যেদিন তুমি এসেছিলে
সিজন ২
পর্ব ২১
মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে অর্ষা। হাসির কারণ অবশ্যই আহনাফ। লোকটাকে প্রথম প্রথম যেমন রাগী, গম্ভীর মনে হয়েছিল আসলে ততটাও রাগী সে নয়। একটু ইনোসেন্ট আর বোকাসোকাও আছে। নয়তো বিড়াল কে সারপ্রাইজ দেয় ভাই? এই মানুষটার ওপর সে কী করে রাগ করে থাকবে?
সেলিনা বেগম রুমে এসে বললেন,
“তোর বাবা ডাকছে।”
অর্ষা হিজাবটা খাটের ওপর রেখে বলল,
“আসছি, যাও।”
সেলিনা বেগম চলে যাওয়ার পর অর্ষা ওয়াশরুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে পরে বাবার কাছে আসে। ওমর রহমান বিছানায় শুয়ে আছেন। তাকে অসুস্থ দেখাচ্ছে। অর্ষা পাশে বসে কপালে হাত রাখে। তাপমাত্রা মেপে বলে,
“জ্বর এসেছে নাকি?”
“ও কিছু না। শোন মা, তোকে যেজন্য ডেকেছি। রুহুল এসেছে।”
“কোথায়?”
“বাসায় আসেনি। এই এলাকাতেই আছে।”
“তোমাকে কে বলল?”
“তোফায়েল এসেছিল। ও বলেছে।” বললেন সেলিনা বেগম।
ওমর রহমান বলেন,
“একটা কথা বলি মা, রাগ করিস না। একসাথে থাকতে গেলে একটু রাগ-অভিমান, ঝগড়া-বিবাদ এসব হবেই। সব সংসারেই হয়। তাই বলে কি ছেলেকে দূরে রাখতে হবে বল? যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। বলছিলাম কি, তুই গিয়ে ওকে বাসায় নিয়ে আয়। তুই তো ওর আপন বোন। ও তোর কথা ফেলবে না।”
অর্ষা বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। বাবার কথার উত্তর না দিয়ে মাকে বলল,
”বাবার ওষুধগুলো ঠিকঠাকমতো খাওয়াইও।”
অর্ষা চলে গেল। ওমর রহমান, সেলিনা বেগম দুজনই দুজনের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অর্ষার নিরব প্রত্যাখান বুঝতে অসুবিধা হয়নি কারও।
.
.
“তোর প্ল্যান সুপার-ডুপার ফ্লপ হয়েছে রে গাধা!” বিরক্ত হয়ে বলল আহনাফ।
হাসিব বিরসমুখে বলল,
“ওর জায়গায় অন্য কোনও মেয়ে হলে সুপার-ডুপার হিট হত। বিড়াল পছন্দ করে না এমন মেয়েও কি আছে?”
“অবশ্যই আছে। খুঁজলে এমন আরও অনেক পাওয়া যাবে। শুধু শুধু অর্ষাকে ব্লেইম করবি না। সমস্যা তোর প্ল্যানিং-এ।”
“হ্যাঁ, এখন তো আমারই দোষ হবে। ভাবির দোষ নেই ঠিকাছে।”
“তর্ক না করে নেক্সট প্ল্যান বল।”
“ওর বন্ধুদের হেল্প নিতে পারিস।”
“ওরা আমাকে হেল্প করবে কেন?”
“এমনি এমনি তো আর করবে না। তার আগে ওদের পটাতে হবে। সেদিন না বললি ওর অনেকগুলো ফ্রেন্ডদের তুই চিনিস।”
“হ্যাঁ। বাট লাভের লাভ কিছু হবে বলে মনে হয় না।”
“কেন?”
“অর্ষা খুব জেদি। ওদের কথা শুনবে না। তোর এই প্ল্যানও ফ্লপ যাবে।”
“আগেই কেন নেগেটিভ ভাবছিস? পজিটিভ থিংক কর।”
“পারব না ভাই। ওর ফ্রেন্ডরা ভীষণ সাংঘাতিক।”
“আচ্ছা তোর কিছু করতে হবে না। আমি কথা বলব ওদের সাথে। তুই শুধু ওদের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করিয়ে দে।”
“কাল তাহলে অফিসে যেতে হবে।”
“অফিসে যাবি মানে? তুই না বলেছিস কিছুদিন যাবি না অফিসে?”
“না গেলে তো ওদের সাথে কন্টাক্ট করতে পারব না। অর্ষার এক ফ্রেন্ড আমার অফিসে জব করে। ওকেই আগে পটাতে হবে।”
“ছেলে?”
“তো কি মেয়ে? আমি মেয়েদের পটাব?”
হাসিব হেসে ফেলে। বলে,
“ওকে। আমিও যাব।”
____________
জিসানের বার্থডে আজ। স্টাফরা মিলে তাই অফিসে ছোটোখাটোভাবে সেলিব্রেট করবে বলে ঠিক করেছে। এজন্য একটা জায়গা সুন্দর করে সাজিয়েছে। ফুল, কেক এনেছে। ট্রিট আজ জিসানই দেবে বলে আগে জানিয়ে রেখেছে। আপাতত তাই কিছু সময়ের জন্য ফ্লোরে কাজ বন্ধ। অর্ষা স্মৃতির সঙ্গে ডেকোরেশনের ওখানেই ছিল। জিসান এসে বলল,
“একটু শুনে যাও তো অর্ষা।”
অর্ষা স্মৃতির দিকে তাকাল। স্মৃতিও চোখের ইশারায় বলল যাওয়ার জন্য। অগত্যা অর্ষাকে জিসানের সঙ্গে যেতে হলো।
আহনাফের কেবিনের সামনে এসে আহিল নক করে বলল,
“আসব স্যার?”
আহনাফ হাসিবের সঙ্গে গল্প করছিল। আহিলের সঙ্গে কথা বলবে বলেই সে হাসিবকে আজ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। আহনাফ বলল,
“এসো।”
আহিল কিছুটা নার্ভাস ভঙ্গিতে সামনে এসে দাঁড়াল।
আহনাফ বলল,
“বসো।”
আহিল বলে,
“সমস্যা নেই ভাইয়া। স্যরি স্যার!”
“ইট’স ওকে। তুমি আমার ছোটো ভাইয়ের মতো। ভাইয়া বলেই ডাকতে পারো। কোনও সমস্যা নেই। এখন বসো।”
আহিল বসল। আহনাফ বলল,
“বড়ো ভাই হিসেবে একটা হেল্প চাইব। করবে তো?”
“অবশ্যই ভাইয়া। বলেন না কী করতে হবে?”
“অর্ষা বাদে তোমার বাকি যে আরও ফ্রেন্ড আছে ওদের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।”
আহিল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে আহনাফ বলল,
“তোমার মনে প্রশ্ন জাগছে জানি। সব প্রশ্নের উত্তর পরে দেবো।”
আহিল আর অমত না করে বলল,
“ঠিক আছে।”
আহনাফ হাত ঘড়িতে সময় দেখে বলল,
“জিসানের বার্থডে সেলিব্রেট করতে হবে। সময় হয়ে গেছে। উঠি চলো।”
আহনাফ, আহিল আর হাসিব উঠে দাঁড়াল। তিনজনে একসাথেই কেবিন থেকে বের হয়। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর দেখে জিসান আর অর্ষা সবার থেকে আলাদা একটু দূরে রয়েছে। তবে ওদের কথোপকথন শুনতে পাচ্ছিল তিনজনই।
জিসান ইতস্ততভাবে বলছে,
“কথাগুলো কীভাবে বলব বুঝতে পারছি না অর্ষা।”
অর্ষা নিজেও মনে মনে ভয় পাচ্ছে। সে সংকোচের সঙ্গে বলল,
“সমস্যা থাকলে থাক স্যার। পরে বলিয়েন।”
“না, না এখনই বলতে হবে।”
“ঠিক আছে বলুন।”
“অর্ষা, আই থিংক আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। বিয়ে করতে চাই তোমাকে।” সকল জড়তা এড়িয়ে বলে ফেলল জিসান।
অর্ষা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে জিসানের দিকে। সে ভেবেছিল হয়তো প্রেমের প্রস্তাব দেবে। কিন্তু জিসান তো তার ভাবনার চেয়েও এক কাঠি উপরে। ডিরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব! সে মনে মনে ‘হায় আল্লাহ্’ বলে পাশ ফিরতেই আহনাফ, আহিল আর হাসিবকে দেখতে পায়। আহনাফ ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। প্রচণ্ড জিদ্দে সে দেয়ালে একটা ঘুষি দেয়।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]