#খুন
পর্ব ২
ফয়সাল ইফতিকে দেখে মনে মনে খুব কষ্ট অনুভব করছিলো।কাল রাতে ইফতির গায়ে হাত উঠানো ঠিক হয়নি।কেনো যে এতো রেগে গেলাম।খুব ইচ্ছে করছে ইফতির কপালে একটা চুমু খেয়ে সরি বলতে, কিন্তূ…..
ফয়সাল রেডি হয়ে,আস্তে করে টেবিলের উপর থেকে ঘড়িটা হাতে পরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।এমন ভাবে বের হলো যেনো কোনো শব্দ না হয়,ইফতি যেনো জেগে না যায়।
খাবার টেবিলের উপর রাখা জগ থেকে একগ্লাস পানি খেয়ে অফিসের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লো ফয়সাল।পেছন থেকে মা রাহেলা বেগম অনেকবার ডাকলেন ফয়সাল কে,ফয়সাল সেটার তোয়াক্কা না করে নিজের মতো এগিয়ে গেলো রাস্তার দিকে।রাহেলা বেগম একা একাই বক বক করতে লাগলেন,
– ছেলেটা আমার রাতেও কিছু খায়নি,এখনও না খেয়ে চলে গেলো।জমিদারের মেয়ের এখনও ঘুম ভাঙ্গেনা।কাজের বেলায় ঠনটনা,বাচ্চা জন্ম দেওয়ার কথা তো কাউকে বলে দিতে হয়না, এগুলো তো খুব ভালোই পারে।কাজের বেলায় যত ভন্ডামি।
শাশুড়ির চেঁচামেচিতে ঘুম ভেংগে যায় ইফতির।পাশে তাকিয়ে দেখে ফয়সাল নেই,ঘড়িটাও নেই।তার মানে অফিস চলে গেছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯.২০ বাজে।তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে নেমে ঘর গুছাতে লাগলো।কাপড়ের ব্যাগটা আলমারিতে রেখে দিলো।কেউ যদি দেখে তাহলে বুঝে ফেলবে ওদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে।বিছানার উপর ফয়সালের শার্ট গুছাতে গিয়ে,ইফতি কান্নায় ভেংগে পড়লো।খুব মনে পড়ছে ফয়সাল কে।কাল রাতের ঘটনা গুলো মনে করে আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে।আমার এতোটা রাগ করা উচিত হয়নি,আজকে আসলে মাফ চেয়ে সব ঠিক করে নিবো।ফয়সালের তো কোনো দোষ নেই,ওর মায়ের বলা কথা নিয়ে ওর সাথে রাগারাগি করে লাভ কি।তাছাড়া মা যতোই অন্যায় করুক সন্তানের সামনে মায়ের নামে কিছু বললে তার খারাপ লাগবে এটাই স্বাভাবিক।ইফতি নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরে জা’য়ের সাথে রান্নার কাজে সাহায্য করতে লাগলো।
***
ফয়সাল অফিসে কাজ করছিলো ঠিকই, কিন্তূ তার মন যে একদমই কাজে নেই বন্ধু আফজালের বিষয়টা বুঝতে বাকি রইলো না। হাতের কাজ গুলো সেরে ফয়সালের কাছে গিয়ে বসলো,জিজ্ঞেস করলো,
– কিরে কি হয়েছে তোর?এমন ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে কেনো?
– আচ্ছা একজন বাচ্চার অস্তিত্ব বোঝার জন্য কতো সময়ের দরকার? ১ মাস ১০ দিনে কি বাচ্চার অস্তিত্ব বোঝা যায়?
– কেনো বোঝা যাবেনা?এমন কত দম্পত্তি দেখলাম, যাদের বিয়ের ১০ মাসের মধ্যে বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়। কেনো রে,ভাবি কি প্রেগনেন্ট নাকি?
– হুমম।
– এটা তো সুখবর তাহলে মুখ এমন পেঁচার মতো বানিয়ে রাখছিস কেনো?বাইরে চল মিষ্টি খাওয়াবি।
– কিন্তূ মা এই বিষয়টা মানতে চাইছেন না।ইফতির নামে কি সব আজে বাজে বলছিলো।
– কি বলছিলো?
– এখন না,পরে বলবো।
– আচ্ছা, যাই বলুক না কেনো,ওগুলো নিয়ে মন খারাপ করিস না,ওনারা পুরনো দিনের মানুষ,বয়স ও তো হয়েছে।এইজন্যই বুঝি মন খারাপ?
– না,ইফতির সাথে কাল রাতে আমার ঝগড়া হয়েছে,হাত ও তুলেছি ওর উপর।
– বাচ্চা নিয়ে সমস্যা?
– মা কথাটা শোনার পর অনেক খারাপ মন্তব্য করে,আর ইফতি মায়ের কথা গুলো আড়াল থেকে শুনে খুব রিএক্ট করে।আমি আসলে বুঝতে পারছিনা,আমি কি করবো।একদিকে ইফতি,অন্যদিকে মা।দুজনেই আমার খুব আপন।আমি যেমন মায়ের মুখে ইফতির বিরুদ্ধে কথা শুনতে চাইনা,তেমন ইফতির মুখেও মায়ের বিষয়ে খারাপ মন্তব্য সহ্য করতে পারবো না।আমি এমন ভাবে ফেঁসে আছি যে,বের হবার কোনো পথ ই খুঁজে পাচ্ছিনা।
– চিন্তা করিস না,সব ঠিক হয়ে যাবে।আর বাসায় গিয়ে ভাবির সাথে সব ঝামেলা মিটিয়ে নিবি। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া,মনোমালিন্য হয়েই থাকে।চল একটু বাইরে গিয়ে চা খেয়ে আসি,দেখবি ভাল লাগবে।
ফয়সাল মনে মনে ঠিক করলো,রাতে ইফতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবে।ইফতির সাথে ঝামেলা হওয়াতে কোনো কিছুতেই যে মন বসছেনা তার।
*****
রাত দশটা বাজে। ফয়সাল আসার সময় হয়ে গেছে।ইফতি মাথাটা একটু আচড়িয়ে,সুন্দর ভাবে মুখে হাসি ফুটিয়ে টেবিলে খাবার পরিবেশন করছিলো।
কলিংবেল বাজতেই ইফতি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো।ফয়সালকে দেখে ইফতি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো,
– এসেছো?
– হুমম।
– ব্যাগ আমার কাছে দাও।তুমি হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে খেতে এসো।
– মা,বাবা কোথায়?ভাইয়া কি ফিরেছে অফিস থেকে?
– ইফতি হাসি মুখে উত্তর দিলো,হুমম ফিরেছে।ভাইয়া প্রতিদিন পাঁচটায় বাড়ী ফিরে আসে বুঝেছো?আর মা,বাবা দুজনেই ঘরে আছেন।আমি ওনাদের খেতে ডাকছি,তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।
– ফয়সাল জানে ওর ভাইয়ের বাড়ী ফেরার সময়,শুধু ইফতির সাথে কথা বলার জন্যই জিজ্ঞাসা করা।
বাবা,মা, ফয়সাল, ফয়সালের বড় ভাই, ছোটো বোন, ভাবি,ভাতিজি, ইফতি সবাই একসাথেই খেতে বসলো। খাওয়ার সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা ও হলো।ফয়সাল শুধু ইফতির দিকে আড়চোখে দেখছিলো। মেয়েটা এমন ভাব করছে যেনো কিছুই হয়নি।তাহলে কি ইফতির রাগ কমেছে?
আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে নাকি মুখে হাসি ফুটিয়ে কষ্টের বোঝা মনে চেপে সবকিছু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে?
খাওয়া – দাওয়া শেষে ইফতি সব কাজ সেরে ঘরে এসে দেখলো,ফয়সাল নেই। ফয়সালের তো এখন ঘরে থাকার কথা, এতো রাতে আবার কোথায় গেল?আশপাশে খুঁজতে লাগলো।বাথরুমে যায়নি তো? কিন্তূ না সেখানেও নেই।তাহলে ফয়সাল আমার সাথে রাগ করে আলাদা ঘরে চলে গেলো না তো!কথাটা ভাবতেই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠে ইফতির।
বারান্দায় গেলো কিনা এটা ভেবে পা বাড়াতেই, ফয়সাল পেছন থেকে এসে ইফতিকে জড়িয়ে ধরলো।ইফতি চমকে গিয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো ফয়সাল।
– সরি।
– কেনো?
– কালকে রাতে তোমার উপর হাত তুলেছি তাই।
– সেটা তো আমি কখন ভুলে গেছি।
– বিশ্বাস করো ইফতি,সারাটাদিন যে আমার কতোটা কষ্টে কেটেছে আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।
– আমারও কি কম কষ্টে গেছে ভেবেছো?
– ফয়সাল পকেট থেকে একটা গোলাপ বের করে ইফতির খোঁপায় গুজে দিয়ে বললো,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
– আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
দুটি মনের সব কষ্টের শেষ হলো ভালোবাসার কিছু মুহূর্ত দিয়ে।
*****
সকালে ইফতি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানানোর জন্য রান্না ঘরে চলে যায়।রান্না ওর জা – ই করে,ও শুধু রান্নাতে সাহায্য করে।এখনও নতুন বউ বলে ইফতিকে রান্না করতে দেওয়া না হলেও,ইফতি অনেক সময় নিজের ইচ্ছে থেকেই রান্না করে।তাছাড়া ভাসুরের আগে ফয়সালের অফিস,ওর জা’য়ের আশায় থাকলে ফয়সালের অফিস যেতে লেট হয়ে যায়,দুপুরের খাবারটা ও নিয়ে যেতে পারেনা।বিয়ের আগে পর্যন্ত ফয়সাল দুপুরের খাবারটা বাইরেই খেতো কিন্তূ ইফতি চায় দুপুরের খাবারটাও যেনো ঘরের ই খেতে পারে।
ইফতি আপন মনে রুটি বানাচ্ছাছিলো,ওর জা’ চুলায় রুটি ভাজতে ভাজতে ও কে জিজ্ঞেস করলো,
– মা বললেন তুমি নাকি কনসিভ করেছো?
– জ্বি।
আমি বলি যদি ভালো চাও,বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলো।
– এটা কেমন কথা ভাবি? আমি আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি,এমন কিছু করবেন না যে,আপনাকে অসম্মান করতে বাধ্য হই।
– তুমি জানো সবাই এই নিয়ে কতো কানাঘুষা করছে?সবাই বলছে এই বাচ্চাটা নাকি ফয়সালের না।
– যার যা খুশি বলুক তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।কেনো আপনারা আমার সাথে এমন করছেন?কেনো আমার অনাগত সন্তানের পেছনে এভাবে লেগে আছেন?কেনো আপনারা আমার বাচ্চার জন্মের আগেই তার গলা টিপে হত্যা করতে চাইছেন?
– আস্তে কথা বলো,তুমিযে নতুন বৌ সেটা ভুলে গেছো?
– আমি কিছু ভুলে যাইনি শুধু হাঁপিয়ে গেছি আপনাদের এমন নোংরা মনমানসিকতা দেখে।
– নতুন বউএর এমন চিৎকার শুনে বাড়ীর সবাই রান্না ঘরের সামনে জড়ো হয়ে গেলো।সবাই জানতে চাইছে কি হয়েছে?ইফতি কোনো কথা না বলে,রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।নিজের ঘরের দিকে যাওয়ার সময় ফয়সালের সাথে ধাক্কা লাগলো, কিন্তূ কোনো কিছুর পরোয়া না করে ঘরে গিয়ে কাদতেঁ লাগলো।ফয়সাল ওর পেছন পেছন ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো,
– কি হয়েছে,ভাবির সাথে এমন ব্যাবহার কেনো করলে?
– সেটা তোমার ভাবিকেই গিয়ে জিজ্ঞেস করো।
– তোমাকে যখন জিজ্ঞেস করেছি,তুমিই বলো?
– কি আর বলবো,আমার বাচ্চা নিয়েই তাদের যতো সমস্যা।তোমাদের বাড়ীর মানুষ এতো নোংরা মনের কেনো?তোমার ভাবি আমাকে বলছে আমি যেনো আমার বাচ্চা নষ্ট করে ফেলি।কেনো তারা আমার বাচ্চার পেছনে এভাবে লেগেছেন?
– তাই বলে তুমি তার সাথে এমন ভাবে কথা বলবে?
– উনি যে আমাকে বাচ্চা নষ্ট করতে বললো,সেটার প্রতিবাদ না করে উল্টো আমাকেই দোষারোপ করছো?
– বাচ্চা,বাচ্চা,বাচ্চা!এই বাচ্চাটা আসার পর থেকে সংসারে যতো অশান্তি লেগে আছে।আমিও বলবো এই বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলো।আমার আর এতো ঝামেলা ভালো লাগছেনা।
এই বলে ফয়সাল আজকেও কিছু না খেয়ে অফিসে রওনা হলো।
সকল পাঠ পেজে দেওয়া হবে সবাইলে প্রফাইলে ডুকে ফলো দিয়ে রাখুন নেক্স পোস্ট দিলে নোটিফিকেশন পাবেন।
চলবে….