#খুন
পর্ব ৫ ও শেষ
ইফতির মা ইফতির ঘরে গিয়ে,খুব কড়া ভাষায় কথা শোনাচ্ছিলেন।
– এই ছিলো তোর মনে?এইজন্যই ডেকে এনেছিলি ও কে ?কি এমন বলেছিস যে,এমন ভরা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চলে গেলো?
– আমি এই সম্পর্কটা থেকে মুক্তি চেয়েছি।
– মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে চমকে যায় ইফতির মা।সে বুঝতে পারলো বকলে কাজ হবেনা,মেয়েকে বোঝাতে হবে।
– ইফতির মা ইফতির পাশে গিয়ে বসলেন,মাথায় হাত রেখে বললেন,মা রে জীবনে চলতে গেলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।অনেক মানুষের সাথে চলতে হয়।এদের সবাই যে ভালো হবে তা কিন্তু নয়,খারাপ ভালো মিলেই পৃথিবী।তাই সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে কি করতে হবে জানিস?
– ইফতি ওর মায়ের দিকে মাথা তুলে তাকালো।
– ক্ষমা করতে হবে।কারণ ক্ষমা ই তোকে একমাত্র মানসিক শান্তি দিতে পারে।অতীত কি কেউ বদলাতে পারে?পারেনা।আমি বুঝতে পারছি তুই এতো কষ্ট কেনো পাচ্ছিস,নিজের সন্তানকে হারানোর কষ্ট কে কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা যায়না। কিন্তূ যা হওয়ার তা হয়েছে,এসব নিয়ে যতো ভাববি কষ্ট বাড়বে বৈকি কমবেনা।তোর এই রাগ,অভিমান,ফয়সালের থেকে তোকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে।আর এই দুরত্ব তোর মানসিক কষ্ট আরো বাড়িয়ে দিবে।তোর বাবার সাথে কি আমার ঝগড়া হয়না?রাগের মাথায় ঝগড়া করলেও,যখন রাগ শেষ হয়ে যায় তখন সব ভুলে যাই। আরে,পৃথিবীটাই তো এমন।সংসারে ঝগড়া থাকবে,ভালোবাসা থাকবে এমনই তো হয় সংসার।তুই শুধু ফয়সালের খারাপ দিকটাই দেখছিস,ওর কি কোনো ভালো দিক নেই?ওর ভালোর দিক গুলো ভেবে ওর সাথে থেকে যাওয়া যায়না?
– কিন্তূ মা, ফয়সাল তো আমার কাছে ক্ষমা চাইতে পারতো, তা না করে উল্টো আমাকেই দোষারোপ করলো।
– মা রে,আমি যতটুকু বুঝেছি,ফয়সাল ও তোর বাবার মতো বদমেজাজি কিন্তূ খারাপ মানুষ নয়।আর ও যে ক্ষমা চায়নি এমনও তো নয়,তুই কি ও কে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দিয়েছিস?
– কিন্তূ আজকে ক্ষমা চাইলো না কেনো?
– সেটা আমি জানিনা,তবে একটা কথা মনে রাখবি,ছেলেরা মনে মনে যা চায়,সব সময় সেটা মুখে বলতে পারেনা।হয়তো ফয়সাল ও তেমন।মনে এক মুখে আরেক। তবে এইসবের জন্য ওর ও কষ্ট হচ্ছে,শুধু মুখ ফুটে বলতে পারছেন। ও কে বোঝার চেষ্টা কর,তাহলে দেখবি ও তোকেও বুঝতে পারবে।
– আমি আর এসব নিতে পারছিনা মা,আমি এই কষ্ট থেকে মুক্তি চাই ।
– বিয়ে ভেঙে দিলেই তোর কষ্ট কমে যাবে ভাবছিস?ধরলাম বিয়ে ভেঙেই দিলি, কিন্তূ তোকে কি তোর বাবা ঘরে বসিয়ে রাখবেন? রাখবেন না। কিছুদিন পরে বিয়ে দিয়ে দিবেন।যদি ওই পরিবার এর চাইতেও খারাপ হয়,তখন কি করবি?আবার বিয়ে ভেঙ্গে দিবি?মা রে, জীবনে না চাইতেও অনেক কিছু করতে হয়, বাধ্য হয়েই করতে হয়।।মেয়েরা চাইলেই নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে পারেনা।অনেক বাধ্যবাধকতা থাকে।মেয়েদের কে অনেক সময় অন্যায় অবিচার হজম করেই চুপ করে সংসার করে যেতে হয়।আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা টাই এমন,আমরা এর বাইরে নই।
বাইরে থেকে অনেকেই তোকে বলবে,এমন অন্যায় মেনে নেওয়া যায়না,এমন খারাপ পরিবারের সাথে থাকা যায়না।আরো বলবে সব ছেড়ে নিজের মতো বাঁচতে শেখো কিন্তূ তুই ওদের কথা শুনে একা থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও, একাকীত্বের সময় ওদের কে পাশে পাবিনা।ওরাই একসময় তোর দিকে আঙুল তুলে বলবে,স্বামীর ঘর করতে পারেনি, ডিবর্সি।
যা হয়েছে ভুলে যা।উপর ওয়ালা যদি চান তাহলে তোদের ঘর আলো করে,অনেক সন্তান আসবে,দোয়া করি।সব ভুলে গিয়ে জীবনটা টা নতুন করে শুরু কর।
এই বলে ইফতির মা নিজের ঘরে চলে গেলেন।
– ইফতি ওর মা চলে যাওয়ার পর,চিৎকার করে কাদতেঁ লাগলো।কেনো জানি অপরাধ বোধ হচ্ছে ওর।ফয়সাল ঠিকই বলেছে,কেনো সবার কথা উপেক্ষা করে নিজের সন্তান কে রক্ষা করলো না।নিজেই নিজের সন্তান কে মেরে ফেলেছি আমি,এই বলে আরো জোরে কাদতেঁ লাগলো।
ফয়সালের জন্যও চিন্তা হচ্ছে এখন।তখন রাগের মাথায় কতো কিছু বলেছে।মনের যতো জমানো রাগ ছিলো,সব ওর উপরে ঝেরেছে।অনেকদিনের জমানো রাগ ঝেড়ে হালকা হলেও, সস্তি মিলছেনা কোথাও।
****
বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই,বাজ ও পড়ছে সমান গতিতে, কিন্তূ ফয়সালের সেই দিকে কোনো খেয়ালই নেই।গভীর রাত,বৃষ্টির কারণে কোথাও কোনো গাড়ি নেই,জনমানবহীন রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আপন মনে হেঁটে যাচ্ছে ফয়সাল।মাথার উপর এতো বৃষ্টি থাকা সত্বেও,ভেতরের জ্বলন্ত আগুন যেনো নিভছেই না।
হঠাৎ রাস্তার একটা ইটের সাথে হোচট খেয়ে মাটিতে পরে গিয়ে হাতে পায়ে আর মাথায় খুব ব্যাথা পেলো।মাটি থেকে উঠে ওখানেই বসে পড়লো,তারপর আকাশের দিকে মুখ করে চিৎকার করে কাদতেঁ লাগলো।গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো,
– আমি কেনো ইফতির সাথে এমনটা করলাম,আমি ওর কাছে ক্ষমা না চেয়ে উল্টো ও কে আরও কষ্ট দিলাম।আমাকে ক্ষমা করো ইফতি,আমি তোমাকে কিভাবে বোঝাবো আমি কতোটা কষ্টে আছি।আমি খুব খারাপ একজন মানুষ,একজন খারাপ স্বামী।যদি পারো ক্ষমা করিও।
ফয়সালের অনেক কষ্টেও কান্না আসেনা, কিন্তূ আজ তার খুব কান্না পাচ্ছে।বৃষ্টির সাথে নিজেও অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে।কেনো কাঁদছে,ইফতিকে ঐভাবে কষ্ট দিয়ে কথা বলার জন্য?নাকি নিজের সন্তান এর খুনের দায়ে?নাকি ইফতিকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলার ভয়ে!নিজেকে যখন একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছিলো,কোনো সঠিক উত্তর খুঁজে না পেয়ে আবারও চিৎকার করে কাদতেঁ লাগলো। ফয়সাল রাস্তা থেকে ওঠার চেষ্টা করলো, কিন্তূ পারছিলো না।ওর চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিলো।মাথাটাও কেমন যেনো ঘুরছে।গলাটা শুকিয়ে আসছে। ডান হাতের কব্জির কাছে খুব জ্বলছে,মনে হচ্ছে কেউ যেনো ছুরি দিয়ে হাত কেটে দিয়েছে।ফয়সাল বাম হাত দিয়ে ডান হাত দেখার চেষ্টা করেও পারছিলো না,শরীর এতোটাই দুর্বল লাগছে যে,মনে হচ্ছে এই বুঝি মারা যাচ্ছে।
এমন সময় একটা গাড়ী আসার শব্দ এলো কানে,গাড়ির আলোয় সামনে আলোকিত হতে দেখে ফয়সাল একটু ভরসা পেলো।
*****
ইফতি ঘর ছেড়ে বারান্দায় এসে দাড়িয়ে ফয়সালের কথা ভাবতে লাগলো,
কে জানে ফয়সাল এখন কোথায়। বাড়ীতে পৌঁছে গেছে কিনা। ইফতির খুব কষ্ট হচ্ছে।একবুক হাহাকার তাকে জাপটে ধরেছে।কেনো এতোটা খারাপ লাগছে, কিছুক্ষন আগেও তো ফয়সালকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কতো বাজে বাজে কথা বলেছে।না কোথাও শান্তি পাচ্ছেনা ইফতি। বারান্দায় আর ঘরে পায়চারি করতে লাগলো।বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা ও করলো কিন্তূ কিছুতেই ঘুম আসছেনা।ভিশন কষ্ট হচ্ছে। কান্নাও পাচ্ছে খুব।মায়ের বলা কথা গুলো ভাবতে লাগলো।ইফতির ও মনে হলো,মা ই ঠিক।এভাবে মনের মধ্যে রাগ চেপে রেখে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার থেকে সব ভুলে যাওয়াই উচিৎ।আর আমিও তো একদম নির্দোষ নই,ওরা যাই বলুক না কেনো,বাচ্চা নষ্ট করার পদক্ষেপ টা আমিই নিয়ে ছিলাম।ফয়সালের উপর এখন আর আগের মতো রাগ হচ্ছেনা।মায়ের কথা মতো ফয়সাল কে মাফ করে দিলো।কালকে আবার ফয়সালের কাছে ফিরে যাবে বলে,মনস্থির করলো। এটা ভাবতেই ওর মনটা খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।ইফতি বুঝতে পারলো,আসলে ও কি চায়,ফয়সালের কাছেই ওর আসল শান্তি।আর ওর মায়ের বলা প্রতিটা কথাই যে সত্যি হারে হারে টের পাচ্ছে।
এইসব ভেবে খুব অস্থিরতা কাজ করছিলো ওর মনে।
চোখে ঘুম নেই তবুও বিছানায় শুয়ে ঘুমের চেষ্টা করছিলো।একসময় চোখ দুটো লেগে এলো।সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো তার।
– ইফতি মা, ওঠ ।
– ইফতি আধো আধো চোখ খুলে তার মা কে দেখছিলো।
– ওঠ মা,আমাদের এক জায়গায় যেতে হবে।
– কোথায় মা?
– তুই মুক্তি চেয়েছিলি না ?আজ তোর মুক্তির দিন।
– কেনো মা,ফয়সাল কি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়েছে?
– হুম,চল আমাদের ওখানে যেতে হবে।
এই বলে ইফতির মা কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
– ইফতি তার মায়ের কান্নার কারণটা বুঝতে পারলো।ওর মা কখনো চায়নি ইফতির সংসার টা ভেঙে যাক,তাই এমন কষ্ট পাচ্ছে। তবে চিন্তার কিছু নেই,আমি আজ ফয়সালের সাথে সব ঝামেলা মিটিয়ে নিবো।
– ইফতির মা আবার ডাকলেন,কি হলো যাবিনা?
– হুমম যাবো,আমাকে যেতেই হবে।
– ইফতি খেয়াল করলো,মায়ের চোখের কোণে এখনও পানি টলমল করছে।
– ইফতি মনে মনে বললো, মা, তুমি যা চাও তাই হবে,এভাবে কষ্ট পেওনা,দেখে নিও তোমাকে কেমন চমকে দেই।
ইফতি রেডি হয়ে ওর মাকে ডাকতে লাগলো,
– মা কোথায় তুমি,আমি রেডি।
বাসা থেকে একটা সিএনজি করে,ইফতি,ইফতির বাবা,মা রওনা হলেন।ইফতি সিএনজি তে ওর বাবার দিকে বার বার খেয়াল করছিলো। ভাবছিলো বাবা এতো শান্ত হয়ে আছেন কেনো।বাবার তো এখন তাকে খুব করে বকার কথা। রাগি মানুষটা কে এমন শান্ত দেখে ইফতি বেশ অবাক হয়, কতোটা কষ্ট পেলে রাগি মানুষ রা এভাবে শান্ত হয়ে যেতে পারে!বাবা,মা দুজনেই কাঁদছেন। বাবা আমি বোধহয় তোমাকে খুব বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছি,ধর্য ধরো খুব শীগ্রই তোমাদের কষ্টের অবসান ঘটবে।
সিএনজি একটা হাসপাতালের সামনে এসে থামলো।ইফতি বললো,
– বাবা আমরা না উকিলের কাছে যাচ্ছি,তাহলে হাসপাতালে এসেছি কেনো?
– ওরা সবাই ওখানেই অপেক্ষা করছে।
– ইফতি একটা বড়ো নিঃশ্বাস ছেড়ে, মনে মনে বললো,কি আজব ফ্যামিলিতে পড়েছি রে বাবা।মাথা খারাপ ফ্যামিলি একটা।তবুও এদের সাথেই আমাকে সারাটা জীবন থাকতে হবে।এদের কে নিয়েই থাকতে চাই।
ইফতি ওর বাবার পেছন পেছন যাচ্ছিলো,একটা রুমের সামনে ওর বাবা থেমে গেলে, ইফতিও থেমে যায়।
ইফতি বাইরে ফয়সালের পরিবারের অনেককেই দেখতে পায়।সবার চোখেই পানি।ইফতি ভাবছে,আমাদের ডিভোর্সের কারণে ওনারা কতোটা কষ্ট পাচ্ছেন,ভালোবাসা না থাকলে কি এতোটা কষ্ট পেতো?আর আমি কিনা এদেরকেই এতোদিন শত্রু ভেবে এসেছি। ইফতি রুমের সামনে ওর ভাসুরকে দেখতে পেয়ে,ওনার কাছে যায়।কাছে যেতেই ইফতির ভাসুর বললো,
– আমার সাথে এসো।
– কোথায় ভাইয়া?
– ফয়সালের কাছে।
– ফয়সাল কোথায়?
– চার তলায়।
– ইফতি এবার মনে মনে খুব বিরক্ত হচ্ছিলো।এরা সবাই পাগল নাকি! একেতো উকিলের চেম্বারে না গিয়ে হাসপাতালে এসেছেন,আবার ফয়সাল গিয়ে চার তলায় বসে আছেন।কি যে শুরু করেছে এরা!
চার তলা যাওয়ার পর,ইফতি ওর ভাসুরকে জিজ্ঞেস করলো,
– ভাইয়া,কোথায় ফয়সাল?
– উনি হাতের ইশারায় একটা রুম দেখিয়ে দিলেন।
– ইফতি রুমটার ভেতরে ঢুকে কোনো কিছুই দেখতে না পেয়ে আবার ফিরে এসে বললো,ভাইয়া রুমটা তো খালি।
ইফতির ভাসুর ইফতিকে নিয়ে ওই রুমে গিয়ে বললেন,
– ঐযে দেখতে পাচ্ছো ২০৯ নাম্বার ড্রয়ার?ওখানেই ফয়সাল ঘুমিয়ে আছে?
– ড্রয়ারে কেনো?এটা বলতেই ইফতির মনে পড়লো,টিভিতে সে দেখেছিলো, মর্গের ড্রয়ারে মৃত মানুষের লাশ রাখা হয়,তার মানে কি ফয়সাল মৃত???
ইফতি দৌড়ে গিয়ে ২০৯ নাম্বার ড্রয়ার খুঁজতে লাগলো,এইতো ২০৯ নাম্বার ড্রয়ার।ইফতি খুলতে চেয়েও খুলতে পারছেনা।হাত পা অবশ হয়ে আসছে।মাথায় কিছু কাজ করছেনা,পাগল পাগল লাগছে।একজন নার্স রুমে ঢুকে ইফতিকে দেখে বললেন
– এখানে বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকা যাবেনা।লাশ দেখার হলে তাড়াতাড়ি দেখে বের হতে যান।
– ইফতির কোনো জবাব না পেয়ে উনি জিজ্ঞেস করলেন, কতো নাম্বার ড্রয়ার?
– ইফতি হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিতেই উনি ড্রয়ার টা খুললেন।
– ইফতি ফয়সালের নিথর দেহটা দেখতে পায়,মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।ইফতি সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
জ্ঞান ফেরার পর ইফতি দৌড়ে আবার মর্গের রুমে যেতে চাইলে,ওর মা জড়িয়ে ধরে রাখে।যেতে দেয়না।ইফতি ওর মা কে বললো,
– কেনো এমন হলো মা?আমি তো এমনটা চাইনি।সত্যি বলছি মা ভেবে ছিলাম আজ ফয়সালের সাথে সব ঝামেলা মিটিয়ে তোমাদের কে চমকে দিবো, কিন্তূ কে জানতো ফয়সাল আমাকে এভাবে চমকে দিবে।মা আমি তো এমন মুক্তি চাইনি।কেনো এমন হলো মা,কেনো?
– ইফতির বাবা ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করলেন,মৃত্যুর কারণ কি?
– ডাক্তার বললেন,ওনার মাথার পেছনে একটা আঘাত দেখতে পেয়েছি,সম্ভবত পরে গিয়েছিলেন। পায়েও সামান্য আঘাত।তবে,হাতের আঘাত টা গুরুতর।হাতের রগ কেটে অথবা ফেটে গিয়েছিলো। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের জন্যই মারা গেছেন।আসলে কাল রাত তিনটায় আমরা একটা অপারেশন জন্য কয়েকজন ডাক্তার মিলে ঢাকা সিটি হসপিটালের দিকে যাচ্ছিলাম।সেখানেই রাস্তার মাঝে তাকে পরে থাকতে দেখে আমরা হসপিটাল নিয়ে আসি।আফসোস আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি।তবে তার মৃত্যুটা আমাদেরকেও ভাবাচ্ছে।এত রাতে একটা মানুষ ছাতা ছাড়া বাইরে বের হলেন কেনো,কি এমন প্রয়োজন ছিলো তার?
– প্রশ্নের জবাবে ইফতির বাবা নিরবতা পালন করলেন।
ডাক্তারের কথা গুলো শুনে ইফতি ওর মা কে বললো,
– আমি ফয়সাল কে মেরে ফেলেছি মা।আমার কারনেই আজ ওর এমন দশা।কেনো আমি কালকে ও কে থামালাম না।যদি থামাতাম তাহলে আজ হয়তো ও পৃথিবীতে বেঁচে থাকতো,আমাদের সাথে থাকতো।এই বলে চিৎকার করে কাদতেঁ লাগলো।
– নারে মা, কার মৃত্যু কোথায় আছে,কিভাবে আছে কেউ বলতে পারেনা।ইফতির মা ও কাঁদছেন।
– ইফতির হাসপাতালে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো,তাই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে খোলা আকাশের নিচে গিয়ে,চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। বিশাল আকাশটা টার দিকে তাকিয়ে যখন কাঁদছিল,ইফতি অনুভব করলো,আকাশ বাতাস,গাছপালা সবাই ও কে বলছে,
– ইফতি কাঁদছো কেনো,তুমিতো এটাই চেয়েছিলে।আজ থেকে তুমি মুক্ত, স্বাধীন….
আজকের পরে আর কেউ তোমাকে কষ্ট দিতে পারবেনা।কেউ তোমাকে কাদাবে না।এখন তো তোমার খুশি হওয়ার কথা।
ইফতি কাদছে আর ভাবছে,জীবন কতো অতভূৎ,একসময় মুক্তি চেয়েছি, কিন্তূ আজ মুক্তি পেয়েও খুশি হতে পারছি না।
****
ফয়সালের দাফন শেষ হলো।সবাই যার যার মতো চলে যাচ্ছে।সন্ধ্যা নেমে এসেছে।বৃষ্টি ও হচ্ছে খুব।ইফতিকে ওর মা হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন।ইফতি ওর মায়ের হাত থেকে নিজের হাত টা ছাড়িয়ে,কবরের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো।কবরের খুব কাছে গিয়ে আস্তে করে বললো,
– তুমি নও ফয়সাল,আমিই হয়তো আসল খুনি।
আমি গল্পটা অন্যভাবে করতে চেয়েছিলাম, কিন্তূ ছোট কাকা মারা যাওয়ায় লিখাতে মন বসাতে পারছিনা, আধও কবে লিখার ইচ্ছে হবে সেটাও জানিনা।পাঠক রা অপেক্ষায় থাকবেন বলে এভাবে শেষ করে দিয়েছি।
ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ।
পুরো গল্পটা কেমন লেগেছে সকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
যারা পেজ ফলো না করে গল্প পড়ছেন তারা এক্ষুনি পেজটা ফলো করে বেল বাটনে Subscribe করে দিন।তাহলে নতুন গল্প পোস্ট করার সাথেই নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন। না হলে পরবর্তী পর্ব মিস হতে পারে।