লেখিকাঃ Tahmina Toma
কালোবউ পর্ব ৮
মেঘলাঃ এই কী করছেন?? প্লিজ ফেলবেন না।(আকাশ তাও ফুল ফেলতে গেলে আমি বিছানা থেকে নামার জন্য নিচে পা রাখতেই ব্যাথায় চেঁচিয়ে ওঠলাম) আহ্,,,,,,
আকাশঃ( ফুল রেখে মেঘলাকে ধরলাম পরে যাওয়ার আগেই। ওর দুবাহু ধরে আছি আর ও আমার বুকে পরে আছে)
মেঘলাঃ (পড়ে যাওয়ার আগেই উনি ধরে ফেললেন। উনার হার্টবিট শুনতে পাচ্ছি স্পষ্ট। এত ফাস্ট কেন হচ্ছে? উনি কী ভয় পেয়েছেন? কিন্তু ভয়তো আমার পাবার কথা উনি কেন পাচ্ছেন??)
আকাশঃ( ভয় পেয়ে গেছিলাম) এই মেয়ে তুমি কী শুরু করেছো বলোতো?? (দুবাহু ধরে মুখটা সামনাসামনি এনে ধরলাম।)
মেঘলাঃ……
আকাশঃ কথা বলছো না কেন?? (রেগে জোড়ে ধমক দিয়ে)
মেঘলাঃ ক,,,কী বলবো??
আকাশঃ বেড থেকে কেন নেমেছো??
মেঘলাঃ আ,,,আপনি ফুলগুলো ফেলে দিচ্ছিলেন তাই আপনাকে আটকাতে।
আকাশঃ ওহ্ গড,,,,, (বিরক্ত হয়ে) এই ফুল ফুল আর ফুল। এই ফুলের জন্য হাত কেটে, পা মচকে বেডে বসে আছো তাও মুখ থেকে ফুল যাচ্ছে না। ফুলগুলোর জন্য এমন করছো যেন ওগুলো ফুল না ব্লু-ডায়মন্ড।
মেঘলাঃ ব্লু- ডায়মন্ড হলেও এমন করতাম না । এগুলো আমার কাছে ব্লু-ডায়মন্ডের থেকেও দামী। এগুলো আমার একটা ইচ্ছে অন্তত পুরণ করেছে। যে ইচ্ছেটা কোনদিন পূরণ হওয়ার সম্ভাবণা ছিলো না।
আকাশঃ মানে,,,,?? ফুল আবার তোমার কী ইচ্ছে পুরণ করলো?? আর কখনই বা করলো??
মেঘলাঃ কিছু না। আপনি বুঝবেন না।
আকাশঃ বুঝতেও চাই না তোমার মতো পাগল, ইস্টুপিট, ইডিয়ট মেয়ের কথা। (বেডে আধশোয়া করে বসিয়ে দিলাম)
মেঘলাঃ ( উনার কথা শুনছি আর দেখছি কী করে??)
আকাশঃ এই নাও তোমার ফুল আর যা ইচ্ছে করো। যতসব পাগলের পাল্লায় পরছি। এখানে বেশিক্ষণ থাকলে আমাকেও পাগল করে ছাড়বে।( রুম থেকে বেড়িয়ে ছাদে চলে এলাম)
মেঘলাঃ (উনি ফুলগুলো আমার কোলে রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল বিরবির করতে করতে।) ফুলগুলো সারাজীবন এভাবেই রাখতে পারলে আরো বেশী খুশী হতাম।
চাঁদঃ ওকে, তাহলে তোমার এই ইচ্ছেটা আমি পূরণ করে দিবো।
মেঘলাঃ মানে,,,,,, কিভাবে??
চাঁদঃ সেটা সারপ্রাইজ।
মেঘলাঃ ওহ্ তা তুমি এখন এই রুমে??
চাঁদঃ কেন ডিস্টার্ব করলাম?? আমিতো ভাবলাম তুমি একা বসে বোর হচ্ছো তাই গল্প করতে এলাম।
মেঘলাঃ খুব ভালো করেছো, সত্যি বোর হচ্ছিলাম। (চাঁদের সাথে গল্প করতে করতে কখন ডিনারের সময় হয়ে গেছে টেরই পাইনি।)
টিয়াঃ আপা মনি খালাআম্মা আপনাকে ডিনারের জন্য ডাকছে।
চাঁদঃ তুমি যাও আমি আসছি।
টিয়াঃ আর বউমনির খাবার উপরে নিয়ে আসছি??
মেঘলাঃ আচ্ছা( টিয়া আপু ডাকতেই চাঁদ চলে গেল ডিনার করতে সাথে ফুলগুলো নিয়ে গেলো। এতবার না করলাম শুনলো না কী নাকি সারপ্রাইজ দেবে। চাঁদ চলে যেতেই ফোন নিয়ে একটু ফেসবুকিং করতে লাগলাম )
আকাশঃ (ছাদে বসে থাকতে থাকতে অনেক রাত হয়ে গেছে। মোবাইল বের করে দেখি ডিনারের টাইম হয়ে গেছে। তাই রুমে চলে এলাম ফ্রেস হতে। এসে দেখি মেঘলা বিছানায় বসে ফোন ঘাঁটছে। একবার তাকিয়ে ওয়াশরুম ঢুকে গেলাম, ফ্রেস হয়ে নিচে এলাম খেতে )
মেঘলাঃ( ফেসবুকিং করছিলাম তখনই উনি রুমে এসে ওয়াশরুমে চলে গেলো, বেড়িয়ে আবার রুমের বাইরে চলে গেলো। উনি কী এখনো রেগে আছে?? যা ইচ্ছে করুক আমার কী??আমি আবার ফোনে মন দিলাম।)
আকাশঃ মা খাবার দাও।
মাঃ দিচ্ছি, খেয়ে মেঘলার খাবারটা রুমে নিয়ে যা।
আকাশঃ আমি নেবো কেন?? টিয়াকে দিয়ে পাঠাও??
মাঃ আশ্চর্য তো!!! তুই রুমেই যাবি নিয়ে গেলে প্রবলেম কোথায়??
আকাশঃ ওকে ওকে, নিয়ে যাবো এখন কী খাবার পাওয়া যাবে ( বিরক্ত হয়ে)??
মাঃ দিচ্ছি তো,,,,,, আকাশ তুই কিন্তু এখনো বলিসনি কাল আমরা ঢাকায় কেন যাচ্ছি আর কোথায় যাচ্ছি?? (খাবার দিতে দিতে)
আকাশঃ মা আমি আগেই বলছি এ নিয়ে আমি আর কোন কথা বলতে চাই না। (খেতে খেতে)
মাঃ কিন্তু,,,,
আকাশঃ এখন কী খাবার রেখে চলে যাবো??
মাঃ আকাশ,,,,,,,,,,, ওকে কিছু জিজ্ঞেস করবো না। খাবার শেষ কর।
আকাশঃ(খেয়ে মেঘলার খাবার রুমে নিয়ে এলাম। এসে দেখি এখনো ফোন দেখছে।) ফোন দেখে পেট ভরবে না। খাবারটা খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নাও।(বেডের পাশে টেবিলে খাবার রেখে)
মেঘলাঃ হুম, ক্ষিদেও পেয়েছে। (খাবার হাতে নিতে গিয়েও থেমে গেলাম। খাবো কী করে?? হাতে তো ব্যান্ডেজ? একবার হাতের দিকে তাকাচ্ছি একবার খাবারের দিকে। হাতে ব্যান্ডেজ করে রাখার মতোও কাটেনি। ফোন হাতে নিয়েতো দিব্যি ফেসবুকিং করলাম। বড়লোকদের যতসব ঢং, এর আগে এর থেকে কত বেশি কেটেছে কই ব্যান্ডেজ করেতো রাখিনি শুধু একটু ঔষধ লাগাতাম নাহলে গাঁদাফুলের পাতা পিষে লাগিয়ে নিতাম। তখন অবশ্য খাবারটা মা খাইয়ে দিতো কিন্তু এখন কে দিবে??)
আকাশঃ খাবার সামনে নিয়ে আবার কী ভাবতে বসলে??(বিরক্ত হয়ে) তাড়াতাড়ি খেয়ে ঔষধ খেয়ে নাও।
মেঘলাঃ(উনার কথা শুনে অসহায় মুখ করে তাকালাম উনার দিকে )
আকাশঃ( ওর তাকানো দেখে মনে পড়লো ওরতো হাত কাটা খাবে কী করে?? কী করি এখন? একটু ভেবে হাত ধুয়ে ওকে খাওয়ানোর জন্য এক লোকমা ভাত ওর সামনে ধরলাম)
মেঘলাঃ(উনি আমার সামনে খাবার ধরে আছে আর আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি উনার মুখের দিকে)
আকাশঃ কী হলো খাও??
মেঘলাঃ(চোখে পানি টলমল করছে। অনেক কষ্টে আটকে রেখেছি। কোনমতে খাবারটা মুখে নিলাম। এত তৃপ্তি কেন এই খাবারে?? এর আগে মার হাতে অনেক খেয়েছি সেই অনুভূতির কোন তুলনা হয় না।। তবে এই অনুভূতিরও কোন তুলনা হয়না। দুটো আলাদা তৃপ্তির অনুভূতি।)
আকাশঃ(মেঘলা খাবার মুখে নেওয়ার সময় ওর ঠোঁট আমার আঙুলে টাচ লাগতেই হাল্কা কেঁপে ওঠলাম। অজানা অনুভূতিতে সারা শরীর নাড়া দিয়ে ওঠলো। আমার হাত কাঁপছে এখন খাওয়াতে) আসছে আগে কখনো কাউকে খাইয়ে দেয়নিতো তাই হাত কাঁপছে। কিছু মনে করো না। (নিজেকে কোনরকম সামলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বললাম)
মেঘলাঃ হুম( আপনার এমন ভালোবাসা পেতে শুধু হাত কেন?? মাথা, কপাল, হাত, পা, গলা সব কেটে বসে থাকতে পারবো। না না গলা কাটলেতো আমি মরে যাবো তখন আপনার এত ভালোবাসা কে নেবে। ভালোবাসা,,,,,?????? এটা কী সত্যি ভালোবাসা??)
আকাশঃ আরও খাবে??পেট ভরেনি?? ( খাবার শেষ আবার হা করায় বললাম)
মেঘলাঃ( কখন খাওয়া শেষ হয়ে গেছে টেরই পাইনি। এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো। আচ্ছা জীবনের সুন্দর মুহুর্তগুলো তাড়াতাড়ি চলে যায় কেন?? এভাবে সারাজীবন খাওয়ালেও আমার পেট ভরবে না প্রাণের স্বামী। কিন্তু সেটা আপনি কোনদিন বুঝবেন না।) না,,, মানে আর খাবো না পেট ভরে গেছে।
আকাশঃওকে তাহলে তুমি থাকো আমি প্লেট নিচে রেখে আসি ( ঠোঁট মুছে দিলাম হাত ধুয়ে ভেজা হাত দিয়ে। এবার শুধু আমি না মেঘলাও কেঁপে ওঠলো। সেটা আমি ভালোই টের পেয়েছি)
মেঘলাঃ ( উনার ভেজা হাত দিয়ে ঠোঁট মুছতেই কেঁপে ওঠলাম। এ কেমন অনুভূতি??)
আকাশঃ (আমি চুপচাপ প্লেট নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে রেখে এলাম। রুমে এসে দেখি মেঘলা এখনো ওভাবেই shocked হয়ে বসে আছে) কী হলো এখনো বসে আছো কেন?? শুয়ে পড়ো।
মেঘলাঃ হুম,,, (উনার ডাকে ঘোর কাটলো কিন্তু কেন জানি না উনার দিকে তাকাতে লজ্জা করলো তাই শুধু হুম বলে শুতে নিলাম)
আকাশঃ ১ মিনিট।
মেঘলাঃ (এবার উনার দিকে তাকালাম)
আকাশঃ এটার কথা মনে ছিলো না(মেডিসিন এগিয়ে দিয়ে) খেয়ে নাও।
মেঘলাঃ চুপচাপ খেয়ে বসে রইলাম।
আকাশঃ আবার কী হলো??
মেঘলাঃ আ,,,আসলে মা,,,নে একটু ওয়াশরুমে যাবো।
আকাশঃ এটা বলতে এতো তোতলানো লাগে??( কোলে তুলে ওয়াশরুমে এনে নামালাম।) হয়ে গেলে ডাক দিয়ো।
মেঘলাঃ ( কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোলে তুলে ওয়াশরুমে নামিয়ে চলে গেলো। সে যাই হোক আগে দুই হাতের ব্যান্ডেজ খোলে ডাস্টবিনে ফেলে দিলাম। ঝামেলা একটা, পারলে পায়েরটাও খোলে ফেলে দিতাম। পায়ের টা খোলে ফেললে আকাশ চৌধুরী আমাকেই তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দেবে। না বাবা তার দরকার নেই। একটু কষ্ট করে ফ্রেস হয়ে নিলাম) হয়ে গেছে।
আকাশঃ (কোলে করে আবার বেডে বসিয়ে দিলাম।) ১ মিনিট হাতের ব্যান্ডেজ কই তোমার??
মেঘলাঃ (এই রে ঠিক খেয়াল করেছে) ম,,,মানে হয়েছে কী খুব চুলকচ্ছিল তাই খোলে ফেলে দিয়েছি।
আকাশঃ এখন আমি তোমাকে তুলে ফেলে দিয়ে আসবো ইস্টুপিট (রেগে ধমক দিয়ে) ইনফেকশন হয়ে গেলে??
মেঘলাঃ ( এত ধমকায় কেন?? এতটুকুতে ইনফরমেশন হয় কারো??)
আকাশঃ ইডিয়ট একটা ( ফাস্টএইড বাক্স এনে আবার নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দিলাম ) এটা খোললে তোমার খবর আছে। এখন ঘুমিয়ে পড়ো।(সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম)
মেঘলাঃ(আবার জঞ্জাল পেচিয়ে দিলো হাতে। উনাকে সোফায় যেতে দেখে একবার ইচ্ছে হচ্ছিলো উনাকে বলি এখানেই ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু সাহস হলো না। সারাদিনের কথা ভাবতে লাগলাম। সকালটা কেমন শুরু হয়েছিলো শেষটা কেমন হলো। আমার জীবনের গল্পটা যদি আজকে দিনের মতো হতো। খারাপ দিয়ে শুরু আর ভালো দিয়ে শেষ। কিন্তু সব গল্পের শেষ যে খুশী দিয়ে হয় না। কিছু গল্পের শুরুটাও যেমন কান্না দিয়ে হয় শেষটাও তেমন কান্না দিয়েই হয়। আমার জীবনের গল্লটাও হয়তো কান্না দিয়েই শেষ হবে। একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো বুক চিরে। ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে গেলাম।)
আকাশঃ (কেবল ঘুম লেগেছে চোখে আর কারো শীতে কাঁপুনির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। মনে হচ্ছে বেড থেকে আসছে শব্দ। মেঘলার আবার জ্বর এলো নাকি। ও গড মনেই ছিলো না ডাক্তার আঙ্কেল বলেছিলো রাতে জ্বর হতে পারে। তাড়াতাড়ি রুমের লাইট অন করে, এসি অফ করে দিলাম। মেঘলার কাছে গিয়ে কপালে হাত রাখতেেই চমকে উঠলাম। হাত মনে হচ্ছে পুড়ে গেছে। ওয়াশরুম থেকে পানি এনে মাথায় পানি দিতে লাগলাম। শরীর মুছে দিলে ভালো হতো। ভাবতেই একটা ঢোক গিললাম ভয়ে। কিছু করার নেই। সারা শরীর না মুছে হাত, মুখ, গলা কয়েকবার মুছে দিলাম। মাথায় পানি দেওয়া শেষ করে আমার একটা রুমাল ভিজিয়ে জলপট্টি দিতে লাগলাম। প্রায় ঘন্টা ২ পরে একটু কমলো জ্বর কিন্তু কাঁপুনি কমছে না। কম্বল যা ছিলো দিয়ে দিয়েছি এখন আর কোন উপায় না পেয়ে কম্বলের নিচে ঢুকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে আবার থেমে গেলাম। কিন্তু ওর কাঁপুনি থামছে না। তাই আর কিছু না ভেবে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। মেঘলাও আমাকে শক্ত জড়িয়ে ধরলো জ্বরের ঘোরে। মনে হলো ১২০০ ভোল্টের শক খেলাম। অজানা অনুভূতি নাড়া দিয়ে যাচ্ছে মনে। অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে। মনে হচ্ছে এতদিন বুকটা ফাঁকা পড়ে ছিলো আজ কানাকানায় পূর্ণ হলো। এই দিনের অপেক্ষায় যেন আমি করছিলাম। এই প্রথম কোন মেয়েকে জড়িয়ে ধরলাম। রুপকে জড়িয়ে ধরাতো দূর কোনদিন হাত পর্যন্ত ধরিনি। আর কিছু না ভেবে মেঘলার মাথা বুকে এনে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। এখন আর অন্যকিছু ভেবে এই মুহূর্তটা নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না। একেতো গরম তার ওপর কম্বলের নিচে আনুমানিক ১০০° জ্বরের শরীর বুকে জড়িয়ে শুয়ে আছি। গরমে ঘেমে শরীর ভিজে শার্ট গায়ে লেপ্টে গেছে। তবু অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে। যেখানে গরম আমি একদমই সয্য করতে পারি না। এ কেমন ভালোলাগা?? )
চলবে,,,,,,,,,