বৃষ্টিময় প্রেম গল্পের লিংক একসাথে নিচে দেয়া হলো
বৃষ্টিময় প্রেম পর্ব ১
বৃষ্টিময় প্রেম
পর্ব ১
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা
ঘুম থেকে চুলের মুঠি ধরে টেনে তুললো আমাকে! আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ধাক্কা মেরে আমার গা থেকে কাথা সরিয়ে নিয়ে মুখের উপর ঠান্ডা পানি ছুড়ে মারলো। প্রথমে অবাক হলেও চোখ খুলে দাদিকে দেখে অবাক হলাম নাহ! কেননা এইরকম আচরণ গত কয়েক বছর ধরে প্রায়ই হয়ে থাকছে আমার সাথে!
—“এই জমিদারের বেটি, সকাল যে হয়ে গেছে চোখে পড়েনা? তুই সারাদিন শুয়ে থাকলে কাজে হাত লাগাবে কে শুনি?” (রেগে)
—“কাল রাতে অনেক দেরিতে শুয়েছি,দাদি। তাই সকালে উঠতে পারিনি আজ!” (ভয়ে ভয়ে)
—“কেন? রাতের বেলা তোর কোন নাগারের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলি যে দেরি করে ঘুমাইছিস?” (রেগে)
দাদীর কথা শুনে রাগে আমার গা জ্বলে গেল। উনি সবসময় এভাবে কথা বলেন আমার সাথে কিন্তু আমি চেয়েও তাকে কিছু বলতে পারিনা কারণ আমি যে তাদের বাড়িতে আশ্রিতা!
—“আজ বাড়িতে মেয়ে দেখতে আসবে, জানিস না? কত বড়লোক ওরা জানিস?অবশ্য তুই তো ফকিন্নি, মানুষের টাকায় পড়িস-খাস। তুই কি বুঝবি বড়লোকদের কথা?” (টিটকারি মেরে বললেন উনি)
উনার কথায় লজ্জায় অপমানে আমার কান জ্বলে উঠলেও আমি এবারো তাকে কিছু বলতে পারলাম নাহ। ঠিকি তো বলছেন উনি। তাদের টাকায় চলছি , নিজের তো কিছুই নাই আমার। আসলে দাদি আমার নিজের দাদি নয়, আমি শুধু তাদের বাসায় থাকি।
আমি একজন অনাথ।যাদের বাসায় থাকি তিনি আমার মায়ের সবচেয়ে কাছের বান্ধবী সীমা আন্টি। তার আর আংকেলের বিয়েতে আমার আম্মুই মূলত ঘটক ছিলেন আর আংকেল এর বিজনেসে আমার বাবা অনেক সাহায্য করেছিলেন। এক্সিডেন্টে আমার বাবা-মা মারা যাওয়ার সময় আন্টিকে বলেছিলেন আমাকে দেখে রাখতে তাই বাবা-মা হীন সাত বছরের ছোট্ট আমিকে আন্টি নিয়ে এসেছিলেন তার সাথে। তখন থেকেই মূলত আমি এই বাসায় আছি। আংকেল-আন্টি আমাকে খুব ভালোবাসলেও এই দাদি আমাকে একদমই সহ্য করতে পারেন না। উনি আন্টিকে বলেন তিনি আমায় বাড়িতে রেখে ভুল করছেন, আমি নাকি পড়ে পড়ে তাদের অন্ন ধ্বংস করছি অথচ বাড়ির অনেক কাজই আমি করি।
আন্টি আমাকে কাজ করতে মানা করলেও দাদি খোটা দেয় যে, “পরের বাড়িতে পড়ে আছে, কিছু কাজ না করেই বসে বসে অন্ন ধ্বংস করবে নাকি?” আন্টি প্রতিবাদ করলেও আমি কাজ করি। এমনিই তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, আমার পড়াশুনা থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ আংকেলই দেন তাই শুধুমাত্র শুয়ে-বসে তাদের বাসায় থেকে তাদের টাকায় খেতে ভালো লাগেনা আমার।এবার কলেজের ২য় বর্ষে আমি। কিছুদিন পর ভার্সিটিতে উঠবো তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি কলেজ শেষ হলেই নিজে কিছু টিউশনি করে নিজের খরচ নিজে চালাবো। আমি এসব ভাবছিলাম এরই মধ্যে দাদি বলে উঠলেন,
—“কি ভাবিস,জমিদারনি?এখন উঠে কাজের মেয়ের সাহায্য করবি নাকি আরও আরাম করা বাকি আছে তোর?” (কোমরে হাত দিয়ে)
দাদির কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে গেলাম আমি। তারপর বের হয়ে রান্নাঘরে গেলাম। আন্টিও দেখি রান্না করছেন৷ আমাকে দেখে মিস্টি হেসে বলে উঠলেন,
—“ঘুম হয়েছে? আমি ভাবলাম পরীক্ষা সামনে তোর তাই মনে হয় রাত জেগে পড়েছিস তাই আর ডাকিনি সকালে।”
—“হ্যাঁ আন্টি, ঘুম হয়েছে। কি রান্না করছো তুমি? আমাকে বলো কি করতে হবে,আমি করছি।”
—“তোর বেশিকিছু করতে হবেনা মা। তুই এক কাজ কর শুধু ক্ষীর বানিয়ে রাখিস কলেজে যাওয়ার আগে, তুই তো ওটা খুব ভালো পারিস।দুপুরে আসবে মেহমানরা” (গালে হাত রেখে বললেন)
দাদির প্রতিদিনের খারাপ ব্যবহারের পরও আমার এই বাসায় ভালো থাকার অন্যতম কারণ আন্টি। তার দুই ছেলে-মেয়ে। ছেলেটা বড় আর মেয়ে আমার সমবয়সী, নাম রাইসা। আজ রাইসাকে দেখতে ছেলেপক্ষ আসবে। শুনেছি অনেক বড়লোক নাকি, টিভিতেও বলে দেখা যায় উনাদের! সে যাই হোক, রাইসাকে আমি আমার বোনের মতোই ভাবি। ও যদি খুশি থাকে এই বিয়েতে তাহলে সম্পর্ক ঠিক হলেই আমি খুশি!
আমি কলেজের জন্য বের হচ্ছিলাম এমন সময় দাদি ডেকে বললেন,
—“তোর কলেজ কখন শেষ হবে?”
—“দুপুরে দাদি। কেন?”
—“আজ দুপুরে বাড়িত আসবিনা তুই। বিকালের আগে যেন তোরে বাড়ির মধ্যে না দেখি” (গম্ভীর মুখে)
—“কেন দাদি? আমি এতক্ষণ কি করব বাইরে?” (অবাক হয়ে)
—“ওইডা তোর বিষয়। ছেলেপক্ষ বিকালে যাবে, ওদের সামনে যেন না পড়িস তুই। ফকিন্নি হলে কি হবে? এমনিতেই রুপের ডালা নিয়ে ঘুরিস, বড়লোক ছেলে যদি তোরে দেইখা ফাসে যায় তাইলে আমাদের মাইয়ার বিয়া হওয়া লাগবোনা আর। রাইসার বিয়া এই বাড়িত না হইলে তোরে আমি বাড়িত থেইকা বাহির করে দিমু।”
দাদির কথা শুনে ভয়ে আমার জান কেপে উঠলো। আংকেল-আন্টি যদিও আমাকে সাপোর্ট করেন তাও দাদি যদি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে বের করে দেন? আমি কোথায় যাব! আমার তো কেউ নেই দুনিয়ায়।
কলেজ শেষে বান্ধবীদের সাথে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে আমি বিকেলের দিকে ভয়ে ভয়ে বাসায় গেলাম। আকাশে বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব তাই আর দেরি করলাম না। বাসার সামনে পৌঁছাতেই বৃষ্টি রীতিমতো শুরু হয়েছে।
দাদীর কথা মনে হতেই ভিতরে ঢুকবো কি না দ্বিধা কাজ করছিলো। পরে ভাবলাম ছেলেপক্ষ হয়তো এতক্ষণে চলে গিয়েছে। তাই সাত-পাঁচ না ভেবে বাসায় ঢুকছিলাম এমন সময় হঠাৎ কারও শক্ত পুরুষালি বুকের সাথে ধাক্কা লাগায় চমকে উঠে পড়ে যেতে ধরলাম আমি।
কিন্তু মাটিতে পড়ে যাবার আগেই একটি বলিষ্ঠ হাত টেনে উপরে তুললো আমায়, আরেকটি হাতে আগলে রেখেছে আমার কোমর! তার স্পর্শে শিউরে উঠে তার চোখের দিকে তাকালাম। বৃষ্টির জন্য ঠিকমতো তাকানো যাচ্ছেনা। পিটপিট করতে থাকা চোখে কোনমতে তার সুদর্শন চেহারার দিকে তাকাতেই যেন হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠলো আমার! এই প্রথম কোন পুরুষের সান্নিধ্যে আসায় তন ও মনে রীতিমতো কম্পন উঠে গেছে আমার!
কাপাকাপা হাতে তাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেস্টা করলাম আমি কিন্তু তার সুঠাম দেহে আমার ছোট্ট হাতের ধাক্কায় বিন্দুমাত্র স্থান পরিবর্তন হলোনা। হঠাৎ তার হাত আমার চেহারার দিকে এগিয়ে আসতেই অজানা আশংকায় চোখ আপনাআপনিই বড় হয়ে গেলো!
কিছু বুঝে উঠার আগেই অনুভব করলাম আলতো হাতে আমার মুখের উপর আসা একগোছা চুল সরিয়ে দিলেন তিনি। বৃষ্টির নিচে অচেনা যুবকের সাথে এমন মুহুর্তে রিয়েকশন কি হওয়া উচিত আমার জানা নেই কিন্তু অদ্ভুত কোন কারণে সংকোচবোধ হলেও তার স্পর্শে আমার অস্বস্তি লাগছিলোনা।
অতঃপর দুইজন কিছু বলার আগেই তার ফোনের কর্কশ রিংটোন বেজে উঠলো জোরেশোরে। মুহুর্তেই যেন হকচকিয়ে গেলেন তিনি। এক ঝটকায় সরিয়ে দিলেন আমায় তারপর ফোন রিসিভ করে হনহন করে চলে গেলেন সামনে দিয়ে যেন এতক্ষণ কিছুই ঘটেনি।
তার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাড়ির দিকে ঢুকতেই দেখি দাদি রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। হঠাৎ মনে ভয় হলো উনি একটু আগে আমাদের একসাথে দেখেননি তো?
#চলবে
আশা করছি সবার ভালো লাগবে। সবার মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।
সকল পর্ব একসাথে