#খুন
পর্ব ৪
দুই দিন পর…
সকালে ফয়সালের বাবা শফিক মিয়া ,ফয়সালকে জিজ্ঞেস করলো,
– আমি আজকে বৌমাকে আনতে ওই বাড়ীতে যাবো?
– তোমার ইচ্ছে,যেতে চাইলে যাও।
ফয়সাল জানে ইফতি আসবেনা,তবে বাবাকেও যেতে বাধা দেয়নি।করুক না তাদের যা খুশি।
ফয়সাল রেডি হয়ে অফিসে চলে গেলো।
***”***
ফয়সালের বাবা আসবেন বলে,ইফতির মা ঘর, দোর সব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে গুছাতে লাগলেন।ইফতিকে গিয়ে বললেন,
– তুই তোর ঘরটা গুছিয়ে গোসল করে নে,তোর শশুর আসছে।আমি গিয়ে রান্না বসাই।
– কে আসছে?
– ফয়সালের বাবা।
– কেনো,উনি আসছেন কেনো?
– আমি কিভাবে বলবো উনি আসছেন কেনো,ফোন করে বললেন আসছেন।এখন আমি কি তাকে জিজ্ঞেস করতে পারি,কেনো আসছেন?
– উনি আমাকে নিতে আসছেন না তো?আমি কিন্তূ ওই বাড়ীতে আর যাবো না।ওনাদের যখন খুশি আমাকে বাড়ী থেকে বের করে দিবেন,আবার যখন খুশি নিতে আসবেন,খেলা পেয়েছে নাকি!
– তোকে ওই বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে নাকি তুই নিজের ইচ্ছেতেই এসেছিস।তুই বলার পর-ই আমি তোর বাবাকে পাঠিয়েছিলাম।
– কিন্তূ আগে তো ওনারাই তোমাদের ফোন দিয়ে আমাকে এখানে এনে রাখতে বলেছিলো,তাইনা?
– আমি এতো কিছু জানিনা।আর শোন তোর শ্বশুরের সাথে কোনো রকম বেয়াদবি করবিনা কিন্তূ।উনি আসলে সালাম দিয়ে কথা বলবি।
– মা,আমি ওনার সাথে কোনো রকম খারাপ ব্যাবহার করবো না,এইটুকু ভরসা আমার উপর করতে পারো।কারণ ওই বাড়ীতে উনিই একজন আছেন যিনি মানুষ,আর সব গুলা অমানুষ।
– কিভাবে ভরসা করি,ওইদিন জামাইয়ের সাথে যেমন ব্যাবহার করলি।ছেলেটা শেষ পযর্ন্ত না খেয়েই চলে গেলো।
– আমি বুঝিনা তুমি আমার মা নাকি ফয়সালের।ওরা আমার সাথে যা করেছে,তার তুলনায় এটা কিছুই না।আর শুনো,ফয়সালের বাবা যদি আমাকে নিয়ে যেতে চায়,আমি কিন্তূ যাবো না বলে রাখলাম।
– এই বিষয়ে কিছু বলার থাকলে তোর বাবাকে বল গিয়ে। আমাকে আর বকা শুনাশ না।তুই যাই করিস না কেনো,সব দোষ আমার ঘাড়ে এসে পরে।নিজের মেয়েকে তো শাসন করবেই না,আমাকে কথা শোনাবে শুধু।
ইফতির মা রান্না ঘরে ঘরে যেতে যেতে কথা গুলো বললেন।
ইফতি তার বাবার ঘরে গিয়ে ফয়সালের বাবার আসার কারণ জানতে চাইলে উনি বললেন,
– মনে হয় তোকে নিতে আসছেন।
– কিন্তূ বাবা আমি ওই বাড়ীতে যেতে চাইনা।
– এটা বললে কি চলে?বিয়ের পর স্বামীর বাড়ী মেয়েদের আসল বাড়ী।সংসারে একসাথে সবাই থাকতে গেলে,একটু আধটু ঝামেলা হয়েই থাকে তাই বলে কি স্বামীর বাড়ী ছেড়ে দিতে হবে?
– বাবা তুমি জানো না,ওরা কতোটা জঘন্য মনের মানুষ।ওরা আমার সাথে কি ব্যাবহার করেছে সেটা যদি জানতে,তাহলে এমনটা বলতে না।
– কি হয়েছে সেটা তো কয়েকদিন ধরেই জানতে চাইছি,তুই- ই তো কিছু বলছিস না।তোর মা ও কিছু বলেনা।
– মা বলেনা কারণ তুমি আমার করা কার্যকলাপের সব দায়ভার, মায়ের কাঁধে চাপিয়ে দাও।আমি কি এখনও ছোটো বাবা?আমি যা করি একান্তই নিজের মতামতের উপর করি,তুমি মা কে দোষারোপ করো কেনো বুঝিনা।
– ইফতির বাবা চুপ করে রইলেন।ইফতি তার বাবার হাতের উপর নিজের হাত দুটো চেপে ধরে বললো,
– বাবা আমি তোমাকে সবটা খুলে বলতে পারবো না,শুধু জেনে রাখো ওরা আমার সন্তানের খুনি।নিজের সন্তানের খুনিদের সাথে কিভাবে থাকবো বাবা?
– কি বলছিস এইসব?
– আমাকে একটু সময় দাও বাবা। এসব থেকে বের হতে একটু সময়ের দরকার আমার।
– কিন্তূ তোর নতুন বিয়ে হয়েছে,এভাবে বাপের বাড়ী থাকতে দেখলে আশপাশের মানুষজন নানান কথা বলবে।
– নিজের সন্তান এর থেকে কি মানুষের কথা বেশি বড়?পারাপর্শির কথার ভয়ে আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি,তুমিও লোকের কথার ভয়ে নিজের মেয়েকে হারিয়ে না ফেলো।
– এইসব কি বলছিস তুই,তোর মাথা ঠিক আছে?
ইফতি আর কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।
ফয়সালের বাবা আসার পর ইফতি খুব স্বাভাবিক ভাবেই তার সাথে কথা বললেন।দুপুরে সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়াও করলেন।ইফতিকে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ উঠলে,ইফতির বাবা বললেন,
– বেয়াই সাহেব আর কিছুদিন না হয় থাকুক।ওর শরীরটা ও বেশি ভালো নেই।কয়েকদিন পর না হয় আমি নিজে গিয়ে ও কে আপনার বাড়ী দিয়ে আসবো।
– শফিক মিয়া ও আর অমত করলেন না।কারণ উনি জানেন ইফতির শরীর আসলেই খারাপ।
তারপর বিকেলে হালকা পাতলা নাস্তা করে,শফিক মিয়া তার নিজের বাড়ীর উদ্দেশে রওনা দিলেন।
****
ইফতি খুব গভীর ভাবে ভাবছিলো কি করা যায়, কি করা উচিৎ।বাবাকে আজকে এগুলো বলে থামাতে পারলেও, কতোদিন থামানো যাবে।আর ইফতি মনে মনে এই সম্পর্ক টা থেকে মুক্তি চায়।বাবার সামনে কথাটা বলার সাহস পায়না শুধু।ওই বাড়ীর কথা মনে হলেই,মনের ভিতর অজানা রাগ ফুসলে উঠে। ফয়সালের কথা ভাবলেও ঘৃণা হয় ওর।এই সম্পর্কটা থেকে বেরোনোর কি কোনো পথ খোলা নেই!
ইফতির কোনোকিছুই ভালো লাগছিলো না। ড্রেসিং টেবিলের উপর চোখ যেতেই মোবাইলটা চোখে পরলো।ইফতি মোবাইলটা হাতে নিয়ে চার্জে দিলো।কয়েকদিন ধরেই ফোনটা বন্ধ। এতো ঝামেলার মধ্যে ফোনের কথা তার মনেই নেই।ফোনটা চার্জে দিয়ে অন করতেই,একটার পর একটা মেসেজ আসতে শুরু করলো।মেসেজ গুলো সিন করে দেখে সব গুলো ফয়সালের মেসেজ।অনেক অনেক মেসেজ।তার বেশির ভাগ মেসেজেই সরি লেখা। কয়েকটা মেসেজে ভালোবাসি লেখা।মেসেজ গুলো দেখে ইফতি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে,সব কিছুতে ফয়সালকে ব্লক করে আবার ফোনটা চার্জে দিয়ে দিলো।
এভাবেই দিনের পর দিন চলে যাচ্ছিলো।ফয়সাল আর ইফতির মাঝে কোনো যোগাযোগ নেই।তবে ফয়সাল ইফতির মায়ের কাছে ফোন করে ইফতির খবরাখবর নেয়।ইফতিকে ফোন করার কোনো উপায় তো ইফতি রাখেনি,সব কিছুতেই ব্লক করে রেখেছে।তারপরও ফয়সাল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম্বার থেকে ফোন দেয়,ইফতি অচেনা নাম্বার দেখে রিসিভ করেনা।
****
ইফতির বাবা বাজার করে ফেরার সময়,পাশের বাড়ীর এক ভদ্রলোক তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
– ভাই শুনলাম আপনার মেয়ে নাকি ঝগড়া করে চলে এসেছে।শ্বশুর বাড়ীর মানুষ নাকি আপনার মেয়েকে আর নিতে চায়না?
– আপনি এসব কথা কোত্থেকে শুনলেন,কে বলেছে?
– এইসব কথা বাতাসের আগে আগে ঘুরে।
– বিয়ের পর কি মেয়েরা বাপের বাড়ী এসে কয়েকদিন থাকতে পারেনা?
– অবশ্যই পারে।আমি তো শোনা কথা বিশ্বাস করিনাই তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম।
– ইফতির বাবা আর কোনো কথা না বলে,বাসায় চলে আসলেন।
বাসায় এসে বেশ রাগের সাথে ইফতির মা কে বললেন,
– তোমার মেয়ে কই?ওরে ডাকো কথা আছে এই বলে নিজেই উচ্চস্বরে ডাকতে লাগলেন।
– ইফতি,এই ইফতি!
– বাবার এমন আওয়াজ শুনে ইফতি বুঝে ফেললো,কিছু একটা হয়েছে।কারন তার বাবা খুব বেশি রেগে গেলে এভাবে চিৎকার করেন।
– কি হয়েছে বাবা?
তুই আজকে ফয়সাল কে আসার জন্য ফোন করবি,ও আসলে তুই ওর সাথে শ্বশুর বাড়ী চলে যাবি।
– তাড়িয়ে দিচ্ছো বাবা?
– যদি তুই সেটাই ভাবিস আমার কিছু করার নেই।বাইরে তো যাসনা,মানুষ কতো রকমের কথা বলছে,জানিস ও না।তাই বলছি মানসম্মান বাঁচাতে চাইলে তোকে চলে যেতেই হবে।ইফতির বাবা ইফতির দিকে মোবাইল টা এগিয়ে দিয়ে বললেন,এই নে ফয়সাল কে ফোন কর।
– কিন্তূ বাবা…
– ফোন করতে বলেছি, কর।
– ইফতি বাধ্য হয়ে ফয়সাল কে আসার জন্য ফোন করে,এছাড়া আর কোনো উপায় ও নেই।ফয়সাল ও রাতে আসবে বলে কথা দেয়।
****
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।ইফতি তার মা কে গিয়ে বললো,
– মা,রাতে ফয়সাল আসবে জানো তো?
– হুম।
– রান্না করা লাগবেনা ওর জন্য?
– করা তো লাগবেই।একটু পর করবো।
– চলো আমিও তোমার সাথে সাথে রান্নায় সাহায্য করবো,আর তুমি কিন্তূ ফয়সালের পছন্দের সব আইটেম রান্না করবে আজকে।
– মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে একটু অবাক হলেও,হাসি মুখে বললেন,রাগ কমেছে তাহলে?
– ভাবলাম যেহেতু ওই বাড়ীতে যেতেই হবে,ঝামেলা মিটিয়ে ফেলাই ভালো না?
– যাক,আমার মেয়ের অবশেষে শুবুদ্ধি হয়েছে তাহলে।
ইফতি ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে মায়ের কথায় সায় জানালো।
বাইরে প্রচুর ঝড় আর বাতাস শুরু হয়েছে।সব ঝড়ঝাপটা উপেক্ষা করে ফয়সাল ইফতির বাসায় চলে আসলো।ইফতির মা ফয়সালের পছন্দের অনেক রকমের খাবার রান্না করেছেন। ইফতিও ওনার সাথে রান্নায় সাহায্য করেছে।
পরিবারের সবাই একসাথেই খাওয়া দাওয়া করলো। ইফতি হাসি মুখে সবাইকে টেবিলে খাবার পরিবেশন করে দিচ্ছিলো।।ইফতির বাবা, মা মেয়ের মুখে এমন হাসি দেখে অনেক টা নিশ্চিন্ত হলেন। খাওয়া শেষে,যে যার ঘরে চলে গেলেন।
ইফতি বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলো,ফয়সাল ও ইফতির পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে লাগলো।ফয়সালের মনে একরকম প্রশান্তি অনুভূত হচ্ছিলো।অনেকদিন পর দুজনে এভাবে পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে। অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তূ কোথা থেকে শুরু করা যায় বুঝতে পারছেনা।ফয়সালের মনে হচ্ছিলো ইফতিও ও কে কিছু বলতে চায়। হয়তো ওর মতো ইফতির ও আন-ইজি ফীল হচ্ছে।
এভাবে অনেক সময়, একে অন্যের পাশে দাড়িয়ে থাকা সত্বেও যখন দুজনেই নিরব,নিরবাক্য, ফয়সাল তখন ইফতির হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল নিজের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দ্বাড়া আকরে ধরে ইফতির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।ভাবলো ইফতি হয়তো এখন নিরবতা ভাঙবে। কিন্তূ ইফতি আগের মতোই নিরব দাড়িয়ে আছে।ফয়সাল ইফতির আরেকটু কাছে গিয়ে,ইফতিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।খোলা চুল গুলো ঘার থেকে সরিয়ে একটা চুমু দিলো।ইফতির কোনো রেসপন্স না পেয়ে ফয়সাল ইফতিকে ছেড়ে দিয়ে দাড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষন এভাবেই দাড়িয়ে থেকে,মনে মনে ভাবলো,ইফতি রেসপন্স করছেনা ঠিক কিন্তূ বাধাও তো দিচ্ছেনা।ওর মনে অনেক অভিমান জমেছে আর স্বামী হিসেবে অভিমান ভাঙ্গানোর দায়িত্ব তো তার – ই।
ফয়সাল এবার ইফতিকে বারান্দা থেকে কোলে তুলে,ঘরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে এলোমেলো চুল গুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো,
– ইফতি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
– ইফতি এবার নিরবতা ভেঙে প্রশ্ন করলো,সত্যিই ভালোবাসো?
– হুম,অনেক ভালোবাসি।
– এতোই যখন ভালোবাসো,তাহলে সেদিন তোমার ভাবির বলা কথার প্রতিবাদ করোনি কেনো?তোমার মা যখন আমাকে অপবাদ দিলো তখনো তুমি চুপ ছিলে,কেনো?
– ইফতি এইসব কথা থাকনা,যা হবার হয়ে গেছে।এসব কি ভুলে যাওয়া যায়না?
– কিভাবে ভুলে যাবো? ওনারা আমার সাথে যা করেছে ,সেটা কি ভুলে যাওয়ার মতো?
– ইফতি চলো না,আমরা এসব ভুলে সব কিছু নতুন করে শুরু করি।
– নতুন করে শুরু করতে চাইলেই কি করা যায়?
– একে অপরের প্রতি ভালোবাসা থাকলে,সব-ই সম্ভব।
– ভালোবাসা?ভালোবাসার মানে তুমি বুঝো?তোমার কাছে ভালোবাসা মানে তো স্ত্রীর সাথে এক বিছানায় রাত কাটানো তাইনা?
– ইফতি আমি জানি তুমি আমার উপর রেগে আছো,ভিশন ভাবে রেগে আছো।তাই বলে এভাবে কথা বলতে পারো না।
– তোমাদের মতো নোংরা মানুষের সাথে তো কথা বলতেই ইচ্ছে করেনা,তবুও নিজেকে সংযত রেখে কথা বলছি এটাই অনেক।
– তোমার কি মনে হচ্ছেনা তুমি একটু বেশিই সাহস দেখাচ্ছো?
– সাহস দেখালে কি করবে,মারবে?নিজের সন্তানকে তো পৃথিবীর মুখ দেখার আগেই মেরে ফেলেছো,এখন কি আমাকেও মেরে ফেলবে?
– ইফতি চুপ করো।আমি ধর্য হারা হয়ে পড়ছি। তোমাকে ভালোবাসি বলেই চুপ করে আছি,তোমার বলা প্রতিটা কথা নিরবে সয়ে যাচ্ছি।এর বেশি কিছু বললে আমার ধর্যের বাঁধ ভেঙে যাবে।
– আমাকে ভালোবাসো? হাহাহা, হাসালে।তুমি আমাকে ভালোবাসো না,ভালোবাসলে আমার গর্ভের সন্তানকে ও ভালোবাসতে।তোমার কথায় আমি নিজের অনাগত সন্তানকে মেরে ফেলতে বাধ্য হয়েছি।আমার সাথে অন্যায় করবে আর দিনশেষে ভালোবাসি বলে সব কিছু মিটিয়ে নিবে, বাহ্ কি দারুন প্ল্যান!
– কোনো প্ল্যান নয়,আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি।
– ভালোবাসার নামে আর মিথ্যে বলোনা প্লিজ,আমার আর মিথ্যে শোনার কোনো ইচ্ছে নেই।হাঁপিয়ে গেছি আমি। দয়া করে আমাকে এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি দাও।
– মুক্তি?তুমি কি বলছো বুঝতে পারছো?
– খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।কি ভেবেছো যা খুশি করবে, আর ভালবাসি বলে জড়িয়ে ধরবে তাহলেই সব ভুলে যাবো?আসলে কি জানো,তুমি আমাকে কখনোই ভালবাসনি।নিজের শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য ওইসব বলো।তোমার কাছে ভালোবাসা মানেই এক বিছানায় রাত কাটানো।আসলে তোমার আমাকে নয়,একটা নারীর দরকার, নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য একটা শরীর দরকার,আর কিছুনা।
– ইফতি তুমি কিন্তূ মাত্রাধিক বাড়াবাড়ি করছো।
– কেনো,সত্যি কথা শুনতেই গায়ে ফোস্কা পড়ছে?আসলে আমি যতটুকু বলছি,তুমি এর চাইতেও বেশী খারাপ।
– আমি মেনে নিচ্ছি সব দোষ আমার, কিন্তূ তুমি কি নিষ্পাপ,তোমার কোনো দোষ নেই?তুমি যে বাচ্চাটা নষ্ট করেছো,আমার অনুমতি নিয়ে করেছো?ধরে নিলাম আমার সেদিনের বলা কথাকেই তুমি অনুমতি ধরে নিয়েছো, কিন্তূ ইফতি মা হিসেবে তোমার কি কোনো দায় দায়িত্ব ছিলো না?কেনো তুমি সবার কথা উপেক্ষা করে নিজের সন্তানকে রক্ষা করলে না?আমার রাগে বলা কথা গুলো কি নিজের সন্তানের চাইতেও বেশী গুরুত্ব পূর্ণ ছিলো? এসবের জন্য আমিও তোমাকে দোষ দিতে পারি।তুমি শুধু আমার আর আমার পরিবারের দোষ গুলো বড় করে দেখছো।আমি বলছিনা আমি বা আমার পরিবার নির্দোষ, কিন্তূ এইসবে আমিও তোমাকে সমান দোষী করতে পারি।আর তুমি বলোনা আমাদের বাড়ীর লোকজন নোংরা?আমি বলবো তুমি তার থেকেও বেশি নোংরা মনের।নিজের স্বামী কে যে এতোটা নিচে নামাতে পারে, স্বামী স্ত্রীর পবিত্র ভালোবাসা কে এভাবে খারাপ তকমা দেয়,সে আর যেমন-ই হোক ভালোবাসার যোগ্য নয়।তুমি মুক্তি চাইছো না আমার কাছে?ওকে সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এই বলে ফয়সাল ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো,ইফতি পেছন থেকে বললো,
– কোথায় যাচ্ছো?
– কোথায় আর যাবো আমার তো একজন নারীর দরকার,নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য একটা শরীর দরকার তার খোঁজেই যাচ্ছি।
– কিন্তূ বাইরে তো অনেক ঝড়, বৃষ্টি হচ্ছে।
– আমার মনের ভেতরে চলা ঝড়ের তুলনায় এটা কিছুই না।
এতো রাতে মেইন গেট খোলার আওয়াজ শুনে ইফতির মা নিজের ঘর থেকে উঠে এলেন,মেইন গেট খোলা দেখে আরেকটু কাছে এসে দেখলেন ফয়সাল এই গভীর রাতে ভরা বৃষ্টির মধ্যে চলে যাচ্ছে।
ইফতির মা রাগে ইফতির ঘরে গেলেন।
চলবে….