কালোবউ পর্ব ৫
লেখিকাঃ Tahmina Toma
.
আকাশঃ ওকে,, বাই। এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। এবার খেলা জমবে। আমি আসছি রুপ, এবার সামনাসামনি খেলা হবে (শয়তানি হাসি দিয়ে)
মেঘলাঃ (যোহরের আযান শুনে ঘুম ভেঙে গেল। বেলকনির দোলনায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আকাশের কথা ভাবতে ভাবতে। ওঠে ওয়াশরুম থেকে ওজু করে এসে নামাজ পড়তে নিলাম টিয়া আপুকে বলে জায়নামাজের ব্যবস্থা করে । ফজরের নামাজের কাযা আদায় করে নিলাম। নামাজ শেষ করে মোনাজাত তোললাম আল্লাহর দরবারে। হে আল্লাহ তুমি আমাকে যেমন সৃষ্টি করেছ তাতেই আমি খুশী। অনেক মানুষ আছে চোখে দেখতে পায় না, হাটতে পারে না, কথা বলতে পারে না, কানে শুনতে পায় না, সেখানে আমি একটা সুস্থ জীবনযাপন করছি। তোমার দরবারে লক্ষ কোটি শুকরিয়া। আমি যেমন আছি তেমনি থাকতে চাই সারাজীবন, পরিবর্তন হতে চাই না। শুধু মানুষের কথা সয্য করার ধৈর্য্য দান করো খোদা। আমার বাবা-মা, স্বামী, ভাই, শাশুড়ী, ননদ, আত্মীয়স্বজন সবাইকে সুস্থ রাখুন, হেদায়েত ও নেক হায়াত দান করুন। যারা মারা গেছেন তাদের মাফ করে বেহেশত নছিব করুন। আমার স্বামীর মনে একটু জায়গা করার তৌফিক দান করুন দয়ার সাগর । হে পরম করুণাময় আমি বিশ্বাস করি আপনি যা করেন বান্দার ভালোর জন্য করেন। “আমিন”)
আকাশঃ (রুমে এসে দেখি মেঘলা জায়নামাজে বসে মোনাজাতে কিছু বিরবির করছে আর নাক টানছে, গালে পানির স্রোত। কী পবিত্র লাগছে দেখতে। আচ্ছা ও কী আমার নামে অভিযোগ প্রকাশ করছে আল্লাহর কাছে ?? আচ্ছা কেন বারবার এই কালো মেয়েটাকে দেখেই আমি মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি?? আমিতো হুর-পরীর মতো সুন্দরী রুপকে ভালো বেসেছিলাম। আচ্ছা আমি কী রুপকে সত্যি ভালো বেসেছিলাম?? নাকি ওর সৌন্দর্যের মোহে পড়েছিলাম?? না না আমি ওকে ভালো বেসেছিলাম। কিন্তু ও ছেড়ে যাবার পরতো আমি কখনো তীব্র কষ্ট অনুভব করিনি বুকের বা-পাশে। শুধু প্রচন্ড রাগ আর জেদ চেপেছে মনে। সেটা কী ভালোবাসা হারানোর কষ্টে?? নাকি ইগোতে আঘাত করার অপমানবোধে???)
মেঘলাঃ(মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজ ভাজ করতে করতে পিছনে ফিরতেই দেখি উনি দরজার সামনে দাড়িয়ে এদিকে তাকিয়ে আছে। উনার দৃষ্টি এদিকে থাকলেও মন এদিকে নেই। গভীর কোন ভাবনায় ডুবে আছে। ডাকবো?? যদি রাগ করে?? যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে না ডাকলে রুমের বাইরেও যেতে পারবো না। ডাকি যা হবার হবে,,, বুকে ফু দিয়ে) শু,,,শুনছেন?? এই যে শুনছেন???
আকাশঃ (মেঘলার ডাকে ভাবনা থেকে বাইরে আসলাম। ওর দিকে একবার তাকিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম)
মেঘলাঃ যা বাবা কিছুইতো বললো না। আমি বরং নিচে যাই। কিছুতো চিনিও না।
টিয়াঃ বউমনি আসবো।
মেঘলাঃ হুম, এসো। আমি কেবলই নিচে যেতে চাচ্ছিলাম কিন্তু ভাবছিলাম কিছুতো চিনি না।
টিয়াঃ আচ্ছা চলো বড় ম্যাডাম লান্সের জন্য ডাকছে। বিকেলে বরং তোমাকে বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাবো, কেমন??
মেঘলাঃ আচ্ছা।(টিয়া আপুর সাথে নিচে চলে এলাম)
আকাশঃ ( ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছি। কেন বারবার একই ভুল করছি আমি?? না না আর কিচ্ছু ভাববো না। এই জীবনে শুরু একজনকে ভালোবেসেছিলাম। যে আমাকে ভরা রেস্টুরেন্টে এত মানুষের সামনে অপমান করেছে। (কথাটা মনে পড়তেই আকাশের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল) যে সময়টাতে ওকে আমার সবচাইতে বেশী প্রয়োজন ছিল সেই সময়ে ও আমাকে আঘাত করে চলে গেছে। আর এই মেয়েতো তারই সবচাইতে আদরের বোন, সুযোগ পেলে এই মেয়েও বিশ্বাসঘাতকতা করবে না তার কী নিশ্চিয়তা আছে? আর কারো মায়ায় জড়াবো না আমি। এবার শুরু প্রতিশোধের পালা( রহস্যে হাসি দিয়ে) আর মেঘলা আমার কাছে শুধু প্রতিশোধ নেবার একটা মাধ্যম মাত্র। কাজ শেষে ছোড়ে ফেলবো রুপের সামনে। মেঘলার জীবন নষ্ট হওয়ার জন্য নিজেকে অপরাধী মনে করে তিলেতিলে শেষ হয়ে যাবে রুপ, হাহাহাহাহাহা।)
নিচে,,,,
মাঃ এখন কেমন লাগছে বউমা?? জ্বর কমেছে??(মুখটা কালো করে জিজ্ঞেস করলেন)
মেঘলাঃ এখন ভালো আছি। সকালে মেডিসিন নেবার পর আর জ্বর আসেনি। আমি কী আপনাকে মা বলে ডাকতে পারি??(ভয়ে ভয়ে)
মাঃ ওকে ডেকো।( কী করবো বলো? আমার রাজপুত্রের মত ছেলের পাশে তোমার মতো কালো মেয়েকে যে মানতে পারছি না। ভেবেছিলাম একটা পরীর মত পুত্রবধু আনবো। কিন্তু ছেলে আমার একদম নিষেধ করে দিয়েছিল বিয়ে করতে, বলেছিলো করবে না কোনদিনও বিয়ে । তোমাকে করলেও বিয়েটা অন্তত করেছে এটাই অনেক। আর তোমার তো কোন দোষ নেই। চেষ্টা করবো মেনে নিতে)
টিয়াঃ কী ভাবছেন বড় ম্যাডাম??
মাঃ কিছু না। আর তোকে কতবার বলেছি এই ম্যাডাম ফ্যাডাম ডাকবি না। এখন যা চাঁদ আর আকাশকে ডেকে নিয়ে আয়। সকাল বেলা ছেলেমেয়ে দুটো ভালো করে খেলো না।
টিয়াঃ আচ্ছা ম্যা,,, থুরি খালাম্মা।
(টিয়া চলে গেলো)
মাঃ শুনো বউমা তোমাকে কিছু কথা বলি।
মেঘলাঃ জ,,জী বলুন ,,,,,,
মাঃ এতক্ষণে হয়তো বুঝে গেছো আকাশ তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেনি। কেন বিয়ে করেছে ওর থেকেই জানতে পারবে। কিন্তু তোমার কাছে একটা অনুরোধ ছেলেটার মনে জায়গা করার চেষ্টা করো। একটা ভুল ধারণা পোষে রেখেছে মনের মধ্যে। সেটা দূর করার দ্বায়িত্ব তোমার।
মেঘলাঃ ছি ছি মা আপনি অনুরোধ কেন বলছেন?? আদেশ করুন আমি আপনার আদেশ পালন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
মাঃ হুম (মুগ্ধ হয়ে তাকালাম মেয়েটার দিকে। কতটা নম্রভাষী) এখন বসো খেতে দিচ্ছি।
মেঘলাঃ উনারা আসুক।
মাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
চাঁদঃ আমি এসে পড়েছি। এখন কেমন আছো ভাবি? (মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে)
মেঘলাঃ জ,,জী ভালো (হঠাৎ করে এসে জড়িয়ে ধরায় চমকে গেছি)
চাঁদঃ প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড ভাবি( একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে) আমি একটু ফ্রি মাইন্ডের। সকালে তোমার রুমে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু পড়ে ভাবলাম থাক এখন ভাইয়া আছে পড়ে দেখা করে নিবো।
মেঘলাঃ কেন আপু আসতেন? আপনার ভাইয়াতো রুমে ছিলো না।
চাঁদঃ ও মাই গড। ভাবি আমি তোমার ননদ বয়সেও ছোট। তুমি কী না আপু আপনি এসব বলছো??
মেঘলাঃ আসলে আমি,,,মানে,,,
চাঁদঃ থাক আর মানে বলতে হবে না। ভাবি আমি কিন্তু ওই ননদিনী রায় বাঘিনী টাইপ ননদ হবো না। তুমি আমাকে ছোটবোনের মত দেখবে। চাঁদ ডাকবে আর তুমি করে কথা বলবে।
মেঘলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
মাঃ এখনি সব কথা শেষ করে ফেলবি নাকি? কথা বন্ধ করে বস খাবার দিচ্ছি। কিরে টিয়া আকাশ কোথায়??
টিয়াঃ আইতাছে।
মাঃ আবার,,, তোকে এত বছর ধরে কী শিখাইলাম?? আইতাছে না আসছে।
টিয়াঃ আসলে মাঝে মাঝে মুখ ফসকে বের হয়ে যায়(বোকার মত হেসে)।
মেঘলাঃ (চুপচাপ এদের কথা শুনছিলাম। তখনই চোখ গেলো সিঁড়িতে। উনি নামছে টিশার্টের হাতা ওঠাতে ওঠাতে। ধূসর রঙের একটা ফুলহাতা টিশার্ট পড়েছে আর কালো টাউজার। উনাকে যেভাবেই দেখি সুন্দর লাগে। উনি চাঁদের পাশে চেয়ার টেনে বসতেই চোখ নামিয়ে নিলাম।)
আকাশঃ মা খাবার দাও।
মেঘলাঃ (শাশুড়ী মা সবাইকে খাবার দিয়ে নিজেও বসে পড়লেন। টুকিটাকি যা লাগবে টিয়া আপু এগিয়ে দেবে। সবাই খাচ্ছে আমি খাবার নাড়াচাড়া করছি আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না।)
মাঃ বউমা খাচ্ছো না কেন??
মেঘলাঃ কই মা খাচ্ছি তো।
মাঃ আচ্ছা এটা নাও। তোমার জন্য ঝাল করে ভর্তা করেছি। জ্বর হলে কিছু স্বাদ লাগে না জানি। এটা দিয়ে খাও ভালো লাগবে।
মেঘলাঃ হুম ( চোখে পানি টলমল করছে। কত ভালো মানুষ উনি। কতটা ভেবেছে আমার জন্য। বাসায় মাও এমন করতো জ্বর হলে, নিজে খাইয়েও দিতো। উনারই বা কী দোষ? এমন রাজপুত্রের মত ছেলের জন্য সব মা চাইবে পরীর মত বউ আনতে । এমন ছেলের পাশে কোন মা আমার মত কালো মেয়েকে হাসি মুখে মেনে নিবে? হয়তো আমি নিজেও পাড়তাম না।)
আকাশঃ মা একটা কথা ছিলো।
মেঘলাঃ (উনার কথা শুনে সবাই খাওয়া রেখে উনার দিকে তাকালো। এরপর উনি যা বললেন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সবাই উনার দিকে আর আমি কিছু না বুঝে তাকিয়ে আছি)
চলবে,,,,,,
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক পাঠিকা গণ। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পাশে থাকার জন্য। এটা আমার লেখা ৪ নম্বর গল্প। একটা পার্সোনাল প্রবলেমের জন্য মাঝে গল্প থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলাম। ২ টা গল্প শেষ করেছিলাম আর একটা গল্প অর্ধেক থাকা অবস্থায় লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আপনাদের ভালোবাসায় আবার ফেরার চেষ্টা করছি। আশা করি সবাই পাশে থাকবেন। একটা পার্ট লিখতে অনেক সময় লাগে। এত কষ্ট করে লেখার পর যদি আপনারা ছোট একটা লাইক কমেন্ট করতে কিপ্টামি করেন তখন খারাপ লাগে। আর প্লিজ গল্প ভালো না লাগলে এড়িয়ে যাবেন কিন্তু বাজে কমেন্ট করবেন না এটা আমার অনুরোধ । নেক্সট, নাইস এসব কমেন্ট না করে একটু গঠনমূলক কমেন্ট করুন যাতে লিখতে উৎসাহ পাই। আর কমেন্ট না করলেও লাইক অবশ্যই করবেন প্লিজ। কষ্ট করে লেখার বিনিময়ে শুধু আপনাদের একটু ভালোবাসাই আশা করি আমরা। আর অনেকের অভিযোগ আমি পার্ট ছোট করে দেই। আমি জব করি অবসর সময়ে গল্প লিখি। যতটা পারি বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করি। তাও যদি আপনাদের অভিযোগ থাকে ১ দিন পরপর গল্প দিবো ২ পার্টের সমান ১ পার্ট দিবো। এখন আপনারা বলেন রেগুলার গল্প চান নাকি ১ দিন পরপর। ভালো থাকবেন সবাই।
আসসালামু আলাইকুম
আল্লাহ হাফেজ