মায়াবতী পর্ব ১৪
তানিশা সুলতানা
সাগর রীতিমতো আকাশে উড়ছে। তার চোখে মুখে খুশি উপচে পড়ছে৷ ঠোঁটের কোণে থেকে হাসি সরছেই না। তন্নি হাত রেখেছে সাগরের কাঁধে। হার্ট বিট রীতিমতো লাফাচ্ছে সাগরের।
আর তন্নি কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে তার সাগরের কাঁধে হাত রাখতে। কিন্তু কি করবে? এমনিতেই ভীষণ ভয় পায় তারওপর আবার পেছনে ধরার মতো কিছু নেই। তাই বাধ্য হয়েই সাগরের কাঁধে হাত রেখেছে। আর আল্লাহ আল্লাহ করছে যাতে রাস্তাটা দ্রুত শেষ হয়।
বাড়ি থেকে একটুখানি দূরে বাইক থামায় সাগর। তন্নি তাড়াহুড়ো করে নেমে যায়। সাগর হেলমেট খুলে চুল ঠিক করতে থাকে।
“ধন্যবাদ ভাইয়া
মুচকি হেসে বলে চলে যেতে নেয় তন্নি।
” শুনো তন্নি
সাগরের ডাকে দাঁড়িয়ে যায় তন্নি। পেছন ঘুরে সাগরের দিকে তাকায়।
“তোমার কি আমার সঙ্গ খারাপ লাগে? আই মিন বিরক্ত লাগে?
” না না এটা কেনো হবে?
“তাহলে ভালো লাগে?
সাগরের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।
” হুমম লাগে
বলেই তন্নি চলে যায়। সাগর লাফিয়ে ওঠে। চুল গুলো দুই হাতে পেছনে ঢেলে দুই হাত মেলে দিয়ে আকাশের দিকে তাকায়।
“খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে আমার করে নিবে তন্নি৷ তুমি শুধু আমার। বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখবো তোমায়। কাউকে নজর দিতে দিবো না।
বিরবির করে বলে সাগর।
অর্ণব ওদের পেছন পেছন এসেছিলো সব কিছু শুনে এবং দেখে। রাগে লাল হয়ে গেছে অর্ণব। কাটা হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে। তবুও তার কোনো হুশ নেই।
তন্নি বাড়িতে ঢুকে দেখেইতি আর তামিম বাড়িতে নেই। ফোনটা বিছানার ওপর রাখা। ভাত বেরে বিছানার ওপর ঢেকে রেখে গেছে। গেলো কোথায়?
চিন্তায় পড়ে যায় তন্নি।
বিছানার এক পাশে একটা প্যাকেট দেখে। সেটা খুলে ফেলে তন্নি। ভেতরে ছিলো একটা পাতলা টিশার্ট আর প্লাজু। খুশি হয়ে যায় তন্নি। নতুন জামা পড়তে তার ভীষণ ভালো লাগে।
ফোনটা অন করে দেখে বড়মামার নাম্বার থেকে অনেক গুলো কল এসেছে।
তন্নি আবার কল ব্যাক করে
ইতি বেগম জানান
সে গেছিলো তার অসুস্থ মাকে দেখতে। এবং আজকেই ফিরে আসতে চেয়েছিলো। কিন্তু মায়ের শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ হওয়াতে সে আসতে পারবে না। খাবার রাখা আছে তন্নি যেনো খেয়ে নেয়। আর পাশের বাসার পারুলকে বলে এসেছে। রাতে পারুল থাকবে তন্নির সাথে।
তন্নি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ফোন রাখে। নতুন জামাকাপড় হাতে নিয়ে কল পাড়ে যায়। তন্নিদের বাড়ির এক পাশে টিবওয়েল। সেখানেই গোছল করতে হয়।
গোছল শেষে গামছা দিয়ে চুল পেঁচিয়ে জামাকাপড় উঠোনে মেলে দিয়ে রুমে যায় তন্নি।
রুমে ঢুকতেই চমকে ওঠে। কারণ অর্ণব বসে আছে খাটের এক পাশে।
” আআআপনি
তন্নি ভয় পেয়ে চোখ বড়বড় করে বলে। অর্ণব তাকিয়ে থাকে তন্নির দিকে৷ পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে।একদম অন্য রকম লাগছে তন্নিকে। সদ্য গোছল করায় উজ্জ্বলতা অনেকটা বেরে গেছে। চোখে মুখে বিন্দু বিন্দু পানি জমেআছে। গামছা দিয়ে বেঁধে রাখা চুলগুলো থেকে কিছু চুল বেরিয়ে এসেছে। পাতলা টিশার্টটা খানিকটা ভিজে গেছে। ফর্সা গলা চুয়িয়ে পানি ভেতরে চলে যায়।
অর্ণবের রাগ পড়ে যায়। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে।
“ওড়না জড়াও বেয়াদব মেয়ে।
অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে ধমক দিয়ে চলে। তন্নি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। চট করে চুল গুলো খুলে দেয়। ওড়না দেখতে পাচ্ছে অর্ণবের পেছনে।
গামছাটা একদম ভেজা।
চুল গুলো দুই পাশে ভাগ করে দেয় তন্নি।
” পারমিশন ছাড়া কোনো মেয়ের বেডরুমে ঢুকতে নেই জানেন না আপনি?
তন্নি অর্ণবের দিকে এগিয়ে এসে কোমরে হাত রেখে বলে।
“তুমি মেয়ে না কি?
নিচের দিকে চোখ রেখেই বলে অর্ণব।
” আমি মেয়ে না?
গাল ফুলিয়ে বলে তন্নি।
“নাহহ
” তাহলে আমি কি?
“মহিলা
তন্নি নাকের পাটা ফুলিয়ে আরও একটু এগিয়ে আসে। অর্ণব এবার তাকায় তন্নির দিকে। মেয়েটা কি পাগল করার ধান্ধা এঁটেছে?
” আমি মহিলা? ঠিক আছে তাই ই আমি।
এবার প্লিজ বাইরে বের হয়। কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এমনিতেই আমার মা বাড়িতে নেই।
অর্ণব তন্নির হাত ধরে পাশে বসিয়ে দেয় তন্নিকে। তন্নি হতভম্ব হয়ে যায়। গলা শুকিয়ে আসে। এমন করছে কেন?
অর্ণব তাকিয়েই আছে তন্নির দিকে। তন্নি ওঠার চেষ্টা করে। অর্ণব তন্নির পিঠের ওপর দিয়ে হাত দিয়ে একটুখানি জড়িয়ে ধরে। তন্নি ভয় লজ্জা অস্বস্তিতে একদম কুঁকড়ে যায়।
“এএটাকি করছেন আপনি? প্লিজ চলে যান।
অর্ণব তন্নির কাঁধে নিজের মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
” তোমার সাথে থাকতে আসি নি। আমার রাখার যৌগ্যতা তোমার নেই। গাধা
গম্ভীর গলায় বলে অর্ণব। তন্নি শুকনো ঢোক গিলে। হাত পা কাঁপছে রীতিমতো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
“ভাইয়া প্লিজ
বলতে বলতে কেঁদে ফেলে তন্নি। তন্নির কান্নায় বিরক্ত হয় অর্ণব। তন্নির ঘাড় থেকে মাথা তোলে। মাথা নিচু করে কাঁদছে তন্নি।
অর্ণব ফোঁস করে শ্বাস টেনে উঠে দাঁড়ায়।
তারপর আচমকা তন্নিকে পাঁজা করে কোলে তুলে নেয়। তন্নি চমকে ওঠে। ভয়ে অর্ণবের গলা জড়িয়ে ধরে।
“পরপুরুষের কাঁধে হাত রাখার সখ মিটিয়ে দিবো আজকে আমি।
বলতে বলতে তন্নিকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। তন্নি চেঁচাতে গিয়ে চেঁচাতে পারে না। আশেপাশে লোক জড়ো হয়ে গেলে শেষ হয়ে যাবে তন্নি।
মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছে যাতে কেউ না দেখে।
অর্ণব তন্নিকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে লক করে দেয়। তন্নি কাঁপছে৷ কান্না করতেও ভূলে গেছে। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। মাথা বনবন করছে। কি হচ্ছে এসব?
অর্ণব ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। নিজপর সিট বেল্ট বাঁধতে গিয়ে তন্নির দিকে তাকায়। তন্নিকে কাঁপতে দেখে বাঁকা হাসে অর্ণব৷
তারপর তন্নির দিকে ঝুঁকে সিট বেল্ট বাঁধার জন্য তন্নি চোখ মুখ খিঁচে একদম সিটের সাথে মিশে যায়।
অর্ণব ভ্রু কুচকে তাকায় তন্নির মুখের দিকে। বেশ লাগছে দেখতে।
মুচকি হেসে সিট বেল্ট বেঁধে দূরে সরে আসার সময় নজর পড়ে তন্নি ঘাড়ে থাকা লাল তিলটার দিকে। দারুণ আকর্ষণীয় তিলটা। লোভ সামলাতে পারে না অর্ণব। হাত এগিয়ে দেয় তিলটার দিকে।
আর তখনই তন্নি চোখ পিটপিট করে দুর্বল গলায় প্লিজ বলে।
থেমে যায় অর্ণব। তন্নির মুখে ফু দিয়ে নিজের সিটে এসে বসে।
আর তন্নি আবার চোখ মুখ খিঁচে ফেলে। হার্ট বিট দ্রুত লাফাচ্ছে। অস্থির লাগছে৷
“বাঁদরে মতো কাচুমাচু না হয়ে ভালো করে বসো। তোমার সাথে বাসর করে ফেলি নি আমি।
অর্ণব ড্রাইভ করতে করতে বলে। তন্নি আবার চমকে ওঠে। চোখ খুলে জোরে জোরে শ্বাস টানে।
বুকে থু থু নেয়।
” এই লোকটা কবে জানি আমাকে মে*রে ফেলবে।
তন্নি বিরবির করে বলে।
“হ্যাঁ
আর সেটা খুব দ্রুত।
তোমাকে না মে*রে ফেলা পর্যন্ত আমি শান্ত হতে পারছি না।
অর্ণব বলে ফেলে। তন্নি অবাক হয়ে যায়।
” লোকটা শুনলো কি করে?
অর্ণব বাঁকা হাসে।
“আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
তন্নি মাথা নিচু করে রিনরিনিয়ে জিজ্ঞেস করে।
” সাগরের কাছে। ওর সঙ্গ তো তোমার ভালো লাগে। তাই ভাবলাম তোমাদের দুজনকে পাশাপাশি বেঁধে রাখবো।
শান্ত গলায় বলে অর্ণব। তন্নি বড়বড় চোখ করে তাকায় অর্ণবের দিকে।
চলবে…………