যেদিন তুমি এসেছিলে
সিজন ২ পর্ব ২৬
মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
__________________
আহনাফের মাথা ঝিম ধরে আছে। অফিসে যাওয়ার মতো মন-মানসিকতা কোনোটাই নেই। তবুও তাকে আজ যেতেই হবে। জরুরী মিটিং আছে। না গিয়ে তাই উপায় নেই। অর্ষার বিষয়টি নিয়ে সে ভীষণ আপসেট। তার ধারালো, কঠিন কথাগুলো এখনও মস্তিষ্কে গেঁথে রয়েছে। রেডি হয়ে বের হওয়ার সময় রেণু ডাকল,
“ভাইজান খাবেন না?”
“না।” বলে আহনাফ বেরিয়ে গেল।
অফিসে গিয়ে আহনাফ অর্ষাকে দেখে অবাক হয়। ভ্রুঁ কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভাবে সত্যিই দেখছে নাকি ভুল। বিভ্রান্তি নিয়ে সে চলে গেল নিজের কেবিনে। মিটিং শুরু হবে ১০টায়। হাতে এখনও পর্যাপ্ত সময় আছে। সে চেয়ারে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে কিছুক্ষণ। এর মাঝেই বাহির থেকে অর্ষার গলা শুনতে পায়। সে সোজা হয়ে বসল। অর্ষা অনুমতির জন্য তখনও বাইরে অপেক্ষা করছে।
“কী হলো? আসব?”
আহনাফের মুখ থেকে আপনা-আপনি বেরিয়ে এলো,
“এসো।”
অর্ষা ফাইলগুলো টেবিলের ওপর রেখে বলল,
“চেক করুন।”
“তুমি অফিসে?”
“হ্যাঁ। অবাক হওয়ার কী আছে?”
“তুমি না জব ছেড়ে দিয়েছ?”
“দিয়েছিলাম। কিন্তু কী করব বলুন, আমার হবু বরের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তাই বাধ্য হয়ে আবার আসতে হলো।”
“ফাইজলামি করবে না অর্ষা।”
“আচ্ছা করব না।”
“অফিসে কেন এসেছ?”
“কেন এসেছি মানে? পেটের দায়ে এসেছি। টাকা লাগবে তাই এসেছি।”
আহনাফ বিরক্ত নিয়ে তাকাল। অর্ষার মতিগতি সে কিছুই বুঝতে পারছে না। ফাইল চেক না করেই সাইন করে দিয়ে বলল,
“বিদায় হও।”
“এমন দূর দূর করছেন কেন আশ্চর্য! আর আপনি ফাইল চেক না করেই সাইন কেন করলেন? আমার তো ভুলও হতে পারে কোথাও।”
“তোমায় এতকিছু নিয়ে ভাবতে হবে না। নিজের কাজে যাও।”
“যাচ্ছি। তবে ফাইলগুলো রেখে গেলাম। ভালো করে চেক করবেন। আমি পরে এসে নিয়ে যাব।”
আহনাফকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে বের হওয়ার জন্য কাচ ঠেলে, তখনই হাসিব এসে উপস্থিত হয়। তার কোলে ক্যাথিওন। অর্ষাকে দেখামাত্রই ক্যাথিওন ‘ম্যাউ’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে।
অর্ষা ভ্রুকুটি করে হাসিবকে জিজ্ঞেস করে,
“ও আমাকে দেখলেই ম্যাউ ম্যাউ করে কেন?”
“সম্ভবত রিজেক্ট করেছিলেন বলে ওর ইগোতে লেগেছে।”
“বিড়ালেরও ইগো আছে?”
“বলে কী! আলবৎ আছে। আমি বুঝিয়ে বলছি আসুন।”
অর্ষা হাসিবের সঙ্গে ভেতরে এলো। ক্যাথিকে অর্ষার দিকে এগিয়ে ধরে বলল,
“ওকে কোলে নিন। আমি বিষয়টা এক্সপ্লেইন করছি।”
“স্যরি। আমি ওকে কোলে নিতে পারব না।”
“কেন? ভয় পান?”
“ভয় পাব কেন আশ্চর্য! বিড়াল-টিড়াল আমার পছন্দ নয়।”
ক্যাথি এবারও দাঁত-মুখ খিঁচে ম্যাউ করে উঠল। অর্ষা বলল,
“সাংঘাতিক বিড়াল তো!”
“হবেই তো! এভাবে সরাসরি অপমান করলে প্রতিবাদ করবে না?”
“ও এখন প্রতিবাদ করল?”
“হ্যাঁ। ওর হাসি, আনন্দ, রাগ, প্রতিবাদ সবকিছুই ‘ম্যাউ’ শব্দে করে। ওর একটাই ভাষা কিনা।”
“থাক। আমি আর বিড়াল সম্পর্কে শুনতে ইন্টারেস্ট নই। আমার কাজ আছে যাচ্ছি।”
অর্ষা চলে যাওয়ার পর আহনাফ মুখ খুলল।
“ক্যাথিকে নিয়ে এসেছিস কেন?”
“তোর অফিসে আসার সময় ম্যাউ ম্যাউ করছে। তো আমি কী করব? তাই সাথে করে নিয়ে এলাম।”
“তাই বলে অফিসে নিয়ে আসবি।”
“আরে ধুর! সমস্যা কী।”
ক্যাথিকে ফ্লোরে নামিয়ে দিয়ে হাসিব চেয়ারে বসল। মুখটা হাসি হাসি করে বলল,
“একটা গুড নিউজ আছে।”
“কী নিউজ?”
“অর্ষার বিয়েটা ভেঙে গেছে।”
আহনাফ অবিশ্বাস্যকণ্ঠে বলল,
“কী! সত্যিই?”
“আরে ব্যাটা তিন সত্যি। গ্যাঞ্জাম পার্টি কাজের কাজ করেছে বুঝলি।”
“এজন্যই অর্ষা তাহলে অফিসে এসেছে।”
আহনাফ কী ভেবে যেন ফাইলগুলোর পাতা উলটায় এক এক করে। একটা ভাঁজ করা কাগজ দেখতে পায়।
“বিয়েটা যে এভাবে ভেঙে দিলেন, এখন বিয়ে ভাঙা মেয়েটাকে বিয়ে কে করবে শুনি?”
“কী রে ওটা?” জিজ্ঞেস করল হাসিব।
আহনাফ মুচকি হেসে কাগজটি হাসিবের দিকে বাড়িয়ে দিল। হাসিব হেসে বলে,
“উত্তর লিখে দে।”
“লিখব না। মুখে বলব। ছুটি হোক অফিস।”
“আচ্ছা বলিস। কিন্তু আমি যে এখন টেনশনে পড়ে গেলাম।”
“তোর আবার কীসের টেনশন?”
“অর্ষার বন্ধুদের সঙ্গে একটা ডিল করেছিলাম। ওরা যদি আমার প্ল্যান মোতাবেক কাজ করে তাহলে ওদেরকে একটা করে বিড়াল গিফ্ট করব।”
“এরকম উদ্ভট বুদ্ধি আসে কোত্থেকে তোর মাথায়?”
“আরে কী বলতে কী বলে ফেলেছি। এখন ওরা তো ফোন করে বিড়ালের জন্য প্যারা দিচ্ছে। এতগুলো বিড়াল পাই কোথায় আমি এখন? একজন হলে না হয় ক্যাথিওনকে দিয়ে দিতাম।”
আহনাফ চোখ পাকিয়ে বলে,
“অর্ষাকে দিতে চেয়েছিলাম বলে যে সবাইকেই ক্যাথিকে দিয়ে দেবো এটা তুই আশা করলি কীভাবে?”
“আর আশা! এখন কী করব আইডিয়া বল।”
“তোর মাথায় তো আইডিয়া কিলবিল করে। তুই নিজেই বের করে নে।”
“সমস্যা তো এখানেই। নিজের জন্য কোনো আইডিয়া পাচ্ছি না।”
“ওদেরকে কোথাও নিয়ে ট্রিট দে।”
“রাজি হবে?”
“বলে দেখতে পারিস।”
কথার মাঝে হঠাৎ করেই হাসিব খেয়াল করে ক্যাথিওন নেই এখানে। সে চেয়ার থেকে উঠে পুরো কেবিনে খোঁজে। কোত্থাও নেই। আহনাফ বলল,
“ঐ দেখ দরজা হালকা খোলা। ক্যাথি মনে হয় বাইরে চলে গেছে। আমার মিটিং আছে। আমি এখন যাব। তুই ওকে গিয়ে খোঁজ।”
.
“অ্যাই বে’য়া’দব বিল্লি পিছু পিছু এখানেও চলে এসেছিস? যা এখান থেকে যা। হুস!”
ক্যাথিওন লেজ নাড়াতে নাড়াতে লাফ দিয়ে ডেস্কের ওপর উঠে যায়। কি-বোর্ডের ওপর বসে কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। ফুলের ছবি দেখে সে খামচানোর চেষ্টা করছে। অর্ষা বিরক্ত হয়ে বলে,
“মহা মুসিবত তো!”
ক্যাথিওন এবার অর্ষার দিকে ঘুরে বসল। সে নখ দিয়ে নিজের মুখ চুলকাচ্ছে।
অর্ষা তিক্ততার সাথে বলল,
“অসভ্য লোকের অসভ্য বিড়াল।”
ক্যাথি বলল,
“ম্যাউ!”
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।
আজকে গল্প দিতাম না। গত পর্বে আহনাফ ছিল না বিধায়, আজকের পর্বে আহনাফের উপস্থিতির জানিয়ে এই পর্বটা দিয়ে দিলাম।]