কালো বউ পর্ব ২৯
Kobitor.com এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ
লেখিকাঃ Tahmina Toma
.
মেঘলাঃ এটা আপনার সাজেক??
আকাশঃ নাহ্ ,,,,,,,, এখানে একটু বসি তারপর রওনা দেবো।
মেঘলাঃ ওহ্ ,,, কিন্তু বাড়ির সবাই তো চিন্তা করবে।
আকাশঃ করলে করবে,,,, সমস্যা কী??
মেঘলাঃ(চোখ ছোটছোট করে তাকালাম উনার দিকে)
আকাশঃ ওকে ডিয়ার,,,,, সকালে কল দিয়ে বলে দিবো তুমি আমার সাথে আছো। এখন চলো রওনা দেওয়া যাক।
মেঘলাঃ হুম,,,,
আকাশঃ (বন্ধুদের সাথে দেশের প্রায় সবগুলো পর্যটন কেন্দ্রে অনেকবার যাওয়া হয়েছে। সাজেকও অনেকবার গিয়েছি। তাই পাহাড়ি রাস্তায়ও ড্রাইভ করতে পারি। যেতে শুরু করলাম সাজেকের দিকে। মেঘলা একটু পরই ঘুমিয়ে পড়েছে। সারারাত ড্রাইভ করে সকালে খাগড়াছড়ি শহরে পৌছালাম। সারারাত ড্রাইভ করে আমার অবস্থা খারাপ। এভাবে সাজেক পৌঁছাতে পারবো না। অন্যবার ফ্রেন্ডদের সাথে এলে পালাক্রমে চেঞ্জ করে ড্রাইভ করেছি তাই কষ্ট হয়নি।) মেঘপরী উঠো,,,,, (আস্তে করে ডাক দিলাম)
মেঘলাঃ এসে পড়েছি,,,,,??
আকাশঃ নাহ্ এখনো অনেক দেরি। এখন উঠো ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে নেই।
মেঘলাঃওহ্ ,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,
রুবিঃ কী ব্যাপার,,, মেঘলাতো প্রতিদিন ওঠে নামাজ পড়ে কিচেনে আসে আজ এলো না কেন?? মেয়েটা আবার অসুস্থ হলো নাকি? আমেনা,,,,,,,,
আমেনা(সার্ভেন্ট) জী খালাম্মা,,,,
রুবিঃ মেঘলা এখনো ওঠলো না,,,, দেখতো আবার অসুস্থ হলো নাকি???
আমেনাঃ আচ্ছা খালাম্মা,,,,,
রুবিঃ মেয়েটা ভার্সিটি যাবে না নাকি??
আমেনাঃ খালাম্মা মেঘলা আপা এখনো দরজা খুলেনি। অনেকক্ষণ ডাকলাম কোন সাড়াশব্দ নেই।
রুবিঃ কী বলছিস,,,,,,,,
আমেনাঃ জী খালাম্মা,,,,,,,
রুবিঃ রিয়াদ,,,,,,,,,,
রিয়াদঃ হা মামণি কী হয়েছে??
রুবিঃ মেঘলা এখনো ওঠেনি,,,,, আমেনা অনেকবার ডেকেছে কোন সাড়াশব্দও নাকি নেই।
রিয়াদঃ( আর না দাঁড়িয়ে মেঘলার রুমের সামনে দৌড়ে এলাম।) মেঘলা,,,,,, দরজা খোল,,,,,, মেঘলা,,,,,,
রুবিঃ দরজা ভেঙে ফেল রিয়াদ। মেয়েটা আবার কিছু করে বসলে ওর বাবা মাকে কী জবাব দেবো??
রিয়াদঃ তুমি শান্ত হও মামণি আমি দেখছি। (কয়েকটা ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙে ফেললাম। মেঘলা কোথায়?? সারা রুম খোঁজেও মেঘলাকে পেলাম না।) মামণি মেঘলা কোথায়??
রুবিঃ আমি কিছুই বুঝতে পরছি না।
রিয়াদঃ (বেলকনিতে গিয়ে মই দেখে বুঝতে পারলাম মেঘলা পালিয়ে গেছে। কিন্তু পালিয়ে যাবে কেন?? কোথাও যাওয়ার হলে বলতে পারতো নিজে নিয়ে যেতাম। আকাশ নয়তো,,,,,,,???? মেঘলার ফোনে কল দিলে রুমেই বেজে ওঠলো।)
রুপঃ কী হয়েছে মা??
রিয়াদঃ(রুপের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। আগের থেকে অনেক শুকিয়ে গেছে)
রুবিঃ মেঘলা রুমে নেই,,,,,,, বেলকনিতে মই রাখা,,,। ফোনটাও রুমে রাখা।
রুপঃ(আকাশের নাম্বারে কল দিলাম)
ক্রিংক্রিংক্রিং
আকাশঃ হ্যালো,,,,,,,
রুপঃ মেঘমনি কোথায়??
আকাশঃ oh Misses Mirja,,, congratulation,,,,
রুপঃ মেঘমনি কোথায়???
আকাশঃ আমার সাথে,,,,
রুপঃ তুমি কোথায়,,,,,??
আকাশঃ খাগড়াছড়ি শহরে,,,,,
রুপঃ whatt,,,,,,,,,তুমি মেঘমনিকে ওখানে নিয়ে গিয়ছো কেন??
আকাশঃ হানিমুনে যাওয়ার জন্য,,,,,
রুপঃ Whatt,,,,,,,, মেঘমনি কোথায়???
আকাশঃ ফ্রেস হতে গেছে,,,,
রুপঃ এখনই মেঘমনির কাছে ফোন দাও।
আকাশঃ ওহ্ বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা,,,,ওকে,,, মেঘপরী,,,,,,
মেঘলাঃ হুম কী হয়েছে??
আকাশঃ তোমার আপু কথা বলবে নাও,,,,,
মেঘলাঃ হ্যাঁ আপু,,,,,,,
রুপঃ তুই আকাশের সাথে কী করছিস??
মেঘলাঃ উনি রাতে নিয়ে এসেছে।
রুপঃ নিয়ে গেলো আর তুই চলে গেলি।
মেঘলাঃ আমি ইচ্ছে করে এসেছি নাকি,,, ব্লাক মেইল করে নিয়ে এসেছে।
আকাশঃ (এই মেয়েতো ফাঁসিয়ে দিলো)
রুপঃ বিকেলের আগে তোকে যেন বাসায় দেখতে পাই।
মেঘলাঃ মানে,,,,,,,???
রুপঃ বিকেলের আগে যদি তোকে বাসায় না দেখি খবর আছে। কাউকে না বলে চলে গেছিস। তোর বাবা-মাকে কী বলবো আমরা?? তাদের অনুমতি ছাড়া কীভাবে গেলি তুই?? আমরা ফুপা-ফুপিকে আসতে বলছি তারপর তাদের অনুমতি নিয়ে যেখানে ইচ্ছে যাস।
মেঘলাঃ আপু,,,,,,যাহ্ রেখে দিলো,,,,
আকাশঃ কী হয়েছে,,,,??
মেঘলাঃ বিকেলের আগে বাসায় পৌঁছাতে বলেছে। আব্বা-মাকে না জানিয়ে আসা সত্যি উচিত হয়নি। আমি আপনাকে মাফ করে দিলেও আব্বা মা আপনাকে মাফ করেনি তাই এভাবে আসা ঠিক হয়নি।
আকাশঃ হুম,,,,,, চলো
মেঘলাঃ কোথায়,,,,,,,,,,,,,,,,??
আকাশঃ বাসায় চলো,,,(মেঘলার হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে বসালাম) কী হলো মন খারাপ কেন??
মেঘলাঃ সাজেকের এতো কাছে এসেও না দেখে ফিরে যেতে হচ্ছে।
আকাশঃ মন খারাপ করো না মেঘপরী আবার নিয়ে আসবো কয়দিনের মধ্যে। সত্যি এভাবে সমস্যার সমাধান না করে আশা ঠিক হয়নি,, আমার আগে বুঝা উচিত ছিলো। তবুও তুমি চাইলে বাসায় না গিয়ে সাজেক যাবো। বলো কোথায় যাবে??
মেঘলাঃ না বাসায় চলুন,,,,
আকাশঃ ওকে বাট মন খারাপ করে থাকতে পারবে না।
মেঘলাঃ ওকে (হাসার চেষ্টা করে। আসলে আমার অনেক দিনের শখ সাজেক যাওয়ার। এতো কাছে এসেও না দেখে যেতে হচ্ছে খারাপ লাগছে।)
আকাশঃ বললাম তো নিয়ে আসবো। এখন মন খারাপ করে থাকতে কিন্তু সাজেকই যাবো। সবাই যা ইচ্ছে করুক।
মেঘলাঃ না না বাসায় চলুন। আমি মন খারাপ করছি না।
আকাশঃ ওকে আগে হাসো,,,,,,
মেঘলাঃ এমন-ই এমন-ই হাসা যায় নাকি।
আকাশঃ(একটু ভেঙানোর চেষ্টা করলাম যাতে মেঘলা হাসে। ওর মুখ ভার দেখতে ভালো লাগছে না)
মেঘলাঃ হাহাহাহা,,,,, আপনাকে দেখতে কেমন লাগছে,,,,,,
আকাশঃ এইতো গুড গার্ল,,,,,,,,, তোমাকে হাসানোর জন্য জোকারও সাজতে রাজি। এখন যাওয়া যাক,,,
মেঘলাঃ(অবাক হয়ে দেখছি আকাশকে। এটা কী সত্যি সেই আকাশ?? সেই আকাশের সাথে কোন মিল খোঁজে পাচ্ছি না। সত্যি গায়ের রঙটাই শুধু ফুপির মতো পাইনি আজ মনে হচ্ছে কপালটাও ফুপির থেকে কম না। এত সুখ সইবে তো কপালে??)
আকাশঃ চিন্তা করো না এর থেকেও বেশি সুখ অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। যত অপমান অবহেলা সয্য করেছো তার থেকে হাজার গুন ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবো কথা দিলাম।
মেঘলাঃ (চোখে পানি টলমল করছে। না না কষ্টের পানি নয় এটা সুখের পানি। পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই আকাশ পানির ফোঁটা হাতে নিয়ে নিলো)
আকাশঃ উহুম,,,, তোমার চোখে আমি পানি দেখতে চাই না। না কষ্টের আর না সুখের। শুধু তোমার ঠোঁটের কোণে হাসি দেখতে চাই।
মেঘলাঃ (আকাশের কথা শুনে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফোটে ওঠলো)
চাঁদঃ রুপ আপুদের বাসার ড্রয়িংরুমে বসে আছি। সবাই আছে,,, মা, রুপ আপু, রিয়াদ ভাইয়া, রুপ আপু আর ভাবির বাবা-মা, আর আমার ঠিক সামনে সোজাসুজি বসে আছে মাহিন ভাইয়া। মনে হচ্ছে ফ্লোর থেকে কোন অপ্সরা বের হবে উনার জন্য,,,, ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে তার অপেক্ষা করছে। কোনদিকে তাকাচ্ছে না। একজন যে তার দিকে কখন থেকে তাকিয়ে আছে সেদিকে খেয়ালই নেই। ইচ্ছে করছে মাথা ফাটিয়ে দেই।
আবিদঃ রুপ,,, কখন আসবে ওরা??
রুপঃ চলে আসবে এখনই,,,,,,,,(কলিংবেল বেজে ওঠলো।) হয়তো এসে পড়েছে।
রিয়াদঃ আমি দেখছি,,,,
মেঘলাঃ(এখানে দেখি সবাই আছে। আমারতো এখন নিজেকে খুনের আসামি মনে হচ্ছে। সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখনই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবে। কী রে ভাই অন্যকারো সাথেতো যাইনি নিজের বিয়ে করা বরের সাথে গিয়েছি। আকাশের হাত ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।)
আকাশঃ(আজিব এভাবে দেখার কী আছে??)
(সবার চোখ মেঘলা আর আকাশের হাতের দিকে। আমে দুধে মিশে গেছে তাই কেউ আর আটি হতে চায় না)
আবিদঃ বেয়াইন,,,, তো বৌমা কবে নিবেন??
আকাশের মাঃ আপনারা যখন দিবেন??
আবিদাঃ(উঠে আকাশের সামনে দাড়ালাম।) দেখো বাবা মেয়েটাকে সবাই অবহেলা করলেও আমরা রাজকন্যার মতোই বড় করেছি। অনেক আদরে ভালোবাসায় আগলে রেখেছি । ভালোবাসা না দিতে পারলেও কষ্ট দিয়ো না দয়া করে।
আকাশঃ(উনার দুহাত হাতের মুঠোয় নিলাম) একবার ভুল করেছি আপনারা মাফ করেছেন তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। বিশ্বাস রাখুন আপনাদের থেকে বেশী ভালো রাখতে না পারলেও কমপ্লেন করার সুযোগ দিবো না কথা দিলাম।
আবিদাঃ (আকাশ আর মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে এলাম। আমার বিশ্বাস আকাশ আর কখনো মেঘলাকে কষ্ট দিবে না।)
মাহিদঃ তাহলে রিয়াদ আর মাহিনের বিয়ের পরই মেঘলা যাবে।
মাহিনঃ মানে,,,,,?? কিসের বিয়ে??
মাহিদঃ মানে তোমার আর রিয়াদের বিয়ে একসাথে দেওয়া হবে,,,,,
মাহিনঃ আব্বা আমার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি,,,, এখনো অনেক কিছু করা বাকি আছে।
আবিদঃ আমরা ঠিক করেছি তোমাদের বিয়ে একসাথে দেবো। বিয়ের পরও সব করতে পারবে। তোমার মার ইচ্ছে তোমাকে বিয়ে করাবে,,, মেয়েও ঠিক করে রেখেছে হাহাহা,,,,
চাঁদঃ(কী হচ্ছে এসব?? কিসের বিয়ে আর কোন মেয়ে??)
মাহিনঃ মা,,,,,???
আবিদাঃ হুম,,,,, মেঘলা বাড়ি থেকে আসার পর আমার একা থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসে। বিয়ের পরও সব করতে পারবে। আর তানহা তোমাকে ভালোবাসে।
চাঁদঃ(ত,,,,,তানহা,,,,??? তানহা কে??)
মাহিনঃ দেখো মা তাহনা আমার চাচাতো বোন আমি ওকে সেই চোখেই দেখি। আর আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না।
মাহিদঃ মাহিন এখানে সবাই বড়রা আছে কীভাবে কথা বলছো?? তোমার মামা জানার পর সেই ঠিক করেছে রিয়াদ আর তোমার বিয়ে একসাথে এই বাড়ি থেকেই হবে। বড়রা যা ঠিক করেছে তাই হবে। এ নিয়ে আর কথা হবে না। আগামীকাল রিয়াদের জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়া হবে আর পরশু সবাই যাবে তানহাদের বাড়ি।
মাহিনঃ কিন্তু আব্বা,,,,,?
মাহিদঃ বললাম তো আর কোন কথা হবে না।
মাহিনঃ(চাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখি টলমল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদের থেকে দূরে যাওয়ার এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়। মেঘটার সংসার কেবল একটা কিনারা হয়েছে আমার জন্য আবার ভেসে যাক তা চাই না। আকাশ ভাইয়া কিছু জানার আগেই সব মিটে যাবে।) ঠিক আছে তোমরা যা ইচ্ছে করো।
চাঁদঃ(চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে সারা পৃথিবী ঘুরছে) মা আমার ভালো লাগছে না বাসায় চলো।
আকাশের মাঃ কী হয়েছে অসুস্থ লাগছে??
চাঁদঃ না মা বাসায় চলো।
আকাশঃ কী হয়েছে চাঁদ?? অসুস্থ লাগছে,,,, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো??
চাঁদঃ না ভাইয়া বাসায় গিয়ে ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে চলো।
আকাশের মাঃ ঠিক আছে আকাশ তুই পরে আয় আমরা যাচ্ছি।
চাঁদঃ(এভাবে আপনাকে হারাতে হবে ভাবতেই পারিনি। আপনার কাছে হয়তো আমার ভালোবাসা আবেগ মনে হয়েছে কিন্তু আমি পারবো না আপনাকে ছাড়া বাঁচতে। চোখের সামনে আপনাকে অন্যকারো হতে দেখতে পারবো না।)
চলবে,,,,,,,,
(ওল্টা পাল্টা খোঁজে কীভাবে যেন ব্যাক এসেছে জানি না। এত খুশি মনে হয় আমেরিকার ভিসা পেলেও হতাম না। একটা পর্ব লেখতে অনেক সময় লাগে। তোমরা ওয়েট করছো তাই এতো কষ্ট হয়েছে বুঝো আমি কষ্ট করে লেখার পর আমার কেমন লেগেছে। এমন ভুল আর জীবনেও করবো না। হ্যাপি রিডিং)