মায়াবতী পর্ব ১৩
তানিশা সুলতানা
তন্নি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। নুয়িয়ে রাখা মাথা একদম মিশিয়ে ফেলেছে শরীরের সাথে। হাত দুটো অনবরত ঘসাঘসি করছে। জোরে জোরে শ্বাস টানছে।
অর্ণব ফোঁস করে শ্বাস টানে।
“রোমান্টিক সীন দেখলে যার এই অবস্থা হয় তাকে ছুঁয়ে দিলে কি অবস্থা হবে? বাচ্চাকাচ্চার মুখ দেখতে পারতো তো আমি আদৌও?
বিরবির করে বলে অর্ণব।
” ভাইয়া বাড়িতে পিচ্চি পিচ্চি দুটো বাচ্চা আছে। একটু দেখে শুনে রোমাঞ্চ করবি তো।
অথৈ মুখ বাঁকিয়ে বলে। নিধি এক গাল হেসে এগিয়ে আসে অথৈয়ের দিকে। অথৈকে জড়িয়ে ধরে।
“সেরকম কিছু না। ওই আর কি
নিধি বলতে যায়।
” কিস করছিলাম।
অর্ণব তন্নির দিকে তাকিয়ে বলে। অথৈ খুকখুক করে কেশে ওঠে। তন্নি চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। নিধিও খানিকটা লজ্জা পায়। অর্ণব বেশ এনজয় করছে তন্নির ফেইসটা।
“অথৈয়ের তন্নি তোমাকে কিস করি নি। নিধিকে করেছি।
তন্নির দিকে দুই পা এগিয়ে এসে বলে অর্ণব। তন্নি চমকে চোখ খুলে। শুকনো ঢোক গিলে এক পলক তাকায় অর্ণবের দিকে। হাত পা কাঁপছে তন্নির।
তন্নির অবস্থা দেখে অথৈ আর নিধি হেসে ফেলে।
” শয়তানের নানা আমার তন্নির সাথে মজা নিবি না একদম
তন্নিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে অথৈ।
“মজা নিচ্ছি না। মজা দিতে চাচ্ছি।
নিধি অর্ণবের কাঁধে থা*প্প*ড় মারে। অথৈ চোখ পাকিয়ে তাকায়।
” নিধিপু তোমার বয়ফ্রেন্ড চরম লেভেলের একজন শয়তান।
অথৈ রেগে বলে। তন্নি এবার জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করে। এতলটা লজ্জা পাওয়ার জন্য নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। এভাবে লজ্জা না পেলে এতোগুলো কথা শুনতেও হতো না।
তন্নি নিধির দিকে এগিয়ে আসে।
“আপু তুমি দ্রুত ভাইয়াকে বিয়ে করে ফেলো। একদম দেরি করিও না।
” ও মা কেনো?
নিধি তন্নির থেকে খানিকটা লম্বা।কোমর ধরে তন্নির দিকে একটু ঝুঁকে বলে নিধি।
অর্ণব ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে।
“ভাইয়া তখন আমাকে বলছি তার না কি নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হচ্ছে। সে অলওয়েজ তোমার সাথে চিপকে থাকতে চায়। তার দম বন্ধ লাগে তোমাকে ছাড়া। সে একদম লেট করতে চায় না। তাড়াতাড়ি তোমায় ঘরে তুলতে চায়।
তাই না ভাইয়া? ভাইয়া বলতে পারছিলো না তো। আমি উপকার করে দিলাম।
শেষের কথাটা অর্ণবের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে। নিধি লজ্জা পায়। মাথা নিচু করে লাজুক হাসে। অথৈ দৌড়ে চলে যায়। এদের কথার মাঝে থাকা মানে নিজের কানকে ব*লি দেওয়া।
অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে চোয়াল শক্ত করে।
” হ্যাঁ তাই তো কটকটি। এতো বড় উপকার করার জন্য ইচ্ছে করছে তোমাকে কটকট করে খে*য়ে ফেলতে।
চোখ মুখ শক্ত করে বলে অর্ণব। তন্নি ভেংচি কাটে।
“খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলবো। এই সপ্তাহের মধ্যেই। আমি পাপাকে বলে আসি।
বলেই নিধি এক দৌড়ে চলে যায়। তন্নি মুচকি হেসে চলে যেতে নেয় অর্ণব তন্নির হাত ধরে ফেলে। ভ্রু কুচকে অর্ণবের দিকে তাকায় তন্নি।
” আমি তন্নি ভাইয়া। অথৈয়ের তন্নি৷ নিধি আপু না।
তন্নি মুচকি হেসে বলে।
“আই নো জান।
তুমি আমার মায়াবতী
বলেই তন্নিকে এক টান দিয়ে দেয়ালের ঠেকিয়ে নেয়। আর অর্ণব নিজের এক হাত তন্নির মাথার পাশে দেয়ালে রাখে আর আরেক হাত তন্নি কানের পেছন দিয়ে চুলে ঢুকিয়ে দেয়। তন্নি ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে।
” কিছু বলবেন ভাইয়া?
অর্ণবের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে তন্নি। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়। লোকটার চোখে কিছু একটা আছে। যা তন্নির বুকে গিয়ে বিঁধছে।
এবার লজ্জা পায় তন্নি৷ অর্ণবের প্রতিটি নিশ্বাস তন্নির চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে৷
তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে।
“এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ে? সালমাতে পারবে? পিচ্চি মানুষ বলে ছাড় পাবে না কিন্তু।
গম্ভীর গলায় বলে অর্ণব।
” আআআমার ফাপড় লাগছে। একটু সরে দাঁড়ায় প্লিজ। আপনার পেছনে অনেক জায়গা আছে।
তন্নি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রিনরিনিয়ে বলে। অর্ণব ফোঁস করে শ্বাস টেনে সরে দাঁড়ায়। তন্নি হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
“আর একটু হলে মরেই যেতাম। এভাবে চিপকে কেউ দাঁড়ায়?
তন্নি ওড়না দিয়ে নাকের ঘাম মুছতে মুছতে বলে।
” গাঁধা
অর্ণব তন্নির মাথায় চাটি মেরে চলে যায়। তন্নি অর্ণবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকায়।
“লাগাম ছাড়া শয়তানের নানা।
বিরবির করে বলে তন্নি।
নিধিকে বিয়ের কথা উল্লেখ করতে দেয় না অর্ণব। সে কথা ঘুরিয়ে নিধিকে নিয়ে চলে আসে। কিছু বোঝাপড়া করা বাকি নিধির সাথে। কিছু কথা বলা দরকার।
কিন্তু কথা বলতে দেয় না অথৈ আর আর্থি। অর্ণব নিধিকে নিয়ে আসার পরে দুই বোন টেনে নিয়ে যায়।
তন্নি এতখন এটাই দেখছিলো। এবার দেরি হয়ে যাচ্ছে যেতে হবে৷
নিজের পার্স হাতে নিয়ে চুপচাপ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অথৈকেও বলে যায় না। বললে যেতে দেবে না।
খানিকটা যেতেই দেখা হয়ে যায় সাগরের সাথে। সে বাইকের ওপর বসে আছে। তন্নিকে দেখেই এক গাল হেসে হাত নারায়। তন্নিও হাসে৷
” আপনি এখানে?
তন্নি জিজ্ঞেস করে। সাগর বাইক থেকে নেমে পড়ে।
“ওই বাড়িতে থাকি আমি।
অর্ণবদের পাশের বাড়িটা দেখিয়ে বলে সাগর।
” অথৈদের বাসায় এসেছিলে?
“হুমমম
” এখন বাসায় যাচ্ছো?
“হ্যাঁ
” চলো তোমায় পৌঁছে দেই।
সাগর বাইকে বসে চাবি ঘুরিয়ে নিয়ে বলে।
” না না আমি একাই যেতে পারবো। বেশি দূরে নয় তো। ওইখানেই।
“এমন করিও না প্লিজ।
বাইকের পেছনে ছিটে এখনো কাউকে বসতে দেই নি। তোমাকে বসাবো বলে। আম্মু কতো জোরাজোরি করলো আজকে। এখন তুমি না বসলে আম্মুকে নিয়ে লং ড্রাইভে যেতে পারবো না তো।
অসহায় ফেস করে বলে সাগর। তন্নি ভ্রু কুচকে ফেলে। সাগরের কথা ঠিক বুঝলো না।
” আমাকেই কেনো?
তন্নি প্রশ্নটা করে ফেলে৷
“কারণ তুমিই তন্নি তাই।
সাগর হেসে বলে। তন্নি ভাবনায় পড়ে যায়।
” ওঠো না তন্নি। ও তন্নি ওঠো৷
ওঠো তন্নি। প্লিজ তন্নি।
প্লিজ প্লিজ প্লিজ
বলতেই থাকে সাগর।
“আচ্ছা আচ্ছা থামেন আপনি।
সাগর বিশ্বজয়ের হাসি দেয়। নিজের হেলমেট পড়ে নেয়। তারপর তন্নিকে উঠতে ইশারা করে।
তন্নি শুকনো ঢোক চিপে সাগরের কাঁধে হাত দিয়ে বাইকে বসে পড়ে।
এটা দেখে ফেলে অর্ণব। সে এসেছিলো তন্নির পেছন পেছন।
তন্নি উঠতেই সাগর আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বাইক স্ট্রাট দেয়।
অর্ণব কাটা হাতটা মুষ্ঠিবদ্ধ করে ফেলে। ফর্সা মুখটা লাল হতে থাকে।
” এটা ঠিক করলে না মায়াবতী। তোমায় শে*ষ করে ফেলবো আমি।
চলবে…………….