More than love
পর্ব ৮
মেঘলা_আহমেদ
.
-” আচ্ছা তুমি টাইম ট্রাভেলিং বিশ্বাস করো মেরুন? তুমি কি বিশ্বাস করো টাইম ট্রাভেল করে অতীতে যাওয়া যায়। আবার অতীত থেকে ভবিষ্যতে আসা যায়।
রুহির কথায় মেরুন কিছুটা অবাক হয়। তারপর হেসে বলে-
-” না মামনি। ওসব এমনিই রূপকথা। সারাদিন ফোনে কিসব ভিডিও দেখিস। ওসব কি সত্যি নাকি?
রুহি মেরুন কে আর কিছু বলেনা। চুপ করে ঘুমিয়ে পড়ে। তার কথা কেউ কি বিশ্বাস করবে? মেরুন আরেকটু এগিয়ে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। রুহির মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। তিনি তো এভাবেই হাত বুলিয়ে দিতো। রুহি মেরুন কে জড়িয়ে ধরে।
_________
সকালবেলা খাবার টেবিলে আয়মানের কথা শুনতে যেন রোজা রুহি প্রস্তুত ছিল না। আয়মান শান্তকন্ঠে মেয়েকে বলে-
-” রোজা মা তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।
রোজা হুম শফিক বাবার কথা শুনে অবাক হয়। বাবা আবার তাকে কি বলবে? রুহি কনুই দিয়ে রোজার পেটে খোঁ/চা দেয়। রোজা রাগী চোখে রুহির দিকে তাকায়। রুহি ভ্রু নাচিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করে-
-” ব্যাপার কি? কিছু করেছিস?
রোজা ঠোঁট উল্টে না বুঝায়। তারপর তার বাবাকে বলো-
-” হ্যা বাবা বলো।
আয়মান একবার মেরুনের দিকে তাকায়। মেরুন চোখ দিয়ে ভরসা দেয়। সে রোজার দিকে তাকিয়ে বলে-
-” মা তুমি বিশ্বাস করো তো। তোমার বাবা কখনো তোমার খারাপ চাইবে না। সে তোমার জন্য সবসময় সঠিক জিনিস পছন্দ করবে।
বাবার কথা শুনে রোজার গলা শুকিয়ে গেল। তার বাবা কি বলতে চাইছে। রোজা আটকে যাওয়া গলায় বলে-
-” হ্যা বাবা বলো।
-” আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।
রুহি চোখ বড় বড় করে রোজার দিকে তাকায়। রোজার মুখটা চুপসে গেছে। রোজা বাবার অবাধ্য হয়না। তাই এই বিয়েটাও করে নিতে হবে সে জানে। রুহি মিনমিন করে জিজ্ঞেস করে –
-” বাবা কার সাথে ঠিক করেছো?
মেরুন এবার হেসে বলে-
-” রোদ্দুর!
নামটা শোনা মাত্রই রোজার মাথার মধ্যে ভনভন করতে শুরু করলো। একথা যেন সে স্বপ্নেও ভাবেনি। রোদ্দুর কে সে কেন বিয়ে করবে? রুহি মুচকি হাসলো। যাক বাবা তাহলে একটা ভালো কাজই করেছে। রুহি খুশি হয়ে বলল-
-” ওয়াও গ্রেট। রোদ ভাইয়া কে তো আমার ভীষণ পছন্দ। সে আমার দুলাভাই হলে তো ভালোই হবে। কি বলো রোজা।
রোজা রেগে উঠে দাঁড়ালো। একটা কাঁ/টাচামচ রুহির গলায় ধ/রলো। রুহি তো ভয়ে শেষ। রুহি তুতলিয়ে বলে-
-” কি কি করছিস? সরা ওটা।
মেরুন ভয়ে বলল-
-” আরে কি করছিস। এমন করছিস কেন। রুহির লেগে যাবে ছাড়।
রোজা কাঁ/টাচামচ টা রেখে। নিজের রুমে চলে যায়। রুহি হাফ ছেড়ে বাঁচে। রোজার বাবা যেন মেরুন কে, কি যেন বলে হসপিটালে চলে গেলো। রুহি অসহায় চোখে মেরুনের দিকে তাকায়। মেরুন কে বলে-
-” প্লিজ মেরুন। ওকে রাজি করাও। ওকে এই বিয়ে করতেই হবে। প্লিজ তোমার পায়ে পড়ি।
মেরুন বাঁধা দিয়ে বলে-
-” আরে বোকা মেয়ে পায়ে পড়ছিস কেন? রোদ্দুর ওকে পছন্দ করে। তাই কাল রোদ্দুরের বাবা মা আমাকে বলেছে। আমি ভাইয়া কে বলায় সে নির্দ্বিধায় রাজি হয়ে গেছে। তাছাড়া যখন তুই ছিলি না। রোজা একা ছিল। তখনি তোর মা রোদ আর রোজার বিয়ের কথা বলেছিল। রোদ সে কথা আজও মনে রেখেছে। তুই থাক আমি যাচ্ছি।
মেরুন রোজার রুমের দিকে পা বাড়ায়। একরাশ আশা নিয়ে নিজের ঘরে ঢোকে রুহি। বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হলেই হয়। তাহলে আর সাইমন রোজার পিছনে ঘুরবে না। ভাবতেই রুহির মুখে এক চিলতে হাসি ফোটে। রোজা নিজের বিছানার উপর স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। সবকিছু এলোমেলো লাগছে তার কাছে। তার বাবার কথা কি করে অমান্য করবে। ডুকরে কেঁদে ওঠে সে। মেরুন নিঃশব্দে ঘরে ঢোকে। রোজা কে কাঁদতে দেখে তাঁর খারাপ লাগে। সে গিয়ে আস্তে করে রোজার পাশে বসে জিজ্ঞেস করে-
-” তুই কি অন্য কাউকে পছন্দ করিস? তাহলে বল আমি বিয়েটা ভেঙে দেব।
রোজা জলে টুইটুম্বুর চোখজোড়া তুলে মেরুনের দিকে তাকায়। মাথা দুইদিকে নাড়িয়ে না বোঝায়। মানে সে কাউকে পছন্দ করেনা। মেরুন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে-
-” তাহলে কেন বিয়ে করতে চাইছিস না? রোদ্দুর তো অনেক ভালো ছেলে।
রোজা এক হাত দিয়ে চোখের জল মুছে বলে-
-” তুমি জানো না ও কত খারাপ। ও আমাকে পার্টি ভর্তি লোকের সামনে অপমান করেছে। আমার পছন্দের ড্রেসটা ছিঁড়েছে। আমার বাবাও কখনো উঁচু গলায় একটা কথা বলেনি। পার্টি ভর্তি লোকের সামনে আমাকে অনাহারী আরো অনেক কিছু বলেছে। বলো তুমি ও কি ভালো? কোন ভালো মানুষ এমন করে? আমার কি মান সম্মান নেই? মেয়ে বলে কি আমার ইগো নেই? ওকে কেন আমি বিয়ে কবরো?
মেরুন হা হয়ে যায় রোজার কথায়। অবাক হয়ে বলে-
-” রোদ্দুর কি করে এমনটা করলো। আর যাই হোক দেখ ওটা মিস আন্ডারস্টেন্ডিং ছিল মনে হয়। তুই ওটা নিয়েই পড়ে আছিস? শোন বিয়েটা না হলে তোর বাবা কষ্ট পাবে। তুই তোর বাবা কে কষ্ট দিবি? রোদ্দুর কে বিয়ের পরে বুঝিয়ে দিবি। এখন বিয়েটা করে নে প্লিজ। তোর মায়ের ইচ্ছা পূরণ করবি না।
রোজা চুপ হয়ে যায় মায়ের কথা শুনে। কিছুক্ষণ পর ধীর গলায় মেরুন কে বলে-
-” তুমি যাও। বাবা আসলে আমি বলবো। এখন যাও। আর তোমার ভাবির কথা আমার সামনে বলবে না।
মেরুন ধীর পায়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। সে জানে রোজা তার মা কে কতটা ভালোবাসে। রোজা আর যাই করুক কখনো তার দসমা কে ঘৃণা করতে পারেনা। সে রোজার ডায়েরি তে দেখেছে। রোজা এখনো তার মা কে মিস করে। প্রতিদিন ডায়েরি তে মা কে নিয়ে লেখে। অথচ বাহিরের মানুষের সামনে যেন অন্য কেউ। রোজা গিয়ে তার পড়ার টেবিলে বসে। ডায়েরি টা বের করে লিখে-
-‘ মা শুধু তোমার ইচ্ছে বলেই আমি রোদ কে বিয়ে করবো। তোমার ইচ্ছে বলেই। জানো খুব ভালোবাসি। তুমি এমন কেন? একটুও মায়া হলোনা? ছেড়ে চলে যেতে।
রোজা কান্নায় ভেঙে পড়ে। মনে পড়ে সেই দিনটির কথা। তার মায়ের কাছে অনেক ভালো একটা জব অফার এসেছিল আমেরিকা থেকে। তার মা জবটার জন্য খুব খুশি ছিল। তারা সপরিবারে যেতে চেয়েছিল সেখানে। তখন রুহিও ছিল তাদের সাথে। রোজার নবম জন্মদিনে তার মা কোথা থেকে যেন রুহি নামের একটা মেয়েকে নিয়ে আসে। যে দেখতে তার মতই। ওটা নাকি তার জমজ বোন। এ নিয়ে বাবা মায়ের মধ্যে ঝ/গড়া হয়েছিল। কিন্তু তা রোজা জানেনা। সে রুহিকে নিয়ে খুব জেলাস ছিল। তার সব আদর কেন রুহি নিয়ে নিবে। তার কয়েকদিন পরেই জব অফার টা আসে। মা তার বাবাকে বলে সবাই মিলে আমেরিকা যাওয়ার কথা। ওখানে গিয়ে মেয়েদের ভালো ক্যারিয়ার গড়বে। কিন্তু তখন মেরুন ছিল ১৫-১৬ বছরের যুবতী। তাই রোজার বাবা যেতে না করে। সামনেই ছিল মেরুনের এসএসসি পরীক্ষা। এ নিয়ে দুজনের ত/র্কাত/র্কি হয়। এবং রোজার মা এক পর্যায়ে বলে সে ডিভোর্স দিবে আয়মান কে। তারপর মেয়েদের নিয়ে চলে যাবে। মেয়েরা যদি না যেতে চায় তাহলে সে একাই চলে যাবে। যদিও কথাটি রাগ করে বলেছিল কিন্তু কে জানে তাই সত্যি হবে? রোজা ঐদিন রাতে তার বাবার কাছে ঘুমিয়েছিল। আর রুহি তার মায়ের কাছে। কিন্তু সকালবেলা উঠে রুহি আর ইয়াসমিন কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তারপর সবাই খুঁজতে খুঁজতে ছাদে গিয়ে দেখে রুহি অচেতন হয়ে পড়ে আছে। রুহির জ্ঞান ফেরার পর জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কিভাবে ছাদে গেল? কিন্তু রুহি যেন কিছু বলার অবস্থায় ছিলো না। তারপর থেকে ইয়াসমিন কে আর কোথাও পাওয়া যায়নি। একটা চিরকুট পেয়েছিল শুধু। যাতে লেখা ছিল-
-” আমি চলে যাচ্ছি। তুমি মেয়েদের নিয়ে ভালো থেকো। আমার ক্যারিয়ার সবার আগে।
এরপর থেকেই রোজা মায়ের কথা কারো মুখে শুনলে রাগ করে। যে চলে গেছে যাক না। কিন্তু মন তো মানেনা। মনের মধ্যে এখনো ক্ষীন আশা মা ফিরবে। কিন্তু এ আশা কি পূরন হবার? কত বছর চলে গেল! আচ্ছা তার মা কি ফিরবে?
#চলবে
.