কালো বউ পর্ব ২৬
Kobitor.com এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ
লেখিকাঃ Tahmina Toma
.
ক্রিংক্রিংক্রিং
মেঘলাঃ আননোন নাম্বার এটা আবার কে??হ্যালো,,,,,
রুপঃ মেঘমনি আমি,,,,,,
মেঘলাঃ আপু তুমি,,,,, কিন্তু এটা কার নাম্বার??
রুপঃ আমার শাশুড়ি মায়ের।
মেঘলাঃ তোমার ফোন কোথায়?? কোন প্রবলেম হয়েছে আপু??
রুপঃ আরে কিছু হয়নি। আসলে আমি হাসপাতালে ফোনটা বাসায় রয়ে গেছে।
মেঘলাঃ হাসপাতালে,,,,,, তুমি হাসপাতালে কেন?? কী হয়েছে তোমার??
রিয়াদঃ (রুপ হাসপাতালে এটা শুনে বুকটা ধক করে ওঠলো। কী হয়েছে ওর?? গাড়ি থামিয়ে দিলাম) কী হয়েছে মেঘ??
মেঘলাঃ জানি না,,,ওয়েট আগে জিজ্ঞেস করে নি। কী হয়েছে আপু??
রুপঃ তুই খালামুনি হচ্ছিস(মিষ্টি হেঁসে)
মেঘলাঃ সত্যি,,,,,?
রুপঃ হুম সত্যি,,,,,,,,,
মেঘলাঃ আলহামদুলিল্লাহ,,,, ইয়াহু,,,, ডিংগা চিকা,,,,,
রিয়াদঃ কী হয়েছে নাচছিস কেন??
মেঘলাঃ আমি খালামুনি হচ্ছি আর তুমি মামা,, কী মজা।
রিয়াদঃ সত্যি,,,??
মেঘলাঃ হুম,,,,, চলো ভার্সিটি যাবো না আপুর কাছে যাবো,,,, আপু কোন হাসপাতাল???
রুপঃ পাগলি একটা,,, ঢাকা মেডিকেল।
মেঘলাঃ ওকে,,,, এখনই আসছি,,,,,
রিয়াদঃ ( তোমার জীবনের সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত আজ। আমি চাই না আমার জন্য তুমি মন খারাপ করো। যাবো না তোমার সামনে।) ওকে তোকে নামিয়ে দিয়ে আসছি,,,,
মেঘলাঃ কেন তুমি যাবে না???
রিয়াদঃ না রে আমার হাসপাতালে একটা ইমারজেন্সি পেসেন্ট আছে।
মেঘলাঃ ওকে,,,,,, দাড়াও লিজাকে জানিয়ে দেই আমি আসবো না। নাহলে অপেক্ষা করবে।
রিয়াদঃ হুম( না আর রুপের কথা ভাববো না। রুপ আমার অতীত। এখন থেকে আমার জীবনে শুধু লিজা থাকবে)
আকাশঃ অনেক সময় ভার্সিটির সামনে দাড়িয়ে থাকলাম কিন্তু মেঘপরীর দেখা নেই৷ আজ কী আসেনি?? লিজার নাম্বার হয়তো আছে। মেঘলা ফোন দিয়েছিলো আমার ফোন দিয়ে। খোঁজে পেয়ে গেলাম)
ক্রিংক্রিংক্রিং
লিজাঃ আসসালামু আলাইকুম,,,, কে??
আকাশঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম,,, লিজা আমি আকাশ।
লিজাঃ ওহ্ কিছু বলবেন??
আকাশঃ মেঘলা আজকে ভার্সিটি আসেনি??
লিজাঃ নাহ্ ,,,,,,,,,, রুপ আপু প্রেগনেন্ট,,, আপুকে দেখতে হাসপাতালে গেছে।
আকাশঃ আলহামদুলিল্লাহ,,,, কোন হাসপাতাল??
লিজাঃ ঢাকা মেডিকেল,,,,,,, কিন্তু এসব জেনে আপনি কী করবেন??
আকাশঃ কিছু না,,,,, ভালো থেকো আল্লাহ হাফেজ।
লিজাঃ আল্লাহ হাফেজ।
মেঘলাঃ (রিয়াদ ভাইয়া হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেলো। দৌড়ে ভেতরে চলে গেলাম,,,,আপুকে জড়িয়ে ধরলাম।) আপু পুচকেটা কবে আসবে??
রুপঃ যখন সময় হবে(মুচকি হেঁসে)
মেঘলাঃ(আপুকে ছেড়ে আপুর সামনে বসলাম) তুমি জানো আপু আমি এতোগুলা খুশি। সকাল সকাল কী নিউজটা দিলে। আজকে সকালে ওঠে যার মুখ দেখেছিলাম ইচ্ছে করছে তার মুখে একটা চুমু খাই। ( আজকে সকালেতো আকাশের মুখ দেখেছিলাম। ছি কী বললাম??)
রুপঃ পাগলি একটা,, (মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে মিষ্টি হেঁসে)
মেঘলাঃ দুলাভাই কোথায়???
রুপঃ ও একটু ব্যস্ত অফিসে আছে(হাসার চেষ্টা করে)
মেঘলাঃ আসুক আজকে ইচ্ছে মতো বকে দিবো। বেবির থেকে কাজ বেশি??
রুপঃ (কী করে তোকে বলবো রে বোন?? ওর কাছে আমার বা আমার বেবির কোন মুল্য নেই)
মেঘলাঃ মামা-মামী জানে??
রুপঃ না তোকেই প্রথম বললাম।
মেঘলাঃ এখনই বলো,,,, দেখবে নাচতে নাচতে চলে আসবে হিহিহি।
রুপঃ হুম বলছি(বাবা মাকে ফোন করে বললাম। মা তো খুশিতে কান্না করে দিছে। বললো এখনই আসছে) মা,,,,,, মেঘমনি এখন আমার কাছে আছে আপনি এখন একটু বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসুন। সেই কাল সকাল থেকে এখানেই আসেন।
রুপের শাশুড়ীঃ না বৌমা আমি ঠিক আছি।
মেঘলাঃ আন্টি আপনি যান আমি আছি তো।
রুপঃ জান না মা,,,,
রুপের শাশুড়ীঃ আচ্ছা আমি একটু ফ্রেস হয়েই চলে আসবো।
মেঘলাঃ আপনি রিলাক্স থাকুন ,,,,,,, বিকেলের আগে আমি যাচ্ছি না।
রুপের শাশুড়ীঃ আচ্ছা মা তুমি থাকো আমি আসছি।
মেঘলাঃ (আন্টি যেতেই আপুর সাথে গল্পে মেতে উঠলাম। বেবির জন্য এটা করবো ওটা করবো আরো নানা গল্প। সব বেবিকে নিয়ে)
রুপঃ মেঘমনি একটা কথা বলি??
মেঘলাঃ আরে অনুমতি কেন নিচ্ছো?? বলো না,,,,,,
রুপঃ আকাশকে মাফ করে দে। ও সত্যি তোকে ভালোবাসে। ও তোর সাথে যা করেছে তার জন্য আমি দায়ী। আমাকে যদি মাফ করতে পারিস তাহলে ওকে কেন করতে পারছিস না। ওকে শাস্তি দিলে আমারও শাস্তি প্রাপ্য। দেখ মেঘ আকাশ কখনো আমাকে ভালোবাসেনি। আমি ছিলাম ওর মোহ মাত্র। যা সময়ের সাথে কেটে গেছে। কিন্তু ও তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে। তুই যখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিলি মৃত্যু যন্ত্রণা যেন আকাশ ভোগ করছিলো। ওকে আমি চিনি মেঘ। ওর জীবনে কখনো মেয়েদের জন্য দুটো মিনিট সময় ছিলো না আর তোর জন্য জীবনটাই দিতে রাজি। ভুল করিস না মেঘ। সময় থাকতে কাছে টেনে নে। পরে যাতে পস্তাতে না হয়।
মেঘলাঃ (ভুল কিছুতো বলেনি আপু। আকাশ আমার সাথে যা করেছে তার জন্য আপুই বেশি দায়ী। শুধু আকাশকে শাস্তি দিচ্ছি আমি।) আমি চেষ্টা করবো আপু,,,,,,
রুবি(রুপের মা) রুপ,,,,,,,,,,,
রুপঃ (মায়ের ডাক শুনে দরজার দিকে তাকালাম। চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে। আজ তিনটা বছর পর মাকে দেখলাম। সেদিন বাবার কাছে মাফ চাওয়ার পর শুধু ফোনে কথা বলেছিলাম মার সাথে। দেখা করতে পারিনি। আমার মা টা কতো শুকিয়ে গেছে। মা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো) মা,,,,,,,
রুপের মাঃ এতো শুকিয়ে গিয়েছিস কেন মা??
রুপঃ তুমিও তো শুকিয়ে গেছো।
রুপের মাঃ এখন মা হবি তো। বুঝতে পারছি সন্তান দূরে থাকলে মায়ের কেমন লাগে। তিনটা বছর মেয়ের মুখে মা ডাক শুনতে পায়নি। আমি জানি আমার বুকটা কেমন করেছে।
রুপঃ সরি মা,,,,,(মা কেঁদেই যাচ্ছে)
আবিদঃ কেমন আছিস মা??
রুপঃ ভালো আছি বাবা,,,,,,
আবিদঃ আমার সেই ছোট্ট রুপটা কতো বড় হয়ে গেছে,,,দেখেছো রুবি,,,,, আজ তাকেই আবার কেউ মা বলে ডাকবে,,,,,,(রুপকে বুক জড়িয়ে)
রুবিঃ হুম,,,,,,,(কান্না মুখে হেঁসে)
আবিদঃ জামাই কোথায় রুপ??
রুপঃ ও তো অফিসে(মাথা নিচু করে),,,, কাজের অনেক চাপ তাই,,,,,
আবিদঃ থাক,,,,,,, নিজের সন্তানের থেকে কাজ বেশি?? যখন তোমার মা নিলার আসার সুখবর দিয়েছিলো কোটি টাকা প্রজেক্টের মিটিং ছেড়ে ছোটে চলে গিয়েছিলাম হাসপাতালে।
রুপঃ(আর কতো লজ্জিত করবে আমাকে রবিন?? আর কত নিচে নামবে তুমি বলতে পারো??)
আবিদঃ তোমার সাথে কেউ আসেনি??
রুপঃ মা ছিলো,,,, গতকাল সকাল থেকে মা হাসপাতালে আছে তাই মেঘলা এসেছে বলে মাকে জোর করে একটু বাসায় পাঠিয়েছি ফ্রেস হতে।
আবিদঃ আচ্ছা তোমরা থাকো আমি একটু ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসি।
রুপঃ(এখন কী হবে?? ডাক্তার যদি বাবাকে বলে দেয় শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন। নিশ্চিত খুন করে ফেলবে রবিনকে। বাবা যে কোনদিন একটা ফুলের টোকাও গায়ে লাগতে দেয়নি। এখন যদি জানে তার আদরের মেয়ের এমন অবস্থা। আমি চাই না রবিনের এমন আচরণের কথা কেউ জানুক। কিছু একটা করতে হবে।) বাবা তোমার যেতে হবে না। একটু পর ডাক্তার এমনিতেই আসবে তখন কথা বলে নিয়ো। এখন একটু বসো না আমার পাশে।
আবিদঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
রুপঃ(বাবা আমার পাশে বসে মার সাথে আমাকে নিয়ে কথা বলছে। সেই সুযোগে নার্সকে ইশারায় ডেকে বুঝিয়ে নিলাম যাতে ডাক্তার বাবাকে আঘাতের চিহ্নের কথা কিছু না বলে। নার্স হয়তো আমার অবস্থাটা বুঝতে পেরেছে। অদ্ভুতভাবে আমার দিকে একটু তাকিয়ে রাজি হলো ডাক্তারকে সে বুঝিয়ে বলতে। নার্স ডাক্তারকে ডাকতে গেলো)
মেঘলাঃ( নার্সের সাথে আপু কী যেন বললো?? কিছু একটা প্রবলেম আছে। কী সেটা বুঝতে পারছি না??)
রুপঃ কী ভাবছিস মেঘমনি??
মেঘলাঃ কিছু না আপু,,,,,
ডাক্তারঃ হ্যালো মিস্টার আবিদ খান,,,,,
আবিদঃ হ্যালো,,,,, ডাক্তার আমার মেয়ের কী অবস্থা??
ডাক্তারঃ এমনিতে সব ঠিকই আছে কিন্তু উনার শরীর খুবই দূর্বল। হয়তো ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করে না আর কিছু নিয়ে চিন্তা করে। এভাবে চললে মা আর বেবি দুজনেরই অনেক সমস্যা হবে।
আবিদঃ এমন কিছু আর হবে না।
ডাক্তারঃ ঠিক আছে তাহলে ঠিকমতো দেখাশোনা করবেন। উনাকে সাতদিন এখানে রাখতে হবে। নিয়ে যেতে পারেন যদি প্রপার দেখাশোনা করতে পারেন।
রুবিঃ আমি আমার মেয়েকে নিয়ে যাবো আর দেখাশোনাও করবো।
আবিদঃ কিন্তু ওর শশুর বাড়ির মানুষ নিতে দেবে??
রুপের শাশুড়ীঃ আপনাদের মেয়ে আপনারা নিবেন এতে মানা করার কী আছে??( আমার কাছে রাখলে শুধু আমি ওর খেয়াল রাখতে পারবো কিন্তু আপনাদের কাছে থাকলে সবাই খেয়াল রাখবেন। ভালো থাকবে আমার বৌমা আর নাতি/নাতনি। নিজের ছেলেকে যে বিশ্বাস করতে পারি না।) আর বৌমা অনেকদিন আপনাদের বাড়ি যায়না ওরও ভালো লাগবে। এখন ওকে যতো হাসিখুশি রাখা যায় তত ভালো।
রুবিঃ ধন্যবাদ আপা,,,,,
রুপের শাশুড়ীঃ কী যে বলেন??
ডাক্তারঃ তাহলে বিকেলে নিয়ে যেতে পারেন। আমি কিন্তু আপনাদের ভরসায় উনাকে ছাড়ছি। দেখে রাখবেন,,,,
আবিদঃ অবশ্যই,,,,
,,,,,,
আকাশঃ এই মেয়ে যেহেতু রুপের কাছে গেছে বিকেলের আগে আসবে না। ততক্ষণে আমি অফিসের কাজ শেষ করে আসি। অফিসে চলে গেলাম।
বিকেলে
মেঘলাঃ(আপুকে ধরে দাড়িয়ে আছি। মামা পার্কিং থেকে গাড়ি আনতে গেছে। মামি আগেই বাড়ি চলে গেছে আপুর রুম ঠিকঠাক করে রাখতে। এতদিন পর মেয়ে আসছে বলে কথা। আপুর শাশুড়ী চলে গেছেন তার বাসায়। দাঁড়িয়ে আপুর সাথে কথা বলছি তখনই একটা পিচ্চি কিসের একটা গিফট বক্স দিলো হাতে) এটা কী?? আমাকে কেন দিচ্ছো??
,,,,,একটা ভাইয়া আপনাকে দেখিয়ে দিতে বললো।
মেঘলাঃ তোমার হয়তো ভুল হচ্ছে,,, অন্যকাউকে দিতে বলেছে হয়তো,,,
,,,,,,না আপনাকেই দিতে বলেছে
মেঘলাঃ কোন ভাইয়া,,,,?? আরে বলে যাও,,,,যাহ্ চলে গেলো। কী গো এটা আপু??
রুপঃ আমি কীভাবে বলবো?? বাসায় গিয়ে দেখিস।
আবিদঃ মামুনি(মেঘলা) রুপকে নিয়ে গাড়িতে ওঠো সাবধানে,,,
মেঘলাঃ হুম উঠছি,,,,,,,, (গাড়ির জানলা দিয়ে বক্সটা ভিতরে রেখে গাড়িতে উঠলাম আপুকে নিয়ে। গাড়িতে ওঠে বসতেই সামনে তাকিয়ে আমি অবাক। আকাশ এখানে কী করছে??)
চলবে,,,,,,,,,,