কনে বদল পর্ব ১০
আমজাদ সাহেবের মনে হচ্ছে আনোয়ারা তাকে কিছু বলতে চায় কিন্তু বলতে পারছে না। সে ঠিক করতে পারছে না সে কি সরাসরি জিজ্ঞেস করবে না কি হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকবে।
আনোয়ারা তেমন কিছুই বলছে না। আমজাদ সাহেবের প্রিয় কই মাছ পাতে তুলে দিয়ে বলল, “মাছটা কেমন হয়েছে খেতে?”
আমজাদ সাহেব হাত দিয়ে একটু মাছ মুখে পুরে টেস্ট করে বললেন, ” খুব ভালো হয়েছে! এ মাছ চারুর খুব পছন্দ তা-ই না?”
আনোয়ারা অবাক হয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকে। মানুষটা দেখি মেয়েদের সামান্য পছন্দের খবরও রাখে!
“কি হলো তোমরা বসছ না কেন! বসো একসাথে খাই।”
আনায়ারা নায়লা কে ভাত দিয়ে নিজেও বসে স্বামীর পাশের চেয়ারে। একবার আড় চোখে স্বামীর দিকে তাকায়। মানুষটা কে সে কতখানি ভালোবাসে তা কি এ মানুষটা জানে? বিয়ের বত্রিশ বছর কেটে গেছে। তবুও মানুষটার প্রতি মায়া একটুও কমেনি দিনে দিনে তা বেড়েছে!
আমজাদ সাহেব ইলিশ মাছের কোলের এক পিস মাছ আনোয়ারার পাতে তুলে দিয়ে বলে, “মনে পড়ে আনু একটা সময় তুমি আমাকে খাইয়ে দিতে।”
আনোয়ারা ছোট নায়লার সামনে লজ্জা পেয়ে যায়। মানুষটা যে কি না! স্বামীর দিকে তাকিয়ে চোখ ইশারা করে নায়লা কে দেখায়।
রাতে আনোয়ারা মশারি টানাচ্ছে এ সময় আমজাদ সাহেব বললেন, “আনু তুমি কী বলতে চাও বলে ফেল। সারাদিন ধরে ভাবছ বলবে কিন্তু বলছ না!”
আনোয়ারা বেগমের চোখে পানি চলে আসল। মানুষটা তাকে এত খেয়াল করে! “আমি আবার কী বলব?”
“তা বুঝতে পারছি না তবে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চাচ্ছ।”
“তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ভয় পাই তাই কোনো কথা বলতে চেয়ে পারছি না?”
“না এমন মনে হয় না। অনেক সময় এমন হয় খুব প্রিয় মানুষ কে একটা কথা আমরা বলতে চাই কিন্তু বলতে পারি না। আবার বলতে না পারার কারনটা আমরা ধরতে পারি না।”
“আচ্ছা তুমি কী চারু কে জিজ্ঞেস করেছ ও কেন বিয়ে করল না?”
“না জানতে চাইনি। আমি কারনটা বুঝতে পেরেছি। আমার ধারনা তুমি অনেক আগেই ধরতে পেরেছ, তাই আজ আমাকে জিজ্ঞেস করতে তোমার এত দ্বিধা হচ্ছিল। “
আনোয়ারা কোনো কথা বলল না।
———-
নীরু খুব সুন্দর সেজেছে! রাতের বেলা নীলা আপুর ডিনারে যাওয়ার জন্য এত সুন্দর সেজেছে ও। আমি ভেবেছিলাম ও হয়ত যেতেই চাইবে না। আকাশি রংয়া শাড়িতে ও কে পরীর মতো লাগছে। নীরু চোখে কাজল দিতে দিতে বলল, “তুমি বসে আছ কেন! তাড়াতাড়ি রেডি হও।”
“তোমার কি মনে হয় নীলা আপুর দাওয়াত যাওয়া উচিত হবে?”
“মানে কি রায়হান! দুইজন মানুষ রুমে এসে এত করে বলে গেল? তুমি এ সব কী বলছ!”
আমি জানতে চাচ্ছিলাম নীরু আমার জন্য বাধ্য হয়ে যাচ্ছে না কি খুশি মনে।
“আমি তো প্রস্তুতই আছি। “
নীরু বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,” এ সব পরে যাবে!”
“বাঃ রে! একই তো হোটেল সেখানে যেতে আবার কী লাগবে?”
“যাও দ্রুত শার্ট পরো। তোমার জন্য আমি শার্ট বের করে রেখেছি।”
হোটেলের ডিভাইনে উপরে কালো একটা শার্ট দেখলাম। টি-শার্ট টা খুলে চট করে কালো শর্টটা পরলাম। নীরু আমাদের দিকে হালকা একটা হাসি দিলো। “এখন তোমাকে কত ভালো লাগছে! ”
আমি কিছু বললাম না।
আমরা হোটেলের ডাইনিং হাজিরে হয়ে দেখলাম। নীলা আপু আর লিটন ভাই বসে আছেন। আমাদের দেখেই লিটন ভাই উঠে দাঁড়ালেন। হাসি হাসি মুখে স্বাগত জানালেন। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে আমরা ভিআইপি কোনো গেস্ট! নীলা আপু বললেন, ” তোমরা অর্ডার করো আর রায়হান একটু এ দিকে আয় তো।”
আমি বুঝতে পারলাম নীলা আপু আমাকে এখন কি জিজ্ঞেস করবেন। আমার ধারনা উনি গতকাল নীরুর নাম শুনে একটু অবাক হয়েছেন। কাডে দেখা চারুর নাম উনি নিশ্চিত ছিলেন না। এখানে কাড নিয়ে বেড়াতে আসেননি। তাই বাড়িতে ফোন শিউর হয়েছেন কাডে কার নাম লেখা। এখন উনি কাহিনি জানতে চান! অন্যের কাহিনি শুনতে সবার খুব ভালো লাগে। আর এমন কাহিনি হলে তো কথাই নাই!
নীলা আপু আপাকে এক কর্নারে নিয়ে গিয়ে অনেকটা ফিসফিস করে বললেন, ” ঘটনা কি রে রায়হান?”
“কি ঘটনা আপু! “
“তুই কি আমার সাথে মজা করেছিস?”
“তোমার সাথে কি আমার মজার সম্পর্ক বলো?”
“হ্যাঁ তা তো ঠিক। তাহলে চারু নীরু হলে কী করে?”
“ও এই ঘটনা! চারু হলো নীরুর বড়ো বোন।” নীলা আপুর চোখ কেমন চকচক করছে। আমার কথা বিশ্বাস করতে ওনার কষ্ট হচ্ছে।
“বড়ো বোনটা দেখতে বুঝি ভালো না? “
“না না আপু চারু তো নীরুর চেয়ে অনেক সুন্দর। সুন্দরী মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে না বলে বেঁকে বসল। তা-ই ছোটো বোন কে বিয়ে করে নিয়ে আসলাম।”
নীলা আপু কেমন দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললেন, ” আঃ! বিয়েশাদি সব ওপরওয়ালার হাতে বুঝলি এখানে কারো হাত নাই! সব উনি ঠিক করেন কার সাথে কার জোড়া হবে।”
“হ্যা আপু। আমার কোনো দুঃখ নাই। “
নীরু আড় চোখে আমাদেরকে দেখছে। চোখের ইশারায় আমাকে ডাকছে। টেবিলে ও একা একা বসে আছে। একা ঠিক না লিটন ভাইও আছে। লিটন ভাই নীরুর সাথে আলাপ জমাতে চেষ্টা করছে। সে হেসে হেসে গল্প করছে। নীরুও মনে হয় গল্প শুনে খুব মজা পাচ্ছে না কি ভান করছে ঠিক বুঝতে পারছি না।
আমি আর নীলা আপু টেবিলে এসে বসলাম। নীলা আপু জিজ্ঞেস করলেন, “খাবারের অর্ডার করেছ?”
“লিটন ভাই বললেন,” হ্যাঁ, করা হয়েছে।”
লিটন ভাইয়ের স্টকে অনেক গল্প আছে। বিদেশে থাকেন সেই দেশের নানা ঘটনা সময় পেলে শুনাতে ভুলেন না। তার গল্প শুনতে শুনতে খাবার চলে এলো। এত সব খাবারের অর্ডার করেছে দেখে আমার নীরুর চোখ কপালে উঠে গেছে! মানুষ আমরা মোটে চারজন এ খাবার তো পনেরোজন খেয়েও শেষ করতে পারবে না!
লিটন ভাই একটা করে মাছ নেন নাম বলেন এটা খাও খুব মজা এটা হলো কোরাল মাছ, এত মাছের মধ্যে একটা আমি চিনতে পারলাম রুপচাঁদা মাছটা, এই মাছটা খেতে সবচেয়ে ভালো লাগল! নীরুও দেখি টুকটুক করে একটা একটা মাছ খাচ্ছে।
নীলা আপু বললেন, “আমরা কাল সেইন্ট মার্টিন যাব তোমারও চলো। “
লিটন ভাইও বললেন, “হ্যাঁ ভালো কথা তোমারা গেলে দারুণ একটা টুর হবে।”
নীরু রাজি হয়ে গেল! আমার যেতে ইচ্ছে করছিল না। ওনাদের সাথে যাওয়া মানে সব খরচ লিটন ভাই দিবে। একটা পয়সা খরচ করতে দিবে না।
———
“কি রে কাঁদছিস কেন?”
কিছুই বলে না চারু অসহায় দৃষ্টিতে কাজলের দিকে তাকায়।
“তোকে না বলেছি ভ্যা ভ্যা করে কাদবি না। যা করেছিস ভেবে চিন্তে করেছিস এখন কেঁদে কেটে তো উদ্ধার করা যাবে না তা-ই না!”
“তুই এমন করে কথা বলিস ক্যান। আমি কি তোকে কিছু করতে বলেছি নাকি! আমার জন্য কারো কিছু করা লাগবে না।”
“কী হয়েছে আবার বলতো শুনি? ও ছেলের কথা মনে পড়েছে বুঝি?”
বড়ো বড়ো চোখ করে চারু কাজলের দিকে তাকায়। কিছুই বলে না তার খুব খারাপ লাগে! কেউ তাকে একটু বুঝতে চায় না!
চারুর এমন হুট করে চুপ হয়ে যাওয়াটা কাজল বুঝে। মেয়েটা বড্ড চাপা স্বভাবের। নিজের দুঃখগুলো লুকিয়ে রাখতে চায়। কাউকে কিচ্ছু বুঝতে দিতে চায় না। নিশ্চয় মামার কাছে কিছুই বলেনি!
“তোর মামা কি বলল রে চারু?”
“মামা আমাকে বাড়িতে নিতে এসেছিলেন। আমি বাড়ি যাব না বলে দিয়েছি। মামার জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে! জীবনে প্রথম আমি মামার কথার ওপর না করেছি!”
“এখন বাড়িতে না যাওয়াটাই ভালো।”
“আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি হল ছেড়ে দিয়ে কোনো একটা বাসায় উঠব।”
“কি বলিস এ সব! “
“হ্যাঁ, তুই ইচ্ছে করলে আমার সাথে থাকতে পারিস আবার ইচ্ছে হলে নাও পারিস।”
“আমার মনে হয় তুই কোনো পরিকল্পনা করেছিস তা-ই না?”
“কী পরিকল্পনা রে?”
চলবে–
® নাবিল মাহমুদ