.
লেখিকাঃ Tahmina Toma
কালোবউ পর্ব ১৭
আকাশঃ coming,,,,,,,,
মেঘলাঃ (ধীরপায়ে ভেতরে এলাম) আ,,,আপনার খাবার,,,,। মা পাঠিয়েছে (নিচের দিকে তাকিয়ে)
আকাশঃ (খুব সুন্দর লাগছে আমার পছন্দের রঙের শাড়ীতে। বিয়ের পরদিন সকালে মানা করার পর শুধু এই বাড়িতে আসার সময় ছাড়া আর শাড়ী পরেনি। কথাটা সত্যি শাড়ীতে নারী সুন্দর। বউ বউ লাগছে একদম) টেবিলে রাখো।
মেঘলাঃ (খাবারের বক্সটা টেবিলে রেখে যেতে লাগলাম।)
আকাশঃ আমি যেতে বলেছি???
মেঘলাঃ ন,,,না
আকাশঃ তাহলে যাচ্ছো কোন সাহস??
মেঘলাঃ সরি,,,,
আকাশঃ খাবারটা নিয়ে আমার সাথে এসো।(কেবিনের পাশে একটা রুম আছে। ছোট একটা খাবার টেবিল, দুটো চেয়ার, একটা বেড, সোফা, একটা ইজি চেয়ার আর একটা আলমারিতে কিছু ড্রেস রাখা ইমারজেন্সি প্রয়োজনের জন্য। বাবার যখন খারাপ লাগতো রেস্ট নিতো। মা বাবার জন্য খাবার নিয়ে এলে একসাথে খেতো। আমি ঐ রুমটায় খুব কম যাই। বাবাকে মিস করি ঐ রুমে। কথাগুলো ভেবে চেয়ার থেকে ওঠে দাঁড়াতেই ভাঙা ফোনটা চোখে পড়লো। বিষয়টাটা মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো। মুহুর্তে রাগে হাত মুঠো হয়ে এলো। না না এই ব্যাপারটা অন্যভাবে হ্যান্ডেল করবো রাগ দিয়ে নয়। অন্যের গায়ে পড়তে খুব ভালোলাগে তাই না মেঘপরী?? আজ আমিও দেখি তুমি কতটা সয্য করতে পারো।)
মেঘলাঃ(যেতে বলেও উনি বসে আছে। তাই আশেপাশে তাকিয়ে কেবিনটা দেখছি। অনেকটা বড় আর খোলামেলা। পেছনের দেয়ালটা কাঁচের,,,, বাইরের সব দেখা যাচ্ছে। একপাশে বেশ কয়েকটা সোফা। সোফার সামনে একটা টি-টেবিল। বড় চেয়ার টেবিলে আকাশ বসে আছে। একটা বুকশেলফে কিছু বই আর বেশির ভাগ ফাইল, একটা দরজা দেখা যাচ্ছে কিন্তু এটা কিসের দরজা? আমি মনে করেছিলাম অফিস মানে চারদিকের ফাইলের স্তুপ আর মাঝে দমবন্ধ জায়গায় উনি বসে কাজ করে। কিন্তু এটাতো অনেক গুছানো আর খোলামেলা)
আকাশঃ চলো,,,,,,
মেঘলাঃ হুম(সেই দরজা দিয়ে একটা রুমে নিয়ে এলো। রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো। টেবিলে দুটো প্লেট, পানির জগ আর গ্লাসও রাখা)
আকাশঃ খাবার সার্ভ করো আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।(ওয়াশরুমে চলে গেলাম)
মেঘলাঃ(উনার খাবার সার্ভ করে বসে আছি)
আকাশঃ তোমার খাবার কোথায়??
মেঘলাঃ আ,,,আমি বাসায় গিয়ে খাবো,,,,,,
আকাশঃ ওকে দেখা যাক। সব দেখছি আমার পছন্দের খাবার। কী ব্যাপার সকালেও আমার পছন্দের খাবার ছিলো এখনও??(আবার নিয়েও এসেছে আমার প্রিয় রঙের শাড়ী পড়ে??)
মেঘলাঃ আ,,আমি জানি না মা জানে??
আকাশঃ ওকে,,,,,খাইয়ে দাও,,,,,,,
মেঘলাঃ এ্যা,,,,,,ম,,,মানে???
আকাশঃ বুঝতে পারোনি?? বাংলায়তো বললাম।
মেঘলাঃ কিন্তু আ,,,আমি??
আকাশঃ যা বলছি তাই করো(ধমক দিয়ে)
মেঘলাঃহ,,,হুম(কাঁপা কাঁপা হাতে এক লোকমা উনার সামনে ধরলাম। উনি খাবার মুখে নিতেই আমি কেঁপে ওঠলাম)
আকাশঃ(খাবার মুখে নেওয়ার সময় ইচ্ছে করে ঠোঁট দিয়ে আঙুল স্পর্শ করেছি। এবার সয্য করো,,,, বারবার একই কাজ করছি)
মেঘলাঃ (এভাবে কাউকে খাওয়ানো যায়?? আমার সারা শরীর কাঁপছে)
আকাশঃ হা করো(ওর মুখের সামনে খাবার তোলে)
মেঘলাঃ(উনার হয়েছেটা কী?? আমাকে সেচ্ছায় খাইয়ে দিতে চাইছে??)
আকাশঃ কী হলো তাকিয়ে আছো কেন??
মেঘলাঃ (খাবার মুখে নেওয়ার শেষে উনি আমার ঠোঁট ছুয়ে দিলো। উনি কী ইচ্ছে করে এমন করছে??)
আকাশঃ (রাগে এসব করলেও কেমন অদ্ভুত শিহরণ হচ্ছে মনে। বারবার একই কাজ করছি।)
মেঘলাঃ (এটা কী খাওয়ানো নাকি অত্যাচার?? কী শুরু করেছে??) আ,,,,আমি আর খাবো না,,,,
আকাশঃ কেন ????
মেঘলাঃ এ,,,এমনি,,,,,
আকাশঃ চুপচাপ শেষ করো।
মেঘলাঃ( ওফ কোন ঝামেলায় পড়লাম?? কোনমতে খাওয়া শেষ হলে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।)
আকাশঃ তুমি গুছিয়ে নাও আমি ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে আসছি।
মেঘলাঃ(এখান থেকে তাড়াতাড়ি যেতে পারলে বাঁচি। তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে সব গুছিয়ে নিলাম।)
আকাশঃ(ওয়াশরুম থেকে এসে দেখি মেঘলা দাঁড়িয়ে সব গুছিয়ে নিচ্ছে। গুছানো প্রায় শেষ। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলাম।)
মেঘলাঃ(গুছানো প্রায় শেষ। হঠাৎ কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলে চোখ বড়বড় হয়ে গেছে। পারফিউমের জন্য বুঝতে বাকি রইলো না এটা আকাশ। উনার মাথা ঠিক আছে?? কী করছে আজ এসব?? আমার সারা শরীর কাঁপছে কিছু বলা বা করার শক্তি পাচ্ছি না। একচুল নড়তেও পারছি না। কথাগুলো গলায় আটকে আছে। বহু কষ্টে একটু আওয়াজ বের করলাম) ক,,,,,কী ক,,কছেন আপনি?? ছাড়ুন আমাকে,,,,
আকাশঃ কেন ভালো লাগছে না আমার স্পর্শ?? (এবার গলার তিলটায় একটা গভীর কিস করলাম।অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো রাগে এসব করলেও ইচ্ছেটা সত্যি ছিলো। আরো একটা কিস করলাম)
মেঘলাঃ (এবার আমি সেন্সলেস হয়ে যাবো নিশ্চিত। সারা শরীরে মনে হয় বৈদ্যুতিক শক লেগেছে। এটা উনার আমাকে করা প্রথম কিস। কিন্তু এসব কেন করছেন আপনি? এই বুকের আগুন আর বাড়িয়ে তোলেন না সেই আগুনে আপনিই পুড়ে ছাই হয়ে যাবেন।)
আকাশঃ(মেঘলা শুধু কেঁপে কেঁপে ওঠছে) কথা বলছো না কেন ??
মেঘলাঃ (মুখ দিয়ে কথা বের হলেতো বলবো??)
আকাশঃ (মেঘলার পিঠ আমার বুকে লেগে আছে। এবার একটা হাত শাড়ির ভেতর দিয়ে খালি পেটে রাখলাম। হাল্কা চেপে ধরলাম)
মেঘলাঃ আহ্ (পেটে হাত রখতেই বরফের মতো জমে গেছি। দম বন্ধ হয়ে আসছে। এখন মনে হচ্ছে মরেই যাবো।)
আকাশঃ কী হলো বলো?? ভালো লাগে না আমার স্পর্শ?? ( পেটে হাত বুলাচ্ছি আর হাল্কা হাল্কা চাপ দিচ্ছি। আমার নিশ্বাসও ভারী হয়ে আসছে। রাগ গিয়ে নেশা ভর করেছে মাথায়।)
মেঘলাঃ(চোখ বন্ধ করে ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছি। হাঁপানি রোগী হলাম নাকি??)
আকাশঃ (পেটে হাত বুলাচ্ছি আর গলার তিলটায় ইচ্ছে মতো কিস করছি। এখন আমি নিজের মধ্যে নেই। মেঘলা শুধু বরফের মতো দাঁড়িয়ে কাঁপছে। নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলাম। একহাত এখনো পেটে আর এক হাত গালে রেখে তাকিয়ে আছি মেঘলার দিকে। ঠোঁট গুলো প্রচন্ড কাঁপছে। আস্তে আস্তে আমার ঠোঁটের একদম কাছে নিয়ে এলাম। ছুঁই ছুঁই করছে আমাদের ঠোঁট। দুজনের নিশ্বাস একে-অপরের মুখে এসে লাগছে।)
মেঘলাঃ( হঠাৎ কী হলো জানি না?? উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।)
আকাশঃ (যেই ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবাতে যাবো তখনই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। রাগে আমি কাঁপছি। ওর কাছে গিয়ে চুলের মুঠি ধরে আমার বরাবর মুখ আনলাম) সয্য হয় না আমার স্পর্শ?? আমার স্পর্শ ভালো লাগবে কেন তোর?? পুরনো স্পর্শ পেয়ে এসেছিস যে।
মেঘলাঃ (আমি এমন করতে চাইনি কেন করেছি নিজেই বুঝতে পারছি না। কিন্তু উনি এসব কী বলছে?? কীসের পুরনো স্পর্শের কথা বলছেন উনি??) ক,,,কী বলছেন এসব??
আকাশঃ বুঝতে পারছিস না তাই না?? (আরো শক্ত করে ধরলাম)
মেঘলাঃ আহ্ লাগছে ছাড়ুন,,, এসব কী বলছেন আপনি??
আকাশঃ আমারও লেগেছে যখন প্রথম সেই কথাগুলো শুনেছিলাম, প্রমানগুলো আমার সামনে ছিলো।
মেঘলাঃ কীসের কথা বলছেন আপনি??
আকাশঃ কিছু না,,,,তুই আমার সামনে থেকে যা এখন।(ছেড়ে দিয়ে)
মেঘলাঃ (চলে এসেছি উনার সামনে থেকে। কীসের কথা বলছেন উনি?? কোন প্রমাণের কথা বলছেন ?? বাসায় চলে এসেছি,,, কিন্তু মাথায় একটা কথায় ঘুরছে কী করেছি আমি?? কী?? ভাবছি আর দুহাতে চোখ মুছচ্ছি। এতো বাজে ব্যবহার করতে পারলো।)
আকাশঃ (মেঘলা চলে গেলে ইজি চেয়ারে বসে পড়লাম। ভালো লাগছে না কিছু,,, কী করবো?? গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে এলাম অফিস থেকে। একটা নদীর কাছে এসে,,, গাড়ি রাস্তায় রেখে নদীর পার ধরে হেটে একটু ভেতরে চলে এলাম। একটা গাছের নিচে বসে নদীর পানিতে ঢিল ছুঁড়ছি। মেঘলা যদি সত্যি কিছু করে থাকে আমার মুখে এসব কথা শুনে ভয় পাওয়ার কথা কিন্তু ও কিছু বুঝতেই পারেনি এটা কী করে হতে পারে?? ও কী অভিনয় করছে আমার সামনে?? কিন্তু মানুষের চোখ মিথ্যা বলতে পারে না। ওর চোখে তখন ভয় নয় বিস্ময় ছিলো। তবে কী আমি ভুল বুঝছি মেঘলাকে?? কিন্তু প্রমাণগুলোত আমি যাচাই করে দেখেছি তাহলে?? আর ভাবতে পারছি না। আমি আবার সব যাচাই করবো।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং
,,,,,হ্যালো বস
আকাশঃ একটা কাজ দিচ্ছি খুব ভালোভাবে করবি। একটু এদিক ওদিক হলে তোকে আর কেউ খোঁজে পাবে না,,,,,মনে রাখিস।
,,,,ওকে বস কাজ হয়ে যাবে
আকাশঃ,,,,,,,,,,,,,,,,,, বুঝতে পারছিস??
,,,,,,,জি বস
আকাশঃ আগামীকাল থেকে কাজ শুরু করে দে।
,,,,,,ওকে বস
আকাশঃ(ফোন রেখে দিলাম। প্রমাণ পাওয়ার আগে আর মেঘপরীকে কষ্ট দেবো না।আবার অফিসের দিকে গেলাম)
ক্রিং ক্রিং ক্রিং
মেঘলাঃ হ্যাঁ আপু বলো,,,
রুপঃ কেমন আছিস??
মেঘলাঃ আলহামদুলিল্লাহ,,,, তুমি??
রুপঃ আমিও আলহামদুলিল্লাহ। কী করিস??
মেঘলাঃ কিছু না দোলনায় বসে আছি,,,তুমি??
রুপঃ আমি একটু ছাদে আছি,,,,,
মেঘলাঃ ওহ্
(কিছুক্ষণ চুপ থেকে)
রুপঃ মেঘমনি আপুকে একটা সত্যি কথা বলবি??
মেঘলাঃ এভাবে বলছো কেন আপু?? তুমি বলো কী কথা??
রুপঃ আকাশের সাথে বিয়ের আগে কারো সাথে তোর রিলেশন ছিলো??
মেঘলাঃ তুমি আমাকে চেনো আপু আমি এসব পছন্দ করি না।
রুপঃ সত্যি ছিলো না??
মেঘলাঃ তুমি আমায় বিশ্বাস করতে পারছো না আপু?? কী এমন হয়েছে?? তুমি এমন প্রশ্ন করছো আবার আমাকে বিশ্বাস করতে চাইছো না??
রুপঃ আরে তেমন কিছু না। আমিতো জানি তুই নিজের কষ্ট হলেও কাউকে বলিস না। আমি আমার ভালোবাসার মানুষ নিয়ে সুখে আছি।(কথাটা বলতেই চোখ ভরে ওঠলো পানিতে। সত্যি কী সুখে আছি??) আমার বোন ভালোবাসা হারিয়ে কষ্টে নেইতো?? সেটা জানার জন্য জিজ্ঞেস করলাম।
মেঘলাঃ তোমার মতো যদি সবাই আমাকে ভালোবাসতো আপু,,,,,
রুপঃ সবাই তোকে ভালোবাসে পাগলি।
মেঘলাঃ হুম (মলিন হেসে) আপু একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। সজীব নামের একটা ছেলে(সব খোলে বললাম আপুকে)
রুপঃ ওকে,,,, ওর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবি।
মেঘলাঃ ওকে আপু।
রুপঃ এখন রাখছি,,,, ভালো থাকিস,,, আল্লাহ হাফেজ।
মেঘলাঃ আল্লাহ হাফেজ।
আকাশঃ (আজ আর কাজে মন বসাতে পারলাম না। আগেই চলে এলাম অফিস থেকে। মেঘলা রুমে নেই। আবার বেলকনিতে দোলনায় ঘুমিয়ে আছে। এই মেয়ের কী এত সুন্দর বেডটা পছন্দ হয়না?? যখনি দেখো দোলনায় ঘুমিয়ে থাকে। কোলে করে বেডে শুইয়ে দিয়ে শাওয়ার নিয়ে এলাম। রুমে এসে দেখি মেঘলা বেডে বসে আছে। ঘুম ভেঙে গেছে)
মেঘলাঃ (উনি কোলে নিতেই ঘুম থেকে গেছে কিন্তু ওঠিনি। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আমি বেড থেকে নেমে রুমের বাইরে যেতে লাগলাম)
আকাশঃ(ও কী আমায় ইগনোর করতে চাইছে?? হাত ধরে টান দিয়ে বুকে এনে ফেললাম)
মেঘলাঃ(সেই প্রথম দিনের ফিলিংস। ভেজা বুকে আমার গাল লেগে আছে)
আকাশঃ বলেছিলাম না আমাকে ইগনোর করার চেষ্টাও করো না।
মেঘলাঃ আ,,আমিতো নিচে যাচ্ছি,,, মাকে হেল্প করতে।
আকাশঃ চুপচাপ বেডে বসে থাকো আমার সাথে যাবে??
মেঘলাঃ (শয়তানের মুখে আল্লাহর নাম। আমি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বেডে বসে উনার রেডি হওয়া দেখছি। তারপর উনার সাথে নিচে এলাম)
ডাইনিং টেবিলে,,,,,,
আকাশঃ মা আগামীকাল বাড়িতে পার্টি আছে।
চলবে,,,,,