_______________
মুন বাসায় আসার পর ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কী রান্না করবে, কী খাওয়াবে সেসব ভাবতে ভাবতেই সে দিশেহারা। আহনাফ শান্ত ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে আছে। আদিব শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে আছে। মুন নিজে দিশেহারা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটার পর একটা ফরমায়েশ আদিবকেও দিয়ে যাচ্ছে। কখনও বলছে, এটা করো তো কখনও বলছে ওটা করো। সর্বশেষ বাধ্য হয়ে অর্ষা মুখ খুলল। মুনকে শান্ত করতে বলল,
“তুই একটু থাম মুন। এত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? তোর বাসায় তো আর এই প্রথম এলাম না।”
মুন চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় যেন অর্ষা মাত্রই বড়ো মাপের কোনও অন্যায় করে ফেলেছে। সে ব্যস্ত হয়ে বলল,
“তোর কথা ভাবছে কে? তুই প্রথমবার না এলেও দুলাভাই তো আমার বাসায় প্রথমই এলো। তার জন্য ব্যস্ত হব না? তুই হচ্ছিস দুধভাত অতিথি।”
অর্ষার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“বারবার কেন তাকে দুলাভাই ডাকছিস?”
“কেন তাতে তোর কী? সে তখন বলল না আমার জন্য তার নাম দুলাভাই। সূতরাং আমি তাকে দুলাভাই-ই ডাকব। তোর মন চাইলে তুইও ডাকতে পারিস।”
এরপর সে আদিবকে ফের তাড়া দিয়ে বলল,
“তুমি অমন সঙের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? পেয়াজ-মরিচগুলো জলদি কেটে নাও। তাড়াতাড়ি রান্না বসাতে হবে তো।”
আহনাফ তখন বলল,
“আপু আজ আমাদের জন্য রান্না-বান্না কিছু করতে হবে না। অন্য একদিন এসে পেট ভরে খেয়ে যাব। আজ শুধু এক কাপ চা খাওয়ালেই হবে।”
মুন ভারী কণ্ঠে বলে উঠল,
“তা আবার হয় নাকি? এক কাজ করি। বিরিয়ানি রান্না করি। বেশিক্ষণ সময় লাগবে না।”
অর্ষা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“তোর যা ইচ্ছে তুই কর। আমি যাচ্ছি। একটুপরই বাচ্চারা পড়তে আসবে।”
“তুই যেতে পারবি না তো। আমি রুম তালা দিয়ে চাবি লুকিয়ে রেখেছি।”
“এরকম বাচ্চামো করার মানে কী?”
“মানে কিছুই না। খাওয়া-দাওয়া না করে তুই যেতে পারবি না।”
“মুন একটু বোঝার চেষ্টা কর।”
“পারব না।” বলে অর্ষার সমস্যাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে মুন রান্নাঘরে চলে যায়। সঙ্গে আদিবও। সে হাতে হাতে টুকটাক কাজ করে মুনকে সাহায্য করছে।
অর্ষার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে আহনাফের ওপর। সে ক্ষেপে গিয়ে বলে,
“আপনার জন্যই আমাকে এখন মুসিবতে পড়তে হলো।”
“আশ্চর্য! এখানে আমার কী দোষ? বান্ধবী তো আর আমার নয়। তোমার বান্ধবী। সে যাওয়ার পথ সব বন্ধ করে রেখেছে। রাগ দেখালে আমি দেখাতে পারি। তুমি কেন দেখাচ্ছ?”
অর্ষা যেন রাগ প্রকাশ করারও ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। সে অন্যপাশে বসে ফোন ঘাঁটতে লাগল। মুন যা শুরু করেছে আজ রাতে না খেয়ে কিছুতেই যেতে দেবে না। ওদিকে বাচ্চাগুলো যদি এসে বসে থাকে? সকাল তো মনে হয় এতক্ষণে রাফিকে পড়াতে চলে গেছে। এখনও বাজারও করা হলো না। বাড়িতে মনে হয় রান্নাও হয়নি। সবকিছু মিলিয়ে অর্ষার মেজাজ এখন বেজায় খারাপ। সে ওমর রহমানের নাম্বারে কল করে। রিং হচ্ছে ওপাশে। ওমর রহমান ফোন রিসিভ করলেন। কাশতে কাশতে বললেন,
“হ্যালো।”
এপাশ থেকে অর্ষা উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইল,
“তোমার কাশি আবার বেড়েছে বাবা?”
“ও কিছু না। শুকনা কাশি। মাঝে মাঝে হয়।”
“ওষুধ কি খাচ্ছ ঠিকমতো?”
“হ্যাঁ, মা। তোর ছুটি হয়নি এখনও?”
“হয়েছে। আমি এখন মুনের বাসায় আছি। বাজারে দেখা হয়েছিল। ধরে-বেঁধে নিয়ে এসেছে। রাতে না খেয়ে এখন কিছুতেই যেতে দেবে না।”
ওমর রহমান হেসে বললেন,
“ও তো এমনই। পাগলী একটা। তুই তাহলে কখন আসবি মা?”
“আসতে তো একটু দেরি হবেই। ঘরে তো বাজারও নেই। রান্নাও হয়নি। আমি আহিলকে ফোন করে বলে দেই কিছু খাবার কিনে দিতে।”
ওমর রহমান আহিলকে চেনেন। অর্ষাই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। তিনি বললেন,
“না, না। ছেলেটাকে এখন কষ্ট করে এতদূর আসতে হবে না। সকাল ভাত, আলু ভর্তা আর ডিম ভেজে রেখে গেছে। ওতেই হয়ে যাবে।”
“ঠিক বলছ?”
“হ্যাঁ, মা।”
“আচ্ছা আজ একটু কষ্ট করে নাও। আমি রাতে আসার সময় বাজার করে নিয়ে আসব। আর শোনো বাবা, যারা আজ প্রাইভেট পড়তে আসবে ওদেরকে বাড়িতে চলে যেতে বোলো। আর বলবে যে, আজকের পড়া শুক্রবার পড়িয়ে দেবো।”
“আচ্ছা।”
“রাখছি এখন।”
“ঠিক আছে মা। সাবধানে আসিস।”
অর্ষা ফোন রেখে দেখে আহনাফ তার দিকে তাকিয়ে আছে। কথা বলার সময়ই মুন চা আর বিস্কুট দিয়ে গেছে দুজনকে। আহনাফ চায়ে চুমুক দিচ্ছিল আর অর্ষাকে দেখছিল। ফোন রাখার পর আহনাফ বলল,
“তুমি বাসায় প্রাইভেট পড়াও?”
“আপনাকে বলব কেন?”
“জিজ্ঞেস করেছি তাই।”
“আমি উত্তর দিতে বাধ্য নই।”
“আমি তাহলে বারবার জিজ্ঞেস করেই যাব।”
“ভালো ফ্যাসাদে পড়লাম তো! আচ্ছা আপনি হঠাৎ এমন ইউটার্ন মারলেন কেন? আগে তো খুব গম্ভীর আর অল্পভাষী ছিলেন। আলাদা একটা এটিটিউড নিয়ে ছিলেন। হঠাৎ করে এমন পরিবর্তন হয়ে গেলেন কেন?”
যত্নসহকারে কাপটি ট্রে-তে রেখে আহনাফ বলল,
“আমি আগের মতোই আছি। তবে সেটা বাকিদের জন্য। আর ইউটার্ন মেরেছি তোমার জন্য। অর্থাৎ আমার পরিবর্তন তুমি ব্যতীত অন্য কারও জন্য নয়। জানো তো, নিজের মানুষের সামনে গম্ভীর হয়ে এটিটিউড নিয়ে থাকলে মনের ভাবটা ঠিক প্রকাশ করা যায় না। আর তুমি তো এমনিতেই আমাকে বুঝতে চাও না। এরমধ্যে আমি যদি আবার অল্পভাষী হয়ে থাকি তাহলে তুমি তো আমার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে। এনিওয়ে, এখন আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। প্রাইভেট পড়াও বাসায়?”
“হু।” গম্ভীর হয়ে বলল অর্ষা।
“তাহলে রাফিকে পড়াচ্ছ না কেন?”
“সময় নেই তাই।”
“বিষয়টা সময়ের না। সকাল নিশ্চয়ই আগে বাসায় পড়াত? এখন ওর জায়গায় তুমি বাসায় পড়াও আর সকাল রাফিকে পড়ায়। এর কারণ কী? আমার মুখোমুখি হতে ভয় পাও?”
“ভয় পাব কেন? আপনি বাঘ নাকি ভাল্লুক? আমি আপনাকে এড়িয়ে যেতে চাইছি আপনি সেটা বুঝতে পারছেন না?”
“বুঝতে চাইছি না।”
“তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই। অবুঝকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার আছে। কিন্তু যে বুঝেও না বোঝার ভান ধরে থাকে, তাকে বোঝানোর সাধ্যি আমার নেই।”
“তোরা দুজনে আবার ঝগড়া করছিস।” শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো মুন। অন্য একটা চেয়ার টেনে নিয়ে অর্ষার পাশে বসল। আহনাফ বলল,
“আমি না, ও ঝগড়া করছে। আমি ঝগড়া করতে জানি না।”
মুন হেসে বলল,
“আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়, আপনি অনেক শান্তশিষ্ট দুলাভাই।”
“কিছু ঝগড়ুটে মেয়ে মানুষ এটারই ফায়দা লুটে নেয় বোন। আমার মতো সাধাসিদা ছেলে পেয়ে যাচ্ছে তাই ব্যবহার করে।”
“আপনি অর্ষার কথা বলছেন তাই না? ধুর! ওর কথা বাদ দিন। জেদ অনেক বেশি। কিন্তু মানিয়ে নিতে পারলে জীবন সুন্দর করে কেটে যাবে।”
কিছুক্ষণ বাদে আদিবও সেখানে চলে আসে। চারজন উপস্থিত থাকলেও গল্প করছে তিনজন। অর্ষা এখানে নিরব ভূমিকা পালন করছে। তার হাতে হুমায়ুন আহমেদের ‘শুভ্র গেছে বনে’ বইটি। সে বইয়ের পাতায় শুধু শুধু চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। কী পড়ছে না পড়ছে তা ওদের গল্প আর হাসির শব্দে ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। তবুও অর্ষা বইটি চোখের সামনে ধরে রেখেছে। সময় কাটানোর জন্য এরচেয়ে ভালো উপায় আর হয় না। ওদিকে যে আহনাফের ব্যস্ত, ব্যাকুল দৃষ্টি একটুপর পরই তার দিকে এসে আটকে যাচ্ছে সেদিকে তার বিন্দুমাত্রও ভ্রুক্ষেপ নেই।
গল্পে গল্পে মুনের বিরিয়ানি রান্নাও হয়ে গেছে। আদিব সালাদ বানিয়ে টেবিলের ওপর রাখল। বিরিয়ানির ঘ্রাণ শুনেই আহনাফ কিছুক্ষণ মুনের রান্নার প্রসংশা করে। খাবার মুখে তোলার পর প্রসংশা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। মুনের রান্নার হাত ভালো এটা অস্বীকার করার জো নেই। আহনাফ খেতে খেতে বলল,
“শালিকার হাতের রান্না খেয়ে ফেললাম। কবে যে বউয়ের হাতের রান্না খাব কে জানে!”
আদিব মুচকি হেসে বলল,
“আগে বিয়েটা তো করুন ভাইয়া।”
“আমি তো রাজিই আছে। সে রাজি থাকলে আমি এখনই কাজী ডেকে আনব।”
অর্ষা কোনও প্রত্যুত্তর করছে না। চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। মুন কয়েকবার খুঁচিয়েও অর্ষার মুখ থেকে কোনও শব্দ বের করতে পারল না। খাওয়া-দাওয়ার পর মুন বাটি ভর্তি বিরিয়ানি অর্ষার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“এগুলো বাসায় নিয়ে যা। আঙ্কেল-আন্টি তো আর আসবে না আমার বাসায়। তারা তো মহা ব্যস্ত। খেয়ে আমাকে বলতে বলবি কেমন হয়েছে।”
মুনের অভিমানে অর্ষা মৃদু হাসল। দুজনের থেকে বিদায় নিয়ে আহনাফ আর সে বেরিয়ে আসে। আহনাফ গাড়ি ঠিক করবে অর্ষা তখন বলল,
“আপনি বাড়ি চলে যান।”
“আর তুমি?”
“আমি বাজারে যাব। লেট হবে।”
“চলো।”
“চলো মানে?”
“মানে আমিও তোমার সঙ্গে বাজারে যাব।”
“কেন?”
আহনাফ ফোনের স্ক্রিন অন করে অর্ষার সামনে ধরে বলল,
“অলমোস্ট রাত ন’টা বাজে। ঢাকা-শহরে এটা খুব একটা রাত না হলেও আমার চিন্তায় তোমার জন্য অনেক রাত। এত রাতে তোমাকে একা রেখে আমি চলে যাব?”
“আমার প্রতি আপনাকে এত কেয়ার দেখাতে হবে না।”
“তুমি না চাইলেও আমি দেখাব। এখানের কোনও বাজারে যাবে নাকি ঐ বড়ো বাজারেই যাবে?”
অর্ষা বুঝতে পারল আহনাফ নাছোড়বান্দা, সে সত্যিই অর্ষাকে একা রেখে যাবে না। অযথা কথা বাড়িয়ে তর্ক করেও লাভ নেই। শুধু শুধু সময় নষ্ট। ছোটো করে বলল,
“বড়ো বাজারেই যাব।”
আহনাফ একটা রিকশা ডাকে। দুজনে রিকশায় বসলেও মাঝখানে বেশখানি জায়গা রেখেছে অর্ষা। আহনাফ বুঝতে পেরেও কিছু বলল না। বাজারে গিয়ে বাজার করার পর বাড়ি ফেরার পালা। আহনাফ বাজারের টাকা দিতে চাইলে অর্ষা চোখ রাঙিয়ে তাকিয়েছিল। এরপর আর বাড়তি সাহস দেখাতে যায়নি আহনাফ।
“এখান থেকে বাড়ি কাছেই। আমি একটা রিকশা নিয়ে চলে যেতে পারব। আপনি বাড়িতে চলে যান।” বলল অর্ষা।
“বাজারের টাকা দিতে দিলে তোমার কথা রাখার চেষ্টা করতাম।” মিথ্যা বাহানা দেখাল আহনাফ।
অর্ষা বাজারের ব্যাগ নিচে রেখে বলল,
“এখন তাহলে আপনি কী করতে চাচ্ছেন?”
“তোমার সাথে বাসা অব্দি যেতে চাইছি। বারণ করে লাভ নেই। চলো।”
আহনাফ আবার রিকশা ঠিক করল। অর্ষা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সেই দৃষ্টিকে অগ্রাহ্য করে আহনাফ বলল,
“উঠো।”
বাধ্য হয়ে অর্ষাকে আহনাফের সঙ্গেই বাড়ি পর্যন্ত যেতে হলো। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে দিল আহনাফ। অর্ষা বাড়ির ভেতর যাচ্ছিল আহনাফ তখন পিছু ডেকে বলল,
“একটাবার শুনবে?”
অর্ষা দাঁড়াল। পিছু না ফিরেই বলল,
“কী দরকার?”
“তাকাও তো একবার।”
“তাকালাম। যা বলার জলদি বলেন।”
“তুমি এখনও আমার ওপর রাগ করে আছো?”
“না তো! আগেই বলেছি সেই অধিকার আমার নেই।”
“আমি মানছি তো আমার ভুল হয়েছে। সেদিন ওভাবে কথাগুলো আমার বলা উচিত হয়নি। কিন্তু তুমিই একবার ভেবে দেখো তখন আর আমি কী-ই বা করতাম? যা-ই বলেছি সেদিন দুজনের দিকটা ভেবেই বলেছি।”
“বেশ তো! আজ তাহলে এত আকুতি-মিনতি করতে বলেছে কে? আপনি যেমনটা চেয়েছিলেন সব তো তেমনটাই চলছে।”
“চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন তো আর চাই না।”
“সেটা আপনার ব্যাপার। আপনি তখন চেয়েছিলেন, এখন চান না এতে আমার কী করার আছে? তখন যেমনটা চেয়েছিলেন আমি তেমনটাই মেনে নিয়েছিলাম। আর তেমনভাবেই চলব।”
“সবসময় জেদকে প্রশ্রয় দিও না অর্ষা। কেউ ভুল স্বীকার করলে তাকে ক্ষমা করে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।”
“ভুল করলে ক্ষমা না হয় করা যায়। কিন্তু আঘাত করলে? আঘাত করার পর যদি ক্ষমা করাও হয় তাহলে কি সেই আঘাত মুছে যায়? ভুলে যাওয়া যায়?”
“কী করলে তুমি আমায় ক্ষমা করতে পারবে বলো? আমি তা-ই করব তোমার জন্য।”
“কিছু করতে হবে না আপনাকে। দয়া করে আমাকে শুধু আমার মতো ছেড়ে দিন। আমি এভাবেই ভালো আছি। আমার কাউকে দরকার নেই। কারও ভালোবাসারও দরকার নেই আমার।”
“কিন্তু আমার দরকার আছে। আমার সেদিনের ব্যবহারের জন্য আমি স্যরি। মন থেকেই ক্ষমা চাচ্ছি।”
“কিন্তু আমি মোটেও আপনাকে ইট’স ওকে বলব না। আপনি এখন আসতে পারেন।”
অর্ষা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। আহনাফ কিছুটা রাগীস্বরে বলে,
“আমার কথা এখনও শেষ হয়নি। তুমি কি আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছ?”
আহনাফ রাগীস্বরে কথা বলায় অর্ষাও চটে যায়। সে ফের দু’কদম এগিয়ে এসে বলে,
“কাকে ধমক দিয়ে কথা বলছেন আপনি? আর কে বলেছে আপনাকে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে? বললাম তো আমাকে আমার মতো ছেড়ে দিন। কেন শুধু শুধু নিজের সময় নষ্ট করছেন আর আমাকে বিরক্ত করছেন?”
“তুমি সত্যিই আমার মেজাজ খারাপ করে ফেলছ অর্ষা।”
“কী করবেন এখন? মারবেন? মারুন না! অপমান করেছেন, কষ্ট দিয়েছেন, আঘাত করেছেন। এখন তো শুধু মারটাই বাকি আছে। এটা আর বাকি রেখে কী হবে? কী হলো তাকিয়ে আছেন কেন? মারুন।”
আহনাফ শূন্য দৃষ্টিতে তাকায়। জোরে শ্বাস নিয়ে মাথা ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করে। এরপর ম্রিয়মাণ কণ্ঠে,
“স্যরি ফর দ্যাট।’ বলেই আশেপাশে চোখ বুলিয়ে অর্ষার গালে আলতো করে চুমু খায়।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল হয়ে যায় অর্ষা। আহনাফ পিছু হাঁটতে হাঁটতে বলে,
“এখন থেকে অপমান, আঘাত, কষ্ট কোনও-টাই দেবো না। যা দেবো শুধু ভালোবাসা। ভালোবাসা ছাড়া আর কিচ্ছু তুমি আহনাফের থেকে পাবে না।”
এরপর সে মুচকি হেসে সোজা হাঁটতে শুরু করে। আস্তে আস্তে রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]