মায়াবতী পর্ব ২২
তানিশা সুলতানা
তন্নি পেছন ফিরে তাকায়। গাড়িতে বসে ডাকছে অর্ণব। তন্নির বিরক্ত লাগে। এই লোকটার কি আর কোনো কাজ নেই? চাকরি বাকরি কি কিছু করবে না? সারাক্ষণ কি তন্নির পেছনে এভাবেই পড়ে থাকবে?
অর্ণবের ঠোঁটে সিগারেট। সাথে ড্রাইভার নেই। সে নিজেই ড্রাইভিং সিট এ বসে আছে। সিটবেল্টটাও বাঁধে নি। ঝাঁকড়া চুলগুলো পাখির বাসার মতো লাগছে। সাদা শার্টের তিনটা বোতাম খোলা। ফর্সা বুকের কালো লোম গুলো উঁকি দিচ্ছে।
এতোটা অভদ্রতা কখনোই দেখেনি অর্ণবকে। ইনফেক্ট কখনো সিগারেট খেতেও দেখেনি।
তন্নি এগোবে না কি হাঁটবে বুঝতে পারছে না। বেশ দোটানায় পড়ে গেছে৷
ব্যাগটা শক্ত করে ধরে ঠোঁট কামড়ে চিন্তা করে যাচ্ছে।
অর্ণব বিরক্ত হয়। এভাবে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো মানেই হয় না।
দরজাটা লাথি দিয়ে খুলে মুখ বের নেয় অর্ণব। শক্ত চোখে তাকিয়ে বলে
“কোলে করে আনতে হবে?
ব্যাস হয়ে গেলো। তন্নি সুরসুর করে চলে আসে। পেছনের সিটে বসতে যাবে তখনই হুরমুরিয়ে অথৈ চলে আসে।তন্নির সামনে দাঁড়ায়। রীতিমতো হাঁপাচ্ছে মেয়েটা। তন্নি ভ্রু কুচকে তাকায়।
” তুই এখানে?
“তুই জুতো কিনবি না? চল চল ওই সামনেই ভালো দোকান আছে।
তন্নির হাত ধরে বলে।
অর্ণব ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। এটাই বাকি ছিলো৷
” কাবারের হাড্ডি না হলে তোর চলে না?
গম্ভীর গলায় বলে অর্ণব। অথৈ তাকায় অর্ণবের দিকে৷ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। এই হাসিটাই তন্নি ভালোবাসে। অথৈ হাসলে তার ঠোঁটের একপাশে একটুখানি গর্ত হয়ে যায়। যেটা অথৈয়ের কিউটনেস আরও বাড়িয়ে দেয়।
তন্নির ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে ওঠে।
অথৈ তার কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো একটু টেনে ঠিক করে নেয়। নীল লেডিস শার্টের কলার টেনে অর্ণবের দিকে একটুখানি ঝুঁকে বলে
“ব্রো একটা দিন কিন্তু চলে গেলো। বাকি ছয় দিন। লেটস ট্রাই
আমার কিউট সুইট তন্নি কিন্তু হাত ফোঁস আরেক বেডার হাত ধরে ফেলবে।
বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলে অথৈ। অর্নব চোখ পাকিয়ে তাকায়।
” তুই কি আমার বোন?
“আপাতত না। তন্নির জান।
” সব সামনে থেকে তোর গা থেকে পঁচা গন্ধ আসছে।
“তাহলে বোঝ
আমার তন্নি কিভাবে তোকে সয্য করে।
তোর পারফিউম এতোটাই বাজে। তোকে জাস্ট বোঝানোর জন্য চুরি করে একটুখানি মেখেছিলাম আজকে।
তন্নির থেকে ডিসটেন্স মেইনটেইন করে চলবি।
অর্ণব দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাজ করে তাকায় অথৈয়ের দিকে। ডিরেক্টলি অর্ণবকে অপমান করলো?
” তোকে আজকে আমি
অর্ণব গাড়ি থেকে নামতে নামতে অথৈ তন্নির হাত ধরে দৌড় দেয়।
কেনাকাটা শেষ করে বেরিয়ে দেখে অর্ণব এখনো ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। অথৈ ঠোঁট টিপে হাসে। ভাই যে তার পুরোপুরি তন্নিতে মজে গেছে ভালোই বুঝতে পারছে।
তন্নি অথৈয়ের দিকে তাকায়
“তোর ভাই এমন কেনো করে?
” কেনো আবার চুমু টুমু দিছে না কি?
অথৈ ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে।
“আবার চুমু দিতে আসলে মুখ সেলাই করে দিবো আমি।
” সুঁই সুতো নিয়ে আমি তোর পেছনে আছি।
অথৈ হেসে বলে।
অর্ণব ওদের দেখে নেমে আসে।
“এতোখন লাগে কেনাকাটা করতে?
তন্নি মুখ বাঁকিয়ে বলে।
” সাগর ভাই আসছিলো তো। তার সাথে ডেটিং এ গেছিলাম।
অর্ণব রেগে তন্নির দিকে দু পা এগিয়ে আসে।
“জাস্ট ইমাজিন
তোমার মুখটা আমি ভেঙে দিয়েছি। তখন তুমি সাগর নামটা মুখে নিবে কিভাবে?
তন্নি গাল ফুলিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে। অথৈ তাকিয়ে আছে খানিকটা দূরে সাগর বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে পেছন ফিরে। কারো সাথে কথা বলছে।
অর্ণব মাথায় টোকা দেয় অথৈয়ের। অথৈ চোখ ফিরিয়ে নেয়।।
” গাড়িতে বস ওইদিকে কি?
অথৈ শেষবার সাগরের দিকে তাকিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। তন্নি গাড়িতে থাকা ছোট আয়নাটায় অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটার চোখ মুখ শক্ত। কোনো দিক না তাকিয়ে সোজা ড্রাইভ করে যাচ্ছে।
তন্নি মনে মনে ভাবে সাগর বলার জন্যই কি এতোটা রেগে গেছে?
অথৈ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
খানিকক্ষণের মধ্যেই ওরা চলে আসে অথৈদের বাসার সামনে।
“আমি বাসায় যাবো অথৈ।
” না না আমি আন্টিকে কল করে বলে দিয়েছি আজকে তুই বাসায় যাবি না। সারপ্রাইজ আছে তন্নি।
অথৈ তন্নির হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে তারাহুরো করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।
“জলদি আয়”
বলেই সে চলে যায়। অর্ণব সোজা হয়ে বসে আছে। তন্নি অর্ণবের দিকে এক পলক তাকিয়ে নামতে যায়। তখনই অর্ণব শক্ত গলায় বলে ওঠে
“সাগরকে খুব পছন্দ?
তন্নি এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো। জানা ছিলো এমন প্রশ্নই করা হবে।
তাই সে আয়েশ করে বসে। কিছু কথা বলবে অর্ণবকে। আর কথা গুলো সাজিয়েও নিয়েছে ভেতরে ভেতরে।
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলা শুরু করে
” দেখুন
অর্ণব হুট করে সিট টপকে পেছনে চলে আসে। তন্নির মুখোমুখি বসে। সেও আগ্রহ নিয়ে শুনতে চায়। তন্নি চমকে ওঠে। পরে ভেবে নেয় লোকটা তো এমনই।
“আপনার সাথে আমাকে কখনোই মানায় না। আপনি হয়ত আমার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।
অর্ণব গালে হাত দিয়ে বলে
” তুমি সুন্দর?
তন্নি হকচকিয়ে যায়।
“কোনো রকম তো।
” একটুও সুন্দর না তুমি। তোমার থেকে ঐশ্বরিয়া বেশি সুন্দর।
তন্নি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“আমি সুন্দর না। কিন্তু তবুও আপনি আমায় বিয়ে করতে চাইছেন।
” কবে চাইলাম?
অর্ণব কপালে ভাজ ফেলে বলে। তন্নি আবার অপ্রস্তুত হয়ে যায়।
“পাল্টিবাজ কোথাকার।
সেইদিন চাইছেন।
” চাই নি কখনোই।
তোমাকে আমি অনির মাম্মা বানাতে চেয়েছি।
“ওই তো একই হলো।
” হলো না
ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা কি এক?
“আপনি একটা যা ইচ্ছে তাই।
কিচ্ছু বলার নাই আপনাকে।
” তাহলে চুপচাপ হয়ে যাও অনির মাম্মা। অনি দ্রুত আসতে চাইছে। নিজের মেয়ের সাথে শত্রুতা করো না। অনি সয্য করলেও আমি কিন্তু করবো না।
তন্নি নামতে যায়। অর্ণব তন্নির হাত ধরে।
তন্নি চোখ পাকিয়ে তাকায় অর্ণবের দিকে।
অর্ণব তন্নির হাতটা নিজের বুকের বা পাশে রাখে।
“এমনিতে তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই। শুধুমাত্র অনির কথা ভেবে একটুখানি ছ্যাঁছড়ামি করি।
অনি একবার চলে আসুক। তারপর তোমাকে চিড়িয়াখানায় রেখে আসবো।
বলতে বলতে মুখটা তন্নির মুখের দিকে এগিয়ে নেয়। খুব কাছাকাছি আসতেই তন্নি অর্ণবকে ধাক্কা দিয়ে নেমে যায়।
” শয়তান বেডা
অর্ণব ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলে।
চলবে…..