লেখিকাঃ Tahmina Toma
কালোবউ পর্ব ১৫
রুপঃ মিস্টার আকাশ চৌধুরী আমার বোনের যদি কিছু হয় আপনাকে আমি বুঝাবো প্রতিশোধ কাকে বলে??(আকাশের সামনে গিয়ে চাপা স্বরে)
আকাশঃ (রুপের কথা আমার কানে গেলেও মাথায় ঢুকেনি। আমার মাথায় একটা কথায় ঘুরছে সেটা হলো মেঘলা কোথায়? অনেক রাত হয়ে গেছে আর এই শহরে মেঘলা কিছু চিনে না। এক মুহুর্ত লেট না করে বেড়িয়ে আসতে গিয়ে আবার চাঁদের কাছে গেলাম) চাঁদ তোর কাছে মেঘলার ফোন নাম্বার আছে??
চাঁদঃ ( হা করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। বিয়ে হয়েছে কতদিন হয়ে গেলো সে কিনা বউয়ের নাম্বার আমার কাছে চাইছে)
আকাশঃ কী হলো হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?? থাকলে তাড়াতাড়ি দে।
চাঁদঃ তোর বউয়ের ফোন নাম্বার আমার কাছে চাইছিস??
আকাশঃ তোর বকবক শোনার টাইম নেই থাকলে দে।
চাঁদঃ দিচ্ছি,,,,,
আকাশঃ ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি চলে যা।(বেড়িয়ে এলাম আর লেট না করে মেঘলার নাম্বারে ফোন দিলাম। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। বাড়ির গার্ডের কাছে ফোন দিলাম।) হ্যালো,,,,,,,তোমাদের ম্যাডাম মানে মেঘলা বাসায় গেছে??
গার্ডঃ না স্যার আসেনি। কেন স্যার কী হয়েছে??
আকাশঃ কিছু না,,,,, মেঘলা বাসায় পৌঁছালে আমাকে ইনফর্ম করো।
গার্ডঃ ওকে স্যার,,,,,,,,
আকাশঃ কোথায় যেতে পারে??? ড্যামিট,,,,,এটা না করলেও পারতাম। মেয়েটা একটু বেশি ইমোশনাল বুঝা উচিত ছিলো। এত মানুষের সামনে অপমান হতে দিয়ে ঠিক করিনি। হোয়ার আর ইউ মেঘপরী?? এখন কোথায় খোঁজবো তোমায়?? মেঘপরী???(নিজেই অবাক হয়ে গেলাম)
মেঘলাঃ ফাংশন থেকে বেড়িয়ে এসেছি।ওখানকার মানুষের কথা সয্য হচ্ছিল না। তাই দৌড়ে বের হয়ে এসেছি। দু’হাতে চোখ মুছছি আর হাঁটছি। পায়ে হিল জুতা থাকায় হাটতে কষ্ট হচ্ছে। খোঁলে হাতে নিয়ে নিলাম। অন্ধকারে ভয় পাই কিন্তু এখন ভয় করছে না। মনে হচ্ছে এখন একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিলে ভালো হতো। এই বিষাক্ত জীবন থেকে মুক্তি পেতাম। কথায় আছে না,,,, বিয়ে সবসময় সমানে সমানে হওয়া উচিত নাহলে প্রতিনিয়ত ব্যবধানটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়। যার যন্ত্রণা তিলেতিলে মারে। এটাতো সত্যি আমি কোনদিক থেকে আকাশের যোগ্য নই। না আছে সৌন্দর্য আর না আছে যোগ্যতা। আমি সত্যি জানি না আপনার কী ক্ষতি করেছিলাম?? যার জন্য এই হৃদয়টাকে বারবার ক্ষতবিক্ষত করছেন। আপনিতো জানতেন আমি আপনার যোগ্য নই তাহলে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে বিয়ে কেন করেছেন? আপনার সত্যি পরিচয় জানলে আমি কখনোই এই বিয়ে করতাম না।
,,,,,,,,,,,
আকাশঃ যে অন্যায়ের পরিণাম সয্য করতে পারবে না সেটা করো কেন?? আমিতো ঠিক করেই নিয়েছিলাম তোমাকে কষ্ট দেবো না কিন্তু তুমিই আমাকে বাধ্য করছো। রুপের মতো না হলেই পারতে,,,,,। এখন কোথায় পাই তোমায়??আবার কল দিলাম এবার ফোন অফ আসছে। এবার আরো বেশী টেনশন হচ্ছে।
মেঘলাঃ বেড়িয়ে এসেছি অনেক সময় হলো। তখন ঝোঁকের বসে বেড়িয়ে এসেছি কিন্তু এখন মাথা ঠান্ডা হওয়ায় ভয় করছে। এখানে কিছুই চিনি না এখন বাসায় যাবো কীভাবে আমি? সবাই হয়তো চিন্তা করছে। চাঁদকে কল দেওয়ার জন্য ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখি অফ হয়ে গেছে। সামনে চার-পাঁচটা ছেলে দাড়িয়ে আছে এখন আরো ভয় করছে। তাদের পাশকাটিয়ে যাওয়ার সময় কেমন বাজে নজরে তাকাচ্ছিলো। দ্রুত হাটা শুরু করলাম ছেলেগুলো পিছনে আসতে শুরু করেছে।
,,,,,,,
আকাশঃ মেঘলার ফোনের লাস্ট লোকেশন ট্র্যাক করে জেনে নিলাম। যে রাস্তায় গেছে সেই রাস্তায় দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছি। ফোনটা বেশিক্ষণ আগে অফ হয়নি তাই হয়তো বেশীদূর যায়নি। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে ওর কিছু হয়ে গেলে ওর বাবা-মার কাছে কী জবাব দেবো?? আর আমি,,,,, ওকেতো আমি ভালোবাসি না তাহলে হারানোর ভয় কেন পাচ্ছি??
,,,,,ফিগার দেখেছিস ওফ কী লাগছে মাইরি,,,,
একা কোথায় যাচ্ছো মামুনি?? আমাদের সাথে চলো (পথ আটকে)
মেঘলাঃ আমাকে যেতে দিন প্লিজ,,,,,
,,,আরে যাবে তো ভয় পাচ্ছো কেন?? আমরা গিয়ে দিয়ে আসবো শুধু রাতটা আমাদের সাথে থাকো?? হাহাহা
মেঘলাঃ প্লিজ আমাকে যেতে দিন,,,,, আ,,,,আপনারা দরকার হলে এগুলো নিয়ে যান( ডায়মন্ডের জুয়েলারিগুলো দেখিয়ে) এগুলো অনেক দামী সব ডায়মন্ডের। আমি খোলে দিচ্ছি এগুলো নিয়ে যান তাও আমাকে যেতে দিন প্লিজ,,,,,
আরে বাস হিরা,,,,,,,
মেঘলাঃ হুম হ,,,,হিরা এগুলো নিয়ে নিন তাও আমাকে যেতে দিন প্লিজ (হাত জোড় করে)
এগুলোতো নিবোই সাথে তোমাকেও বেইবি,,,,,,,,,
মেঘলাঃ (কোন উপায় না দেখে লোভ দেখিয়েছিলাম তাও কাজ হলো না। এমন পরিস্থিতিতে কোনদিন পরিনি ভয়ে মাথা কাজ করছে না। শরীরে যেটুকু শক্তি ছিলো ভয়ে তাও মনে হয় শেষ হয়ে গেছে। পা পর্যন্ত নাড়াতে পারছি না। কী করবো এখন আমি? ধর্ষিতা হয়ে বাঁচতে পারবো না। সামনের ছেলেটার মেইন পয়েন্টে একটা লাথি মেরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড় দিলাম। সবাই ঐ ছেলেকে ধরেছে। গ্রাউন পরে দৌড়াতেও পারছি না ঠিক মতো।
আরে আমাকে ছেড়ে ঐ শা***কে ধর আজকে এর খবর করে ছাড়বো।
মেঘলাঃ( ঐ ছেলে বাদে বাকি চারটা ছেলে আমার পিছনে দৌড়ে ধরে ফেললো। একজন আমার এক হাত ধরতেই হিজাবের একটা পিন খোলে হাতে গেথে দিলাম। )
আহ্ ,,,,, আরে এটা কী মেয়ে নাকি??
মেঘলাঃ( এবার দুজন আমার দুহাত ধরে ফেলেছে। ছাড়াতে পারছি না।) ছেড়ে দে আমাকে। আমার কিছু করলে তোরা বাঁচতে পারবি না।
কে কী করবে আমাদের হাহাহা???? ধর্ষকের শাস্তি নেই এই দেশে।
মেঘলাঃ দেশের আইন কিছু না করলেও আমার ভাই-বোন তোদের টুকরো টুকরো করে ফেলবে।
হাহাহা কেউ কিছু করতে পারবে না,,,,,,,,
মেঘলাঃ( তবে কী সব শেষ হয়ে যাবে? ধর্ষিতা হয়ে বাঁচতে পারবো না খোদা হয় রক্ষা করো নাহয় ধর্ষিতা হওয়ার আগে মৃত্যু দাও। হিজাব খোলার জন্য হাত বাড়াতেই চোখ বন্ধ করে বিপদের দোয়া পড়ছি। কিছুক্ষণ পর চোখ খুললাম। লোকটার হাত আমার হিজাব ছুইছুই কিন্তু ছুঁতে পারনি কেউ হাতটা ধরে আছে। সামনে তাকিয়ে যেন জীবন ফিরে পেলাম।) আকাশ,,,,,,,(অস্ফুটস্বরে,,,, আকাশ দাঁড়িয়ে আছে এক হাত দিয়ে লোকটার হাত ধরেছে আর অন্যহাতে হকিস্টিক)
আকাশঃ খুলছিস না কেন খোল??
,,,এই কেরে তুই হাত ছাড়। সাহসতো কম না আমার হাত ধরেছিস?? জানিস আমি কে??
আকাশঃ বল জেনে নিচ্ছি কে তুই??(হকিস্টিক দিয়ে মারতে শুরু করলাম।)
মেঘলাঃ( আমি এখনো ভয়ে কাঁপছি। আকাশ সবকটাকে ইচ্ছে মতো মারছে।)
আকাশঃ (ইচ্ছে করছে সবকটাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলি। ইচ্ছে মতো পিটাইলাম সবকটাকে। সবগুলোর হাত ভেঙে দিলাম। মেইন পয়েন্টে ইচ্ছে মতো লাথি দিয়েছি তাও শান্তি হচ্ছে না কী করি??)
মেঘলাঃ (উনি কেমন পাগলের মতো আচরণ করছে?? )
আকাশঃ (ওহ্ আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম গাড়িতে গান আছে। গাড়ি থেকে গানটা নিয়ে এলাম)
মেঘলাঃ( উনি গাড়ি থেকে গান নিয়ে গুলি করার জন্য তাক করতেই দৌড়ে উনাকে আটকালাম।) ক,,,কী করছেন?? মেরে ফেললে পুলিশ আপনাকে ধরবে।(উনি আমার দিকে তাকাতেই ভয়ে উনার হাত ছেড়ে দিলাম। রাস্তার সোডিয়ামের আলোয় উনার রক্ত লাল চোখ ভয়ংকর লাগছে)
আকাশঃ( ইচ্ছে করছে এটাকেই খুন করি। কতবড় সাহস এতরাতে একা বের হয়ে আসছে। আমি না আসলে এখন কী হতো?? গাড়ি থেকে দেখেই ওকে চিনতে পেরে নেমে এসেছি,,, সময় মতো না এলে,,,,ভাবতে পারছি না। গান নামিয়ে একজনকে ফোন দিলাম।) রোজা কফি শপের পাশের গলিতে পাঁচটা জানোয়ার পড়ে আছে তোলে নিয়ে যাও। আগামীকাল হেডলাইনে এদের খবর দেখতে চাই আমি।
মেঘলাঃ(এখন ওদের থেকে বেশী উনাকে ভয় করছে আমার। উনার গম্ভীর ভাবটা আমি দেখেছি কিন্তু এতটা হিংস্ররুপ আমি দেখিনি)
আকাশঃ( ওর সাথে কোন কথা না বলে হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলাম ।)
মেঘলাঃ (আমার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর আমি যাচ্ছি। গাড়ির স্প্রিড দেখে আরো ভয় করছে। ১ ঘন্টার রাস্তা ১০ মিনিটে চলে এসেছি। গাড়ি থেকে নেমে আবার টেনে ভেতরে নিয়ে গেলো)
মাঃ কোথায় ছিলে বউমা?? ওকে কোথায় পেলি আকাশ??
আকাশঃ রাস্তায়,,,,,, রেস্ট নাও রাত অনেক হয়েছে।(না দাঁড়িয়ে হাটার ওপর বলে মেঘলাকে টেনে রুমে এনে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেললাম)
মেঘলাঃ( আমার কপালে আজ কী আছে আল্লাহ মালুম)
আকাশঃ কী মনে করো নিজেকে?? রানী ভিক্টোরিয়া নাকি রানী এলিজাবেথ?? যখন যা ইচ্ছে করবে আর আমি তোমার পাহারা দেবো। এটা ঢাকা শহর তোমার বাড়ি না। রাস্তায় মানুষের থেকে জানোয়ারের সংখ্যা বেশী। আর একটু পরে গেলে কী হতো ভাবতে পারছো??
মেঘলাঃ কী আর হতো?? রেপ করতো তারপর হয় মেরে ফেলতো বা না মেরে কোন রাস্তার ধারে ফেলে যেতো আত্মহত্যা করার জন্য। আমিও আত্মহত্যা করে নিতাম। আপনিও মুক্তি পেতেন আর আমিও।
আকাশঃ তোকে কেউ টাচ করার আগে আমি তাকে খুন করে ফেলবো(গাল চেপে ধরে) নাহয় তোকে খুন করে ফেলবো। আমি তোকে স্ত্রীর অধিকার দেই আর না দেই। তোর একটা লোমও আমি ছাড়া কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। তোকে আমি স্পর্শ করি আর না করি এটার অধিকার শুধু আমার থাকবে,,,,,,, বুঝেছিস?? আজ থেকে আমার অনুমতি ছাড়া যদি এক পাও কোথাও গিয়েছিস পা ভেঙে বেডে বসিয়ে রাখবো। কথাটা মনে রাখিস??(ধাক্কা দিয়ে ফেলে রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম)
মেঘলাঃ আচ্ছা আমার এখন খুশী হওয়া উচিত নাকি কষ্ট পাওয়া?? এই কথাগুলো উনি কেন বলেছেন??
চলবে,,,,,