Sharifa_Suhasini
তোমার আপুকে আমার সত্যিই পছন্দ হয়েছে। আমি প্রথম দেখায় উনার শুভ্রতার প্রেমে পড়েছি। উনার চোখের গভীর দৃষ্টির প্রেমে পড়েছি। আর বিয়ে করলে উনাকেই করবো। এটাই সত্যি, এটাই আমার শেষকথা।
রিতু হতবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। একটা মানুষ তারই সবচেয়ে প্রিয় মানুষ নবনী আপাকে তার সামনে ভালোবাসার নির্মল সত্য স্বীকার করছে-এর চেয়ে সুখকর আর কী আছে!
এদিকে বাইরে ঘরের এককোণে লজ্জায় গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নবনী। আমান নামক ভদ্রলোক এতগুলো মানুষের সামনে এটা কী বললেন! তাছাড়া এরপরই বা কী করবে সে! নিজের বোনের বিয়ের সময় এমন ভয়ানক ঘটনার মুখোমুখি তাকে হতে হবে- এই বিচ্ছিরি কল্পনা কী সে করতে পেরেছে? বাবার সামনে মেয়েটা মুখ তুলে তাকাতেও পারছে না। ফরিদ হোসেন মুখ কাচুমাচু করে আমানের বাবা আরমান খানকে বললেন,
-ভাইসাব, আমি আপনাদেরকে লজ্জায় ফেললাম নাকি আপনারা আমাকে ফেললেন, বুঝতে পারছি না।
আরমান খান দুশ্চিন্তায় একবার সম্মুখের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলেন। মেয়েপক্ষের সামনে লজ্জায় তার মাথা কা*টা যাচ্ছে। নবনীকে পছন্দ, একথা আগে বললে কী এমন ক্ষতি হত তার! আরমান খান সারাজীবন আর্মির মেজর হিসেবে বড় দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজের কর্ম ছাড়া আর কারো কাছে তাকে মাথা নত করতে হয়নি। অথচ আজ কি-না তার ছেলের কারণে এই অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।
ফরিদ হোসেন আবার বললেন,
-ভাই, আমান যদি আমার ছোট মেয়েকে বাদ রেখে বড় মেয়েকে পছন্দ করে, তবে আমি এই বিয়েতে মত দিতে পারবো না। আমি নবনীর সাথে আমানের বিয়ে দিলে রিতুকে কী জবাব দেবো? আর তাছাড়া, সারাজীবন আমার ছোট মেয়েটা মানুষের কটুক্তির স্বীকার হবে। বাবা হয়ে আমি কীভাবে মেনে নেবো বলুন?
-ফরিদ সাহেব, আমি একজন সাবেক মেজর। আমার এক কথা, এক কাজ। আপনার সম্মানের হানি হয়, এমন কাজ আমি কখনোই হতে দেবো না। হয় রিতুকে ও বিয়ে করবে, আর নাহয় এই বিয়ে ক্যান্সেল করবো।
এরপর তিনি নবনীর কাছে এগিয়ে গেলেন। তারও তো একটা আত্মসম্মান আছে। মেয়েটা নিশ্চয় ভাবতেই পারে- ডিভোর্সি বলেই ছেলেপক্ষ থেকে রিতুর প্রতি এই সহানুভূতি, আর তার প্রতি এমন তীব্র বিমুখতা! আরমান খান নবনীর মাথায় হাত রেখে বললেন,
– নবনী মা, আমাদের পক্ষ-বিপক্ষের কথার ভীড়ে তুমি নিজেকে নিয়ে খুব সংকোচবোধ করছো,আমি তা বুঝতে পারছি। মা রে, তুমি ডিভোর্সি-একথা আমরা সবাই জানি, একথা সত্য। কিন্তু ডিভোর্সি বলে আমান তোমাকে পছন্দ করলেও ওর সাথে তোমাকে বিয়ে দিচ্ছি না-এমনটা কিন্তু মোটেও না।
নবনী একবার স্মিত হাসি হাসলো। তারপর বললো,
-আংকেল, আমি একজন শিক্ষিত মেয়ে। এই ব্যাপারগুলো আমি বুঝি। আমান যদি সরাসরি আমাকে পছন্দ করে দেখতে আসতো, তবে ব্যাপারটা অন্যরকম হত। কিন্তু সে এখানে রিতুকে দেখতে এসে আমাকে বিয়ে করতে চাইছে৷ ব্যাপারটা সাংঘর্ষিকই। যদিও আমার মনে হচ্ছে, এখানে রিতুকে নিয়ে অন্য কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে।
-অন্য রহস্য? মানে! আমি ঠিক বুঝলাম না। একটু ক্লিয়ার করে বলো তো। কী সেটা?
-নিশ্চিত নই। রিতুরা ফিরে আসুক। তখন বুঝতে পারবেন। তবে যাই ঘটুক, আমি আমান সাহেবের সাথে বিয়ের সম্মতি দিচ্ছি না। এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন।
নবনীর কথা শেষ হতে না হতেই একটি অপরিচিত ছেলে বাসার ভিতর ঢুকলো। চুল উসকোখুসকো, চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। ভিতরে ভিতরে কোনো বিষয় নিয়ে ভীষণ ভয়ে ছেলেটা যে চুপসে আছে, তা ওর চোখের দৃষ্টির সীমাই বুঝিয়ে দিচ্ছে। নবনী ওর বুকের ভিতরকার ভাবনাগুলো অনুভব করার চেষ্টা করলেও উপস্থিত অন্যরা অবাক হওয়া ছাড়া বিশেষ কোনো ভাবনা তাদের মস্তিষ্কে এলো না। ফরিদ সাহেব কিছুটা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন,
-রাতুল! ভালো হয়েছে বাবা, তুমি এসেছো। এই দেখো, তোমার বন্ধু রিতুকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে। আমি তোমাকে বলবো ভেবেছিলাম। কিন্তু বিয়েটা তো এখনও কনফার্ম করা হয়নি, তাই সেভাবে ভাবিনি আর কী…
-সমস্যা নেই আংকেল। আমি রিতুর কাছ থেকে আগেই শুনেছি। আংকেল, আপনাকে একটা কথা বলা হয়নি। রিতু…
রাতুলের কথা শেষ হয় না। তার আগেই আমানের পিছু পিছু রিতু এসে উপস্থিত হলো। রাতুলকে দেখেই সে চমকে উঠে বাবা ফিরোজ খানের মুখের দিকে তাকায়। এই রাতুলই তার মেডিকেল কলেজের ফার্স্ট বয়, তার প্রেমিক। যদিও তার বাবা রাতুলকে রিতুর খুব ভালো একজন বন্ধু হিসেবেই চিনেন।
আচ্ছা, বাবাকে রাতুল সব বলে দিয়েছে? ওর কী এত সাহস সত্যিই আছে? রিতুর মাথায় যেন আকাশ-পাতাল চিন্তা এসে ভর করতে শুর করলো। যদিও সেই চিন্তার সময়সীমা খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। আমান আবারও পূর্বের মত দৃঢ়চিত্তে বললো,
-বাবা, আপনারা গুরুজনেরা উপস্থিত আছেন। আমি কিছুক্ষণ আগেই বলেছি, আমি রিতুকে নয়, নবনীকে বিয়ে করতে চাই। আমি সত্যিই উনাকে বিয়ে করতে চাই। জানি, আপনারা প্রচন্ড রাগ করবেন। কিন্তু আমার ব্যাপারটাও একটু বুঝার চেষ্টা করুন প্লিজ।
আরমান সাহেব গলার স্বর বেশ কঠিন করেই প্রশ্ন করলেন,
-তোমার ব্যাপার? তোমার কোন ব্যাপার বুঝার চেষ্টা করবো শুনি। একটা মেয়েকে দেখতে এসে আরেকটা মেয়েকে নিয়ে তেনা পেচাচ্ছো। আমার এইসব ভন্ডামি কিন্তু ভালো লাগে না আমান। এভাবে বিয়ে ক্যান্সেল করে দিলে রিতুর কী হবে, ভাবতে পারছো?
এবার আর আমানকে উত্তর দিতে হলো না। রিতুই এগিয়ে এসে বললো,
-আংকেল, আপনারা উতলা হবেন না প্লিজ। আমানের সাথে আমার কথা হয়েছে। আমিও চাই উনি আমার বড় আপাকেই বিয়ে করুন। দেখুন, বিয়েটা হচ্ছে দুটি মানুষের মনের ব্যাপার, ভালো-মন্দ অনুভূতির ব্যাপার। আমাকে উনার পছন্দ নয়। এখন বাড়িসুদ্ধ লোক জোর করে বিয়ে দিয়ে আসলেই কী আমাদের সুখী করতে পারবেন? পারবেন না। তাছাড়া আমার সাথে জোর করে বিয়ে দিয়ে পরে যতবার এ বাড়িতে আসবো, আমার আপা কারো সামনে মুখ তুলে তাকাতেও পারবে না।
এরপর সে ফরিদ সাহেবের কাছে হাতজোড় করে বলে,
-বাবা, নবনী আপাকে উনি বিয়ে করলে আমার সত্যিই কোনো সমস্যা নেই। আমান সাহেব অত্যন্ত ভালো মানুষ, এই বিষয়ে আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি। আর নবনী আপা কতটা সফট, স্নিগ্ধ মনের মানুষ,সেকথা তুমি নিজে অস্বীকার করতে পারবে? শুধু আমান কেন, এ পৃথিবীর যেকোনো বুঝদার পুরুষই আমার আপাকে যদি একবার কাছ থেকে দেখে, সেই প্রেমে পড়ে যাবে। তার অতীতের সাথে যেটা ঘটেছে, তা তো আর আপার হাতে ছিল না। তাই না? বাবা, আমান সাহেবের মত মানুষের পাশে আপাকেই মানায়।
আরমান খান এবং ফরিদ হোসেন একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। আমান যে জিদ ধরে হলেও নবনীকে বিয়ে করতে পারে, সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত। তাহলে এরমধ্যে অযথা বয়োজ্যেষ্ঠরা ঝামেলা সৃষ্টি করে লাভ কী? নিজের প্রতিশ্রুতি গোল্লায় যাক। ছেলেমেয়ের সুখই তাদের কাছে বড় বিষয়। আরমান খান সহাস্যে বললেন,
-তাহলে আর কী! রিতু যখন বলছেই, তখন আমার আর আপত্তি নেই। আমাদের নবনী মাকেই আমার ঘরের পুত্রবধূ করবো। কী বলেন ফরিদ ভাই?
-সবাই যখন রাজি, তখন আমি আর বাধা দেই কী করে বলুন তো?
-কিন্তু আমি রাজি নই। বাবা, তোমরা নিজেদের ইচ্ছেমতো মত দিতে পারো না। বিয়েটা যেহেতু আমার, তাই আমার মতামত নেওয়াটাও জরুরি। আমি আমান সাহেবকে বিয়ে করতে পারবো না।
সবাই যখন বিজয়োল্লাসের সুচনা করতে যাচ্ছে, ঠিক এমন মুহুর্তেই বেঁকে বসলো নবনী।
চলবে…
যারা পেইজে ফলো না করে গল্প পড়ছেন, তারা পেজটি ফলো করে দিন।তাহলে পরবর্তী পর্ব পোস্ট করার সাথেই নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন। না হলে পরবর্তী পর্ব মিস হতে পারে।সকলে আমার পেইজে এড হয়ে নিন।কথা দিলাম পেইজের গল্পগুলা আপনাদের মন ছুয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ
পেইজে ফলো করতে এখানে ক্লিক করুনঃ
ভালোবাসার গল্প
জলনূপুর পর্ব ২
Sharifa_Suhasini
তোমার আপুকে আমার সত্যিই পছন্দ হয়েছে। আমি প্রথম দেখায় উনার শুভ্রতার প্রেমে পড়েছি। উনার চোখের গভীর দৃষ্টির প্রেমে পড়েছি। আর বিয়ে করলে উনাকেই করবো। এটাই সত্যি, এটাই আমার শেষকথা।
রিতু হতবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। একটা মানুষ তারই সবচেয়ে প্রিয় মানুষ নবনী আপাকে তার সামনে ভালোবাসার নির্মল সত্য স্বীকার করছে-এর চেয়ে সুখকর আর কী আছে!
এদিকে বাইরে ঘরের এককোণে লজ্জায় গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নবনী। আমান নামক ভদ্রলোক এতগুলো মানুষের সামনে এটা কী বললেন! তাছাড়া এরপরই বা কী করবে সে! নিজের বোনের বিয়ের সময় এমন ভয়ানক ঘটনার মুখোমুখি তাকে হতে হবে- এই বিচ্ছিরি কল্পনা কী সে করতে পেরেছে? বাবার সামনে মেয়েটা মুখ তুলে তাকাতেও পারছে না। ফরিদ হোসেন মুখ কাচুমাচু করে আমানের বাবা আরমান খানকে বললেন,
-ভাইসাব, আমি আপনাদেরকে লজ্জায় ফেললাম নাকি আপনারা আমাকে ফেললেন, বুঝতে পারছি না।
আরমান খান দুশ্চিন্তায় একবার সম্মুখের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলেন। মেয়েপক্ষের সামনে লজ্জায় তার মাথা কা*টা যাচ্ছে। নবনীকে পছন্দ, একথা আগে বললে কী এমন ক্ষতি হত তার! আরমান খান সারাজীবন আর্মির মেজর হিসেবে বড় দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজের কর্ম ছাড়া আর কারো কাছে তাকে মাথা নত করতে হয়নি। অথচ আজ কি-না তার ছেলের কারণে এই অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।
ফরিদ হোসেন আবার বললেন,
-ভাই, আমান যদি আমার ছোট মেয়েকে বাদ রেখে বড় মেয়েকে পছন্দ করে, তবে আমি এই বিয়েতে মত দিতে পারবো না। আমি নবনীর সাথে আমানের বিয়ে দিলে রিতুকে কী জবাব দেবো? আর তাছাড়া, সারাজীবন আমার ছোট মেয়েটা মানুষের কটুক্তির স্বীকার হবে। বাবা হয়ে আমি কীভাবে মেনে নেবো বলুন?
-ফরিদ সাহেব, আমি একজন সাবেক মেজর। আমার এক কথা, এক কাজ। আপনার সম্মানের হানি হয়, এমন কাজ আমি কখনোই হতে দেবো না। হয় রিতুকে ও বিয়ে করবে, আর নাহয় এই বিয়ে ক্যান্সেল করবো।
এরপর তিনি নবনীর কাছে এগিয়ে গেলেন। তারও তো একটা আত্মসম্মান আছে। মেয়েটা নিশ্চয় ভাবতেই পারে- ডিভোর্সি বলেই ছেলেপক্ষ থেকে রিতুর প্রতি এই সহানুভূতি, আর তার প্রতি এমন তীব্র বিমুখতা! আরমান খান নবনীর মাথায় হাত রেখে বললেন,
– নবনী মা, আমাদের পক্ষ-বিপক্ষের কথার ভীড়ে তুমি নিজেকে নিয়ে খুব সংকোচবোধ করছো,আমি তা বুঝতে পারছি। মা রে, তুমি ডিভোর্সি-একথা আমরা সবাই জানি, একথা সত্য। কিন্তু ডিভোর্সি বলে আমান তোমাকে পছন্দ করলেও ওর সাথে তোমাকে বিয়ে দিচ্ছি না-এমনটা কিন্তু মোটেও না।
নবনী একবার স্মিত হাসি হাসলো। তারপর বললো,
-আংকেল, আমি একজন শিক্ষিত মেয়ে। এই ব্যাপারগুলো আমি বুঝি। আমান যদি সরাসরি আমাকে পছন্দ করে দেখতে আসতো, তবে ব্যাপারটা অন্যরকম হত। কিন্তু সে এখানে রিতুকে দেখতে এসে আমাকে বিয়ে করতে চাইছে৷ ব্যাপারটা সাংঘর্ষিকই। যদিও আমার মনে হচ্ছে, এখানে রিতুকে নিয়ে অন্য কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে।
-অন্য রহস্য? মানে! আমি ঠিক বুঝলাম না। একটু ক্লিয়ার করে বলো তো। কী সেটা?
-নিশ্চিত নই। রিতুরা ফিরে আসুক। তখন বুঝতে পারবেন। তবে যাই ঘটুক, আমি আমান সাহেবের সাথে বিয়ের সম্মতি দিচ্ছি না। এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন।
নবনীর কথা শেষ হতে না হতেই একটি অপরিচিত ছেলে বাসার ভিতর ঢুকলো। চুল উসকোখুসকো, চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। ভিতরে ভিতরে কোনো বিষয় নিয়ে ভীষণ ভয়ে ছেলেটা যে চুপসে আছে, তা ওর চোখের দৃষ্টির সীমাই বুঝিয়ে দিচ্ছে। নবনী ওর বুকের ভিতরকার ভাবনাগুলো অনুভব করার চেষ্টা করলেও উপস্থিত অন্যরা অবাক হওয়া ছাড়া বিশেষ কোনো ভাবনা তাদের মস্তিষ্কে এলো না। ফরিদ সাহেব কিছুটা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন,
-রাতুল! ভালো হয়েছে বাবা, তুমি এসেছো। এই দেখো, তোমার বন্ধু রিতুকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে। আমি তোমাকে বলবো ভেবেছিলাম। কিন্তু বিয়েটা তো এখনও কনফার্ম করা হয়নি, তাই সেভাবে ভাবিনি আর কী…
-সমস্যা নেই আংকেল। আমি রিতুর কাছ থেকে আগেই শুনেছি। আংকেল, আপনাকে একটা কথা বলা হয়নি। রিতু…
রাতুলের কথা শেষ হয় না। তার আগেই আমানের পিছু পিছু রিতু এসে উপস্থিত হলো। রাতুলকে দেখেই সে চমকে উঠে বাবা ফিরোজ খানের মুখের দিকে তাকায়। এই রাতুলই তার মেডিকেল কলেজের ফার্স্ট বয়, তার প্রেমিক। যদিও তার বাবা রাতুলকে রিতুর খুব ভালো একজন বন্ধু হিসেবেই চিনেন।
আচ্ছা, বাবাকে রাতুল সব বলে দিয়েছে? ওর কী এত সাহস সত্যিই আছে? রিতুর মাথায় যেন আকাশ-পাতাল চিন্তা এসে ভর করতে শুর করলো। যদিও সেই চিন্তার সময়সীমা খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। আমান আবারও পূর্বের মত দৃঢ়চিত্তে বললো,
-বাবা, আপনারা গুরুজনেরা উপস্থিত আছেন। আমি কিছুক্ষণ আগেই বলেছি, আমি রিতুকে নয়, নবনীকে বিয়ে করতে চাই। আমি সত্যিই উনাকে বিয়ে করতে চাই। জানি, আপনারা প্রচন্ড রাগ করবেন। কিন্তু আমার ব্যাপারটাও একটু বুঝার চেষ্টা করুন প্লিজ।
আরমান সাহেব গলার স্বর বেশ কঠিন করেই প্রশ্ন করলেন,
-তোমার ব্যাপার? তোমার কোন ব্যাপার বুঝার চেষ্টা করবো শুনি। একটা মেয়েকে দেখতে এসে আরেকটা মেয়েকে নিয়ে তেনা পেচাচ্ছো। আমার এইসব ভন্ডামি কিন্তু ভালো লাগে না আমান। এভাবে বিয়ে ক্যান্সেল করে দিলে রিতুর কী হবে, ভাবতে পারছো?
এবার আর আমানকে উত্তর দিতে হলো না। রিতুই এগিয়ে এসে বললো,
-আংকেল, আপনারা উতলা হবেন না প্লিজ। আমানের সাথে আমার কথা হয়েছে। আমিও চাই উনি আমার বড় আপাকেই বিয়ে করুন। দেখুন, বিয়েটা হচ্ছে দুটি মানুষের মনের ব্যাপার, ভালো-মন্দ অনুভূতির ব্যাপার। আমাকে উনার পছন্দ নয়। এখন বাড়িসুদ্ধ লোক জোর করে বিয়ে দিয়ে আসলেই কী আমাদের সুখী করতে পারবেন? পারবেন না। তাছাড়া আমার সাথে জোর করে বিয়ে দিয়ে পরে যতবার এ বাড়িতে আসবো, আমার আপা কারো সামনে মুখ তুলে তাকাতেও পারবে না।
এরপর সে ফরিদ সাহেবের কাছে হাতজোড় করে বলে,
-বাবা, নবনী আপাকে উনি বিয়ে করলে আমার সত্যিই কোনো সমস্যা নেই। আমান সাহেব অত্যন্ত ভালো মানুষ, এই বিষয়ে আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি। আর নবনী আপা কতটা সফট, স্নিগ্ধ মনের মানুষ,সেকথা তুমি নিজে অস্বীকার করতে পারবে? শুধু আমান কেন, এ পৃথিবীর যেকোনো বুঝদার পুরুষই আমার আপাকে যদি একবার কাছ থেকে দেখে, সেই প্রেমে পড়ে যাবে। তার অতীতের সাথে যেটা ঘটেছে, তা তো আর আপার হাতে ছিল না। তাই না? বাবা, আমান সাহেবের মত মানুষের পাশে আপাকেই মানায়।
আরমান খান এবং ফরিদ হোসেন একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। আমান যে জিদ ধরে হলেও নবনীকে বিয়ে করতে পারে, সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত। তাহলে এরমধ্যে অযথা বয়োজ্যেষ্ঠরা ঝামেলা সৃষ্টি করে লাভ কী? নিজের প্রতিশ্রুতি গোল্লায় যাক। ছেলেমেয়ের সুখই তাদের কাছে বড় বিষয়। আরমান খান সহাস্যে বললেন,
-তাহলে আর কী! রিতু যখন বলছেই, তখন আমার আর আপত্তি নেই। আমাদের নবনী মাকেই আমার ঘরের পুত্রবধূ করবো। কী বলেন ফরিদ ভাই?
-সবাই যখন রাজি, তখন আমি আর বাধা দেই কী করে বলুন তো?
-কিন্তু আমি রাজি নই। বাবা, তোমরা নিজেদের ইচ্ছেমতো মত দিতে পারো না। বিয়েটা যেহেতু আমার, তাই আমার মতামত নেওয়াটাও জরুরি। আমি আমান সাহেবকে বিয়ে করতে পারবো না।
সবাই যখন বিজয়োল্লাসের সুচনা করতে যাচ্ছে, ঠিক এমন মুহুর্তেই বেঁকে বসলো নবনী।
চলবে…