More than love পর্ব ৪
মেঘলা আহমেদ (লেখিকা)
পর্বসংখ্যা-[০৪]
আচমকা অপ্রত্যাশিত কিছু নিজের কাছে পেলে অনুভুতি হয় অন্যরকম। মেরুন রোদ্দুর কে ছেড়ে দিয়ে বলে-
-” রোদ্দুর তুই কবে বিডি তে আসলি? আমায় একটাবার জানাস নি পর্যন্ত! এতই পর হয়ে গেলাম!
মেরুন মুখ ভার করে বাড়ির ভেতর ঢুকে যায়। রোদ্দুর বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। মেরুনের কাছে গিয়ে তার দুই হাত ধরে বলে-
-” ও মাই ডার্লিং! তুমি রাগ করছো কেন। আমি খুউউব ব্যস্ত ছিলাম। লিপি এবার ভিডিও কল এ বলেছে আমায় ছাড়া বার্থডে কেক কা টবেই না। তুমি জানো ভাই আর বউমনি সময় দিতে পারেনা ওকে। আর আমার ভালো লাগছিল না ওখানে। ভাবলাম দেশে এসে জীবনটা গুছিয়ে নেই। তোমাকে জানানোর সময়ই পাইনি। আমি সো সরি, ডার্লিং।
মেরুন মুচকি হাসে। রোদ্দুরের কান টেনে বলে-
-” তুই জীবনেও ভালো হবিনা। ডার্লিং ডাকা টা ছাড়তে পারলি না।
রোদ্দুর নিজেও হেসে বসতে বসতে বলে-
-” বিয়ে করিয়ে দাও একদম ভালো হয়ে যাবো। প্রমিজ। বউকে সারাদিন বে|বি, জা|ন, ক/লিজা, লি/ভার, কি/ডনি, ফু/সফু/স ডাকবো। কিন্তু আমার একমাত্র ওয়ান এন্ড অনলি ডার্লিং হলো মেরুন আন্টি। তুমি চিনো তাকে।
রোদ্দুর একটু ভাব নিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে। রোদ্দুরের কথায় মেরুন হেসে বলে-
-” আচ্ছা পা/জি বাজার থেকে পে/ত্নি এনে দেবো কেমন।
রোদ্দুর বিরবির করে বলে-
-” পেত্নি কে চাইছে। আপাতত তোমার ভাতিজি টা কে দিয়ে দাও।
মেরুন ওর বিরবির করা দেখে বলল-
-” কিছু বললি?
-” না আন্টি।
-” আচ্ছা দুই মিনিট বস আমি আসছি।
মেরুন দ্রুত পায়ে রান্না ঘরের দিকে যায়। রোদ্দুর পকেটে হাত দিয়ে ফোনটা বের করে।
-” পিপিন চলো ওর এখনো সাজা হয়নি। আমরা দুজনে চলে যাই।
হঠাৎ একটা মেয়ের কন্ঠ শুনে রোদ্দুর সেদিকে তাকায়। একটা মেয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে ড্রেস ঠিক করতে করতে। সাদা কালো টপস পড়া। পিঠ পর্যন্ত চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে। কন্ঠটা চেনা চেনা লাগছে রোদ্দুরের। রোদ্দুর মেয়েটার চেহারা দেখে লাফিয়ে ওঠে। চোখ বড় বড় করে বলে –
-” হেই স্টুপিড গার্ল! তুমি এখানে কি করছো?
রুহি চমকে তাকায় রোদ্দুরের দিকে। তার সামনেই একজন সুদর্শন যুবক দেখতে পায়। কালো শার্ট, অফ হোয়াইট জিন্স। শার্টের হাতা সুন্দর করে ফোল্ড করে কনুই তে উঠিয়ে রেখেছে। চুলগুলো ও খুব সুন্দর করে সেট করা। ফর্সা কপালে দুটো চিকন ভাঁজ পড়েছে। রুহি রোদ্দুর কে দেখতে দেখতে নিচে নামে। এরপর ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে-
-” স্যরি ভাইয়া! আমরা কি একে অপরকে আগে কখনো দেখেছি? বা চিনি, নাকি আমাদের কখনো কথা হয়েছে?
রোদ্দুর রুহির কথায় অবাকের সপ্তাকাশে। সে কপালে হাত ঠেকিয়ে বলে-
-“হায় মাবুদ বলে কি এই মেয়ে? তুমি শুধু আমাকে দেখোই নি। গতকাল রাতেই আমার গায়ের উপরে পড়েছো। আমায় থা/প্পর ও দিয়েছ। আর এখন বলছো চিনা না। হায় তুমি দেখছি স্টুপিড এর সাথে সাথে ভালো একটিং ও জানো।
রুহি চোখ বড় বড় করে রোদ্দুরের দিকে তাকায়। তার মানে এটাই রোদ! এত সুন্দর হয়ে গেছে! রুহি গলা খাঁকারি দিয়ে বলে-
-” দেখুন ভাইয়া আপনি হয়তো আমাকে কারো সাথে গুলিয়ে ফেলছেন। আমি আপনাকে প্রথম দেখলাম আজকে।
রোদ্দুর গলায় জোড় দিয়ে বলে-
-” এই চুপ করো মেয়ে! তোমার চেহারা আমার হাড়ে হাড়ে মনে আছে। তুমি লিপির সেই স্টুপিড টিচার। এই বাড়িতে কি করছো?
-” কি হয়েছে নিচে এত কথা কিসের? কে এসেছে?
রোজা হাতের ঘড়ি পড়তে পড়তে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে প্রশ্ন করে। রোদ্দুর কে দেখেই সে ভড়কে যায়। চোখ বড় বড় করে তাকায় রুহির দিকে। রুহি মুচকি হেসে চোখ টিপ দেয়। রোদ্দুর পুরো স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ কি দেখছে সামনে? এক রকমের দুইজন! তাও একি ড্রেস একি হেয়ারস্টাইল মানে সব সেইম। রোদ্দুর ঢোক গিলে বলে-
-” একি একি আরে এরা কারা? মানে এই স্টুপিড মেয়ে কি নিজের হাজার টা ক্লোন বানিয়েছে নাকি?
মেরুন ট্রে নিয়ে সবার সামনে আসে। রোদ্দুরের অবাক হওয়া মুখটা দেখে তিনজনের খুব হাসি পাচ্ছে। মেরুন স্বাভাবিক হয়ে রোদ্দুরের বাহু চাপড়ে বলে-
-” কি রে? এমন স্ট্যাচু হয়ে আছিস কেন?
রোজা আর রুহি দুজনেই বুকের উপর হাত ভাঁজ করে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। রোদ্দুর মেরুনের দিকে দ্বিধান্বিত চোখে তাকায়। রোজা আর রুহির দিকে আঙুল তুলে মেরুন কে জিজ্ঞেস করে-
-” এরা কারা ডার্লিং?
মেরুন হেসে রোজা আর রুহিকে নিজের দু পাশে নেয়। ওদের কাঁধে হাত রেখে বলে-
-” মাই প্রিন্সেস তোমরা নিজেদের পরিচয় দাও।
রুহি কিছুটা ভাব নিয়েই বলে-
-” হ্যালো রোদ ভাইয়া। আমি আদ্রিশা বিনতে রুহি।
রোজাও এবার হেসে বলে –
-” হ্যালো রোদ ভাইয়া। আমি আমায়রা রহমান রোজা।
রোদ্দুর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কনফিউজড হয়ে জিজ্ঞেস করে-
-” তাহলে পার্টিতে আমার সাথে কার দেখা হয়েছিল?
রোজা দাঁত কিড়মিড় করে বলে-
-” আরে ভাইয়া আমার সাথে আপনার দেখা হয়েছিল। আফসোস আপনার সাথে পরিচিত হতে পারিনি তখন। কিন্তু এখন থেকে ভালোভাবে পরিচিত হব।
রোদ মেরুন কে জিজ্ঞেস করে-
-” সব বুঝলাম। কিন্তু রুহি টপকালো কোথা থেকে। মানে তোমরা জমজ কিন্তু কিভাবে? আমি ছোটবেলা থেকে রোজা কে দেখে আসছি। যখন কানাডা গিয়েছি তখনও রোজাই ছিল। আর ইয়াসমিন আন্টি কোথায়?
রোজা আর রুহি চুপ করে যায় মায়ের কথা শুনে। মুহুর্তেই মুখে আঁধার নেমে আসে। মেরুন পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে-
-” রোদ বাবা বস আগে নাস্তা কর। বলবো বলবো সব বলবো। আপাতত ওরা জমজ বোন এটা জেনেই রাখ।
রোদ্দুরের অদ্ভুদ লাগছে সবকিছু। কিন্তু ঐদিন সে রোজার সাথেই বাজে ব্যবহার করেছে। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে এসেছে। হায় রে না জানি কত কষ্ট পেয়েছে। শুরুতেই আমার ব্যাপারে ওর মনে খারাপ ধারনার সৃষ্টি হয়ে গেলো। রোদ্দুর অন্যমনষ্ক হয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়।
-” আহহ।
মেরুন চমকে উঠে বলে-
-” আরে রোদ কি হলো?
রোদ্দুর নিজেকে সামলে বলে-
-” ইয়ে মানে। গরম চা তো তাই। ঠান্ডা হলে খাবো।
রোজা টাইম দেখে বলে-
-” ফুপি বাজারে যাবে না? লেট হয়ে যাচ্ছে তো।
রোদ্দুর জিজ্ঞেস করে –
-” বাজারে কেন যাবে?
রোজা মহাবিরক্ত হলো রোদ্দুরের কথায়। কপাল কুঁচকে বলে-
-” বাজারে ঘাস কা/টতে যাবো। আমাদের উঠানে প্রচুর ঘাস হয়েছে সেগুলো বেঁচে আসবো। বাজারে গিয়ে লুঙ্গি ড্যান্স করবো। মাছের সাথে সেলফি তুলবো। আর মুরগির সাথে পার্টি করবো।
রুহি হেসে দেয় রোজার কথায়। হাসতে হাসতে বেচারির অবস্থা খারাপ। রোদ্দুর আড়চোখে তাকিয়ে বলে-
-” ছিহ এগুলো বলছো কেন, আজব?
রোজা বিরক্ত হয়ে বলে-
-” তো আপনি জানেন না মানুষ বাজারে কি করতে যায়। রান্নাবান্না করবো তাই বাজার করতে বাজারে যাবো সিম্পল। গাধার মত প্রশ্ন করলে উত্তর দেবো কি?
মেরুন ঝ/গড়া দেখে হেসে বলে –
-” উফফ রোজা থাম তো। সারাদিন ঝ/গড়া করো খালি। এই রোদ তুই আমাদের সাথে যাবি?
রোদ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। এক ঝটকায় দাঁড়িয়ে বলল-
-” আমি রাজি মহারাজি। আমার ডার্লিং বললে আমি কি না করতে পারি?
ফুপির কথা শুনে রোজার মাথা খারাপ হয়ে গেলো। এই রোদ্দুর কে কেন নিতে হবে? বদ ছেলে একটা। রোজা হেসে বলে –
-” ইয়ে মানে পিপিন। উনি কেন কষ্ট করে আমাদের সাথে যাবে? উনার এই গরমে বাহিরে যাওয়ার দরকার কি? দেখা গেলো বিদেশী আবহাওয়ার এই সাদা বিলাই কালা হয়ে গেলো। কি বাজে দেখাবে। তাইনা।
রোদ থামিয়ে দিয়ে বলে-
-” আই হেভ নো প্রবলেম। আমার সব আবহাওয়া মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা আছে। আর আমি মোটেও বিলাই না।
রোজা চোখ গরম করে তাকায় রোদ্দুরের দিকে। রোদ্দুর তার বদলে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয়। রোজা আগে আগে হাঁটা দেয়। রুহি শুধু এদের চক্ষু যুদ্ধ দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। তার রোদ্দুর কে ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আহ এটাকে দুলাভাই বানাতে পারলে জীবন ধন্য। রোদ রোজার পিছে পিছে যায়। মেরুন দরজা তালা দিচ্ছে। রোজা রেগে রুহিকে বলে-
-” কিরে তুই নাকি রোদের কা/চু/ম্বার বানাস? এখন এত হেসে হেসে কথা বলতাছিস কেন?
রুহি হেসে বলে-
-” আরে এতো কিউট একটা ছেলেকে কিছু বলা যায় নাকি। তুই কত ভাগ্যবতী সে তোকে বকেছে। আহা এত কিউট ছেলেকে তুই কেমনে চ/ড় দিলি?
রোদ মুচকি হাসে রুহির কথা শুনে। রোজা চোখ বড় বড় করে রুহির দিকে তাকায়। সিরিয়াসলি বকা খেলে কেউ ভাগ্যবতী হয়? আর চ/ড় কেন দিয়েছে এটা জিজ্ঞেস করছে। তার যে শখের ড্রেস টা ছি/ড়ঁলো রুহির মতো এরকম কয়টা আছে আর পৃথিবীতে। রোজা চেঁচিয়ে বলে-
-” মির জাফরের বংশধর!
#চলবে
.