More than love পর্ব ৭
মেঘলা_আহমেদ
পর্বসংখ্যা-[০৭]
-” আমিও যাবো তোর সাথে চল।
মেরুনের কথায় বিরক্ত হলো রোজা। চেঁচিয়ে বলল-
-” মানে কি পিপিন? আমি লিপিকে পড়াতে যাচ্ছি তুমি যাবে কি করতে?
মেরুন হেসে বলে-
-” ইয়ে মানে আমার একটু কথা আছে রোদ্দুরের মা বাবার সাথে। তাই যাব। এটা যাচ্ছিস তাই ভাবলাম আমিও তাই। আমার কাজটাও হবে। তুই ও লিপির সাথে থাকলি।
রোজা আর চোখে তাকিয়ে বলে-
-” ওহ এই ব্যাপার। সমস্যা নেই। কিন্তু রুহি বাসায় একলা থাকবে? সারাদিন ঘর আটকে বসে থাকে। তুমি একটু ওর সাথে থাকবে তা নয়।
মেরুন থামিয়ে দিয়ে বলে-
-” সমস্যা নেই। রুহি আমাদের সাথে যাবে।
-” নাআআআ।
রোজা আর মেরুন দুজনেই দরজার দিকে তাকায়। রোজা চোখ পাকিয়ে বলে-
-” এই এত জোড়ে চিৎকার করে না বলার কি আছে? আমাদের কি তোর কালা মনের হয়?
রুহি আমতা আমতা করে বলে-
-” তা নয়। ইয়ে মানে পিপিন ঐ বাসায় আমি যাব না। তোমরা যাও। আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। গুড নাইট।
রুহি হাই তুলে বলে। মেরুন অবাক হয়ে বলে-
-” পাগল হয়েছিস? এখন বিকেল। তুই নাইট কই পেলি? আজব।
রুহি জোড়পূর্বক হেসে বলে-
-” ঐ হলো আরকি!
সে তাড়াতাড়ি করে কে টে পড়ে ওখান থেকে। এরা একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। রোজা তৈরি হয়ে বলে-
-” চলো।
____
-” এবার বিয়েটা দিয়ে দেই কি বলো রোদ্দুরের মা? আপা ও তো এটাই চাইতেন।
আরমানের কথা শুনে রুমানা চিন্তিত হয়ে বলে-
-” হ্যা তা ঠিক। তবে রোদ্দুর কি রাজি হবে? আর আয়মান ভাইয়ার সম্মতির ও তো প্রয়োজন!
আরমান হেসে বলে-
-” আরে আমার বন্ধু আমার কথা শুনবেই। এতে আরো খুশি হবে আয়মান। আর রোদ্দুর কে বলে এসেছি তো।
তবুও রুমানার চিন্তা হয়। তার ছেলে যদি রাজি না হয়। এর মধ্যে কলিংবেল বেজে ওঠে। রুমানা গিয়ে দরজা খুলে। রোজা আর মেরুন কে দেখে অবাক হয় সে। হেসে বলে-
-” আরে মেরুন কতদিন পর আসলে। আর রোজা মামনি রাগ ভাঙলো তোমার। লিপি কেঁদে কে টে অস্থির হয়ে গেছে। যাও যাও ওর কাছে যাও। আমি রোদ্দুর কে বকে দিয়েছি। তোমাকে আর কিছু বললে আমাকে বলো কেমন।
রোজা মিষ্টি হেসে বলে-
-” জ্বী মামনি। আমি লিপির কাছে গেলাম। পিপিন তোমার কাছে এসেছে। তোমাদের সাথে গল্প করতে।
রোজা সোজা লিপির রুমে চলে যায়। মেরুন ভেতরে ঢুকে বলে-
-” ভাবি অনেকদিন পর আপনাদের দেখলাম। কেমন আছেন?
রুমানা হেসে জবাব দেয়-
-” সে ভালোই আছি। এসেছো ভালো করেছো। তোমাদের বাড়িতে যাব আমরা কিছু কথা ছিল ভাইয়ের সাথে।
______
রোজা লিপির রুমে গিয়ে দেখে সে ঘুমুচ্ছেন। রোজা আস্তে করে গিয়ে তার পাশে বসে। লিপির মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকে-
-” লিপি !
এক ডাকেই লিপি লা/ফ দিয়ে ওঠে ঘুম থেকে। রোজা কে দেখে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে বলে-
-” মিস তুমি এসেছো। আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি। তুমি আর আমায় ছেড়ে যাবেনা। আমি চাচ্চুকে অনেক বকে দেবো।
রোজা লিপির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কপালে চুমু দিয়ে বলে-
-” হয়েছে হয়েছে আর কাঁদতে হবেনা। আমি আর যাবো না। তোমার চাচ্চু নেক্সট টাইম কিছু বললে আমি তাকে ইয়া ডি/সুম ডি/সুম মে/রে দিবো।
-” ও আচ্ছা তাই নাকি? কিভাবে মা/রবে?
আচমকা রোদ্দুরের কন্ঠ পেয়ে চমকে ওঠে রোজা। পিছু ফিরে তাকায় সে। কালো টি শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে রোদ্দুর। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সদ্য ঘুম থেকে উঠেছে। এভাবে ধরা খেয়ে যাবে ভাবেনি। রোজা আমতা আমতা করে বলে-
-” ইইইইয়াআআ ডি/ইইসুমম। মানে না আসলে হ্যা। আরে কিছু না। মজা করেছি।
বলেই দাঁত বের করে হেসে দেয় রোজা। রোজার মুখটা দেখে বড্ড হাসি পায় রোদ্দুরের। রোজার ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে রাগে। রোজা লিপি কে বলে-
-” লিপি বই খাতা বের করো। পড়তে হবে অনেক।
লিপিও চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো, বই খাতা বের করে। রোদ্দুর হেলান দিয়ে এখনো দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর দৃষ্টি রোজার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। রোজার বিরক্ত লাগে এই চাহনি। সে রেগে বলে-
-” লিপি তোমার চাচ্চুকে চলে যেতে বলো। আমি তোমাকে যেমন আবার পড়াতে এসেছি, তোমনি আবার চলে যেতেও পারবো। তাকে বলে দাও তোমার মিস পড়ার মাঝে ৩য় ব্যক্তি এলাও করেনা।
রোজা নিজের চোখের চশমাটা ঠেলে দিয়ে কথাটা লিপিকে বলে। রোজার কথাটা শুনে রোদ্দুরের খারাপ লাগে। তাঁর মনটা বাবার কথা শোনার পর থেকেই অশান্ত হয়ে আছে। কিন্তু রোজা আরো বেশি অশান্ত করে দিলো। লিপিও তার চাচাকে বলল-
-‘ চাচ্চু তুমি চলে যাও এখান থেকে। আমার মিস কি বলেছে শোন নি।
রোদ্দুর রোজার দিকে অগ্নিচোখে তাকালো। তা দেখে রোজা মুচকি হাসলো। রোদ্দুর দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলো। কিছুক্ষণ পর রোদ্দুরের মা আর মেরুন সেখানে এলো। সাথে হালকা নাস্তা পানি। রোজা এগুলো দেখে বলল-
-” এগুলো কেন এনেছো? এগুলোর কোন দরকার ছিল না তো।
মেরুন হেসে বলে –
-” আমি না করেছি। কিন্তু আপা আমার কথা শুনলোই না।
তিনজনে মিলে অনেকক্ষন গল্প করলো। লিপিকে পড়া দেখিয়ে দিলো। এরপর রুহি কল করায় মেরুন চলে যায়। তার পিছে পিছে রোদ্দুরের মা ও চলে যায়। লিপি তখন রোজা কে বলে –
-” ও মিস আমি একটু দাদুর কাছে থেকে আমার চকলেট নিয়ে আসি প্লিজ। তুমি আর আমি খাব।
রোজা হাসিমুখে যাওয়ার অনুমতি দেয়। লিপি যেতেই সে উঠে দাঁড়ায়। তখনি রোদ্দুর ঝড়ের গতিতে এসে দাঁড়ায় রোজার সামনে। তাঁর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে-
-” ৩য় ব্যক্তি নাকি এলাও করো না। এখনে তো ৩য়, ৪র্থ সব ব্যক্তিদের নিয়ে ছিলে। আমাকে বাই এনি চান্স ইগনোর করছো না তো?
রোজা অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলে-
-” আপনাকে ইগনোর করবো কেন? আপনি কি আমার জামাই নাকি। যাকে পছন্দ হয়নি বলে ইগনোর করবো। আজাইরা কথা বইলেন না।
রোদ্দুর থতমত খেয়ে যায় রোজার কথায়। তবুও আবার জিজ্ঞেস করে-
-” তাহলে তোমার সমস্যা টা কোথায়?
রোজা মিষ্টি হেসে বলে-
-“আপনি আমার সমস্যা। আপনাকে দেখলে জ্বালিয়ে দিতে মন চায়। আপনি কি আমায় আর পাঁচটা মেয়ের মতো ভাবেন? যে আপনার চেহারা দেখে ফিদা হয়ে আপনার ঐদিনের করা অপমান গুলো ভুলে যাব? আপনি এসব ভাবলে ভুল ভাবছেন। আমি সহজে কিছু ভুলি না। এর শোধ আমি তুলবোই বুঝলেন।
রোদ্দুর স্থির চোখে রোজার দিকে তাকায়। শান্ত কন্ঠে বলে-
-‘ কি করবে তুমি রোজ?
-” সময় হলেই দেখতে পারবেন হুহ।
রোদ্দুর আচমকা গলা চেপে ধরে রোজার। রোজা হাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। তখন কোথা থেকে লিপি এসে হাজির হয়। লিপি এই অবস্থা দেখে দ্রুত রোদ্দুর কে টেনে ধরে। লিপি কে দেখে রোজা কে ছেড়ে দেয় রোদ্দুর। রোজা কাঁশতে কাঁশতে মাটিতে বসে পড়ে। লিপি তার চাচ্চুকে বলে-
-” চাচ্চু আমার মিস কে তুমি ব্যাথা দিয়েছো কেন?
রোদ্দুর কিছুই বলেনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সে রোজা কে এত ভালোবাসে। আর রোজা এমন করছে কেন? ঐদিন রাগের বসে বলেছে। তাই বলে এখন এমন করবে? রোজা হেসে বলে-
-” মামনি শোন এই কথা কাউকে বলবে না। বুঝলে। তোমার চাচ্চু একটা রাক্ষস তাইতো এমন করে মাঝে মাঝে।
লিপি ভয় পেয়ে রোজার গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। রোদ্দুর অবাক হয়ে যায় রোজার কথায়। সে থমথমে মুখে চলে যায়। সোজা আরমান রিসাদের রুমে গিয়ে হাজির হয়। তার কাছে গিয়ে বলে-
-” বাবা আমি বিয়ে করবো। এজ সুন এজ পসিবল!
#চলবে…………….