#যেদিন তুমি এসেছিলে .
#সিজন_টু
#পর্ব ১৪
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
“সকাল তোর কাছে বাচ্চারা প্রাইভেট পড়তে কখন আসে?” অফিস থেকে ফিরে কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে জিজ্ঞেস করল অর্ষা।
সকাল পড়ছিল। সে অর্ষার প্রশ্ন শুনে পড়া থামিয়ে বলল,
“বিকেলেই। আমি কলেজ থেকে আসার পর। কেন?”
“এখন থেকে ওদেরকে বলবি সন্ধ্যায় ছয়টায় আসতে। আমি এক ঘণ্টার জায়গায় দেড় ঘণ্টা পড়িয়ে দেবো। যারা আসতে পারবে না তাদের পড়ার দরকার নেই। আমি যেহেতু এখন জব করছি সেহেতু দু’একজন স্টুডেন্টস কম পড়লে সমস্যা নেই। তুই এখন থেকে কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া করে রেস্ট নিবি এক ঘণ্টার মতো। তারপর রাফিকে পড়াতে যাবি।”
“তুই আর রাফিকে পড়াবি না?”
“না।”
“কেন?”
“সব কেনর উত্তর হয় না সকাল। আর সবকিছুতে তোর এত কৌতুহল বন্ধ কর। আমি যেটা বলেছি বুঝেছিস?”
সকাল ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
“বুঝেছি।”
“মানতে আপত্তি আছে?”
“না।”
“গুড। এখন সর। ঘুমাব আমি।”
“ঘুমাবি মানে? ফ্রেশ হবি না? খাবি না?”
“না, ভালো লাগছে না।”
সেই রাতে সত্যি সত্যিই অর্ষা ফ্রেশ হয়নি, খায়ওনি। আজ তিনদিন হবে সে রাফিকে পড়াতে যায় না। রেণুর নাম্বার থেকে কল এসেছিল। অর্ষা কোনো রেসপন্স করেনি। অনেক ভেবে-চিন্তে তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে আর ও বাড়িতে যাবে না।
সেলিনা বেগম অনেক ডেকেও অর্ষাকে ঘুম থেকে তুলতে পারল না।
.
.
রুমের মাঝে পায়চারি করছে আহনাফ। হাতে গরম কফির মগ। পায়চারির সঙ্গে সঙ্গে সে কফিতেও চুমুক দিচ্ছে। কিছু একটা নিয়ে ভাবছে বোঝা যাচ্ছে। এই ভাবনাটা যে অর্ষাকে নিয়ে এটা সে অস্বীকার করতে পারবে না। সত্যি বলতে অস্বীকার করতে চায়ও না। মেয়েটা কেমন যেন হুট করে এসেই চিন্তার জায়গাটা দখল করে নিয়েছে। মনের একাংশে নিজের আধিপত্য তৈরি করে নিয়েছে। মেয়েটাকে দেখার পরই যেন সে ভুলে বসেছিল সে শশীর কাছে কমিটেড। মাথায় তখন শশীর বিষয়টা ছিল-ই না। অর্ষা নামক হঠাৎ আসা মেয়েটি অল্প অল্প করে মনে জায়গা করে নিতে শুরু করল। সে না চাইতেও জড়িয়ে গেছিল অর্ষার সাথে। অর্ষার এত টেক কেয়ার করা, সঙ্গ দেওয়া এসবই যেন কাল হয়ে দাঁড়াল। তার অর্ষার প্রতি দুর্বল হওয়াটা যতটা না অনুচিত ছিল তারচেয়েও বেশি অনুচিত হয়েছে অর্ষার সঙ্গে মেশা। তার বারবার মনে হচ্ছে, তার জন্যই অর্ষা তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিল। সে যদি না অর্ষাকে সেভাবে বুঝতে দিত তাহলে হয়তো অর্ষাও তাকে ভালোবাসত না। সেদিন যেই কথাগুলো সে অর্ষাকে বলেছিল সেগুলো যে অর্ষাকে কতটা আঘাত করেছিল তা সম্পূর্ণ অনুভব করতে না পারলেও কিছুটা তো অন্তত আন্দাজ করতেই পেরেছিল। কিন্তু এছাড়া তো আর তার কোনো উপায়ও ছিল না। সে চেয়েছিল এই আঘাত থেকেই অর্ষার মাঝে জেদ তৈরি হোক। আহনাফকে সে ঘৃণা করুক। তার চাওয়া হয়তো সত্যিই পূরণ হয়েছে। অর্ষা তাকে এড়িয়ে চলছে। বিষয়টা একদিকে তাকে সন্তুষ্ট করলেও অন্যদিকে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। কষ্ট সে এজন্য পাচ্ছে না যে, অর্ষা তাকে এড়িয়ে চলছে; বরং সে এজন্যই কষ্ট পাচ্ছে কারণ সে জানে ঐ কঠোর মনের মাঝে কঠোরতার চেয়ে কষ্টের পরিমাণ বেশি। এই কষ্টের জন্য আহনাফ বারবার নিজেকে দায়ী মনে করছে। শতবার সে নিজেকে দোষারোপ করে চলেছে।
রাতে ডিনার শেষ করে চিন্তিত মনেই সে শুয়ে পড়ে। আজকাল ওভার থিংকিং বেশি করছে। এছাড়া কিছু করারও নেই। ফিরে যাওয়ারও দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। মন না চাইলেও আমাদের অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। মানিয়ে নিতে হয়। শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসছে না কিছুতেই। কী করবে উপায় না পেয়ে হাসিবকে ভিডিয়ো কল করে। হাসিব আহনাফের বেষ্টফ্রেন্ড। বর্তমানে সে কানাডায় জব করে। দু’বার রিং হওয়ার পর হাসিব কল রিসিভ করে বলে,
“কী অবস্থা তোর? এতদিন পর!”
আহনাফ শোয়া থেকে উঠে বসল। খাটের সাথে হেলান দিয়ে বলল,
“এতদিন পর মানে? গতকালও তোর সাথে আমার কথা হয়েছে।”
“হয়েছিল নাকি? মনে নেই তাহলে। কাজের চাপে সব ভুলে যাই।”
“কাজের চাপ নাকি গার্লফ্রেন্ডের চাপ?”
হাসিব শব্দ করে হেসে ওঠে। বলে,
“ধুর শালা! আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নাই। আমি পিওর সিঙ্গেল।”
“চাপা মারিস না আর।”
“চাপা কেন মারব? তোর কাছে কি আমি মিথ্যা বলি নাকি। এনিওয়ে, ভাবির কোনো সিঙ্গেল কাজিন আছে নাকি জিজ্ঞেস করিস তো।”
আহনাফের চোখে-মুখে এতক্ষণ হাসি থাকলেও এবার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। হাসিব ফ্রিজ থেকে জুসের বোতল বের করতে করতে বলে,
“কী হয়েছে? কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত মনে হচ্ছে।”
“সব কেমন যেন এলোমেলো লাগে রে! ভালো লাগে না আর কিছু।”
“বলবি তো শালা কী হয়েছে?”
“মেবি আই অ্যাম ইন লাভ।”
“সেটা আর নতুন কী? আগে থেকেই তো।”
আহনাফ রাগান্বিত স্বরে বলল,
“আগে থেকেই মানে?”
“কেন? শশী?”
“আমি কোনোদিন বলেছি শশীকে আমি ভালোবাসি?”
“বিয়ের পরে বাসতি। এখন তো বিয়ের আগেই ভালোবাসা হয়ে গেছে বললি।”
“হ্যাঁ, ভালোবাসা হয়েছে। তবে মেয়েটা শশী নয়।”
হাসিব জুসের বোতলে চুমুক দিয়ে অবাক হয়ে বলল,
“তাহলে কে?”
“অন্য একজন।”
“তুই কি একসাথে দুই নৌকায় পা রাখা শুরু করলি নাকি?”
“ফালতু কথা বলবি না। আমি ঐ টাইপ ছেলে?”
“ভালোবাসাটা হলো কীভাবে?”
“এই প্রশ্নের উত্তর কেউ কখনও দিতে পেরেছে?”
“শশী জানে?”
“কেউ-ই কিছু জানে না।”
“কী করবি তাহলে এখন?”
“কিছুই না। সব যেভাবে চলছিল সেভাবেই চলবে।”
“তোর কথা শুনে এখন আমার নিজেরই হতাশ লাগছে।”
আহনাফ মলিন হেসে বলল,
“থাক তোর আর হতাশ হওয়া লাগবে না। রাখছি এখন। ঘুমাব।”
“আচ্ছা বেশি ভাবিস না। যা হওয়ার হবেই। ঘুমিয়ে পড়।”
“গুড নাইট।”
______________
অর্ষা অফিসে এসে নিজের ডেস্ক ঝেড়ে-মুছে আগে পরিষ্কার করে। ফাইলগুলো সব গুছিয়ে রেখে কম্পিউটারে রিপোর্ট করতে বসে। সেই সময়ে মিজান এসে বলে,
“অর্ষা কি ব্যস্ত?”
অর্ষা মিজানের দিকে তাকিয়ে দেখে তাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আর ঘেমেনেয়ে শার্টও ভিজে গেছে। সে প্রশ্ন করল,
“না, কোনো কাজ আছে?”
“হ্যাঁ। একটু কষ্ট করে তোমায় আট তলায় যেতে হবে। এইচ.আর-এ গিয়ে সম্পা ম্যামকে বলবে মিজান স্যার ডকুমেন্ট আর ফাইলগুলো দিতে বলেছে।”
“আচ্ছা। কিন্তু আপনাকে এত টায়ার্ড লাগছে কেন?”
“লিফ্ট নষ্ট। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে আসলাম। হাঁপিয়ে গেছি। এখন আর আট তলায় যাওয়ার এনার্জি পাচ্ছি না। তুমি একটু কষ্ট করে যাও পিচ্চি।”
“সমস্যা নেই। আমি গিয়ে নিয়ে আসছি। কিন্তু আমি যখন আসলাম, তখন তো লিফ্ট ঠিক ছিল।”
“হ্যাঁ। দশ কি পনেরো মিনিটের মতো হবে লিফ্ট নষ্ট।”
“ওহ। আচ্ছা স্যার আপনি রেস্ট করুন। আমি গিয়ে নিয়ে আসি।”
মিজান খুশি হয়ে বলল,
“থ্যাঙ্কিউ পিচ্চি।”
প্রত্যুত্তরে অর্ষাও হাসল। উঠে চলে গেল ফাইলগুলো আনার জন্য। সে যখন ফ্লোরের মেইন দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলছিল, তখন অপর পাশ থেকে জিসানও দরজা টেনে খুলছিল। দুজনের টাইমিং আকস্মিক একসাথে হওয়ায় এবং দুজনেই মুখোমুখি হওয়াতে অর্ষা টাল সামলাতে পারে না। সে হুড়মুড়িয়ে গিয়ে জিসানের ওপর পড়ে। জিসান নিজেও এমনকিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল না বিধায় অর্ষাকে নিয়েই ফ্লোরে পড়ে যায়। অর্ষার কপালের সাথে জিসানের থুতনিতে বারি লাগে। এছাড়া জিসান নিজের মাথায়ও বেশ আঘাত পেয়েছে। সিঁড়িতে তখন অসংখ্য এমপ্লয়ি, স্টাফ, স্যাররা ছিল। তাদের মধ্যে আহনাফ নিজেও ছিল। সে সিঁড়িতে থমকে দাঁড়িয়ে আছে। তার দু’চোখ আটকে আছে অর্ষার দিকে। ভয়ার্ত অর্ষা কীভাবে জিসানকে আঁকড়ে ধরেছে এই দৃশ্যটাই তার চোখের দৃশ্যপটে আটকে রয়েছে।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।
বিঃদ্রঃ পর্ব ছোটো হয়েছে এটা নিয়ে আফসোস/অভিযোগ না করে গল্প পেয়েছেন এতেই খুশি থাকুন।নেক্সট পর্ব তাড়াতাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করব ইন-শা-আল্লাহ্।]