যেদিন তুমি এসেছিলে
সিজন ২ পর্ব ৩০
মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_________________
অফিস থেকে দু’দিন ছুটি নিয়েছে অর্ষা। আহনাফের বলা আইডিয়া সে বাবা এবং ভাইকে বলার পর তারা বিনাবাক্যে রাজি হয়ে যায়। যদিও অর্ষা জানায়নি আইডিয়াটা তার নিজের নয়; বরং ধার করা। পারতপক্ষে আহনাফের ব্যাপারে বাড়িতে এখনও কেউ কিছুই জানে না। অর্ষা কাকে ভালোবাসে এই ব্যাপারেও কেউ কিছু জানতে চায়নি এখনও। তবে বোধ করি, সকাল কিছু কিছু বিষয় জানে। বিশেষ করে সেদিন রেস্টুরেন্টে সবাই এক হওয়ার পর থেকে।
ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাজারের মাঝখানে একটা দোকান নিয়েছে। মুদি দোকানের জন্য প্রয়োজনীয় সব দ্রব্যাদি কিনেছে। অর্ষা, ওমর রহমান, সকাল আর রুহুল মিলে দোকান গোছাচ্ছিল। রুহুলের একার পক্ষে তো আর সম্ভব নয়। সন্ধ্যায় মিলাদ পড়িয়ে তারপর দোকানের বেচা-কেনা শুরু করবে। সকাল সকাল কাজ শুরু করেছিল বলে দুপুর দুইটার মধ্যে দোকানের সব কাজ শেষ হয়ে যায়। সকাল দম নিয়ে বসল চেয়ারে। হেলান দিয়ে বলল,
“ভাইয়া, তোমার দোকান থেকে কি আমাকেও টাকা দিয়ে কিনে মজা খেতে হবে?”
রুহুল ভারী অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল,
“অ্যা? বলিস কী? তুই আমার বোন। আমার কলিজা। এই দোকানের ছোটো মালকিন তুই। তোর থেকে আমি টাকা নেব? ছি, ছি! গ’র্দা’ন না যাবে আমার?”
সকাল খিলখিল করে হেসে ওঠে। অর্ষা কোমর থেকে ওড়না খুলে গায়ে ভালোমতো জড়িয়ে বলল,
“আব্বা তুমি সকালকে নিয়ে বাসায় যাও। আমি আর ভাইয়া একটু পর আসছি।”
সকাল গো ধরে বলল,
“কেন? তোমরা কোথায় যাবে?”
“ম’র’তে যাব। যাবি?”
“হ্যাঁ।”
অর্ষা রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। সকাল উঠে গিয়ে রুহুলের হাত ধরে ঝুলতে ঝুলতে বলল,
“ও ভাইয়া আমিও যাব। আপুকে বলো আমায় নিতে।”
রুহুল হেসে বলল,
“আমিই তো জানিনা ও কোথায় যাবে।”
“ঠিকই তো। কোথায় যাবি রে মা?” জিজ্ঞেস করলেন ওমর রহমান।
অর্ষা বলল,
“সেলুনে যাব।”
রুহুল বিস্ময় নিয়ে বলল,
“তুই সেলুনে গিয়ে চুল কা’ট’বি কেন? পার্লারে যা। টাকা লাগলে বল। আমার কাছে দোকানের জিনিসপত্র কিনেও কিছু ক্যাশ টাকা আছে।”
অর্ষা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“বুদ্ধি একদম হাঁটুতে চলে আসছে নাকি তোমার? আমি কেন সেলুনে চুল কা’ট’তে যাব?”
“তবে?”
“তবে কী আবার? তুমি চুল কা’ট’বে। দাড়ি কামাবে। নিজের অবস্থা দেখেছ? মনে হচ্ছে পার্বতীর শোকে দেবদাস হয়ে গেছ।”
ওমর রহমান হেসে ফেললেন। সকালের জেদের জন্য তাকেও সেলুনে যেতে হলো। অর্ষা ওমর রহমানকে বললেন,
“তুমিও বসে পড়ো বাবা। চুল কে’টে আরেকটু ছোটো করে নাও।”
সকাল বলল,
“আমিও বসে পড়ব নাকি আপা?”
“কেন? তুই চুল কা’ট’বি? তাহলে আয় আমি তো টাক বানিয়ে দেই।”
সকাল মুখ ভেংচি কেটে বলল,
“হুহ!”
বাড়িতে ফিরে রুহুল এবং ওমর রহমান একসাথে বাইরের কলপাড়ে গোসল করতে গেল। সকাল রুমে গেল তাদের জন্য কাপড় আনতে। অর্ষা রান্নাঘরে গিয়ে দেখে সেলিনা বেগম হরেক রকমের পিঠাপুলি বানাচ্ছেন।
অর্ষা জিজ্ঞেস করল,
“এত রকমের পিঠা কেন বানাচ্ছ?”
“প্রথমবার হবু জামাই আমাদের বাড়িতে খাবে। একটু পিঠাপুলি না খাওয়ালে হয়?”
“হবু জামাই মানে? কার কথা বলছ?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল অর্ষা।
“কার কথা মানে? আহনাফের কথা বলছি। কেন তুই কি ওকে দাওয়াত করিসনি?”
অর্ষা ফাঁকা ঢোক গিলে বলল,
“তুমি তার কথা জানলে কী করে?”
“আমি বলেছি।”
অর্ষা পেছনে তাকিয়ে দেখল মুন। ওর হাতে আটার গুড়ি। অর্ষাকে পাশ কাটিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে বলল,
“তুই যেই লজ্জাবতী! মুখ ফুটে তো আর সত্যি কথা বলবি না। তাই আমিই বলে দিয়েছি।”
অর্ষা সেলিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখল তিনি মুচকি মুচকি হাসছেন। অর্ষার মনে হলো লজ্জায় সে মাটিতে মিশে যায়। সেখানে আর বসে থাকতে পারছে না। ওদিকে ঘরে গিয়ে লুকিয়ে থাকলেও তো চলবে না। মাকে সাহায্য করতে হবে কাজে। সন্ধ্যায় মিলাদ পড়ানোর পর কাছের কয়েকজন মানুষ রাতের খাবার এই বাড়িতেই খাবে। কাছের মানুষ বলতে আহনাফ, হাসিব, রাফি, গ্যাঞ্জাম পার্টি, স্মৃতি, মুন, আদিব আর এলাকার কিছু মুরুব্বি।
মেয়ে লজ্জা পেয়েছে বুঝতে পেরে সেলিনা বেগম আর এই বিষয়ে কিছু বললেন না। শুধু জিজ্ঞেস করলেন,
“আহনাফকে কি একাই আসতে বলেছিস?”
“না। সাথে তার বন্ধু আর ভাগিনা আসবে।”
“সেকি! ওর বাবা-মাকে বলিসনি?”
অর্ষা লজ্জা পেয়ে বলল,
“উনারা কি আসবেন…”
“আসা না আসা পরের ব্যাপার। কিন্তু তোর তো বলা উচিত ছিল। যা ফোন দিয়ে এক্ষুণী বলে দে।”
অগত্যা অর্ষা উঠে রুমে গেল। আহনাফের নাম্বারে ডায়াল করল। প্রথমবার রিং হওয়ার পরই ওপাশ থেকে কল কেটে দিয়ে ব্যাক করল আহনাফ।
“বলো বাটারফ্লাই।”
অর্ষা মুচকি হাসল। জিজ্ঞেস করল,
“কোথায় আপনি?”
“অফিসে আছি। কিছু বলবে?”
“আমাদের বাসায় কখন আসবেন?”
“কেন আমায় ছাড়া বুঝি থাকতে পারছ না?”
“হুশ! বলেন।”
“সন্ধ্যার আগেই চলে আসব।”
“আঙ্কেল-আন্টি আর রেণু আপাকেও কিন্তু নিয়ে আসবেন সাথে করে।”
“তোমার শ্বশুর তো বিজনেস ডিলের জন্য সিলেট গিয়েছে। তবে তোমার শাশুড়ি আর রেণুকে আনতে পারি সাথে। চলবে?”
অর্ষা হেসে বলল,
“দৌঁড়াবে। হাসিব ভাইয়া আর রাফিকে আবার রেখে আসিয়েন না।”
“ওরা দুধভাত। না বললেও চলে আসবে। রেখে আসতে হবে না।”
অর্ষা হেসে ফেলল।
“আচ্ছা এখন রাখছি। পরে কথা হবে।”
“ঠিক আছে।”
অর্ষা ফোন রেখে আবার রান্নাঘরে চলে গেল। সে, মুন, সকাল আর সেলিনা বেগম মিলে রান্নাবান্নাসহ সমস্ত কাজ একসাথে শেষ করে নিল। সন্ধ্যায় গ্যাঞ্জাম পার্টি, আহনাফ, হাসিব, রাফি, আমেনা বেগম রেণু, আদিব, স্মৃতি সবাই চলে এসেছে। আহনাফ এবং হাসিবকে এখানে দেখে রীতিমতো অবাক হয়েছে স্মৃতি। সে বারবার অর্ষাকে খোঁচাচ্ছে কাহিনি কী জানার জন্য। অর্ষা মেহমানদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত ছিল। স্মৃতির সাথে মন খুলে কথা বলার মতো সময় আপাতত হাতে নেই। সে ব্যস্ত হয়ে বলল,
“পরে বলব সব। একটু ধৈর্য ধরো।”।
অগত্যা স্মৃতিকেও ধৈর্য ধরতে হলো। লামিয়া, রেশমি, জুঁইয়ের সঙ্গে তার খাতির হয়ে গেছে। ওরা এত মিশুক যে খুব অল্প সময়েই স্মৃতি মিশে যেতে পেরেছে। এত মানুষ দেখে ভেবেছিল, সে সবার মাঝে একা একা বোর হবে। কিন্তু তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। মুনও অর্ষার সঙ্গে ব্যস্ত থাকায় এখনও ওদের কাছে আড্ডা দেওয়ার জন্য আসতে পারেনি।
ছেলেরা ওমর রহমান এবং রুহুলের সঙ্গে দোকানে মিলাদের জন্য চলে যায়। মিলাদ শেষ করে তারা-সহ বাকি মেহমানরাও চলে আসে। আশিক খেয়াল করে যে, আহনাফ অর্ষাকে চোখে হারাচ্ছে। যখনই ওকে দেখছে নিষ্পলক শুধু তাকিয়েই থাকছে। কে দেখছে বা কেউ কিছু ভাবছে কিনা তাতে তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। খেতে বসার পূর্বে আহনাফের কাছে গিয়ে খুব বিনয়ী হয়ে বলল,
“ভাইয়া একটু কথা বলা যাবে?”
আহনাফ অর্ষার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,
“শিওর।”
“একটু এদিকে আসেন।”
ওরা কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়াল।আশিক চোখ-মুখ শক্ত করে বলল,
“দেখেন দুলাভাই, আজ এখানে আমরা দাওয়াত খেতে এসেছি। আমাদের সাথে আপনিও শুধু দাওয়াত খাবেন। অন্য কিছু খাবেন না। দয়া করে আমার সামনে তো নয়-ই। ইট’স মাই হাম্বল রিকোয়েস্ট। আজ যদি আবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখি, তাহলে মুন, লামিয়া শুধু কৃ’মি নিয়েই নয়; আমার পেটের নাড়ি-ভুঁড়ি, হাগু-মুতু নিয়েও পর্যন্ত কথা শোনাবে। ওদের তো আপনি ভালো করেই চেনেন। দয়া করে আমাকে আর আমার হাগু-মুতুকে ওদের দিয়ে হ্যারাস করাবেন না প্লিজ!”
আহনাফ কী বলবে বুঝতে পারছে না। সে অস্বস্তিতে কপাল চুলকাচ্ছে।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]