স্কুল থেকে বাসায় এসে দেখি মামা এসেছে। মামা আসলে আমাদের বাসায় একটা উৎসবের মতো হয়।মামা প্রতিবার বিভিন্ন বিখ্যাত খাবার নিয়ে আসে। গতবার এনেছিল কুমিল্লার রসমালাই। আমার বাবা একটা জুট মিলে চাকুরী করে।আমাদের খুব অভাবের সংসার।
তারউপর আমার পড়ালেখার খরচ।
মেহমান ছাড়া আমাদের বাসায় পোলাও রান্না হয় না।পোলাও আমার প্রিয় খাবার। অপেক্ষায় থাকি কবে মেহমান আসবে।মামা কে দেখে আমি প্রচন্ড খুশি! ভাবছি আজ পোলাও রান্না হবে!
বাবা বাজার থেকে গরুর মাংস এনেছে।গরুর মাংস আর পোলাও।আমি আবার নরম মাংস ছাড়া খেতে পারি না।মা জানে এটা।মা আমার খাবারের দূর্বলতা জানে।মায়েরা সব বুঝে! আমার জন্য আলাদা করে বেছে মাংস রেখে দেয়।যে-দিন পোলাও রান্না হয়।মা একটু বেশি করে রান্না করে।
মাংসতেও আলু ঝোল দিয়ে রান্না করে, যেন পরের দিন সকালে খেতে পারি।সকালে আগেরদিনের মাংসের ঝোল এক/দুটোকরা আলু দিয়ে
পোলাও সেই স্বাদ! আমরা যে ভাবে বেড়ে উঠেছি,সেখানে আমার এটা পছন্দ এসব বলার সুযোগ নেই।তবুও মা যেন কেমনে সব বুঝে!
আমাদের রান্না ঘরটা একটু দূরে, রান্না ঘরের পাশে বাথরুম। বাথরুম বলতে একটা ঘর নিচে পাকা করা, একটা চাপ কল। কলেই গোসল, খাবার পানি সব। মা রান্না করছে।আমি আজ খেলতে বের হয়নি। একটু পর পর রান্না ঘরে যাই।দেখি মায়ের রান্না কখন শেষ হবে।মামা আজ বগুড়ার দই এনেছে।
মায়ের রান্না শেষ, সবাইকে খেতে দিবে আমরা সবাই খেতে বসেছি।
মা গেল চাপ কল থেকে পানি আনতে।আমাদের চাপ কলটা একটু শক্ত।
চাপ দিতে গিয়ে মা,কলের হাতেল ছিটকে মারাত্বক ব্যাথা পেলেন, পরে গেলেন পাকার উপর,অজ্ঞান হয়ে গেলেন, মাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল।
মায়ের জ্ঞান ফিরলো ঘন্টাখানিক পর।মাথায় আঘাত পেয়েছেন।
বেন্ডেজ করা হয়েছে। দূরে দাড়িয়ে কাঁদছি। মা আমাকে কাছে ডাকলেন
ইশারায়। আমি মায়ের বেডের পাশে বসলাম।মা মাথায় হাত দিয়ে বললো খেয়েছিস? আমি কাঁদছি।কাঁদছিস কেন বোকা আমার কিছু হয়নি।
বাসায় যা আলমারির মাজের তাকে তোর জন্য বাটিতে মাংস রেখেছি!!!
@ নাবিল মাহমুদ