গল্প- #জ্বীন রহস্য পর্ব ৩
লেখক- #Riaz_Raj
——————————-
রিয়াজ তার মায়ের দিকে আঙ্গুল তুলে কড়াভাবে বলে,
– এই বিয়ে হবেনা। এইটাই ফাইনাল সিদ্ধান্ত।
রিয়াজের মা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রিয়াজ হনহন করে তার রুমে চলে যায়। পরিস্থিতি যেনো কয়েক মুহুর্তে বদলে গেলো। রাজু ভয় পেয়ে কান্না করে দেয়। রিয়াজের মা,তার চোখের জল আঁচলে লুকায়। কারণ রিয়াজ কখনোই তার মায়ের সাথে এমন ব্যবহার করেনি।
এদিকে তাজকিয়ার বাসায় সবাই হাশিভরা মুখ নিয়ে অপেক্ষা করে পরেরদিনের। আগামীকাল তাদের বিয়ে। কে কি করবে,কার দায়িত্ব কি, সব নিয়ে মাতামাতি চলছে। তাজকিয়া সোফার এক কোনায় বসে ভাবছে। ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তার মস্তিষ্কে বার বার উঁকি দিচ্ছে। সেই জ্বীন যদি আবার আসে? সে যদি রিয়াজের ক্ষতি করে? কিংবা বিয়ের পরে কোনো ঝামেলা হয়। এ নিয়ে অস্থিরতার সীমায় হামাগুড়ি দিচ্ছে সে। চাঁদটা আজ বেশ আলো দিচ্ছে। তাজকিয়ার ঘুম পাচ্ছে ভিষণ। সে রুমের দিকে রওনা দেয়। সাথে মাথায় এই জ্বীনের ঘটনা তো ঘুনে পোকার মতোই লেগে আছে।
রাত আড়াইটার কাছাকাছি। তাজকিয়া তার মায়ের সাথে বিছানায় শুয়ে আছে। আজ কোনো হামলা হলে তার মাকে ব্যাপারটা বলবে,তা নিয়ে এক গভীর ভাবনায় আছে সে। চুপচাপ পরিবেশে শুধু রুমে ফ্যানের শব্দটা শুনা যাচ্ছিলো। এ ব্যাতিত কারো আওয়াজ বা অন্য কোনো শব্দ নেই। হটাৎ তাজকিয়া উপলব্ধি করতে পারে,জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কেও তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাজকিয়ার চোখ তখন ফ্যানের দিকে। ডান দিকে মাথা ঘুরিয়ে তাকানোর মতো সাহস নেই তার। কিন্তু সে বুঝতে পারে,কেও তো নিশ্চয়ই আছে। কপাল বেয়ে ঘামের সারি তাজকিয়ার চুলের গোড়া দখল করে নিচ্ছে। ধীরে ধীরে তাজকিয়া তার মায়ের হাতটা ধরে। এতে কিছুটা সাহস পায় সে। এদিকে জানালার বাহিরে দাঁড়ানো যেটাই থাকুক,তাজকিয়ার মন পুরো সেদিকে। তার মনে হতে লাগলো,জ্বীনটা নিশ্চয়ই জানালার পাশে দাঁড়িয়ে। তাজকিয়া তার মায়ের হাতটা আরো শক্ত করে ধরে। রুমে কোনো লাইটের আলো নেই। জানালা বেয়ে যে চাঁদের আলো ভিতরে প্রবেশ করছে,সেই আলোতেই শুধু রুমটা আলোকিত। তাজকিয়ার বুকের ধুকপুকানি ধীরে ধীরে বেড়েই যাচ্ছে। তার মায়ের হাতটা এতোই শক্ত করে ধরেছে যে,হটাৎ তার মনে হলো সে ভুল কিছু ধরেছে। তাজকিয়ার মনে হতে লাগলো তার মায়ের হাতটা অনেকটাই নরম হয়ে গেছে। বলতে গেলে কোনো নরম মাংসের মতো। তাজকিয়া উপলব্ধি করতে থাকে,তার হাতের আঙ্গুল গুলা ওর মায়ের মাংসের ভিতর ঢুকে গেছে। ভয়ে তাজকিয়ার ধুকপুকানি আরো বেশি বেড়ে যায়। হুট করে না দিচ্ছে হাত ছেড়ে,আর না পারছে হাত ধরে রাখতে। তাজকিয়ার চোখ উপরের দিকেই। ডানে বামে কোথাও তাকাচ্ছে না। তার মধ্যেই তাজকিয়া আবার বোঝতে পারে,জানালার পাশে দাঁড়ানো লোকটা নড়াচড়া করে যাচ্ছে। না পেরে এইবার তাজকিয়া ডান দিকে মাথা ঘুরিয়ে জানালার দিকে তাকায়। আর তখন যা দেখে,তা সত্যিই অবিশ্বাস্য ছিলো। তাজকিয়া দেখে জানালার লোহা ভেদ করে একটা বাচ্চা মেয়ে ওর রুমে ঢুকছে। তাও হামাগুড়ি দিয়ে। বাচ্চা দেহ,তার সাথে বিশাল বড় চুল। তাজকিয়া এমন দেখেই চিৎকার দিয়ে বিছানা থেকে নেমে আসে। এর মাঝে আবার আরেকটা দৃশ্য তার চোখে আটকে যায়। তাজকিয়া তার মায়ের যে হাতটা ধরেছিলো,তা এখনো তাজকিয়ার হাতেই আছে। তাজকিয়া হাতটা তুলে নিজের হাতে তাকাতেই দেখে,একটা কাটা হাত ধরে আছে সে। ভয়ে তাজকিয়া হাতটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে আবার চিৎকার দেয়। ততক্ষণে কেও রুমের লাইট জ্বালিয়ে ফেলে।
তাজকিয়া তাকিয়ে দেখে,ওর মা লাইট অন করলো। জানালার পাশে কোনো বাচ্চা মেয়ে নেই,আর ফ্লোরেও কোনো কাটা হাত নেই। তাজকিয়া দৌড়ে গিয়ে তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে। আর শুরু করে কান্না। তাজকিয়ার মা জিজ্ঞেস করে,
– তোর কি হয়েছে তাজকিয়া। এমন ঘাবড়ে কেন আছিস। আমাকে তো বল।
কান্না স্বরে তাজকিয়া এইবার তার আম্মুকে সব সত্য বলে দেয়। রাতে ব্রা খোলা থেকে এই অব্দি সব। তাজকিয়ার মা বিছানায় গিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে পড়ে। তাজকিয়া ফ্লোরে বসে কান্না করতে থাকে। এইভাবে মা মেয়ে বসে বসেই সারারাত কাটিয়ে দেয়।
সকাল ০৮ঃ০০।
বাড়ির সবাই হৈচৈ তে মেতে উঠে। আজ তাজকিয়ার গায়ে হলুদ। তাজকিয়ার মা আর তাজকিয়া বিষয়টা নিয়ে খুবি আপসেট। এদিকে যে যার মতো সেজেগুজে হলুদের মজা নিতে প্রস্তুত। এইভাবে চলতে থাকে তাজকিয়াদের বাসায়। অপর দিকে রিয়াজদের বাসায়ও সেম। গায়ে হলুদের প্রস্তুতি চলছে। রিয়াজের মা এখনো কাওকে বলেনি ব্যাপারটা। বলার মতোও যে মুখ নেই। উনি সকাল সকাল রিয়াজের রুমে যায়। রিয়াজ ঘুমের ঘোরে আছে। দরজাটা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। রিয়াজের মা অবাক হয়। রিয়াজ তো এর আগে কখনো দরজা খোলা রেখে ঘুমায়নি। তবে আজ কেনো? সব অদ্ভুত অদ্ভুত লাগছে উনার কাছে। রিয়াজের মা চা নিয়ে রিয়াজের রুমে প্রবেশ করে। আর তখনি উনার নাকে একটা বিশ্রি গন্ধ আসে। অনেক দুর্গন্ধ, কোনো ভোটকার গন্ধ। রিয়াজের মা নাকে হাত দিয়ে রিয়াজের পাশে গিয়ে বসে৷ এরপর রিয়াজকে ডাকবে,তার আগেই রিয়াজ বলে উঠে,” চা টেবিলে রাখো। আর হলুদের আয়োজন কতটুকু হয়েছে। সব ঠিকঠাক হচ্ছে তো?”। হটাৎ রিয়াজের মুখে এমন কথা শুনে রিয়াজের মা বরাবরই অবাক হয়। রাতে এক সিদ্ধান্ত সকালে আরেক সিদ্ধান্ত। রিয়াজের হলো টা কি। রিয়াজের মা এইবার প্রশ্ন করে বসে।
– তুই তাহলে বিয়েটা করছিস।
– অদ্ভুত কথা বলতাছো মা। বিয়ে ঠিক করেছো, তো বিয়ে করবো না?
– কিন্তু..
– কিন্তু কি,এই বিয়েতে তোমার আপত্তি আছে নাকি।
– আপত্তি কেনো থাকবে।আমি বলতে চাচ্ছি
– কি বলতে চাচ্ছো।বলো বলো।
– না থাক কিছু না। তুই চা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। নিছে নাস্তা রেডি করতেছি।
– আচ্ছা মা।
রিয়াজের মা রুম ছেড়ে চলে আসে বাহিরে। উনার মাথা ঝিমাচ্ছে। রিয়াজের কিছু হয়নি তো। বার বার গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাচ্ছে মরিয়ম বেগম। ও হ্যাঁ, রিয়াজের মায়ের নামই মরিয়ম। বেচারি ছোট থেকে রিয়াজকে নিজের হাতে কন্ট্রোল করেছে। আজ অব্দি রিয়াজ কখনো তার সাথে বেয়াদবি দূরে থাক,উঁচু গলায় কথা বলেনি। যখন বিয়ের কথা বলা হয়েছে,তাও আরো দুই মাস আগে। তখন রিয়াজের জবাব,” মা,তুমি মেয়ে পছন্দ করেছো। সেখানে আমার না বলার কোনো অপশন নেই।বিয়ে পাক্কা”। সেই রিয়াজ গতকাল রাতে সোফা ভেঙ্গে বেয়াদবি করেছে। আবার আজ সকালে তার মায়ের চোখ কপালে তুলে দিলো। মরিয়ম বেগম কনফিউজড হয়ে যায়। তবে শেষে নিজেকে শান্তনা দিলো। সব যেনো ঠিকঠাক হয়ে যায়।
এদিকে শায়েলা বেগম। মানে তাজকিয়ার মা ব্যাপারটা নিয়ে খুবি চিন্তিত। তাজকিয়া রুমেই বসে আছে। শায়েলা বেগম তাজকিয়ার রুমে যায়।এইভাবে মেয়েটিকে দেখে উনারও বুক ফেটে যাচ্ছে। শায়েলা বেগম ধীরে ধীরে এসে তাজকিয়ার পাশে বসে৷ তাজকিয়া ফ্লোরে বসে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে আছে। শায়েলা বেগমও বসে তাজকিয়াকে বলতে লাগলো,
– চিন্তা করিস না। তোর পাশে রিয়াজ আছে। সে তো তোকে সাপোর্ট করেছে তাই না? এতো চিন্তা করা লাগবে না। রিয়াজ এর সমাধান ঠিকই বের করবে।
– কিন্তু মা,আমার ভয়টা সেখানেই। আমার যা ক্ষতি হবে হোক। আমার জন্য যদি রিয়াজ কোনো বিপদে পড়ে। সেই ভয়টাই বেশি কাজ করে আমার ৷
– আমি খোজ নিয়েছি। রিয়াজ প্যারানরমাল বিষয় নিয়ে পড়েছে। তার কিছু হবেনা। সে নিশ্চয়ই এর কোনো সমাধান বের করবে।
– তাই যেনো হয় মা।
দুই বাড়ির পরিস্থিতি কেমন তা এতক্ষণে আন্দাজ হয়ে গেছে আপনার। গায়ে হলুদে প্রস্তুতি। আর রিয়াজের বাসায় মরিয়ম বেগম চিন্তিত,এদিকে তাজকিয়ার বাসায় শায়েলা বেগম চিন্তিত। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে আসে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়। দুই বাড়িতেই নানান রঙ্গের কাপড়ে মেতে উঠে সবাই। গায়ে হলুদের সময় কারো মনেই হয়নি এখানে কোনো প্রকার ডিপ্রেশন আছে। দুই বাড়িতেই ধুমধাম করে অনুষ্ঠান হয়ে যায়। রাত নেমে আসে। আর এই রাতটা নামার পর,অর্থাৎ রাত গভীর হতে থাকলে,তাজকিয়ার ভয়টা বাড়তে থাকে৷ কাল ওর বিয়ে। আর আজই তার সাথে আরো একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
গতকালের মতো তাজকিয়া আজও তার মায়ের সাথে ঘুমায়। শায়েলা বেগম মাথাটা ফেলতেই ঘুমিয়ে যায়। যেহেতু সারাদিন অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। গায়ে হলুদের বাড়ি,অবশ্যই আলোর ছড়াছড়ি। তাজকিয়া চোখ বন্ধ করতেই, হটাৎ একটা ঠান্ডা বাতাস ওর দেহ ছুড়ে যায়। ভয়ে তাজকিয়া লাফিয়ে উঠে,কিন্তু সে তখন বাসায় ছিলো না। তাজকিয়া নিজেকে বাড়ির পশ্চিমে থাকা কবরস্থানে আবিষ্কার করে।
হটাৎ এমন দেখে তার কথা বলা,হাত-পা নাড়া বা হুশে থাকার শক্তিটাও হরিয়ে যায়। তাজকিয়া শুধু তাকিয়ে আছে।আর তখন দেখে,একটা কালো ছায়ার মতো মানুষ কবর থেকে উঠে যায়। তাজকিয়া এইবার আর নিজেকে সামলাতে না পেরে দৌড়ে দেয়। শত শত কবর এখানে। সব গুলো কবর যেনো জাগ্রত হয়ে যায়। তাজকিয়ার কপাল বেয়ে ঘামের ধারা বয়ে যেতে লাগলো।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে। তাজকিয়ার উদ্দেশ্য নিজের বাড়িতে যাওয়া। আর তার গন্তব্যের পথ যেনো শেষই হচ্ছেনা। পিছন থেকে কারো আত্মচরিত চিৎকার শুনা যাচ্ছে। ভয়ংকর সব কান্নার শব্দ। তাদের সাথে তাজকিয়াও কান্না করে করে দৌড়াচ্ছে। তার মাঝেই হটাৎ বাতাস বইতে লাগলো। বাতাসের শনশন শব্দ যেনো তাজকিয়ার কানকে আয়ত্ত করে নিয়েছে৷ ঠান্ডা বাতাসটা যেনো তাকে ভয় দেখাচ্ছে। এর মাঝে তাজকিয়া খেয়াল করে,কবরস্থান থেকে কয়েকটি লাশ উপরে উঠা শুরু করেছে। তাজকিয়া ভয়ে হুট করেই মাটিতে পড়ে যায়৷ মৃত ব্যাক্তিগুলো উপরে উঠে আসে এতক্ষণে। তাজকিয়া ভয়ে এক চিৎকার মারে।
– এই,কি হয়েছে তোর? তাজকিয়া..?
শায়েলা বেগমের ডাকে তাজকিয়া লাফ দিয়ে উঠে যায় ঘুম থেকে৷ হতাশাজনক চেহারা নিয়ে তাজকিয়া হাপাচ্ছিলো। শায়েলা বেগম তাজকিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তাজকিয়া বোঝতে পারে,এইটা স্বপ্ন ছিলো। এরপর সে হুট করে বিছানা ছেড়ে এসে,তার মাকে জড়িয়ে ধরে। শায়েলা বেগম হয়তো বুঝেছে। তিনি তাজকিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,” সকাল হয়ে গেছে৷ ৮ টা বাজে। তোকে গোসল করাতে হবে। জলদি আয়৷ বর যাত্রী চলে আসবে একটু পর”। শায়েলা বেগমের কথায় তাজকিয়া হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত দেয়।
তাজকিয়ার গোসল শেষে তাকে রুমে আনা হয়। পার্লার থেকে নিয়ে আসা কর্মিরা তাকে বউ সাজে সাজাচ্ছে। এদিকে বর যাত্রীরাও এসে গেছে। বাহিরে হৈচৈ। খাবারের আয়োজন চলছে। বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি। আবার ডেকোরেশনের কাজ করা লোকজনের শব্দ। সব কিছু মিলিয়ে,তাজকিয়া এসবের একটাতেও নেই। তার ভাবনা শুধু সেই জ্বীন নিয়ে। দুনিয়া ওর মস্তিষ্কে যেনো ঠাই পাচ্ছেনা। জ্বীনটা থেকে কিভাবে বাচতে হবে,সেই চিন্তা।
এদিকে বর যাত্রার লোকেরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে। কয়েকজন লোক চলে যায়। বাকি থাকে রিয়াজ সহ তার কিছু ববন্ধুবান্ধব। বরকে স্টেজের উপর বসিয়ে দেয়।এরপর হুজুর আসে। বিয়ের সকল নিয়ম কানুন অনুযায়ী বরকে বিয়ে পড়াচ্ছে। তাজকিয়া রুমের ভিতর কয়েকজন মহিলা সহ বসে আছে। হটাৎ একটা মোটা ভয়ংকর কন্ঠের শব্দ তাজকিয়া শুনতে পায়,” রিয়াজের সাথে তোর বিয়ে হবেনা। আজ থেকে আমি তোর স্বামী”।
কথাটা শুনে তাজকিয়া দাঁড়িয়ে যায়। হুট করে দাড়ানোর জন্য সবাই ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। তাজকিয়ার বুকের ধুকপুকানি আবার বেড়ে যায়। সে আর কিছু না ভেবে দৌড়ে রুমের বাহিরে চলে আসে। সবাই অবাক হয়েই তাকিয়ে আছ। তাজকিয়া জানালা দিয়ে স্টেজে তাকায়। আর দেখে,রিয়াজ কবুল বলে দিয়েছে। সবাই আমিন দিয়ে মিষ্টি খাচ্ছে। তাজকিয়ার ভিতর ভয় কাজ করতে লাগলো। এইটা কি আদৌ রিয়াজ? নাকি জ্বীন টা?
তাজকিয়া জানেনা সে কি করছে। তাজকিয়া এইটাও জানেনা তার সাথে কি হতে যাচ্ছে। সব যেমন চলছিলো,তেমনি চলছে। তাজকিয়াকেও কবুল বলিয়ে বিয়ে সম্পুর্ন করা হয়। এরপর বরের সাথে বউকে পাঠানোর সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদায় দেওয়ার সময় তাজকিয়ার চোখে কোনো পানি ছিলো না। শুধু ছিলো হতাশা,মন মরা,স্তব্ধতা, নিরাশাক্ততা,আর আত্মস্থ চেহারার চাপ দেখা যাচ্ছিলো। বিধিমালা অনুযায়ী তাজকিয়াকে পাঠানো হয় বরের সাথে। পাশের বাসা যেহেতু, সেখানে হেটেই চলে যায় বর যাত্রী।
রিয়াজের বাসায়ও মেহমান ভর্তি। সব কিছুর নিয়মে বউকে স্টেজে বসিয়ে রাখা হয়৷ অনেকে আসে,বউ দেখে আবার চলে যায়। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে লাগলো। মেহমানরাও ধীরে ধীরে চলে যেতে লাগলো। বাড়ি ফাকা হচ্ছে। রিয়াজের মা মরিয়ম বেগম তাজকিয়াকে সাথে করে উপরের ঘরে নিয়ে আসে। তাজকিয়ার মুখে এখনো সেই হতাশার চাপ। মরিয়ম বেগম তাজকিয়াকে রুমে এনে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর তাজকিয়ার পাশে বসে বলল,
– একটা কথা বলি তাজু?
– জ্বী মা বলুন।
– আসলে কি হয়েছে আমাকে বলবা?
– কোন ব্যাপারে মা।
– জ্বীন,ভূত এইসব নিয়ে।
– কিন্তু আপনাকে কে বলল এসব মা?
– কাল রাতে রিয়াজ কি যেনো বলল আমার মাথায় ঢুকেনি। তুমি নাকি জ্বীন ভূত নিয়ে ঘুরছো। এরকম কিছু বলেছে। আসল ঘটনা কি।
– না মা,তেমন কিছু না। কয়েকদিন যাবত আমার বেশ অস্বস্তি লাগছিলো। রিয়াজকে আমি এইটা শেয়ার করেছি। উনি বলল ভূত জ্বীন কি যেনো। আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানিনা।
– হুম। ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে। প্যারানরমাল বিষয়ে জানার জন্য সে ভূত জ্বীন নিয়ে গবেষণা করেছে। এরপর থেকেই ওর কাছে সব জ্বীন ভূতের মতো লাগে। কি যে করি বলো?
– চিন্তা করবেন না মা। সব ঠিক হয়ে যাবে।
– সেই প্রার্থনাই করি মা। তুমি আমার ছেলেটাকে দেখে রেখো।
– জ্বী মা,অবশ্যই।
মরিয়ম বেগম তাজকিয়াকে বিদায় দিয়ে আবার রুম ত্যাগ করে। তাজকিয়া ব্যাপারটা লুকিয়েছে কারণ উনিও ভয় পেতে পারে। বা নতুন কোনো ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। এদিকে বাসর ঘরে তাজকিয়াকে বসিয়ে সবাই বাহিরে যায়। কিছুক্ষণ পর রাজু এসে খাবার দিয়ে গেলো। তাজকিয়ারও বেশ খুদা পায়,তাই কিছু খেয়ে নেয়। এসবে ধীরে ধীরে রাত ১১ টা বেজে গেলো। রিয়াজ আসার সময় হয়েছে। রাজু এক গ্লাস গরুর দুধ এনে টেবিলে রেখে যায়। অথচ কেও জানেনা,এই বাসর রাতটা ওদের কাছেও একটা রহস্যময় রাত।
সাড়ে এগোরাটায় রিয়াজ রুমে প্রবেশ করে৷ তাজকিয়া ঘোমটা দিয়ে বিছানায় বসে আছে। রিয়াজ হেটে এসে সোজা ব্যালকনিতে যায়। তাজকিয়া রিয়াজের অপেক্ষায় বিছানাতেই বসে রইলো। অপেক্ষা করতে করতে,এদিকে রাত ১২ঃ১৯ মিনিট হয়ে যায়।
রাত ১ টা বাজে,এখনো রিয়াজ বারান্দায়।
রাত ২ টা বেজে গেলো। রিয়াজের ফেরার কোনো নাম গন্ধ নেই। এদিকে তাজকিয়ার চোখে ঘুমের চাপ পড়তে লাগলো।
বিশ্রি একটা গন্ধে তাজকিয়ার চোখ জাগ্রত হয়। তাজকিয়া চোখ মেলে রুমের চারপাশে তাকায়। লাইট অফ করা। কখন সে ঘুমিয়ে গেছে,মনে নেই তার। চাদের আলো আর ভোটকার মতো এক বিশ্রি গন্ধ পুরো রুম ছড়িয়ে আছে। তাজকিয়া একটু নড়াচড়া করতে বুঝতে পারে,ওর শরীর প্রচুর যন্ত্রণা করছে। তাজকিয়া লাফ মেরে বসে যায়। এরপর বুকে হাত দিয়ে দেখে,ওর গায়ে ব্লাউজ নেই।ওর বাম স্তনের ওপওর হাতের ছাপ বয়ে আছে বেথা অনুভব হচ্ছে কিছুটা, ভয়ে তাজকিয়া কম্বল দিয়ে গা ঢেকে ফেলে। এরপর ফ্লোরের দিকে তাকাতেই সে দেখতে পায়, বিশাল লম্বা একটা লোক পাঞ্জাবি পড়ে নামাজ পড়ছে। তাজকিয়া ভয়ে জ্ঞান হারাবার অবস্থায় চলে যায়।
চলবে…..?
গল্প- #জ্বীন_রহস্য ( পর্ব-০৩)
লেখক- #রিয়াজ_রাজ