।
আশেকে রসুল দাবিদারদের অভাব নেই তবু বাড়ছে ইসলাম ও রসুলের অবমাননাকারী। বংশ নিয়ে গর্ব করা লোকের অভাব নেই, পরিবারকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত অথচ রসুলের (সা:) আহলে বায়াতের ফজিলত কেউ বয়ান করে না, তাদের উপর কি নির্যাতন হয়েছে, চলছে তা নিয়ে আলোচনা হয় না।
নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক রাখ, কেননা আল্লাহই তোমাদের রিজিক দেন এবং তোমাদের লালন-পালন করেন। আর আল্লাহর মহব্বতের ভিত্তিতে আমার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক রাখ এবং আমার মহব্বতের কারণে আমার আহলে বাইতের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক রাখ।’ (তিরমিজি ৩৭৮৯)
যাইদ ইবনু আরকাম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে আমি এমন জিনিস রেখে গেলাম যা তোমরা শক্তরূপে ধারণ (অনুসরণ) করলে আমার পরে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তার একটি অন্যটির তুলনায় বেশি মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণঃ আল্লাহ তা’আলার কিতাব যা আকাশ হতে মাটি পর্যন্ত দীর্ঘ এক রশি এবং আমার পরিবার অর্থাৎ আমার আহলে বাইত। এ দুটি কখনও আলাদা হবে না কাওসার নামক ঝর্ণায় আমার সঙ্গে একত্রিত না হওয়া পর্যন্ত। অতএব তোমরা লক্ষ্য কর আমার দু’জনের সঙ্গে তোমরা কিভাবে আচরণ কর। (তিরমিজি, ৩৭৮৮)
আহ!! বহুজনই দাবি করে ইসলাম পালন করছে তবু ইসলামই আজ গুরাবা (অপরিচিত)। আমরা যেন সবাই আগুনের (জাহান্নামের) নিকট দাড়িয়ে অন্যকে সতর্ক করছি। অন্যের সমালোচনা ও আফসোস করছি নিজেকে সংশোধন করতে ভুলে গেছি।
দ্বীনের রজ্জুকে শক্তভাবে আকড়ে ধরার দরুন নিজের পরিবার-পরিজন, সমাজ-রাষ্ট্রসহ সবার কাছে অপরিচিত, সমালোচিত হয় যারা, ইসলামের পরিভাষায় তাদেরকেই বলা হয় গুরাবা। গুরাবা হচ্ছে অপরিচিত, দ্বীন পালনের কারণে যারা অপরিচিত হয়ে গেছে। যার অর্থ গরিব, মিসকিন, অসহায়। গুরাবা হচ্ছে আমাদের সমাজেরই মানুষ, সমাজে থেকেও যেন তারা আজ সমাজের কেউ নয়।
সমাজের সর্বত্র যেখানে ফিতনার ছড়াছড়ি। দ্বীন বিমুখতা, গুনাহর সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া, আল্লাহর বিধানকে অবজ্ঞা করা, নফসের অনুসরণ করা, ক্ষমতার বাহাদুরি করা লোকের অভাব নেই সেখানে একদল লোক আছে যারা কুরআন-সুন্নাহকে আকড়ে ধরেছে, দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে, আল্লাহ ও তার রাসূলকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবেসেছে। সমাজের এত এত মানুষের ভিড়ে এরাই মূলত গুরাবা।
এরাই হল সেই সব গুরাবা যাদের কথা হাদীসে এসেছে-
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ইসলাম অপরিচিত অবস্থায় পদযাত্রা শুরু করেছে আবার অপরিচিত অবস্থায় ফিরে যাবে। সুসংবাদ অপরিচিত ব্যক্তিদের জন্য। সুসংবাদ গুরাবাদের জন্য। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) জিজ্ঞাস করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ্!(ﷺ) গুরাবা কারা?
রাসূল(ﷺ) বললেন, গুরাবা হলেন ঐ সমস্ত লোক, মানুষেরা গোমরাহ হলে যারা তাদের সংশোধন করবে।
(মুসনাদে আহমাদ ইবনু হাম্বল:৩৭৭৫,৮৮১২)।
অনেক আলেমরা বলেন গুরাবা হল-
যারা আমার সুন্নাহকে জীবিত করে এবং তা মানুষের কাছে শিক্ষা দেয়।
প্রবাসী এক ভাইয়ের কথা মনে পড়ে!! হালাল রিযিকের জন্য বহু কষ্ট করেছিল, লাখ টাকা আয়ও করেছিল কিন্তু জমায় নি। কারণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দ্বীন ও জনকল্যানে ব্যয় করবে। কিন্তু মাত্র ২-১ বছর প্রবাসে থেকে অনেকে দামী বাড়ি, ব্যবসার মালিক হয়েছিল আর নিত্যদিন তিনি উপহাসের শিকার হয়েছেন।
পৈতৃিক দোচালা ঘর আজও তেমনি পড়ে আছে। চিন্তা করুন, ১৫, ২০ বা ৩০, ৪০ লাখ টাকায় বাড়ি করবো সাময়িক দুনিয়ার জন্য। তার পরিচিত অনেকের সারাজীবনের সম্পদ পুড়ে গেছে, ইনশাআল্লাহ তার সম্পদ যা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেছে জান্নাতে অজীবন জমা রয়েছে।
অথচ আমাদের পাশেই কেউ ১০ টাকার জন্য না খেয়ে আছে, কেউ আবার চিৎকিসার অভাবে মুমূর্ষু। কেয়ামত দিবসে আল্লাহর নিকট কিভাবে দাঁড়াবো, তবু আমাদের জীবন অনেক বিলাসী। হা, এখনও কিছু দানশীল, তাকওয়াবান মানুষ আছে। দুঃখ, কষ্ট, ব্যবসা হারানো তাদের জীবনে পরীক্ষা।
আল্লাহ বলেন,
আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই: মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, পণ্য-ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও। [আল-বাক্বারাহ ১৫৫]
আইয়ুবও (আ) সব হারিয়েছিলেন সবর ও দোয়া করে তারচেয়ে বেশি পেয়েছিলেন। রমাদ্বান মাসে যাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে দুঃখ না করে সময়টা ইতেকাফে লাগান। ইনশাআল্লাহ দুনিয়া, আখেরাতে লাভবান হবেন। দীর্ঘসময় ব্যস্ততায় হয়তো দূরে থেকেছেন, আল্লাহ সুযোগ করে দিয়েছেন তার কাছে আসার।
২.ইসলামিক হাদিস গল্প
দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতিকে হারানো সুন্নাহ ফিরে আসুক-
প্রায় হোটেলে বা দাওয়াতের দৃশ্য দেখে বিস্মিত হই আসলে আমরা কত বেশি খাই, গম-আটা-ময়দা, মাংসের তৈরি জিনিসকে কত নামে কতভাবে খাওয়া হয় অথচ রসুল (সাঃ) কখনও গমের রুটি খেতে পারেন নি!! আহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যবের রুটি আর খেজুর ও পানি ছিল তার খাওয়া।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত- মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার পরিবার তার ইন্তেকাল পর্যন্ত একনাগাড়ে তিনদিন পরিতৃপ্তির সহিত আহার করতে পারেনি (সহীহ মুসলিম -২৯৭৬)।
আহ!! একরাতে রসুল (সাঃ), আবু বকর (রাঃ), উমর (রাঃ) ক্ষুধার জ্বালায় রাস্তায় বের হয়েছিলেন খাদ্যের সন্ধানে আর আজ তার গর্বিত উম্মত দাবিদাররা দামী রেস্টুরেন্টে অতিভোজনে টাকা অপচয় করে নিল্লর্জের মত আবার ছবি তুলে প্রচার করে।
খন্দকের পরিখা খননের সময় রসুল (সাঃ) পেটে পাথর বেধেছিলেন, পাথরের উপর আঘাত করেছেন তখন তার বয়স ৫৮ বছর, তবু কত ঈমানের দৃঢ়তা নিয়ে বলেছিলেন- মুসলিমরা রোম, পারস্য বিজয় করবে, তখন মুনাফেকরা উপহাস করেছিল। আর আমাদের পেটভর্তি খাওয়া, ফ্রীজভর্তি জমাকৃত খাদ্য অথচ ঈমান নড়বড়ে, রিযিক নিয়ে দুশ্চিন্তা করি, সামান্য সমৃদ্ধির জন্য হারামে লিপ্ত হই। যখন রসুল (সাঃ) হিজরত করছিলেন তখন সুরাকা (রাঃ) (তখন তিনি কাফের ছিলেন) বলেছিলেন- আল্লাহর কসম! হে মুহাম্মদ, আমি নিশ্চিতভাবে জানি শিগগিরই আপনার দ্বীন বিজয়ী হবে।
আমার সাথে আপনি ওয়াদা করুন, আমি যখন আপনার সাম্রাজ্যে যাব, আপনি আমাকে সম্মান দিবেন। আর একথাটি লিখে দিন। রসুল (সাঃ) আবুবকর (রাঃ) কে লিখতে বললেন, একখন্ড হাড়ের উপর কথাগুলো লিখে তার হাতে দিলেন। সুরাকা ফিরে যাওয়ার সময় রসুল (সাঃ) বলেছিলেন- সুরাকা তুমি যখন কিসরার (পারস্য) রাজকীয় পোশাক পরবে তখন কেমন হবে? সুরাকা (রাঃ) বিস্মিত হয়ে বলেছিল- কিসরা ইবনে হুরমুয? রসুল (সাঃ) বলেছিলেন – হ্যা, কিসরা ইবনে হুরমুজ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)।
তৎকালীন সবচেয়ে বড় পরাশক্তি ছিল কিসরা আর তার রাজা ছিল কিসরা ইবনে হুরমুজ। সুরাকা (রাঃ) রসুলের (সাঃ) কথা বিশ্বাস করেছিলো বিনা দ্বিধায় এবং উমর (রাঃ) এর খেলাফতকালে এই পোষাক পরেছিলেন। আসলে কাফের অবস্থায় সুরাকার (রাঃ) রসুলের (সাঃ) কথার প্রতি যতটুকু বিশ্বাস ছিলো, মুসলিম হয়েও আমাদের ততটা নেই।
রসুল (সাঃ) বলেছিলেন- দুজনের খাদ্য তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাদ্য চারজনের জন্য যথেষ্ট (মুসলিম- ২০৫৮, ৭৩২৪)।
আমাদের সিয়ামগুলো সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা আমরা উদাসীন অথচ ইফতার, সেহেরি বহুরকম খাওয়া ও খাবার নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনায় বহুসময় চলে যাচ্ছে। দেশের বর্তমান অবস্হা এতটা ভয়াবহ – একটু খুজে দেখলে ক্ষুধার্ত মানুষের অভাব নেই। এটা যেমন কষ্টকর তেমনি যাদের সামর্থ্য আছে সদকা, যাকাত দিয়ে আল্লাহর কাছে প্রিয় হবার মহাসুযোগ। ইসলামের প্রাথমিক যুগে, দারিদ্র্য সাহাবীদের সাহায্য করে আবুবকর (রা), উসমান (রা) সদকার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট অতিপ্রিয় হয়েছিলেন।
আল্লাহ বলেন-
যারা আল্লাহ্র পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করে তারপর যা ব্যয় করে তা বলে বেড়ায় না এবং কোনো প্রকার কষ্টও দেয় না, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রব-এর কাছে। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৬২)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, আর যারা তাদের রবের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্য ধারণ করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে, আর আমরা তাদের যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভালো কাজের দ্বারা মন্দ কাজকে প্রতিহত করে, তাদের জন্যই রয়েছে আখেরাতের শুভ পরিণাম।’ (সুরা রাদ : আয়াত-২২)
আর দানের ক্ষেত্রে তাদের প্রাধান্য দিন – যারা ক্ষুধায় কষ্ট করছে অথচ আত্মসম্মানবোধ তাদের হাতপাতা হতে দূরে রাখছে।
কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এমন অভাবী লোক, যারা আল্লাহর পথে (ইবাদত ও মানবকল্যাণে) নিজেদের নিয়োজিত রাখার কারণে (উপার্জনের জন্য) দুনিয়া চষে বেড়াতে পারে না। সম্ভ্রান্ততার কারণে অনভিজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবহীন মনে করে। আপনি তাদের চিহ্ন দেখে চিনতে পারবেন। তারা মানুষের কাছে নির্লজ্জভাবে ভিক্ষা করে না। আর তোমরা যেকোনো ভালো জিনিস ব্যয় করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সে বিষয়ে অবগত আছেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৭৩)।
কিছুদিন আগের ঘটনা, ঢাকার রাজপথে, রাত ৮.৩০ এ দাড়িয়ে ছিলাম রিকশার জন্য। হঠাৎ ১৬-১৭ বছরের বালক এলো রিকশা নিয়ে, অতি নিকটের একটা ঠিকানা বললাম – যাবে কিনা?
সে বলল- চিনে না, আমি পথ দেখিয়ে দিলে চালিয়ে নিয়ে যাবে, ছেলেটার আচার আচরণ এলোমেলো লাগল।
উঠবো না ভেবেও কেন জানি রিকশায় উঠলাম, যখন নামলাম ভাড়া দেওয়া জন্য – সে বলল, ভাড়া না দিয়ে কিছু চাল কিনে দিতেন।
কিছুক্ষণ সময় নিয়ে তার সাথে কথা বললাম- জানলাম ঢাকা এসেছে মাকে নিয়ে ১ সপ্তাহ, রিকশা চালায় শহর চিনে না তাই যাত্রীও তেমন পায় না অথচ রিকশার ভাড়া দেওয়া লাগে।
সারাদিন মা-ছেলে কিছু খায়নি। আমাকে দেখে কিছু চাওয়ার সাহস পেল।
দেখলাম – আসলে ছেলেটার শরীর খুবই দুর্বল, কিছু চাল, তরকারি কিনে দিলাম, ভাড়াসহ কিছু বাড়তি টাকা দিলাম।
খুজে দেখলে – এরকম কিছুলোক পাবেন চারপাশে, সবাই এগিয়ে আসুন।
সাহাবী, তাবেয়ী, অতীতের আলেমগন অনেক বেশি দানশীল ছিলেন। তারা রসুলল্লাহ’র সুন্নাহ অনুসরণ করতেন। সবাইকে নিয়ে একসাথে খাবার খেতেন যা বর্তমানে খুব কমই দেখা যায়।
ফুটপাতের শিশুদের দেখেছি, ১০ টাকার ভাত কিনে তিনজনে হাসিমুখে খেতে। চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতিতে কত মানুষ অনাহারে কষ্ট পাচ্ছে, আসুন হারানো সুন্নাত ফিরিয়ে আনি আর ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্হা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করি যেখানে যাকাত, দান, সদকা প্রতিষ্ঠিত হবে। দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ হবে, থাকবে না মজুতদারি, অভিশপ্ত সুদ, খাদ্যে ভেজাল।
৩.হাদিসের গল্প ও শিক্ষা
মুজিযা, কারামতি, জাদু
মুজিযা হলো প্রচলিত সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রমী কাজ, যা একজন নবুওয়াতের দাবীদার কর্তৃক প্রকাশ পায়। নবুওয়াত অস্বীকারকারীদের চ্যালেঞ্জে তিনি তা সম্পাদন করেন এবং কাজটির প্রকৃতি এমন যে, অস্বীকারকারীদের পক্ষে সেরূপ কাজ সম্পাদন করা অসম্ভব। (শারহুল আকাইদিন নাসাফিয়্যা)
মুজিযার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছেঃ মুজিযা এমন অসাধারণ কাজ, যা আল্লাহ তাআলা তার প্রেরিত নবী-রসূলগণের দ্বারা সংঘটিত করে থাকেন। উদ্দেশ্য নবীর নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণ করা।
তার সারসংক্ষেপ এই যে, মুজিযা বলা হয় –
(১) যা অসাধারণ, অস্বাভাবিক ও অলৌকিক,
(২) যা নবী-রাসুলগণের দ্বারা প্রকাশ পায়,
(৩) তবে তার সংঘটক স্বয়ং আল্লাহ তাআলা,
(৪) তা নবী-রাসুলগণের নবুওয়াত ও রিসালাতের দাবীর সত্যতার প্রমাণস্বরূপ,
(৫) তার মধ্যে নবী-রাসুলগণের পক্ষ থেকে বিরুদ্ধবাদীদের প্রতি মুকাবিলার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয়, তবে তারা তার মুকাবিলা করতে সক্ষম হয় না।
তবে কিছু মুজিযা দীর্ঘমেয়াদী আর কিছু হঠাৎ আল্লাহর হুকুমে প্রকাশ পায়। যেমন – রসুলের (সা:) শরীর হতে খুশবু আসতো যা মেশকের চেয়ে উত্তম ছিল আর ইউসুফ (আ) এর রূপ যা দীর্ঘমেয়াদী মুজিযা। রসুলের (সা:) সবচেয়ে বড় মুজিযা হল আল কুরআন। অন্যন্য নবী-রসুলগনের মৃত্যুর পর তাদের কিতাব বিকৃত হয়, মুজিযাও শেষ হয়ে যায়। অপরিদকে যতদিন মুসলিম থাকবে ততদিন রসুলের (সা) মুজিযা আল কুরআন থাকবে।
আর আল্লাহর হুকুমে ওলির মাধ্যমে সংঘটিত ঘটনাকে কারামতি বলে। সুতারং কেউ কুরআন, সুন্নাহের পথে চললে তার দ্বারা আল্লাহর ইচ্ছেই কারামত সংগঠিত হতে পারে।
কিন্তু এই নিয়ে বাড়াবাড়ি, ছাড়াছাড়ি দুটোই চলছে – অমুক বুজুর্গ, পীর দ্বারা অমুক অমুক কারামত সংগঠিত হয়েছে দাবি করে তাদের মন্তব্য কুরআন সুন্নাহের বিপরীত হলেও তা মানতে হবে। অথবা অমুক পীর, বুজুর্গ চাইলে কারামত প্রকাশিত হয়। অথচ কুরআনে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহ ঘোষণা করেন মুজিযা ও হাদীস হতে প্রমান পাওয়া যায় কারামত আল্লাহর ইখতিয়ার।
মহান আল্লাহ্ বলেন :
এবং তারা বলে, কখনো আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনব না যতক্ষণ না তুমি আমাদের জন্যে ভূমি হতে প্রস্রবণ উৎসারিত করবে। অথবা তোমার খেজুরের ও আংগুরের এক বাগান হবে যার ফাঁকে ফাঁকে তুমি অজস্র ধারায় প্রবাহিত করে দিবে নদী-নালা। অথবা তুমি যেমন বলে থাক তদনুযায়ী আকাশকে খণ্ড-বিখণ্ড করে আমাদের উপর ফেলবে অথবা আল্লাহ্ তা’আলা ও ফেরেশতাগণকে আমাদের সম্মুখে উপস্থিত করবে। অথবা একটি স্বর্ণ নির্মিত গ্রহ হবে, অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে; কিন্তু তোমার আকাশে আরোহণে আমরা কখনো ঈমান আনব না যতক্ষণ না তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব অবতীর্ণ করবে যা আমরা পাঠ করব।
বলুন, পবিত্র মহান আমার প্রতিপালক; আমি তো হলাম কেবল একজন মানুষ, একজন রাসূল ( ১৭: ১০-৯৩)।
এ সকল আয়াত এবং এগুলোর সাথে সামঞ্জস্যশীল অন্যান্য আয়াত সম্পর্কে তাফসীর গ্রন্থের সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর।
ইউনুস এবং যিয়াদ, হযরত ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা সূর্যাস্তের পর কুরায়শ বংশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা কা’বাগৃহের নিকট সমবেত হয়। আব্বাস (রা) উপস্থিত লোকদের নাম উল্লেখ করেছেন। তাদের একে অন্যকে বলল যে, তোমরা মুহাম্মাদ (সা)-এর নিকট প্রতিনিধি প্রেরণ কর এবং তার নিকট যুক্তিতর্ক পেশ কর যাতে শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে তার কোন ওযর আপত্তি না থাকে। এরপর তারা তাঁর নিকট এই বলে লোক পাঠায় যে, তোমার সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ সমবেত হয়েছেন, তারা তোমার সাথে কথা বলবেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) সব সময় এটাই কামনা করতেন তারা যেন সৎপথে আসে। তাদের সত্যদ্রোহিতায় তিনি দুঃখ পেতেন। তাদের উপস্থিতির কথা শুনে তিনি ধারণা করেন যে, ঈমান আনায়নের ব্যাপারে তাদের মনে কোন নতুন অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে। তাই সংবাদ শুনে দ্রুত তিনি তাদের নিকট উপস্থিত হন এবং তাদের নিকট গিয়ে বসেন।
তারা বলল, হে মুহাম্মাদ! আমরা তোমার নিকট সংবাদ পাঠিয়েছি এজন্যে যে, এ বিষয়ে আমরা তোমার ওযর আপত্তির পথ বন্ধ করে দিতে চাই। তুমি তোমার সম্প্রদায়ের মধ্যে যে বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছ কোন মানুষ তার নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে তেমন কিছু করেছে বলে আমাদের জানা নেই। তুমি আমাদের পূর্বপুরুষদের দুর্নাম করেছ, আমাদের ধর্মের দোষত্রুটি বর্ণনা ও সমালোচনা করেছ। আমাদের জ্ঞানী-গুণী লোকদেরকে তুমি মূর্খ বলেছ। আমাদের উপাস্যগুলোকে তুমি গালমন্দ করেছ। আমাদের ঐক্যবদ্ধ সম্প্রদায়কে তুমি বিচ্ছিন্ন ও বিভক্ত করে দিয়েছ। এমন কোন মন্দ কাজ ও মন্দ আচরণ নেই, যা তুমি আমাদের সাথে করনি। তোমার এরূপ প্রচারের দ্বারা ধন-সম্পদ সংগ্রহ করাই যদি উদ্দিষ্ট হয়, তবে আমাদের সকলের ধন-সম্পদ থেকে কিছু কিছু আমরা তোমাকে দিয়ে দিব যার ফলে তুমি আমাদের সকলের চাইতে অধিক সম্পদশালী হয়ে যাবে। সম্মান ও মর্যাদাই যদি তোমার কাম্য হয়, তবে আমরা তোমাকে আমাদের সকলের নেতা রূপে বরণ করে নিব। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
কিন্তু আল্লাহ অনুমোদন দেননি ফলে এমন কোন ঘটনাও ঘটেনি।
কারামতের উদাহরণ –
১. হযরত আনাস বিন মালিক রা. বর্ণনা করেন-
এক রাতে হযরত উসাইদ বিন হুদাইর রা. ও আব্বাদ বিন বিশার রা. নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত ছিলেন। যখন তাঁরা দরবার থেকে প্রস্থান করলেন, তখন চারদিক ছিল ভীষণ অন্ধকার। হঠাৎ ওপর থেকে আলোর বিচ্ছুরণ তাঁদের চারপাশ আলোকিত করে দিল। তাঁরা একে অন্যের থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার পরও বাড়ি পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত সেই আলো তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে ছিল। [বুখারী, হাদীস নং ৪৬৫ ও ৩৬৩৯, মুসলিম]।।
২. হযরত ওমর রা. কোনো এক যুদ্ধে হযরত সারিয়া রা.-এর নেতৃত্বে একদল সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। কোনো একপর্যায়ে হযরত ওমর রা. মদীনা মুনাওয়ারা মসজিদে জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। খুতবা চলাকালীন তিনি উচ্চ আওয়াজে বললেন- হে সারিয়া, পাহাড়ের দিকে দেখ! পাহাড়ের দিকে দেখ! যখন সৈন্যবাহিনী যুদ্ধ হতে ফিরে এল, হযরত সারিয়া রা. বললেন, আমিরুল মুমিনীন! যখন চতুর্দিক থেকে শত্রুরা আমাদের ওপর আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, হঠাৎ আমরা শুনতে পেলাম কেউ একজন চিৎকার করে বলছে, হে সারিয়া, পাহাড়ের দিকে দেখ! এরপর আমরা পাহাড়ে আরোহণ করে শত্রুবাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াই করে আল্লাহর রহমতে জয়লাভ করি। [বায়হাকি]
কারামত হতে উম্মাহ উপকৃত হবে সেটা স্বাভাবিক, এবং যতদিন মুসলিম থাকবে ততদিন কারামত থাকবে।
যেমন – মুসলিমদের তকবীর ধ্বনি দিয়ে ইস্তাম্বুল বিজয় এবং মাহাদী (হাফি:) ও দাজ্জালের সময়ে জিকিরে মুমিনের ক্ষুধার কষ্ট দূর হবে।
একটু খেয়াল করলে বুঝবেন- উমর (রা:) বহুদূর হতে মুসলিম বাহিনী সতর্ক করলেন নিহত ও পরাজিত হওয়া হতে। অথচ যখন তিনি শহীদ হলেন তাকে আহত করার পূর্বে তিনি টের পাননি। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কারামাত প্রদর্শিত হতো জেহাদে অথচ কারামতের দাবিদার অনেকে জেহাদের বিপরীত।
কারন কারামত সম্পূর্ণ আল্লাহর নির্দেশে হয় আর উমর (রা:) শাহাদাতের দোয়া করেন আল্লাহ কবুল করেন।
আমীরুল মূমীনীন হযরত ওমর(রাঃ)-এর দুয়া:
اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي شَهَادَةً فِي سَبِيلِكَ وَاجْعَلْ مَوْتِي فِي بَلَدِ رَسُولِكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
(আল্লাহুম্মারযুকনি শাহাদাতান ফি সাবিলিক, ওয়ায’আল মাওতি ফি বালাদি রাসুলিক)
… “হে আল্লাহ, আমাকে শাহাদাতের মৃত্যু দিন এবং মৃত্যু রাসূল (স:) এর শহরে দিন।” (সহীহ বুখারী: ১৮৯০)
আর একটা মূল ব্যাপার হল উমর (রা:) দ্বারা এত বড় কারামত প্রকাশ হওয়ার পরও কি সাহাবীরা কখনও তার সাথে একতেলাফ করেননি!! বরং জানা যায় উমর (রা:) রায় দিয়েছেন, আলী রা বা অন্যরা আরও উত্তম সমাধান দিয়েছেন আর উমর (রা:) খুশি হয়ে তা মেনে নিতেন বরং তাদের জন্য দোয়া করতেন।
তার মানে কারামত প্রকাশ পেলেও তার কথা দলিলহীন হলে মানতে হবে এমন কোন ভিত্তি নেই।
অপরদিকে যারা কুরআন, সুন্নাহর বিপরীত চলে অথচ তাদের দ্বারা কিছু অদ্ভুত ঘটনা প্রকাশ পায় তা হল জাদু বা শয়তান দ্বারা সংঘটিত ঘটনা।
যেমন- মুসা (আ:) এর যুগে জাদুকরদের ঘটনা যখন মুজিযা এসেছে জাদু বিলুপ্ত হয়েছে। আর এই উম্মতের জন্য রহমত রসুল (সা) এর মুজিযা আল কুরআন, সুন্নাহ মেনে চললে সকল জাদু ও শয়তানের ফেতনা দূরীভূত হবে।
এভাবে জাদু, কারামতের মধ্যে পার্থক্য না বুঝার কারনে বহুলোক ঈমান হারা হয়েছে ও হচ্ছে। যেমন – হাসান ইবনে সাবাহর ধোঁকাবাজি ও আল মুকান্না কৃত্রিম চাদের ধোকা দিয়ে নবী ও রব দাবি করে। দাজ্জালও তাই করবে।
ইনশাআল্লাহ এগুলো নিয়ে পরে আলোচনা হবে।
৪.ইসলামিক কষ্টের গল্প
উম্মাহর আর্তনাদের মাঝে আনন্দ কিভাবে আসে
সারাবিশ্বে মুসলিমদের বিপদ-আপদ আর একের অপর এক দুযোর্গ চলছে। যা দেখে কারো হৃদয় কাপে আর কারো আবার অন্তরের অনুভূতিটুকু হারিয়ে গেছে। কিন্তু আফসোস শেষে বেশিরভাগই শিক্ষা না নিয়ে আবার পাপে লিপ্ত হয়। এসব প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয় হতে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
আল্লাহ বলেন: যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।
যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত এবং আল্লাহ দয়ালু, মেহেরবান না হতেন, তবে কত কিছুই হয়ে যেত।(সুরা নুর-১৯,২০)
হাদীসে রয়েছে,
যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে। কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে, কিন্তু তা আত্মসাত করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না)। জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে। বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে। মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল (কথাবার্ত) হবে। যখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসক রূপে আবির্ভূত হবে। সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো— রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (এসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনগুলোর জন্য। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ১৪৪৭)।
এছাড়া হাদীসে আছে –
কুতায়বা (রহঃ) ….. ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মাতের মধ্যে ভূমি ধ্বস ও চেহারা বিকৃতি ঘটবে। আর এটা হবে তাকদীর অস্বীকারকারীদের মধ্যে। হাসান, সহিহাহ ৪/৩৯৪, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২১৫৩ [
তুরস্কের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্হ জায়গার মধ্যে একটা হল hatay, যা সিরিয়ার লাটাকিয়ার (যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভুক্ত) নিকট। লাটাকিয়া ও hatay-এ সবচেয়ে বেশি আলাভী (নুসাইরিয়া) শি-য়াদের বসবাস। তারা সিরিয়ার ক্ষমতায় আছে নুসাইরিয়া, সিরিয়ার ক্ষমতাসীনরা আবার বনু কাল্ব গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। সুতারং তারা আবারও ভূমিধ্বসের সম্মুখীন হবে যখন মাহাদীর উদ্দেশ্যে সেনা পাঠাবে। গত কয়েক বছরে তারা হাজারো নারী, শিশু হত্যা, ধর্ষনের সাথে জড়িত।।
শুয়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … উবায়দুল্লাহ ইবনু কিবতিয়্যা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হারিস ইবনু আবূ রাবীআ এবং আবদুল্লাহ ইবনু সুফিয়ান (রহঃ) উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা (রাঃ) এর নিকট গেলেন। আমিও তাঁদের সাথে ছিলাম। তারা তাকে ঐ বাহিনী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, যাদের ভূমিতে ধসিয়ে দেয়া হবে। তখন ইবনু যুবায়র (রাঃ) এর খিলাফতকাল ছিল।
উত্তরে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জনৈক আশ্রয় গ্রহণকারী বায়তুল্লাহ শরীফে আশ্রয় গ্রহণ করবে। তখন তার বিরুদ্ধে একটি সেনাদল প্রেরণ করা হবে। তারা যখন বায়দায় (ময়দানে) অবস্থান নিবে তখন তাদের ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। এ কথা শুনে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে এ কি করে প্রযোজ্য হতে পারে যে অসন্তুষ্ট চিত্তে এ অভিযানে শরীক হয়েছে? তিনি বললেন, তাদের সাথে তাকে সহ ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। তবে কিয়ামতের দিন তার উত্থান হবে তার নিয়্যাতের ভিত্তিতে। বর্ননাকারী আবূ জা’ফর (রহঃ) বলেন, এ হল মদীনার বায়দা (যা যুল হুলায়ফার সন্নিকটে অবস্থিত)।
অপর হাদীসে এসেছে
আমর নাকিদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবন সাফওয়ান (রহঃ) হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি, একটি সৈন্যদল এ (আল্লাহর) ঘরের বিরুদ্ধে লড়াই করার উদ্দেশ্যে আগমন করবে। অতঃপর তারা যখন এ ভূমির এক বায়দায় (ময়দানে) পদার্পণ করবে তখন তাদের মাঝের অংশটি ভূমিতে ধসিয়ে দেয়া হবে। এ সময় অগ্রভাগের সৈন্যরা পেছনের সৈন্যদেরকে চিৎকার করে ডাকতে থাকবে। অতঃপর সকলকেই ভূমিতে ধসিয়ে দেয়া হবে। পালিয়ে যাওয়া একটি লোক ব্যতীত তাদের কেউ আর অবশিষ্ট থাকবে না। সে-ই তাদের সম্পর্কে অন্যদেরকে সংবাদ দিবে। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি (আবদুল্লাহ) নামে হাফসা (রাঃ) এর উপর মিথ্যা আরোপ করনি এবং হাফসা (রাঃ) এর ব্যাপারেও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যা আরোপ করেননি। (সহীহ মুসলিম – কেয়ামতের ফেতনা অধ্যায়)
অপর হাদীসে এসেছে
মুহাম্মদ ইব্ন মুছান্না (রহঃ) …. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একজন খলীফার মৃতুর সময় মতানৈক্য দেখা দিলে এবং সে সময় মদীনা থেকে এক ব্যক্তি পালিয়ে মক্কায় আসলে, সেখানকার অধিবাসিগণ তার পাশে সমবেত হবে এবং তাকে ইমামতি করার জন্য সামনে পাঠাবে। কিন্তু সে ব্যক্তি তা অপছন্দ করবে। এরপর লোকেরা তার হাতে ’হাজরে-আসওয়াদ’ ও ’মাকামে-ইব্রাহীমের’ মাঝে বায়াআত গ্রহণ করবে। সে সময় শামদেশ থেকে তার বিরুদ্ধে একদল সৈন্য প্রেরিত হবে, যারা মক্কা ও মদীনার মাঝে অবস্থিত ’বায়দা’ নামক স্থানে মাটিতে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে।
লোকেরা যখন এ অবস্থা দেখবে, তখন শাম ও ইরাকের ওলী-আবদালগণ তার নিকট উপস্থিত হয়ে, ’হাজরে-আসওয়াদ’ ও মাকামে-ইব্রাহীমের’ মাঝে বায়আত গ্রহণ করবে। এরপর কুরায়শ বংশে এমন এক ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করবে যার মা হবে ’কালব’ গোত্রের। যারা তাদের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য পাঠাবে এবং এ যুদ্ধে তারা বিজয়ী হবে। এরা ’কালব’ গোত্রের সেই সৈন্য, যারা মাহ্দীর সৈন্যদের হাতে পরাজিত হবে।
এসময় যারা কালব গোত্রের গনীমতের মালের অংশগ্রহণ করার জন্য উপস্থিত হবেনা, তাদের জন্য আফসোস। এরপর মাহ্দী (আঃ) গনীমতের মাল লোকদের মাঝে বণ্টন করে দিয়ে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত পুনরুজ্জীবিত করবেন। সে সময় পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি সাত বছর জীবিত থাকার পর ইনতিকাল করবেন এবং মুসলিমরা তাঁর জানাযার সালাত আদায় করবে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai’f) বর্ণনাকারীঃ উম্মু সালামাহ (রাঃ) পুনঃনিরীক্ষণঃ সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) মাহদী (আঃ) সম্পর্কে
এছাড়া মুসলিম, আল ফিতান বহু হাদীস আছে বনু কাল্ব সম্পর্কে সকল হাদীস একসাথে করে আলেমদের অভিমত আশ্রিত ব্যক্তি ঈমাম মাহাদী (হাফি:)
নুসাইরিয়াদের আকীদার মধ্যে কয়টা হল-
১.তারা আলীকে (রা:) আল্লাহর রূপ মানে
২. কুরআনকে বিকৃত মানে
৩. আয়েশা (রা:) ও হাফেজা (রা:)-কে রসুল(সা:) বিষ দিয়ে হত্যা করেছে দাবি করে অভিশাপ দেয়।
৪.মুতাবিবাহকে জায়েজ ভাবা, যা জেনাকে হালাল করার শামিল। আর অশ্লীলতাই আযাব আসে
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, “মদীনায় ঈর থেকে সওর পর্যন্ত হারাম। যে ব্যক্তি তার মধ্যে কোন অপকর্ম করবে বা দুর্ঘটনা ঘটাবে বা নবরচিত কর্ম (বিদআত) করবে অথবা এমন অপকর্মকারী বা বিদআতীকে স্থান বা প্রশ্রয় দেবে বা সাহায্য করবে তার উপর আল্লাহ, ফিরিশ্যামন্ডলী এবং সমগ্র মানবমন্ডলীর অভিশাপ। আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার নিকট হতে ফরয ও নফল কোন কিছুই গ্রহণ করবেন না।” (বুখারী, মুসলিম ১৩৬৬নং)।
তিনি আরো বলেন, “আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে নিজ পিতামাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন দুষ্কৃতকারী বা বিদআতীকে আশ্রয় দেয় এবং আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে ভূমির (জমি-জায়গার) সীমা-চিহ্ন পরিবর্তন করে।” (মুসলিম ১৯৭৮)।
আর আয়েশা (রা), হাফেজা (রা) মুমিনদের মা (উম্মুল মোমেনীন)। তাদের অভিশাপ দেওয়া আর উম্মাহ চুপ থাকবে তাহলো আযাব ডেকে নেওয়ার সামিল।
বিপদ-আপদ মুমিনের জন্য পরীক্ষা, জালেমের জন্য আযাব।
তবে যখন আযাব আসে, ভালো মন্দ সবাই ঘায়েল হয়, কেয়ামতের দিবসে নিয়ত অনুযায়ী ফলাফল হবে। অনেকে আবার অন্যায় দেখে নিরব থাকার কারনেও আযাব আসে। যেমন – আপনি যদি আপনার পাশের বাড়িতে কাউকে আগুন দিতে দেখেন ক্ষমতা থাকা স্বত্বেও আগুন না নেভান বা দূরে না চলে যান, এই আগুনে ক্ষতিগ্রস্হ আপনিও হবেন।
৫.কালো জাদু সম্পর্কে হাদিস
তাবিজ নকশা, জ্বিন হাজির করা-
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنّ الرّقَى، وَالتّمَائِمَ، وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ.
নিশ্চয় রুকইয়া (কোরআন-সুন্নাহ ব্যতীত কুফরী রুকইয়া), তামীমা ও তিওয়ালা শিরক। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৮৬
কুরআন বাদে অন্য কিছু দিয়ে তামীমা (তাবিজ) হারাম এই ব্যাপারে আলেমরা একমত। কিছু আলেম কুরআন দ্বারা তামীমা জায়েজ বলেন কিন্তু তারাও বলেন এটা রসুলের (সা:) ও সাহাবীরা আমল করেছেন এমন নজিরের সহীহ হাদীস।
কিছু হাদীস যেগুলো দেখানো হয় তা যঈফ বা হাদীসের ভুল ব্যাখা ও কিছু আলেমদের অভিমত।
কিন্তু একটা ব্যাপার নিশ্চিত কুরআনের নামে বিভিন্ন নকশা দ্বারা তাবিজ বা জ্বিন হাজির করা এগুলো ব্যাপকতা লাভ করে মুসলিমদের মাঝে রসুল (সা:) ও সাহাবীদের বহু যুগ পরে।
সোলোমান (আ:)-কে আল্লাহ জ্বিনদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দিয়েছিলেন আর রসুলের (সা:) কাছে এসে কিছু জ্বিন ঈমান আনে স্বেচ্ছায় তার অনুগত্য মেনে নিয়ে।
রসুল (সা:) ও সাহাবী (রা) জেহাদে বা কোন সমস্যায় জ্বিনকে হাজির করে সাহায্য চাইতেন না, বরং শয়তান জ্বিনরা যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এসেছিল আল্লাহ ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করেন ও জ্বিনরা পালিয়ে যায়।
তুরস্ক, মিশরসহ ভারত উপমহাদেশে তাবিজ, জ্বিন হাজির করা এসব জনপ্রিয় মূলত আহমদ আল বুনির মাধ্যমে।
তার লেখা বই শামস-আল-মারিফ বা শামস আল মারিফ ওয়া লাতাইফ আল-আওয়ারিফ। শামস আল-মারিফ মানে ‘জ্ঞানের সূর্য’। বইটির ভাষা আরবি। লেখা হয়েছে প্রায় ৮০০ বছর আগে ত্রয়োদশ শতকে। আলজেরীয় সুফি সাধক পণ্ডিত আহমাদ আল-বুনি লেখক আইয়ুবি শাসনামলে মিশরে বসবাসকালে বইটি লেখেন তিনি। ১২২৫ সালের দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বইটি নিয়ে আজও কেন এত বিতর্ক!? বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় বইগুলোর একটি ‘শামস আল-মারিফ’। এর বিষয়বস্তু নিয়ে ৮০০ বছর ধরে চরম বিতর্ক চলছে। এটি যেমন বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত বই, তেমনি এটির রয়েছে কুখ্যাতিও। যারা বইটির পক্ষে তাদের কাছে এটি একটি নিগূঢ় পথনির্দেশিকার মতো। আর বিরোধীদের কাছে এটা নিতান্তই কালো জাদুর একটি সংকলন, যা পাঠককে জাদুবিদ্যার জগতে টেনে নিয়ে যায়।
এটিতে মূলত আরব ও ইসলামি বিশ্বের জাদুবিদ্যার মূল বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। যেমন আধ্যাত্মিক সৃষ্টিতত্ত্ব থেকে শুরু করে জ্যোতিষশাস্ত্র, বিশেষ করে চন্দ্র সম্পর্কিত জাদু, আত্মা ও জিন নিয়ে কারবার, বর্ণমালা ও সংখ্যার জাদুকরী প্রয়োগ প্রভৃতি বিষয় বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে।
সে কারণে সুফি পণ্ডিতের লেখা হলেও সুফিদের সবাই বইটির পঠন-পাঠনের পক্ষে নন। তবে নকশবন্দি-হাক্কানি ঘরানার কিছু সুফি গোষ্ঠী এর অধ্যয়নের বৈধতা দিয়েছে। তারা এটাকে জাদুবিদ্যার সংকলন হিসেবে ব্যবহার করে ও উচ্চ মর্যাদা দেয়। তবে যাদের গুপ্তবিদ্যা চর্চার ব্যাপারে নিষিদ্ধ আকর্ষণ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বইটি পড়ার ‘বিপদ’ রয়েছে। বিপদটি হচ্ছে, গুপ্তবিদ্যার চর্চা একজন মুসলিমকে সত্য ও সুন্দরের পথ থেকে জিন, জাদু-টোনা ও কুসংস্কারের অন্ধকার জগতে নিয়ে যেতে পারে। এই বইয়ে অনেক জিকির, জ্বিন হাজির করার পদ্ধতি (কুফরী কালাম) ছিল যা অনেক সুফিরা পরবর্তীতে অনুশীলন করে।
বইটিকে সাধারণত আরব বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী পুস্তক বিবেচনা করা হয়। একইভাবে পাশ্চাত্য ও প্রতীচ্যেও বইটি সমানভাবে আলোচিত ও জনপ্রিয়। জনপ্রিয় হলেও এটি ইসলামি ইতিহাসের বেশির ভাগ সময় নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি পড়তে অনুৎসাহিত করা হয়েছে।
কিন্তু এরপরও বইটির পঠন-পাঠন অব্যাহত রয়েছে। তবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত আরব বিশ্বে বইটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। বইটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর বই কি না, এমনকি এটা পড়া হারাম কি না–এমন প্রশ্নও করে থাকেন অনেকে। এর কারণ, ইসলাম ও এর মূল ধর্মীয় উৎসগুলোর ব্যাপারে জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে রহস্যময় ও গুপ্ত পন্থা অবলম্বনে যেসব বিপদ রয়েছে তার প্রতীক এই বইটি।
বিশ্বের সবচেয়ে অভিশপ্ত বইয়ের মধ্যে একটি শামস-আল মারিফ। এমনও শোনা যায় এটা জ্বিন শয়তান দ্বারা লিখিত বই। যদিও বর্তমানে যে শামস আল মারুফ পাওয়া যায় তা পরিপূর্ণ শামস আল মারুফ নয়, বিশেষজ্ঞরা বলেন তার কিছু অংশ।
এটা আশ্চর্যের কিছু না যদি এই বইয়ের শিক্ষায় বা অনুপ্রেরণায় শয়তানের হস্তক্ষেপ থাকে। কারন সোলেমান (আঃ) এর যুগ হতে ইহুদিরা এরূপ কুফরী কালাম অনুসরন করত পরবর্তীতে আব্রাহাম আবু লাফিয়ার মাধ্যমে কাব্বালাহ (যিনি নিজেকে মাসীহ বা নবী দাবি করেন) ইহুদি সমাজে জাদুবিদ্যার অনুশীলন বৃদ্ধি পায়। ডনমে, তুরস্ক কিছু ধারণা দেওয়া আছে আব্রাহাম আবু লুফিয়া সম্পর্কে।
আল্লাহ বলেন-
আর সুলাইমানের রাজত্বে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত তারা তা অনুসরণ করেছে। আর সুলাইমান কুফরী করেননি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা মানুষকে শিক্ষা দিত জাদু ও (সে বিষয় শিক্ষা দিত) যা বাবিল শহরে হারূত ও মারূত ফিরিশতাদ্বয়ের উপর নাযিল হয়েছিল। তারা উভয়েই এই কথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, ‘আমরা নিছক একটি পরীক্ষা; কাজেই তুমি কুফরী করো না’।
তা সত্বেও তারা ফিরিশতাদ্বয়ের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতো। অথচ তারা আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত তা দ্বারা কারো ক্ষতি করতে পারত না। আর তারা তা-ই শিখত যা তাদের ক্ষতি করত এবং কোন উপকারে আসত না। আর তারা নিশ্চিত জানে যে, যে কেউ তা খরিদ করে, (অর্থাৎ জাদুর আশ্রয় নেয়) তার জন্য আখেরাতে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিকিয়ে দিচ্ছে, তা খুবই মন্দ, যদি তারা জানত!(সুরা বাকারাহ-১০২)
এমন এক বিষয়কে বলা হয়, যার উপকরণ নিতান্ত গোপন ও সূক্ষ্ম হয়ে থাকে। জাদু এমন সব গোপনীয় কাজের মাধ্যমে অর্জিত হয়, যা দৃষ্টির অগোচরে থাকে। জাদুর মধ্যে মন্ত্রপাঠ, ঝাড়ফুঁক, বাণী উচ্চারণ, ঔষধপত্র ও ধুম্ৰজাল – এসব কিছুর সমাহার থাকে। জাদুর বাস্তবতা রয়েছে। ফলে মানুষ কখনো এর মাধ্যমে অসুস্থ হয়ে পড়ে, কখনো নিহতও হয় এবং এর দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছিন্নতাও সৃষ্টি করা যায়। তবে এর প্রতিক্রিয়া তাকদীরের নির্ধারিত হুকুম ও আল্লাহর অনুমতিক্রমেই হয়ে থাকে। এটা পুরোপুরি শয়তানী কাজ! এ প্রকার কাজ শির্কের অন্তর্ভুক্ত। দুটি কারণে জাদু শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
(এক) এতে শয়তানদের ব্যবহার করা হয়। তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা হয় এবং তাদের পছন্দনীয় কাজের মাধ্যমে তাদের নৈকট্য অর্জন করা হয়। (দুই) এতে গায়েবী ইলম ও তাতে আল্লাহর সাথে শরীক হবার দাবী করা হয়। আবার কখনো কখনো জাদুকরকে বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। এ সবগুলোই মূলতঃ ভ্রষ্টতা ও কুফরী। তাই কুরআনুল করীমে জাদুকে সরাসরি কুফরী-কর্ম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের জ্বিন সিরিজে বিস্তারিত পাবেন।
ইয়াহুদীরা আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর অঙ্গীকারের কোন পরোয়া তো করলই না, উপরন্তু শয়তানের অনুকরণ করে তারা যোগ-যাদুর উপর আমল করতে লাগল। শুধু তাই নয়; বরং তারা এ দাবীও করল যে, সুলাইমান (আঃ) কোন নবী ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন যাদুকর এবং যাদুর জোরেই তিনি রাজত্ব করেছেন। (নাউযু বিল্লা-হ) মহান আল্লাহ বললেন, সুলাইমান (আঃ) যাদুর কার্যকলাপ করতেন না। কারণ, তা কুফরী। কুফরী কাজের সম্পাদন সুলাইমান (আঃ) কিভাবে করতে পারেন?
কথিত আছে যে, সুলাইমান (আঃ)-এর যামানায় যাদুর কার্যকলাপ ব্যাপক হয়ে গিয়েছিল। সুলাইমান (আঃ) এ পথ বন্ধ করার জন্য যাদুর কিতাবগুলো সংগ্রহ করে তাঁর আসন অথবা সিংহাসনের নীচে দাফন করে দেন। সুলাইমান (আঃ)-এর মৃত্যুর পর শয়তান ও যাদুকররা ঐ কিতাবগুলো বের করে কেবল যে মানুষদেরকে দেখালো তা নয়, বরং তাদেরকে বুঝালো যে, সুলাইমান (আঃ)-এর রাজশক্তি ও শৌর্যের উৎস ছিল এই যাদুরই কার্যকলাপ। আর এরই ভিত্তিতে ঐ যালেমরা সুলাইমান (আঃ)-কে কাফের সাব্যস্ত করল। মহান আল্লাহ তারই খন্ডন করেছেন। (ইবনে কাসীর ইত্যাদি) আর আল্লাহই ভালো জানেন।
আল্লাহর ৯৯ নাম
সুফি ধারার পণ্ডিতদের মতে, অন্যান্য ইসলামি টেক্সট বা গ্রন্থগুলোর মতো কোরআনের ভাষা ও শব্দগুলোর বাহ্যিক বা প্রকাশ্য অর্থের পাশাপাশি একটা ‘লুক্কায়িত’ অর্থ রয়েছে। এই লুক্কায়িত অর্থগুলো এমন সত্যের প্রকাশ ঘটায়, যা ওই গ্রন্থ ভাসা ভাসা পড়লে এসব অর্থ অনুদ্ঘাটিত থেকে যেতে পারে।
এ কারণে সুফিরা তাদের পবিত্র গ্রন্থগুলো সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য অনেক সময় ও শ্রম ব্যয় করেন। যেহেতু পবিত্র কোরআনই তাদের মনোযোগের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু, তাই এতে উল্লিখিত আল্লাহর ৯৯টি নামও (যাকে আরবিতে ‘আসমা আল-হুসনা’ বলা হয়) তাদের আগ্রহের মূলে রয়েছে।
মুসলিমদের বিশ্বাস, এই নামগুলো আল্লাহর বিভিন্ন গুণাবলি বর্ণনা করে। যেমন, পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত আল্লাহর অন্যতম নাম আর-রহমান যার অর্থ ‘পরম করুণাময়’। একইভাবে আল-খালিক যার অর্থ সৃষ্টিকর্তা।
সুফিরা বিশ্বাস করেন, এই নামগুলো একটা আধ্যাত্মিক শক্তিও বহন করে। আল-বুনির শামস আল-মারিফ হচ্ছে আল্লাহর সেই ৯৯টি নামের বৈশিষ্ট্য এবং সেগুলো ব্যবহারের একটি মহা সংকলনগ্রন্থ।
আল বুনি লিখেছেন, আল্লাহর প্রতিটি নামে একটি নির্দিষ্ট শক্তি যুক্ত রয়েছে। তাই কোনো মুমিন বান্দা যদি ‘আল-আলিম’ (আল্লাহর অন্যতম নাম, যার অর্থ জ্ঞানী) একটি নির্দিষ্ট সংখ্যকবার পাঠ করে, তাহলে সে ঐশ্বরিক জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশাধিকার পায়। একইভাবে ‘আল-কাউয়ি’ (আল্লাহর আরেকটি নাম যার মানে শক্তিশালী) পাঠ করলে ঐশ্বরিক সুরক্ষা পাওয়া যায়।
আলজেরীয় বংশোদ্ভূত এ পণ্ডিত আরও দাবি করেন, এই ঐশ্বরিক নামগুলোর জিকিরে অতীতে নানা অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। যেমন, মৃতদের জীবিত করে তোলার অলৌকিক ঘটনা ও হজরত ঈসা (আ.) ও মুসা (আ.)-এর আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার ক্ষমতা। এসব দাবি মূলধারার সুফি বিশ্বাসের সঙ্গে মিল রয়েছে।
তাদের দাবি অদ্ভুতভাবে এসব নামের কিছু জিকির করলে আত্মা রুহানি জগতে প্রবেশ ফলে এমন গুপ্ত বিদ্যা অর্জন করে যা সাধারণ মুসলিম পারে না অথচ এসব জিকির রসুল (সা:) সাহাবিদের (রা:) সুন্নাহ দ্বারা প্রামানিত নয়।
তবে বইটি নিয়ে তখনই বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়, যখন আল-বুনি আল্লাহর নাম ব্যবহার করে তাবিজ তৈরির বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশিকা ও সংখ্যাতত্ত্বের মতো জাদুবিদ্যার বিভিন্ন কৌশলের কথা লেখেন। শুধু তাই নয়, ফসল ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং ভালোবাসার মানুষ খুঁজে পাওয়ার মতো বিচিত্রসব বিষয়ের তাবিজ-কবজের কথা বইটিতে রয়েছে।
জাদুর (স্কয়ার) বর্গ ও জিনসাধনা
শুরুতেই বলা হয়েছে যে, বইটিতে জাদুবিদ্যার মৌলিক বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে। এর প্রথম সংস্করণের দুটি অধ্যায়জুড়েই নানা রঙের টেবিল, প্রার্থনা চার্ট ও সংখ্যাতাত্ত্বিক সাইফার বা সংকেত দিয়ে ভরা, যা বিভিন্ন ভাষা ও শব্দের লুক্কায়িত অর্থ বের করতে ব্যবহার করা হয়েছে।
আহমাদ আল বুনি গণিতবিদ ছিলেন। কোরআনের ২৮টি হরফ নিয়ে তিনি একটি তত্ত্ব দিয়েছিলেন যে, আরবি অক্ষরের সব কটিরই সংখ্যাগত মান রয়েছে। যে যুক্তি তিনি তুলে ধরেছিলেন কোরআনে উল্লিখিত বিভিন্ন রহস্যময় অক্ষর সমষ্টির রেফারেন্সের মাধ্যমে। ‘মুকাত্তাআত’ নামে পরিচিত ওই রহস্যময় অক্ষর সমষ্টি, যার মাধ্যমে কোরআনের ১১৪টি সুরার মধ্যে ২৯টি শুরু হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ কোরআনের দীর্ঘতম সুরা আল বাকারাহ ‘আলিফ, লাম, মিম’ অক্ষরগুলো দিয়ে শুরু হয় এবং সুরা মরিয়ম শুরু হয় ‘কাফ, হা, ইয়া, আইন, ছোয়াদ’ দিয়ে। আপাত অর্থহীন এই অক্ষরগুলোরও একটা রহস্যময় অর্থ ও এমনসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে মনে করা হয়, যা মুমিনের ইচ্ছা পূরণ করতে পারে।
অথচ আল্লাহ বলেন – (আলে ইমরান : ৭) তিনিই তোমাদের প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছেন৷ এ কিতাবে দুই ধরনের আয়াত আছেঃ এক হচ্ছে, মুহ্কামাত, যেগুলো কিতাবের আসল বুনিয়াদ এবং দ্বিতীয় হচ্ছে, মুতাশাবিহাত৷ যাদের মনে বক্রতা আছে তারা ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সবসময় মুতাশাবিহাতের পিছনে লেগে থাকে এবং তার অর্থ করার চেষ্টা করে থাকে৷ অথচ সেগুলোর আসল অর্থ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না ৷ বিপরীত পক্ষে পরিপক্ক জ্ঞানের অধিকারীরা বলেঃ ‘‘আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, এসব আমাদের রবের পক্ষ থেকেই এসেছে’’। আর প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানবান লোকেরাই কোন বিষয় থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে৷
শামস আল-মারিফে অক্ষর ও সংখ্যা ব্যবহার করে আল-বুনি বিস্তৃত চার্ট তৈরি করেছেন, যা বিশেষ পদ্ধতিতে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। যদিও আল-বুনির যুগের কয়েক শতাব্দী আগেই ভারত ও ইরাকের মতো অঞ্চলে এই জাদুর বর্গ ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু তার (আল-বুনির) কাজগুলো ছিল প্রথম গুপ্ত সংকেতগুলোর অন্যতম, যা মুসলিমদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
এই ধারণাগুলো ১৫ শতক নাগাদ সুফিদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এগুলো এতটাই ব্যাপক হয়ে ওঠে যে, সংখ্যাতাত্ত্বিক চার্টগুলো পরে ভারতে সেনাদের উর্দির নিচের কাপড়ে পর্যন্ত অনুলিপি করা হতো।
কারো ঝাড়ফুঁক করার জন্য কীভাবে ফেরেশতা ও ভালো জিন ডেকে আনতে হয়, সে বিষয়েও নানা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন আল-বুনি। একই সঙ্গে কেউ যেন ভুলবশত খারাপ জিনকে ডেকে না ফেলে সেই সতর্কতাও উল্লেখ করেছেন তিনি।
আজ বিভিন্ন তাবিজ এমনকি অনেক কুরআনের ভিতর সরাসরি কুরআনের সুরা থাকে না – খেয়াল করে দেখবেন বিভিন্ন স্কয়ার, ত্রিভুজ, আরবি বর্ন, সংখ্যা থাকে এটা রসুল (সা:) ও সাহাবীদের পথ নয় বরং আল বুনিদের তৈরি পথ।
তারা বলে এসব শব্দ যেমন ৭৮৬ দ্বারা বিসমিল্লাহ বুঝায়, এগুলো সাংকেতিক শব্দ এগুলোর গুরুত্ব আছে। কিন্তু রুকইয়া বিশেষজ্ঞদের দাবি ওরা দ্বৈত শব্দ ব্যবহার করে, এগুলো কোন কুফরী অর্থ বহন করে কিন্তু ওরা মুসলিমদের বুঝানোর জন্য এসব প্রচার করে যেমন ইহুদিরা করত।
হে মুমিনগণ! তোমরা ‘রা’এনা’ বলো না, বরং উনযুরনা বলো এবং শোন। আর কাফেরদের জন্য যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
‘রা’এনা’ শব্দটি আরবী ভাষায় নির্দেশসূচক শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে ‘আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন’। সাহাবাগণ এ শব্দটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করত। কিন্তু এ শব্দটি ইয়াহুদীদের ভাষায় এক প্রকার গালি ছিল, যা দ্বারা বুঝা হতো বিবেক বিকৃত লোক। তারা এ শব্দটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে উপহাসসূচক ব্যবহার করত। মুমিনরা এ ব্যাপারটি উপলব্ধি না করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে ব্যবহার করা শুরু করে, ফলে আল্লাহ তা’আলা এ ধরণের কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে আয়াত নাযিল করেন।
অন্য আয়াতে এ ব্যাপারটিকে ইয়াহুদীদের কুকর্মের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে, “ইয়াহুদীদের মধ্যে কিছু লোক কথাগুলো স্থানচ্যুত করে বিকৃত করে এবং বলে, শুনলাম ও অমান্য করলাম এবং শোনে না শোনার মত; আর নিজেদের জিহবা কুঞ্চিত করে এবং দ্বীনের প্রতি তাচ্ছিল্ল করে বলে, ‘রা’এনা’। কিন্তু তারা যদি বলত, শুনলাম ও মান্য করলাম এবং শুন ও আমাদের প্রতি লক্ষ্য কর, তবে তা তাদের জন্য ভাল ও সংগত হত। কিন্তু তাদের কুফরীর জন্য আল্লাহ তাদেরকে লা’নত করেছেন। তাদের অল্প সংখ্যকই বিশ্বাস করে। [সূরা আন-নিসা ৪৬]। অথচ রসুল (সা:) বিভিন্ন সমস্যার জন্য ইস্তেখারা শিখিয়েছেন
তাবিজ বা জ্বিন দ্বারা উপকৃত হওয়া নয়।
হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজের ইচ্ছা করে তখন সে যেন ফরজ নামাজ ছাড়া দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে নেয়। এরপর (এই) বলে (দোয়া করে)-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ فَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার জ্ঞানের সাহায্য চাইছি, তোমার শক্তির সাহায্য চাইছি এবং তোমার মহান অনুগ্রহ চাইছি। তুমিই শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী, আমার কোনো ক্ষমতা নেই। তুমি অফুরন্ত জ্ঞানের অধিকারী, আমার কোনো জ্ঞান নেই। তুমি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে ও সম্যকভাবে জানো। হে আল্লাহ! তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য, আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ থেকে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজের পরিণামের দিক থেকে অথবা আমার দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপারে ভালো মনে কর; তবে তা আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দাও এবং আমার জন্য সহজ করে দাও।’ (বুখারি)
ইনশাআল্লাহ আল্লাহ যা উত্তম সে সিদ্ধান্তে আপনাকে অটল রাখবেন হয়তো স্বপ্নের মাধ্যমেও নির্দেশনা পেতে পারেন।
এছাড়া বদনজর, জ্বিনঘটিত সমস্যা হতে বাচার জন্য আয়াতুল কুরসী, তিনকুল, সুরা ফাতেহা সহ কিছু দোয়া আছে আমল করা উচিত ।
যেমন –
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنِ الْمِنْهَالِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُعَوِّذُ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ : ” أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ ” . ثُمَّ يَقُولُ : ” كَانَ أَبُوكُمْ يُعَوِّذُ بِهِمَا إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ ” . قَالَ أَبُو دَاوُدَ : هَذَا دَلِيلٌ عَلَى أَنَّ الْقُرْآنَ لَيْسَ بِمَخْلُوقٍ .
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-এর জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করতেন এভাবে : “আমি তোমাদের দু’জনের জন্য আল্লাহ্র পূর্ণাঙ্গ কালেমাসমূহের মাধ্যমে প্রত্যেক শয়তান ও বিষাক্ত প্রাণী হতে এবং সকল প্রকার বদনজর হতে মুক্তি চাইছি”। অতঃপর তিনি বলতেন, তোমাদের পিতা (ইবরাহীম আঃ)-ও ইসমাঈল এবং ইসহাক্ব (আঃ) উভয়ের জন্য এ দু’আ পড়ে আশ্রয় চাইতেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এতে প্রমাণিত হয় যে, আল-কুরআন মাখলুক নয়।
আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৭৩৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস