.
লেখিকাঃ Tahmina Toma
কালোবউ পর্ব ৯
আকাশঃ(আযানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। মেঘলা আমার বুকে লেপ্টে ঘুমিয়ে আছে। এখন জ্বর নেই আর। ওকে বালিশে শুইয়ে দিলাম। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কতটা নিষ্পাপ লাগছে মেয়েটাকে। জ্বর ছাড়ায় ঠোঁটের ওপর, কপালে, নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে যা ওর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে। শুনেছি যে মেয়েদের নাক ঘামে তাদের নাকি স্বামী অনেক আদর করে কিন্তু আমিতো ওকে কোনদিন বউয়ের অধিকারই দিবো না,, তাহলে?? রুপের কাছে ফিরিয়ে দেবো সময় হলে। ও কী আবার বিয়ে করবে? যে ওকে ভালোবাসবে, আদর করবে, ওকে টা,,,,টাচ করবে। না না এ কিছুতেই হতে পারে না। ও আমার কাছে থাক আর না থাক ওর চুলও আমি ছাড়া অন্যকেউ টাচ করবে না। আমি করতে দিবো না। ও যেখানেই থাক ওর ওপর শুধু আমার অধিকার থাকবে আর কারো না আর কিছু ভাবতে পারছি না । ওর চুলগুলো মুখ থেকে সরিয়ে একটা চুমু একে দিলাম কপালে। কেন করলাম তার উত্তর আমার জানা নেই। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। ওঠতে গেলে আবার পড়ে গেলাম। খেয়াল করলাম আমার শার্টের কলার ধরে আছে শক্ত করে। সর্বনাশ ও কী জেগে গেছে?? এখন কী বলবো?? তাড়াতাড়ি ওর মুখের দিকে তাকালাম। না,,, জাগেনি ঘুমের মধ্যে ধরে আছে। হালকা হেসে ওর হাত থেকে কলার সাবধানে ছুটিয়ে তাড়াতাড়ি ওঠে এলাম। রুমের সব পরিষ্কার করে রাখলাম, রাতে যেগুলো দিয়ে মাথায় পানি দিয়েছি, জলপট্টি দিয়েছি সব আগের জায়গায় রেখে দিলাম। তোমার সামনে আমার ভালো কিছু আসবে না মেঘলা। তুমি শুধু আমার খারাপটাই দেখবে যা আমি তোমাকে দেখাবো। ফ্রেস হয়ে মসজিদে নামাজ পড়ে একটু এক্সারসাইজ করে রুমে এলাম। আজ বেশি সময় এক্সারসাইজ করিনি মেঘলার কিছু দরকার হতে পারে তাই তাড়াতাড়ি চলে এলাম। ও এখনো ঘুমাচ্ছে দেখে ওয়াশরুমে গেলাম। শাওয়ার নিয়ে বের হলাম।)
মেঘলাঃ (ঘুম ভাঙতেই শরীরটা কেমন দূর্বল লাগছে। আবার জ্বর এসেছিলো নাকি রাতে?? আমার এই এক বদঅভ্যেস ঘুমানোর পর আমাকে বেড থেকে কেউ ফেলে দিলেও টের পাবো না এত ঘুম আমার। আর জ্বর এলে কোন হুস থাকে না। সকালে মা যখন বলতো তোর জন্য একটু ঘুমাতে পারিনি রাতে জ্বরে কাঁপছিলি আর আমি শুধু হা করে তাকিয়ে থাকতাম। কখন জ্বর এলো টেরই পেতাম না। এখন এতো দূর্বল লাগছে ইচ্ছে করছে না চোখ খুলি। ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে না চাইতেও চোখ পিটপিট করে সেদিকে তাকালাম। এবার আমার চোখ আপনাআপনি রসগোল্লার মত বড় বড় হয়ে গেলো। উনি কালকের মতো খালি গায়ে শুধু নীল রঙের একটা টাওয়েল পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে এক হাতে চুল ঝারতে ঝারতে। টাওয়েলটা হাটুর একটু নিচ পর্যন্ত। পায়ের ভেজা লোমগুলো লেপ্টে আছে। পা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত সব আকর্ষণ করার মতো। পুরো চকলেট আইসক্রিম ইচ্ছে করছে খেয়েনি। সকাল সকাল একটা ক্রাশ খেলাম।)
আকাশঃ (ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়াতেই আয়নায় দেখলাম মেঘলা এদিকে তাকিয়ে আছে। ওর দিকে ঘুরে তাকালাম) ঘুম ভেঙেছে??
মেঘলাঃ হুম( উনার কথায় ঘোর কাটাতেই চোখ নামিয়ে নিলাম)
আকাশঃ কিছু লাগবে??
মেঘলাঃ হুম আ,,আসলে একটু ওয়াশরুমে যাবো।
আকাশঃ ওকে,, (কোলে করে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলাম)
মেঘলাঃ আ,,,আমি গোসল করবো। কিন্তু,,,,,
আকাশঃ ওকে বাথটাবে করো পা ভিজিয়ো না। কী কী লাগবে বলো আমি এনে দিচ্ছি।
মেঘলাঃ একটা টাওয়েল আর একটা থ্রিপিস সেট এনে দিলেই হবে।
আকাশঃ ওকে
মেঘলাঃ (উনি রুমের দিকে যেতেই আমি আগে ব্যান্ডেজ খুললাম হাতের।)
আকাশঃ তুমি আবার ব্যান্ডেজ খোলে ফেলছো। (রাগি চোখে তাকিয়ে)
মেঘলাঃ আ,,,,,,আসলে গোসল করবো তো আর হাতও অনেকটা ঠিক হয়ে গেছে দেখেন(হাত দেখিয়ে)
আকাশঃ ওকে( আসলেই শুকিয়ে গেছে অনেকটা আর প্রবলেম হবে না তাই আর কিছু বললাম না। চলে এলাম)
মেঘলাঃ( ও আল্লাহ আমার একদম ছোট ড্রেসটাও এনেছে। এটা লাগবে বলিনিতো। এখন উনার দিকে তাকাতেও পারবো না লজ্জায়। চলে যেতেই আমি গোসল করতে লাগলাম)
আকাশঃ (রুমে এসে ড্রেস পরে নিচে গেলাম ব্রেকফাস্ট করতে, আজ চাঁদকে দেখতে পাচ্ছি না) মা চাঁদ কোথায়??
মাঃ কলেজে চলে গেছে। জানিসই তো এখান থেকে যেতে অনেকটা টাইম লাগে। মেয়েটার কষ্ট হয় তবু হোস্টেলে থাকবে না। যতই নিজেদের গাড়ি দিয়ে যাক প্রতিদিন কতটা জার্নি করতে হয়।
আকাশঃ আর কষ্ট করতে হবে না।
মাঃ মানে??
আকাশঃ কিছু না।
মাঃ আচ্ছা,,, বউমার কী অবস্থা??
আকাশঃ রাতে জ্বর এসেছিলো আবার, এখন ঠিক আছে।
মাঃ মেয়েটা একদম বাচ্চাসুলভ আচরণ করে। এখন কারো বাড়ির বউ হয়েছে খেয়ালই নেই।
আকাশঃ হুম(খেয়ে মেঘলার খাবার রুমে নিয়ে এলাম। এই মেয়ের এখনো হয়নি) এই মেয়ে জ্বর নিয়ে কতো সময় গোসল করো। তাড়াতাড়ি বের হও, আমাকে কী তোমার সেবক মনে করো,,,,,
মেঘলাঃ (দরজা খোলে দিলাম তাড়াতাড়ি । উনার ধমক শুনে।)
আকাশঃ( বৃষ্টি ভেজা কালো গোলাপ আমার সামনে ফোটে আছে। বিন্দু বিন্দু পানি সারা মুখে জমে আছে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি ওর মুখের দিকে। কে বলে কালো মেয়েরা সুন্দরী হয়না?? কালো মেয়েরা সুন্দরী, মায়াবতী সব হয়। শুধু অহংকারী হয় না।)
মেঘলাঃ( উনার তাকানো দেখে লাজ্জা করছে) আ,,,আমার হয়ে গেছে।
আকাশঃ ওহ্ হুম(ওর কথায় ঘোর কাটলো। হাল্কা লজ্জাও পেলাম। চুপচাপ কোলে তুলে ড্রেসিংটেবিলের সামনের টুলে বসিয়ে দিলাম।) যা করার করে নাও।
মেঘলাঃ হুম( চুল খোলে দিলাম মুছবার জন্য, পানি পড়ছে)
আকাশঃ ( এই প্রথম ওর চুল দেখলাম আমি ক্রাশড। ঘন কালো চুল প্রায় মেঝে ছুঁইছুঁই করছে। ইচ্ছে করছে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রান নেই কিন্তু সেটা সম্ভব না। খেয়াল করলাম ওর চুল মুছতে অসুবিধা হচ্ছে।)
মেঘলাঃ (এমনতেই আমি চুল মুছতে পারি না তার ওপর হাত কাটা।)
আকাশঃ (ওর হাত থেকে ট্রাওয়েল নিয়ে চুল মুছে দিতে লাগলাম। মিষ্টি একটা ঘ্রান নাকে এসে লাগছে তবু নিজেকে কন্ট্রোল করলাম।)
মেঘলাঃ( আমি জাস্ট অবাক হয়ে হা করে আয়নার মধ্যে দিয়ে উনাকে দেখছি। আচ্ছা আমি কী সব স্বপ্ন দেখছি?? স্বপ্ন হলে যেন কোনদিন এই স্বপ্ন না ভাঙে। সারাজীবন এই স্বপ্নের মধ্যেই কেটে যায়)
আকাশঃ হয়ে গেছে।
মেঘলাঃ হ,,,,,হুম,,
আকাশঃ হা করো খাইয়ে দিচ্ছি আগামীকাল থেকে সব নিজেই করবে। (গম্ভীর গলায়)
মেঘলাঃ আ,,,আচ্ছা,,,,
আকাশঃ (ওকে খাইয়ে বেডে নিয়ে বসিয়ে দিলাম। আর আমি সোফায় বসে ল্যাপটবে কাজ করতে লাগলাম । আজ আর বাইরে যাবো না।)
মেঘলাঃ(আমি আর কী করবো ফোনে ফেসবুকিং করছি আর আড়চোখে উনাকে দেখছি। মা,আব্বা, ভাই সবার সাথে ফোনে কথা বলে নিলাম। সারাদিন এভাবেই গেলো। দুপুরের লান্সেও উনিই খাইয়ে দিলেন তারপর সবাইকে রেডি হয়ে নিতে বললেন। আমাকে মা সুন্দর করে একটা গোলাপি শাড়ী পড়িয়ে দিলেন আর চাঁদ হালকা সাজিয়ে দিলো। মা আর চাঁদ চলে যেতেই উনি রুমে এলেন।আমি বেডে পা ঝুলিয়ে বসে আছি।)
আকাশঃ তোমার হয়েছে?? (ওর দিকে তাকিয়ে আমি থম মেরে গেছি। গোলাপি শাড়ী, হালকা গহনা, মুখে হালকা মেকআপ, চোখে গাড়ো কাজল, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক এক কথায় অপ্সরা। কোন কালো মেয়েকে এত সুন্দর লাগে আমার জানা ছিলো না। কালো মেয়েরা মায়াবতী হয় জানতাম, সুন্দরীও যে হয় তার প্রমাণ মেঘলা।)
মেঘলাঃ (উনাকে দেখে আমি চোখ ফেরাতে পারছি না। চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা, ফর্সা গালে খোচা খোচা দাড়ি, হোয়াইট টিশার্টের ওপর ব্লু ব্লেজার, টিশার্টের গলায় সানগ্লাস ঝুলানো, ব্লু-জিন্স প্যান্ট, হাতে রিচ ওয়াচ, পায়ে ব্লাক-শো। একদম মিস্টার পারফেক্ট কেউ কোন ভুল ধরতে পারবে না। আমাকে সত্যি উনার পাশে মানায় না। উনার পাশে কোন অপ্সরাই মানায়। আচ্ছা উনি কী সব সময় এমন মিস্টার পারফেক্ট সেজে থাকে আমি যে উনার অযোগ্য সেটা প্রমাণ করতে??)
চাঁদঃ ভাইয়া, ভাবি তোমরা বের হচ্ছো না কেন??
আকাশঃ হ্যাঁ আসছি। তুই মাকে নিয়ে গাড়িতে বস( চাঁদের কথায় ঘোর কাটলো)
মেঘলাঃ (চাঁদের কথা শোনে চোখ নামিয়ে নিলাম)
আকাশঃ (কোলে তুলে রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম। মা আর চাঁদ পেছনে বসেছে। মেঘলাকে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসিয়ে সিট বেল লাগিয়ে নিজেও ওঠে ড্রাইভ করতে লাগলাম )
মেঘলাঃ ( উনার গাড়িও আছে?? থাকতেই পারে এত সুন্দর বাড়ি যেহেতু আছে গাড়ি থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু বিয়ের আগে শুনেছিলাম ছোটখাটো একটা বিজনেস করে। তাহলে,,,,,,? ধূর এসব ভেবে এখন কী করবো?? গাড়িটা অনেক সুন্দর ব্লাক কালার। বিয়ের দিন মনে হয় এটাই ছিলো। তখন খেয়াল করার মত অবস্থায় ছিলাম না। আমি আগে কখনো এমন গাড়িতে ওঠিনি বিয়ের দিনই ফাস্ট ওঠেছি, বেশিরভাগ লোকাল বাসে যাতায়াত করেছি। বিয়ের দিন তাও পেছনে হাফ সেন্সে ছিলাম আর এখন পুরো স্বাভাবিক তার ওপর ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে। ভয় ভয় করছে আবার ভালোও লাগছে। প্রায় ২ ঘন্টা পর বিশাল এক বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো। আসলে আকাশের বাড়িটা সাভারের দিকে আর আমাদের বাড়ি ধামরাই। আর এখন আমরা ঢাকা বসুন্ধরায় বিশাল একটা বাড়ির সামনে আছি। গেটে অনেক সুন্দর করে দেখা চৌধুরী ভিলা। এত সুন্দর বাড়ি আমি আগে কখনো দেখিনি। এই বাড়ির তুলনায় আকাশের ওই বাড়ি কিছুই না।)
মাঃ আ,,,,আকাশ তুই কী পুরনো ক্ষতগুলো জাগিয়ে তুলতে এখানে এনেছিল???
চাঁদঃ ভাইয়া,,,,,,,, কেন??
মেঘলাঃ( আমি এদের কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। কী হচ্ছে এখানে?? আর এই বাড়িটাই বা কার?? এখানে আমরাই বা কেন এসেছি??)
আকাশঃ একটু অপেক্ষা করো সবার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।
চলবে,,,,,,,,