love-2
আমার সামনে একটা বাইক এসে থামলো। বাইক থেকে একটা মেয়ে ডাক দিলো
আপনি কি গুলশান যাবেন? আমি নামিয়ে দিয়ে আসতে পারি।
আমার আশেপাশের আরো কয়েকজন এগিয়ে আসলো।
জী আমিও গুলশান যেতাম।
আমি কিছু না বলে হেলমেট মাথায় দিয়ে বাইকে চড়ে বসলাম। কয়েকজন তখন একটু উত্তেজিত
আপু আমাকে নিয়ে যান। আমি টাকা বাড়িয়ে দিবো।
মেয়েটা সবার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো
তা সম্ভব না। আমি একমাত্র উনাকেই নিবো।
লোকজন এইবার ভালো করে আমাকে দেখছে। তাদের চোখে উৎসুক দৃষ্টি। হেলমেটের জন্য আমার মুখ ভাল করে দেখতে পাচ্ছে না। একজন একটু এগিয়ে আসলো মনে হচ্ছে হেলমেট খুলে দেখবে।
সে সময় মেয়েটি বাইক টান দিলো।
আমার বেশ রাগ লাগছে। কেননা এই মেয়েটি আমার গার্ল-ফ্রেন্ড নাসরিন। আমি বহুবার তাকে মানা করেছি তুমি বাইক কিনবে না। লোকে কি বলবে। একটা মেয়ে বাইক চালাচ্ছে। কিন্তু নাসরিনের খুব শখ সে বাইক চালাবে।
আজ প্রথম দিন সে আমাকে অফিস পৌঁছে দিতে এসেছে। আমার নিজের লজ্জা লাগছে। কেননা আমি বাইক চালাতে পারি না। আর আমার গার্ল-ফ্রেন্ড বাইক চালিয়ে আমাকে অফিস নিয়ে যাচ্ছে। আমি রাগে গজগজ করছি।
তোমাকে বলেছি বাইক নিয়ে বের হবে না। তারপরেও তুমি বের হয়েছো। এভাবে সিন ক্রিয়েট করার কি দরকার ছিলো?
ও তাই। এই যে শীতের সকালে তোমাকে অফিস পৌঁছে দিতে বের হয়েছি ভালো লাগছে না। আজকে যে তোমার প্রতিদিনের মত লেইট হতো তখন যে অনেক বকা খেতে ভালো লাগতো?
আমি চুপ হয়ে যাই। শীতকালে আমাকে কে জানি বিছানার সাথে আটকে রাখে। উঠতে গেলেই মনে হয় ঐশ্বরিয়া রায় আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলছে এই যে আমার উষ্ণতাকে এভয়েড করে তুমি উঠতে চাও? একবার ভেবে দেখো উঠলেই কিন্তু আমার উষ্ণতা হারাবে।
আমিও ঐশ্বরিয়া রায়কে রেখে উঠতে পারি না। এই কথা নাসরিনকে বলা যাবে না। তাহলে মাঝপথে নামিয়ে দিতে পারে।
ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছি। ডান দিকে বিশাল এক প্রাডো। হটাত দেখি প্রাডোর জানালা খুলে আমার মামা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। বুঝার চেষ্টা করছেন এটা আমি কিনা। আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরাই। মামার সঙ্গে প্রায় এই সিগন্যালে আমার দেখা হয়। উনি কখনো আমাকে খেয়াল করেন না। আজকে হটাত গ্লাস নামিয়ে আমাকে দেখছেন। আমি উনার কণ্ঠ শুনতে পাই
এই রাশু গাড়িতে উঠে আয়।
আমি অবাক হওয়ার ভান করে মামার দিকে তাকাই। ভেতর ভেতর আমি বিরক্ত। আমার নাম রাশেদ। আমার মা এবং এই মামা রাশু ডাকে। শুনলেই আমার মনে হয় আমাকে নসু ডাকছে।
আমাকে বলছেন? আমি জিজ্ঞেস করি।
আরে গাধা তোকেই বলছি। এই যে মেয়েটা পাঠাও চালায় তার নামতো আর আমার জানার কথা না। আর ওকেতো উঠে আসতে বলতে পারি না। ওতো বাইক রেখে আসবে না।
নাসরিন এইবার মামার দিকে তাকায়।
মামা বলেই যাচ্ছে
শুন তোর বিয়ের পাত্রী ঠিক করেছি। সেই ব্যাপারে তোর সঙ্গে কথা বলা দরকার।
এইবার নাসরিন বাইক টান দেয়। মামা অবাক দৃষ্টিতে এইদিকে তাকিয়ে আছে। বেপরোয়া গতিতে বাইক চলছে।
আরে আমি কি করেছি? তুমি এইভাবে বাইক টানছো কেন?
কেন তোমার পাত্রী দেখায় লেইট হয়ে যাচ্ছে?
আমি আবার চুপ মেরে যাই। বলা যায় না দেখা যাবে আমাকে ট্রাকের নীচে ফেলে দিতে পারে। নাসরিনের আমার প্রতি প্রচণ্ড ভালবাসা। কিন্তু আমার ধারনা বিয়ের পর ও আমায় সকাল সন্ধ্যা পিটাবে। আগে ভাবতাম ব্যাডমিন্টন দিয়ে পিটাবে। কেননা নাসরিন ব্যাডমিন্টন খেলতো। এখন স্বপ্নে দেখি গোস্ট রাইডারের সেই বাইকারের মত আমাকে বাইকের চেইন দিয়ে পিটাবে। কিন্তু পিটাবে নিশ্চিত।
অফিসের সামনে নেমে নাসরিনকে বাই বলছি। দেখি পেছনেই আমার বস দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখে বলছে
বাব্বাহ রাশেদ সাহেব। একদম টাইমমতো অফিসে এসেছেন আজ। দিন উনাকে টাকা বাড়িয়ে দিন। একদম কিপটামি করবেন না। আমি কিন্তু মেয়েদের স্বাধীন কাজ খুব পছন্দ করি।
আমি বসের দিকে তাকাই। চেনা বসকে আজকে মিলানো যাচ্ছে না।
অফিসে উনি সারাক্ষণ বলতে থাকেন
বুঝছেন রাশেদ সাহেব মেয়েরা অফিসে জয়েন করে প্রথম কোন কাজ করে বলেনতো?
বস বেশী করে দুধ, চিনি দিয়ে চা খায়। বাসার খরচ বাচায়।
হলো না। মেয়েরা অফিসে জয়েন করে প্রথম প্ল্যান করে প্রেগন্যান্ট হওয়ার। এরা সিরিয়ালি প্রেগন্যান্ট হয়।
সেই বস আজ এই কথা বলছে।
২।
আমি আমার বাবার সামনে বসে আছি। উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। উনার ধারনা এই দুনিয়াতে গাধা বিরল প্রজাতির প্রাণী হয়ে গিয়েছে তার কারণ হচ্ছে কিছু কিছু গাধা মানুষের ঘরে জন্ম নেয়া শুরু করেছে। এবং তার মধ্যে খুব নিম্নমানের একজন গাধা হচ্ছি আমি।
তুমি নাকি একজন পাঠাও ড্রাইভারের সঙ্গে প্রেম করছো।
আমি পাঠাও ড্রাইভারের সঙ্গে প্রেম করছি না। নাসরিনেরর সঙ্গে প্রেম করছি। সে বাইক চালায়। তার একটা বাইক আছে।
আমার বাবা অধিক শোকে পাথর হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
তোমাকে ছোটবেলায় কি পড়িয়েছিলাম
হোন্ডা চালায় গুণ্ডারা। তুমি ভুলে গেছো?
না বাবা।
তুমি কি এই গুণ্ডা মেয়েকে বিয়ে করতে চাও?
জি বাবা আমার উপায় নেই। ওকে বিয়ে না করলে ও গোস্ট রাইডারের মত আমাকে বাইকের চেইন দিয়ে পিটাবে।
গোস্ট রাইডার কি জিনিস? ও কি তোমাকে বলেছে পিটাবে?
না আমি স্বপ্নে দেখেছি। আর গোস্ট রাইডার একটা ইংলিশ ছবির নাম। সেখানে রাইডার সবাইকে চেইন দিয়ে পিটায়।
আমার বাবা অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
৩।
ঘড়িতে রাত ১ টা। আমার বোনের হাজব্যান্ডের হটাত অসহনীয় বুকে ব্যথা। বোন বেড়াতে এসেছে। বাসার সবার কান্নাকাটি। সবাই এম্বুলেন্স, গাড়ির জন্য এখানে সেখানে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু পাওয়া যাচ্ছে না।
আমি নাসরিনকে বলতেই ও বলে একটা চান্স নিয়ে দেখতে পারি। আমার বাইকের পেছনে উঠিয়ে নিয়ে যাই। উনার দ্রুত চিকিৎসা দরকার।
নাসরিন বাইক নিয়ে এসেছে। আমরা উনাকে বাইকে তুলছি। পেছনে শুকনা একজনকে বসানো হয়েছে ধরে রাখার জন্য। আমি বিস্মিত হয়ে নাসরিনের দিকে তাকিয়ে আছি। কি সাহস মেয়েটার। কি বলে বাসা থেকে বের হয়েছে। রাস্তাঘাটে যদি কিছু হত।
হাসপাতালে পৌঁছে আমরা বাইরে হাঁটছি। অপেক্ষা করছি কি হয়।
ডাক্তার এসে বললো
তেমন সমস্যা নেই। এটা সেটা খেয়ে উনার গ্যাস্ট্রিক হয়েছে এবং উনার মধ্যে হয়তো বুকে ব্যথা নিয়ে ফোবিয়া আছে। তাই উনি আতঙ্কে এমন করেছেন।
আমার বাবা নাসরিনের হাত ধরে বলছে।
অনেক ধন্যবাদ মা। বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। তোমার সাহস এবং আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমার গাধা ছেলেটাকে দেখে রেখো।
আমি হাসপাতাল থেকে নীচে নেমে বাইকের পেছন উঠেছি নাসরিনকে ওর বাসায় পৌঁছে দিবো। নাসরিনকে আজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। আজকে মনে হচ্ছে লোকে কে কি বললও তাতে কিছুই আসে যায় না। জীবনে আপন মানুষগুলো জড়িয়ে থাকুক আষ্টেপৃষ্ঠে।
আমি ভয়ে ভয়ে নাসরিনকে জিজ্ঞেস করলাম। জানো আমি একটা স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন; তুমি আমাকে বাইকের চেইন দিয়ে পিটাচ্ছো।
তীব্র বাতাসে নাসরিনের কথা শুনা যাচ্ছে না।
আমার মনে হলো নাসরিন যেন বললো
হুম ঠিকই দেখো। খালি একবার বিয়েটা হউক।
আমি খুব মনে প্রাণে চাচ্ছি নাসরিন বলুক
আমি তোমার জীবন শুধু আনন্দে ভরে দিবো। কখনো তোমাকে পিটাবো না। শুধু ভালোবাসবো।
#বাইকার প্রেমিকা
#আমিনুলের_গল্প_সমগ্র