কালোবউ পর্ব ১১
লেখিকাঃ Tahmina Toma
.
মেঘলাঃ আ,,,আপনি??
আকাশঃ কেন অন্য কারো আসার কথা ছিলো??
মেঘলাঃ না,,,, মানে আমি মনে করেছি টিয়া আপু।
আকাশঃ তোমার পা ঠিক হয়নি??
মেঘলাঃ হুম হয়েছে।
আকাশঃ টিয়া এই রুমে থাকতো তোমাকে হেল্প করতে। এখন তোমার যেহেতু হেল্প এর দরকার নেই তাহলে টিয়া এই রুমে কেন আসবে?? (রুমে ঢুকতে ঢুকতে)
মেঘলাঃ হুম,,,,,,, একটা কথা,,,,, মানে কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন ছিলো??
আকাশঃ কী প্রশ্ন??(ভ্রু কুঁচকে মেঘলার দিকে তাকিয়ে)
মেঘলাঃ এই এক সপ্তাহ কোথায় ছিলেন?? বাড়ি আসেননি কেন??
আকাশঃ By any chance,,, তুমি কী আমার ওপর অধিকার খাটাচ্ছো?? দুবেলা একটু কেয়ার আর একটু ভালো ব্যবহার করার জন্য যদি ভেবে থাকো আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি তাহলে তুমি একদম ভুল। আমার পাশে দাঁড়ানোর কোন যোগ্যতা তোমার নেই।
মেঘলাঃ(এভাবে বলতে পারলো উনি। আমিতো উনার ওপর কোন অধিকার খাটাইনি। শুধু জানতে চেয়েছিলাম। এভাবে না বললেও পারতেন। চোখ টলমল করছে পানিতে অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে বললাম) না না অধিকার খাটাচ্ছি না। শুধু জানতে ইচ্ছে হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম।
আকাশঃ ওকে,,,,, বাড়ি ফিরিনি এটা ভুল বাড়ি ফিরেছি কিন্তু রুমে আসিনি। অফিসে অনেক কাজ ছিলো বাড়ি ফিরতে রাত হতো আর মা বলেছিলো তোমার সুবিধার জন্য টিয়া এই রুমে আছে তাই অন্যরুমে ঘুমাতাম আবার অনেক সকালে অফিসে চলে যেতাম। আজ কাজের চাপ কম থাকায় একটু আগে এসেছি।( বলে ওয়াশরুমের দিকে যেতে লাগলাম)
মেঘলাঃ আর একটা কথা, আমি জানি আপনার পাশে দাঁড়ানোর যোগ্যতা আমার নেই। আর আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার পাওয়ার আশাও আমি করি না। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন মিথ্যে বলে বিয়েটা আপনি আমাকে করেছেন। আমি করিনি।(শক্ত গলায় বললাম)
আকাশঃ(পেছনে ঘুরে মেঘলার গাল চেপে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলাম।)
মেঘলাঃআহ্ লাগছে ছাড়ুন (ছাড়ানোর চেষ্টা করে)
আকাশঃ লাগার জন্যই ধরেছি। মাত্র এক সপ্তাহ হয়েছে বিয়ের এখনই মুখে কথা ফুটে গেছে। এত সাহস?? আমাকে কথা শুনানো। আমার সামনে একদম সাহস দেখাতে আসবি না। তোর সাহস ভয়ে পরিণত করতে আমার ১ মিনিট সময়ও লাগবে না। নেক্সট টাইম আমার সামনে সাহস দেখানোর আগে ১০০ বার ভাববি।,,,,রাবিশ,,,(ধাক্কা দিয়ে ফেলে ওয়াশরুমে চলে এলাম)
মেঘলাঃ (হে খোদা হয় সয্য করার ধৈর্য্য দাও নাহয় এই জীবন থেকে মুক্তি দাও। ভালোবাসার মানুষের অপমান যে বিষাক্ত সাপের থেকেও বেশি যন্ত্রণা দেয়। ধাক্কা দেওয়ায় বেডের পাশে টেবিলে হাতের কুনই লেগে ব্যাথা পেয়েছি। হাত নাড়াতে পারছি না। হাত একটু বাকা করে দেখি রক্ত জমে গেছে কিন্তু কালো হওয়ায় বেশি বুঝা যাচ্ছে না। কালো হওয়ার এই একটা সুবিধা আছে। আঘাতগুলো সহজে লুকানো যায়।(ভাবতেই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি বেড়িয়ে এলো ভেতর থেকে) কষ্ট করে ওঠে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালাম। উনাকে ফেস করতে ইচ্ছে করছে না এখন।)
আকাশঃ (ঝারনা ছেড়ে তার নিচে দাড়িয়ে আছি।আজ আর মেঘলার সাথে খারাপ ব্যবহার করে অনুতাপ হচ্ছে না। সব মেয়েই এক। তোমাকে নিষ্পাপ ভেবেছিলাম কিন্তু তুমিতো ঐ ছলনাময়ীর বোনই। তুমিও ওর মতোই বের হলে। কেন মেঘলা কেন?? তোমার জন্য এই মনে যে মায়া তৈরী হতে শুরু করেছিলে কেন সব মিথ্যে করে দিলে?? ভেবেছিলাম তোমাকে আর কষ্ট দেবো না রুপের থেকে প্রতিশোধটা অন্যভাবে নেবো। কিন্তু তুমিওতো সমান অপরাধী,,,, না না রুপের থেকে তুমি বেশি অপরাধী । রুপ আমার সাথে ছলনা করে অন্যকারো হাত ধরেছে আর তুমি অন্যকারো সাথে ছলনা করে আমার হাত ধরেছো। দুজনেই একি দোষে দোষী তোমরা,,, তাই দুজনকেই শাস্তি পেতে হবে। তোমার শাস্তিটা বেশি কষ্টের হবে মেঘলা। কারণ তোমার জন্য দুজন মানুষ কষ্ট পেয়েছে। যার হাত ছেড়েছো সেও কষ্ট পেয়েছে আর আমিও। কিন্তু রুপতো শুধু আমাকে কষ্ট দিয়েছে যার হাত ধরেছে সে-তো সুখেই আছে। এবার তুমি বুঝবে আকাশ চৌধুরী কতটা খারাপ হতে পারে। শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে দেখি মেঘলা রুমে নেই। যেখানে ইচ্ছে যাক আমার কী?? একটা টাউজার আর টিশার্ট পড়ে বেডে শুয়ে পরলাম)
মেঘলাঃ( বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছি অনেক সময় হলো। এখানে রাতের অন্ধকার বা চাঁদের আলো উপভোগ করার উপায় নেই। বাড়ির চারপাশের কৃত্রিম আলোয় আলোকিত বেলকনি। চুপচাপ বেলকনির দোলায় গিয়ে বসে পড়লাম।)
,,,,,,,,,,
আকাশঃ (আযানের শব্দে ঘুম ভাঙলো। ওঠে বসলাম রুমের লাইট এখনো জ্বলছে। রাতে বেডে শুতেই ঘুমিয়ে গেছি ক্লান্ত থাকায়। মেঘলা লাইট অফ করেনি?? ভালো করে তাকিয়ে রুমের কোথাও মেঘলাকে দেখলাম না। কোথায় গেলো মেয়েটা?? এবার ভয় পেয়ে গেলাম?? তাড়াতাড়ি বেড থেকে নেমে ওয়াশরুমে আছে কিনা চেক করলাম, না নেই তাড়াতাড়ি বেলকনিতে গেলাম। দোলনায় বসে ঘুমিয়ে আছে। কতটা মায়াবতী আর নিষ্পাপ লাগছে মেয়েটাকে। কে বলবে এই নিষ্পাপ মুখের পিছনে একটা লোভী মেয়ে লুকিয়ে আছে। ভাবতেই রাগ ওঠে গেলো। রুমে এসে ওয়াশরুমে চলে এলাম। ওযু করে মসজিদের দিকে গেলাম।)
মেঘলাঃ ( গতরাতে কখন দোলনায় ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই। আযানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে কিন্তু ওঠতে ইচ্ছে করছে না তাই চোখ বন্ধ করে বসে ছিলাম। মনে হলো বেলকনিতে কেউ এসেছে। তাকাতেই দেখলাম আকাশ পেছন ফিরে চলে যাচ্ছে। এখানে কেন এসেছিলো?? আমি এখানে আছি তাই কী চলে গেলো?? গতরাতের কথা মনে পড়ে গেলো। এই চোখটাও না যখন তখন পানি গড়িয়ে যায়। চোখ মুছে ওঠে বেলকনির দারজার সামনে আসতেই দেখলাম আকাশ বেড়িয়ে যাচ্ছে। মাথায় টুপি, নীল পাঞ্জাবি আর কালো জিন্স পরা, জিন্সটার নিচে একটু ওপরের দিকে গুছানো, মাশাআল্লাহ অপূর্ব লাগছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে নামাজে যাচ্ছে। উনি নামাজ পরে জানতাম না তো। জানবোই বা কেমন করে উনাকে দেখছি কদিন ধরে। আমি ভাবনায় বিভোর তার মধ্যেই উনি বেড়িয়ে গেলো। আমিও চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে নামাজ পড়ে নিলাম। একটু কোরআন তিলাওয়াত করতে লাগলাম।)
আকাশঃ (রুমের সামনে আসতেই একটা মিষ্টি সুর কানে এলো। কী সুন্দর কন্ঠে কেউ কুরআন তিলাওয়াত করছে?? কে?? রুমে আসতেই দেখতে পেলাম মেঘলাকে তিলাওয়াত করতে। যে এত মুগ্ধকর কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করে সে কী লোভী হতে পারে?? যার মন পবিত্র না তার ভেতর থেকে এত মুগ্ধকর কুরআনের সুর আসতে পারে না। কিন্তু এতগুলো প্রমাণতো মিথ্যে হতে পারে না। প্রত্যেকটা প্রমাণ আমি নিজে যাচাই করে দেখেছি। তাহলে??? আর ভাবতে পারছি না। একটু তিলাওয়াত শুনে টাউজার আর টিশার্ট পড়ে বেড়িয়ে এলাম এক্সারসাইজ করতে)
মেঘলাঃ (তিলাওয়াত করছিলাম তখনই উনি রুমে এসে চেঞ্জ করে বেড়িয়ে গেলেন। আমি আর একটু তিলাওয়াত করে কিচেনের দিকে গেলাম। মা আর টিয়া আপু ব্রেকফাস্ট তৈরী করতে শুরু করেছে।) মা আমি হেল্প করি।
মাঃ করতে হবে না আমি করে নিবো।
টিয়াঃ আর হেল্প করার জন্য আমি আছি হিহিহি।
মেঘলাঃ(মা আর চাঁদের সাথে অনেকটা ফ্রী হয়ে গেছি। মা এখন আমার সাথে তুই করে বলে ) কিছু একটা করি।
মাঃ আচ্ছা ঠিক আছে। বল কী করতে পারিস??
মেঘলাঃ আ,,,,আসলে হয়েছে কী?? আমি রান্না করতে পারি না।(মুখটা কালো করে)
মাঃ আচ্ছা তাহলে দাড়িয়ে দেখ কীভাবে করি?? আর শিখে নে।
মেঘলাঃ না না তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলো আর দেখিয়ে দাও আমি করছি।
মাঃ আচ্ছা আটার মধ্যে পানি দিয়ে মাখতে শুরু কর।
মেঘলাঃ( এরপর মা বলে আর দেখিয়ে দিতে লাগলো আর আমি করতে লাগলাম। রুটি, সবজি, ডিমের অমলেট, আর ফলের জুস। রুটিগুলো একেক দেশের মানচিত্র হয়েছে। আটা হাত-মুখে লেগে আছে।)
মাঃ হাহাহা পাগলি আটা মনে হয় গায়ে বেশি মেখেছিস। যা ফ্রেস হয়ে আয় আমি সব ডাইনিং টেবিলে নিয়ে রাখছি।
মেঘলাঃ আচ্ছা,,,,,,,,,
আকাশঃ( এক্সারসাইজ করে শাওয়ার নিয়ে এসে আয়নার সামনে দাড়ালাম আর মেঘলা রুমে এলো। ওকে দেখেই হাসি পেয়ে গেলো। দেখে মনে হচ্ছে আটা ময়দার সাথে যুদ্ধ করে এসেছে। অনেক কষ্টে হাসি আটকে রাখলাম)
মেঘলাঃ( আচ্ছা উনি কী ইচ্ছে করে আমার সামনে এভাবে আসে?? আজও শুধু টাওয়েল পড়ে ভেজা গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। উনাকে এভাবে দেখলে যে ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে এলাম ফ্রেস হতে)
আকাশঃ (অফিসে যাওয়ার জন্য একদম রেডি হয়ে নিচে এলাম। চাঁদ কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে আছে। পিচ্চিটা অনেক ফাস্ট। বাড়ির সেই গম্ভীর ভাবটা আর নেই। এই বাড়িতে আসায় মা আর চাঁদ আগের মতো হয়ে গেছে। এটাই আমার জন্য অনেক। সব আগের মতো হয়ে গেছে শুধু বাবা নেই। আমি বাবার মনের মতো নিজেকে তৈরী করেছি কিন্তু বাবা দেখলো না। থাক না মা আর চাঁদকেতো খুশী করতে পেরেছি সেটাই অনেক ) গুড মর্নিং মা,,,, গুড মর্নিং চাঁদ।
মাঃ গুড মর্নিং (মিষ্টি হেসে)
চাঁদঃ গুড মর্নিং (গালে হাত দিয়ে খাবারের দিকে তাকিয়ে)
আকাশঃ গুড মর্নিং এমনভাবে বসছিস যেন তোর শাশুড়ি মারা গেছে।
মাঃ আকাশ এটা কেমন কথা??
আকাশঃ সরি মা কিন্তু তোমার মেয়ের মুখটা দেখো যেনো দেশে দুর্ভিক্ষ লেগেছে আর ও দেশের প্রধানমন্ত্রী।
চাঁদঃ টেবিলের দিকে তাকা তাহলে আমার মুখটা এমন করার কারণ বুঝতে পারবি।
আকাশঃ কেন কী,,,,,,,,,???(খাবারের চেহারা দেখে কথা বন্ধ হয়ে গেলো) মা তোমার কী হয়েছে?? খাবারের চেহারা এমন কেন?? কী রান্না করেছো??
মাঃ আজকে আমি না মেঘলা রান্না করেছে??
আকাশঃ এগুলো কী খাওয়ার যোগ্য মা?? নিজে দেখতে যেমন খাবারও বানিয়েছে তেমন।
মাঃ আকাশ,,,,,,,,,,,,,(জোড়ে ধমক দিয়ে)।
মেঘলাঃ(সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় উনার কথাগুলো শুনতে পেলাম। কথাগুলো তীরের মতো বুকে এসে বিঁধলো। আমিতো উনাকে বলিনি আমার মতো কালো মেয়েকে বিয়ে করতে। তাহলে এখন কেন বারবার এমন অপমান করছে? নিচে আর নামলাম না দৌঁড়ে রুমে এসে বেলকনিতে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে বসে পড়লাম। চোখ বাঁধ মানছে না। মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে নদীর স্রোতের মতো। নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। কেন রাঁধতে গেলাম। মনে মনে ঠিক করে নিলাম। যেদিন খাওয়ার যোগ্য রান্না করতে পারবো আর খাবারগুলো দেখতে আমার মতো কুৎসিত হবে না সেদিন রান্না করে আপনাকে খেতে দিবো। দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে রইলাম। )
মাঃ আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না আকাশ। মেয়েটা কষ্ট করে বানিয়েছে আজ সবাই এগুলোই খাবে। আর ওকে দেখিয়ে দিয়েছি আমি তাই খারাপ হলে দোষ ওর না আমার।
আকাশঃ( আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেতে শুরু করলাম। চোখ বোজে বিসমিল্লাহ বলে মুখে দিলাম। নাহ্ দেখতে যতটা খারাপ হয়েছে খেতে ততটা খারাপ না। খেতে ভালোই লাগছে। চুপচাপ খেতে লাগলাম)
চাঁদঃ হুম,,,, মা দেখতে বাজে হলেও খেতে ভালোই হয়েছে।
মাঃ হুম,,,,ঠিক বলেছিস।
আকাশঃ চাঁদ চল আজ তোকে আমি কলেজে ড্রপ করে দিবো।(খেতে খেতে)
চাঁদঃ সত্যি??????
আকাশঃ হুম,,,, তাড়াতাড়ি শেষ করে আয় আমি গাড়িতে ওয়েট করছি।
চাঁদঃ ওকে,,,,,,
আকাশঃ (খাওয়া শেষে গাড়ি বের করে গেটের সামনে চাঁদের জন্য ওয়েট করতে লাগলাম। কী মনে করে রুমের দিকে একবার তাকালাম?? গেট থেকে আমার রুমের বেলকনি দেখা যায়। মনে হচ্ছে মেঘলা বেলকনির কর্নারে ফ্লোরে বসে আছে দেয়ালে হেলান দিয়ে। বেলকনিতে অনেক ফুলের গাছ লাগানো তাই ভালোভাবে দেখাও যাচ্ছে না। কিন্তু মেঘলা ওখানে বসে আছে কেন এভাবে?? ব্রেকফাস্ট করতেও এলো না।)
চাঁদঃ কী হলো ভাইয়া???? চল,,,,, ঐদিকে কী দেখছিস???
আকাশঃ কিছু না,,,,,, যাচ্ছি ( ভাবনায় বিভোর ছিলাম চাঁদ কখন গাড়িতে ওঠেছে টেরই পাইনি। চাঁদের ডাকে ভাবনা ছেড়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে এলাম)
মাঃ টিয়া যাতো মেঘলার খাবারটা রুমে দিয়ে আয় হয়তো খারাপ লাগছে তাই নামেনি।
টিয়াঃ আচ্ছা,,,,,, (মেঘলার রুমে) বউমনি কই তুমি?? খাবার নিয়ে এসেছি খেয়ে নাও।
মেঘলাঃ (টিয়া আপুর ডাক শুনে তাড়াতাড়ি ওঠে দাড়ালাম। চোখ মুখ মুছে সব ঠিকঠাক করে নিলাম) আসছি আপু,,,,, তুমি খাবারটা টেবিলের ওপর রাখো(রুমে এসে)।
টিয়াঃ একি বউমনি তোমার চোখ এমন ফোলা আর লাল হয়ে আছে কেন??
মেঘলাঃ আর বলো না। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বের হয়েছি আর কোথা থেকে একটা পোকা এসে চোখে পড়লো এখন চোখের অবস্থা দেখো। নিচেও যেতে পারলাম না।
টিয়াঃ (ভালো হয়েছে নিচে যাওনি। ছোট স্যারের বলা কথা তুমি শুনলে অনেক কষ্ট পেতে) ঠিক আছে তুমি তাহলে খেয়ে নাও আমি যাই।
মেঘলাঃ আচ্ছা যাও,,,(খাবারের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ভরে ওঠলো। সত্যি খাবারগুলো দেখতে আমার মতো বাজে হয়েছে। খাবার খাচ্ছি আর চোখ মুছে যাচ্ছি। আব্বা সবসময় বলে খাবারে চোখের পানি ফেলতে নেই খাবার অভিশাপ দেয়। মা যখন কোনকিছুর জন্য মারতো আমি রাগ করে খাবার খেতাম না। আবার মেরে খাবার খাওয়ালে রাগে জেদে কাঁদতাম আর খেতাম (লেখিকাঃএটা আমি করতামআর সত্যি এই কথাটা আমার আব্বা সবসময় বলে) তখন আব্বা বলতো মা খাবারে চোখের পানি ফেলতে হয় না খাবার অভিশাপ দেয়। কিন্তু আজকে আমার চোখের পানি যে থামছে না কী করবো?? কোনমতে খাবার শেষ করলাম। দুপুরে রান্নার সময় মাকে টুকিটাকি হেল্প করলাম আর ভালোভাবে দেখতে লাগলাম কিভাবে রান্না করে। রাতের রান্নার সময়ও একি কাজ করলাম। দিনটা এভাবেই গেলো। রাতে ডিনারের আগেই উনি ফিরে এলেন। আমরা সবাই তখন ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছি আর গল্প করছি। উনি এসে সোজা ওপরে চলে গেলেন আমরা আবার আমাদের কাজে মনোযোগ দিলাম)
আকাশঃ (অফিস থেকে এসে দেখি সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমি সোজা রুমে এসে ফ্রেস হয়ে নিচে গেলাম। ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে পড়লাম। মা চলে গেল ডিনার সাজাতে সাথে মেঘলাও)
মেঘলাঃ (আমিও মার সাথে চলে এলাম)
মাঃ সবাই চলে এসো। খাবার রেডি,,
মেঘলাঃ (সবাই ডিনার করতে বসে পরলাম। কথাটা সবার সামনে বলতে হলে এখানেই বলতে হবে।) মা আমার একটা কথা ছিলো??(খাওয়া রেখে আমার দিকে তাকালো সবাই)
চলবে,,,,,,,