More than love পর্ব ৬
মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)
পর্বসংখ্যা-[০৬] (নতুন চমক)
কিছু কিছু সময় হাসিখুশি মানুষ গুলো শান্ত হয়ে যায়। অতীত সবসময় তাদের তাড়া করে বেড়ায়। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে রুহি বসে আছে একটি সার্কেলের মাঝে। তাঁর হাতের আংটিটা জ্বলজ্বল করছে। রুহির চোখের সামনে হাজারো ঘটনা অতিবাহিত হচ্ছে। তখনি রোজা এসে দরজা ধা/ক্কা দেয়-
-” এই রুহি দরজা খোল।
রুহি চমকে ওঠে। এই সময়ে রোজা তার রুমে কেন? রুহি তাড়াতাড়ি করে সার্কেল থেকে সরে দাঁড়ায়। সার্কেল টি মুছে নিজেকে ঠিকঠাক করে নেয়। তারপর দরজা খুলে দেয়। সবসময়কার মতোই মুখে মিষ্টি হাসি। রোজা কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে রুহির মুখের দিকে। রোজা রুহির রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। রুহি নিজের বাম হাতটা সাবধানে ওড়নার আড়ালে লুকিয়ে ফেলে। এরপর মিষ্টি হেসে বলে-
-” কিছু লাগবে তোর?
রোজা রুহিকে আগাগোড়া নিরীক্ষন করে বলে-
-” না কিছুনা। আসতে পারিনা কি তোর ঘরে? আর রুমের ভেতরেও সারাদিন ওড়না পড়ে থাকিস কেন? এটা কোন স্বভাব?
রুহি দুই হাত দূরে সরে যায়। হাত নাড়িয়ে না করে বলে-
-” খবরদার এখন আমার কাছে আসবি না। বাহির থেকে এসেছিস গোসল করে আয় যা।
রোজা অদ্ভুত চোখে তাকায় রুহির দিকে। মাঝে মাঝে রুহির এই খাপছাড়া আচরণ সে নিতে পারেনা। এমনটা শুরু থেকেই দেখে আসছে সে। কিন্তু কেন? রোজা চারদিকে চোখ বুলিয়ে বলে-
-” হইছে ঢং করিস না। দেখা যাবে বাথরুমে গেলেই পানি না ইউজ করে বের হস। এখন একেবারে গোসল করতে বলছিস! এই শীতে এখন গোসল করবো না।
রুহি বিরক্ত চোখে তাকিয়ে আছে। রোজার উপস্থিতি নিতে তার কষ্ট হচ্ছে। রোজা আবারো বলে-
-” আজ সাইমনের সাথে দেখা হয়েছিল!
রুহি চমকে তাকায়। তারপর জিজ্ঞেস করে-
-” তারপর?
রোজা তারপর পুরোটা খুলে বলে রুহিকে। রুহির খারাপ লাগে সব শুনে। সাইমন কেন এমন করে সে বুঝতে পারেনা। রুহি কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে –
-‘ খবিস কোথাকার। সব কথা শেষ হলে, যা এখান থেকে। আমার কাজ আছে। ঘর গোছাবো।
রোজা রুম টা দেখে বলে-
-” ঐ সব তো গোছানোই আছে। আমার টা গুছিয়ে দে তুই।
রুহি রেগে গিয়ে বলে-
-‘” দেখ বেশি হচ্ছে। যা বলছি।
রোজা বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায়। এরপর রুহির গোছানো বিছানা ল/ন্ডভ/ন্ড করে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। হাসতে হাসতে বলে-
-” নাও এখন গোছাও ম্যাডাম।
রুহি কিছু বলেনা। দরজাটা লাগিয়ে দেয়। এরপর হাতের আংটিটা বিছানার উপর তাক করে। বিছানা আবার আগের মত হয়ে যায়। রুহি বসে পড়ে আবারো। তাঁর আর এইসব ভালো লাগছে না। এই আংটিটা কে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। এই অপদার্থ জিনিসটার জন্য তার মা আজ তার কাছে নেই। তাঁর ভালোবাসা তার কাছে নেই। বিরক্তিকর সবকিছু। এখন তো রোদ্দুর ও চলে এসেছে। কিন্তু রোজা কি আদৌ মেনে নেবে রোদ্দুর কে? রোদ্দুরের এই ব্যবহারের জবাব রোজা যে কোন মূল্যেই দেবে। হাতের আংটিটা আবারো জ্বলে ওঠে। লাল আলো বের হচ্ছে এবার। মা কি তবে আবার বিপদে পড়লো? রুপির বুকটা হু হু করে ওঠে। তারপর আবারো আলো নিভে যায়। এর মধ্যে রোজা আবারো এসে দরজা ধাক্কা দেয়-
-” এই রুহি শোন না।
রুহি বেশ বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দিয়ে বলে-
-” কি হয়েছে তোর? বারবার এমন করছিস কেন? কিছু বললে বল না বললে একা থাকতে দে প্লিজ!
রোজা এসব কথা গায়ে মাখলো না। রুহি মাঝে মাঝে এমন ছটফট করে। রোজা ওড়নায় আঙুল পেঁচিয়ে বলে-
-” রোদ ভাইয়া আমাকে সরি বলেছে। লিপি নাকি কাঁদছে আমার জন্য। আমার কি ঐ বাসায় যাওয়া উচিত?
রুহি শান্ত হয় রোজার কথায়। কিন্তু দুশ্চিন্তা কমে না। সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলে-
-” তুই সত্যি রোদ ভাই কে মাফ করে দিয়েছিস?
রোজা থতমত খেয়ে বলে-
-‘ ওটা বাদ দে। লিপিকে কি পড়াতে যাওয়া উচিত?
রুহি কিছু ভাবে। ঐ বাসায় রোজা গেলে তো ওরা কাছাকাছি থাকতে পারবে। তাহলে তো ভালোই হবে। আবারো মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে-
-” আচ্ছা যা তাহলে।
রোজা উঠে রুহির গাল টেনে দিয়ে বলে-
-” আমি জানতাম রুহি যা বলবে তাই বেষ্ট।
রুহি মলিন হাসে। রোজা গুনগুন করতে করতে চলে যায়। তার মনে চলছে অন্যকিছু। রুহি খুবই চিন্তিত হয়ে আছে। তাঁর বোন আবার কোন অঘটন ঘটায় কে জানি। রুহি দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে তার আলমিরার কাছে যায়। সেখান থেকে একটা ডায়েরি বের করে। ডায়েরি টা অনেক পুরোনো। এমন ডায়েরি হয়ত বর্তমানে কয়েকটা জাদুঘরেই আছে। রুহি ডায়েরি টায় খোঁজে সাইমন কে ঠিক করার উপায় কিন্তু সে বরাবরের মতোই ব্যর্থ হয়। শুধু ঝাঁটার লেজের মতো একটি চিত্র দেখতে পায়। এই চিহ্নটার অর্থ সে বুঝতে পারেনা।
____
রোদ্দুর ছাদে দাঁড়িয়ে ছবি আঁকছে। ছবিতে দেখা মেয়েটা দেখতে একদম রোজা বা রুহির মতো। কিন্তু ব্যাপারটা তেমন নয়। এটা রোজা রুহি কেউই নয়। এই মেয়েটা কে রোদ্দুর মাঝে মাঝেই স্বপ্নে দেখে ছোটবেলা থেকে। রোজা যখন ছোট ছিল তখনই সে এই যুবতী কে স্বপ্নে দেখতো। রোদ্দুর প্রথমদিন রোজা কে পার্টিতে দেখে ভীষন অবাক হয়েছিল। কারন এই চেহারা তো সে গত ১৪-১৫ বছর ধরে স্বপ্নে দেখে। তারপর ঐদিন রাগ ও ছিল। তাই ইচ্ছে মত অপমান করছিল রোজাকে। আচ্ছা এই মুখটা রোজারই হয় যদি তাহলে তার স্বপ্নে এত আগে থেকে আসে কিভাবে? আর রুহি হঠাৎ কোথা থেকে এলো। রোজার জময বোন হলে তো ছোটবেলা থেকে একসাথে থাকার কথা। রোদ্দুর যখন বিদেশে গিয়েছে তখন ও রোজাকেই দেখেছে। তাঁর বাবা মাও একবার এইসব বিষয়ে তাকে বলেনি। কেন বলেনি? উফফ এত এত প্রশ্ন! এই সব উত্তর ইয়াসমিন আন্টি জানে, নয়ত আঙ্কেল।
-” বাহ রোদ্দুর ভালোই তো! রোজার ছবি আঁকছো বুঝি।
হঠাৎ কারো কথায় চমকে যায় রোদ। তাঁর বাবা কে দেখে বুকে থুতু দিয়ে বলে-
-” বাবা তুমি? এভাবে ভুতের মত এসে ভয় পায়িয়ে দাও কেন? আর এটা রোজা নয়।
আরমান ভ্রু কুঁচকে ছেলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে –
-” তাহলে এটা কে? রোজা আর রুহি। সেইম ই তো চেহারা।
রোদ্দুর আজ তার বাবাকে বলবেই। দেখবে তার বাবা কিছু করতে পারে কি না-
-” বাবা রোজা আর রুহি দেখতে এই মেয়েটার মতো। এই মেয়েটা কে আমি প্রায় ১৪-১৫ বছর আগে থেকে স্বপ্নে দেখি। । তখনও ছবি এঁকেছি। কিন্তু এবার রোজা রুহিকে দেখে আমি শকড। আমি এই চেহারার মেয়েটির উপর বিরক্ত বাবা। আমার মাথায় কিছু খেলছে না।
আরমান রিসাদের কপালে ভাঁজ পড়ে ছেলের কথায়। সে থমথমে গলায় ছেলেকে বলে-
-” তার মানে রোজা কে ঐদিন তুমি তোমার স্বপ্নের মেয়েটি ভেবে অপমান করেছো?
রোদ্দুর ইতস্তত করে বলে-
-‘ হ্যা বাবা।
আরমান রিসাদ চিন্তায় পড়ে যায় ছেলের কথায়। কিন্তু রোদ্দুর কে সেটা বুঝতে না দিয়ে বলে-
-” চিন্তা করো না। আমি দেখছি কি করা যায়। তবে একটা কথা বলতে এসেছি।
-” বলো বাবা।
-” তুমি নিশ্চয়ই জানো না তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। আমি আশা করি তুমি কোন রিলেশনে নেই।
রোদ্দুর অবাক হয়ে তার বাবাকে বলে-
-” বাবা তুমি আমার অনুমতি না নিয়ে বিয়ে ঠিক করেছো কিন্তু কেন? আর কার সাথে?
-” আমি তোমার বাবা আমি জানি কে ঠিক তোমার জন্য। আর কার সাথে করেছি তা বিয়ের পর দেখি ও।
-” কিন্তু বাবা আমি একজন কে ভালোবাসি।
-” কিছু করার নেই। আম যা করবো তাই মেনে নাও তুমি।
আরমান চলে যায় কথাটা বলে। রোদ্দুর পিছু ডেকে বলে-
-” আমি যাকে ভালোবাসি তাকেই বিয়ে করবো। তুমি এক কথার মানুষ হলে আমিও তোমার ছেলে!
আরমান রিসাদ মৃদু হেসে বলে-
-” দেখা যাক।
#চলবে
(আসসালামুয়ালাইকুম। একটু খাপছাড়া লাগবে। কিন্তু পরের পর্বগুলো পড়লে আস্তে আস্তে ঠিক লাগবে। আপাতত কিছু রহস্য থাক। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।)