দুইদিন যাবত রাগ করে ইফতির সাথে কথা বলছি না। ঘরটা বেশ শান্ত হয়ে আছে। এবার আমি প্রমান করে ছাড়বো ঝগড়াঝাঁটি ছাড়াও আমার পেটের ভাত হজম হতে পারে।
রান্নাঘরে কাজ করছিলাম এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। আমি যাওয়ার আগেই জনাব নিজে গিয়ে দরজা খুলল।
উঁকিঝুকি মেরে দেখার চেষ্টা করলাম কে এসেছে। কিছুক্ষণ পরে জনাব একাই দরজার ওপাশ থেকে একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে ভেতরে এলো।
আমি না দেখার ভান করে রান্না করতে শুরু করলাম।
সে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, কারো নামে কুরিয়ার থেকে গিফট এসেছে। প্যাকেটটা টেবিলে রাখা আছে।
অবাক হয়ে রান্নাঘর থেকে ড্রয়িং রুমে এসে প্যাকেটটা হাতে নিলাম।গিফট কে পাঠালো! নাম ঠামও তো লেখা নেই। অদ্ভুত! প্যাকেটটা খুলে দেখি শাড়ি, চুরি, পারফিউম, রজনীগন্ধা ফুল, চকলেট এতো কিছু!! চোখ কপালে তুলে বললাম, এসব আবার কে পাঠালো! জনাবের সাথে তো ঝগড়া চলছে। সে আনলে তো তার কথা বলেই আমাকে দিতো। কে হতে পারে!
কিছুক্ষণ পরে জনাব আমার দিকে সন্দেহ নজরে তাকিয়ে বলল, আজকাল এতো গিফট ও আসছে বাসায়। বাহ!ভালোই তো। কী যে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। এজন্যই বোধহয় এখন আর আমার সাথে কথা বলার প্রয়োজন হচ্ছে না।
ইফতির খোঁচা মারা কথার জবাব দিয়ে বললাম, কী বলতে চাইছো! তুমি l ভাবছো আমাকে আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড গিফট গুলো পাঠিয়েছে?
সে গল্পের বইয়ে মুখ গুঁজে বলল, আমি কখন বললাম এসব! তুমি নিজেই তো বললা। আমার কী দোষ?
মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি এলো। জনাবকে খ্যাপানোর জন্য বললাম, ওয়েট ওয়েট আমাকে মনে করতে দাও তো। আমি যদি খুব ভুল না করি তাহলে এই গিফট গুলো আয়মান পাঠিয়েছে। আর যদি আয়মান না হয় তবে রেজওয়ান তো হবেই।
ইফতি টেবিলের ওপর ধপাস করে গল্পের বইটা রেখে বলল, লেট মি ক্লিয়ার। এই আয়মান, রেজওয়ান এরা কারা! এরা তোমাকে গিফট কেন পাঠাবে?
আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম, কলেজে থাকতে এরা সবাই আমার উপর ক্রাশ খেয়ে বাশ খেয়েছিলো। তাদের কেউই হবে হয়তো। দেখো এরা না হলে আর কে হতে পারে যে আমার জন্য এতো সুন্দর গিফট পাঠাবে।বাহ ভালোই তো এখনো আমাকে মনে রেখেছে। সত্যিই বোধহয় আমাকে অনেক ভালোবাসতো। কেন যে তোমার মতো ঝগড়ুটের সাথে দেখা হলো।
আড় চোখে জনাবের দিকে তাকিয়ে তার মুখের এক্সপ্রেশন বোঝার ট্রাই করলাম। রেগে যাচ্ছে, রেগে আগুন হয়ে যাচ্ছে।
সে দেয়ালে একটা ঘুষি মেরে বলল, ক্রাশ ফ্রাশ আরও কত কিছু যে শুনতে হবে। এসব তো আমাকে আগে কখনও বলোনি।
আরেকটু রাগানোর জন্য বললাম, তোমাকে বলার কী আছে! বিয়ের আগে এমন কত ছেলে ছোকরাই তো আমাকে প্রপোজ করেছে। সবার নাম কী আমি মনে রেখেছি! নেহাত তোমার কপাল ভালো ছিল তাই চান্স পেয়ে গেছো।
বেচারা রাগে জিদে কিছুই বলতে পারছে না। রাগটাকে আরেকটু বাড়ানো দরকার। ঘরের চারপাশে তাকিয়ে বললাম, জেলাসির আগুনে সব কিছু পুড়ে যাচ্ছে। কেমন যেন পোড়া পোড়া গন্ধ বেড়োচ্ছে। কারো হৃদয় পোড়া গন্ধ।
সে রাগি চোখে আমার দিকে তাকাতেই বললাম, ইয়ে মানে মনে হয় রান্নাঘর থেকে গন্ধ আসছে। তবে যাই বলো গিফট গুলো দারুন হয়েছো। একটা থ্যাংক্স তো পাওনাই থাকে আমার তরফ থেকে। যাই ফেসবুকে ওদের নাম লিখে সার্চ দিয়ে আইডি বের করি। মেসেজ দিয়ে দেখি একচুয়েলি কে পাঠালো গিফট গুলো। সিউর হতে হবে তো কী বলো?
মোবাইলটা হাতে নেওয়া মাত্রই সে আমার হাত থেকে টান দিয়ে মোবাইলটা নিয়ে গেল। রাগি স্বরে বলল, কেউ পাঠায় নাই গিফট।এগুলো আমিই আনিয়েছি আদনান কে দিয়ে।
চোখ কপালে তুলে বললাম, তুমি এনেছো!!
সে নিচু স্বরে বলল, দুইদিন যাবত কথা বলছো না ঝগড়াও করছো না। তাই ভাবলাম কিভাবে তোমার সাথে কথা বলে ঝগড়া করা যায়। আদনানকে বলার পর বলল, এগুলো কিনে আমার নাম লুকিয়ে তোমাকে দিতে আর এসব বলতে শিখিয়ে দিয়েছে। তাহলে তুমি রেগে যাবে আর রেগে গিয়ে আমার সাথে ঝগড়া শুরু করে দেবে।
আমি কপাল কুঁচকে বললাম, পেটে পেটে এতো শয়তানি!
সে অভিমান স্বরে বলল, গিফট গুলো না এলে তো জানতেই পারতাম না এতো ক্রাশ, ফ্রাশ আর প্রপোজালের কথা।
আমি চকলেট গুলো খেতে খেতে বললাম, ক্রাশ-ফ্রাশ আর প্রপোজালের কথা না বললে তো তোমার পেট থেকে বের করতেই পারতাম না যে তুমিই এসব এনেছো। তুমি কী ভাবছো আমি কিছুই জানিনা! আদনান ভাই যে তোমাকে ফেসবুকে মেসেজ করে এসব শয়তানি আইডিয়া দিয়েছে তা আমি কাল রাতেই দেখে ফেলছি।
আমার কথা শুনে ইফতির চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, মানে!!
আমি হাসতে হাসতে বললাম, এবার প্রমান হলো তো ঝগড়া ছাড়া কার পেটের ভাত হজম হয় না? তবে যাই বলো ঝগড়া থেকে যদি এতো দারুণ দারুন গিফট পাওয়া যায় তবে ঝগড়াই ভালো।
#ঝগড়াঝাঁটি
Zannatul