#মায়াবতী
#পর্ব:৩৪
#তানিশা সুলতানা
সাগর প্রস্তুত ছিলো অর্ণবের মুখোমুখি হওয়ার। কিছু কথা সে অর্ণবকে বলতে চায়।
অর্ণবের হাতের মুঠোয় তন্নির হাতটা দেখে হৃদয় কেঁপে ওঠে সাগরের। মুহুর্তটা ভয়াবহ। কিন্তু পরিস্থিতি এমনই। মেনো নিতেই হবে।
তন্নির মুখটা কালো। ভয়ে সে চুপসে গেছে। অথৈয়ের মুখটা আরও চুপসানো।
সাগর বাইক থেকে নামে।
অর্ণবের মুখোমুখি দাঁড়ায়।
“অথৈ তন্নিকে নিয়ে গাড়িতে বসো। আমি ভাইয়ার সাথে কিছু কথা বলবো।
অথৈ অর্ণবের মুখের দিকে তাকায়। অর্ণব না বলা পর্যন্ত সে নরতে পারবে না। অর্ণব শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে সাগরের দিকে।
সাগর ফোঁস করে শ্বাস টানে
” ভাইয়া ওদের যেতে বলেন। আমি চাইছি না আমাদের ঝামেলায় ওরা থাকুক। বেপারটা আমার জন্য লজ্জাজনক।
অর্ণব তন্নির হাত ছেড়ে দেয়। অথৈ তন্নিকে নিয়ে চলে যায় গাড়িতে।
সাগর বড় গাছটার আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। অর্ণবও পেছন পেছন গিয়ে দাঁড়ায়।
“আমি তন্নিকে ভালোবাসি।
সাথে সাথে অর্ণব সাগরের নাক বরাবর ঘু*ষি মেয়ে দেয়। নাক দিয়ে মুহুর্তেই র*ক্ত চলে আসে সাগরের। তন্নি আর অথৈ চমকে ওঠে।
সাগর বা হাতের বুড়ো আঙুল দিলে রক্ত মুছে বাঁকা হাসে।
“পাল্টা একটা ঘুষি আমিও দিতে পারতাম। শক্তি আমারও আছে। কিন্তু কেনো দিলাম না জানেন? তন্নি কষ্ট পাবে তাই।
আপনার আর আমার ভালোবাসার মধ্যে এইটুকুই ডিফারেন্স। আমি অলওয়েজ চিন্তা করি তন্নি কষ্ট পাবে না তো?
আর আপনি তন্নির চিন্তা করেনই না। সারাক্ষণ নিজের যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করেন। ইটস নট ফেয়ার ভাইয়া।
অর্ণব শক্ত গলায় বলে
” আমি কি করবো না করবো
এখন সেটা তুমি শিখাবে আমায়?
সাগর মলিন হাসে।
“আপনি খুব লাকী ভাইয়া। আমি মোনাজাতে চেয়েও যাকে পাই নি আপনি ফ্রী তেই তাকে পেয়ে গেছেন। আপনাকে কিছু শেখাতে চাইছি না আমি। শুধু এইটুকু বলতে চাইছি। সব সময় মাথা ঠান্ডা রাখবেন। ভেবে চিন্তা কাজ করবেন। তন্নিকে গুরুত্ব দেবেন। মেয়েটা ভালোবাসার কাঙাল। তাকে কখনোই অপমানিত হতে দিবেন না।
অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। আরও একটা ঘুষি দেবে সাগরকে এটাই তার মত। কিন্তু হাত উঁচু করতেই তন্নি হাতটা ধরে ফেলে।
অর্ণবের মন বুঝতে পেরেই সে চলে এসেছে।
অর্ণব রাগী দৃষ্টিতে তাকায় তন্নির দিকে। সাগর মলিন চোখে তাকিয়ে আছে।
অথৈও পেছন পেছন নেমে আসে।
” আপনার থেকে আমি এমনটা আশা করি নি অর্ণব। আমি না চাইলে উনি কখনোই জোর করে আমাকে বাইক তুলতে পারতো না।
সেই হিসেবে আমিও দোষী। আপনি আমাকে মারুন। কিন্তু ওনার গায়ে আর একবারও হাত তুলবেন না।
তন্নির চোখে পানি টলমল করছে। অর্ণব ঝাড়া দিয়ে তন্নির থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। তন্নির দিকে পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে। তন্নির ওপর হাত ওঠাতে চায় না সে।
এবার তন্নি হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে সাগরকে বলতে থাকে।
“আমাকে ক্ষমা করবেন সাগর ভাইয়া। কি বলুন তো?
ভালোবেসে বড্ড বেশি ভুল করে ফেলেছি। তাই সবাই মিলে এখন নাচাচ্ছে আমায়। আধভাঙ্গা জীবন ছিলো, আত্মসম্মানটাই সেই জীবনের মূল অবলম্বন ছিলো। এখন সেই টুকুও রইলো না।
অথৈ তন্নির কাঁধে হাত রাখে। সাগরের নিজেকেই বড্ড বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে। খুব কি দরকার ছিলো তন্নিকে বাইকে বসানোর? এই পরিস্থিতির জন্য সাগর দায়ী।
তন্নির কথা শুনে সাগরের রাগ আরও বেরে যায়। সে তন্নির দিকে ঘুরে চিল্লিয়ে বলতে থাকে
” তোকে হাজারবার বলেছি ওই শু…………বাচ্চা তোকে পছন্দ করে। তুই তার থেকে দূরে থাকবি। তুই শুনলি না আমার কথা। কয়টা লাগে তোর?
কিসে কম রেখেছি? আরে একবার মুখ ফুটে বলতিস তোর বাইক পছন্দ। মুহুর্তেই তোর সামনে হাজির করতাম।
আশেপাশের মানুষজন দাঁড়িয়ে যায়। সবাই ওদের দেখছে। লজ্জায় তন্নির কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সাগর মাথা নিচু করে আছে। তার চোখে পানি টলমল করছে। তার জন্য আজকে তার ভালোবাসা অপমানিত হচ্ছে।
“ছিহহহহ
ছিহহহহ
তন্নি দৌড়ে ওখান থেকে চলে যায়। তার বুকের ভেতর ঝড় বইছে। অর্ণব কি করে তাকে অপমান করতে পারলো? কি করে?
অথৈ ভেজা চোখে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলে
” আমার তন্নির থেকে দূরে থাকবি তুই।
বলে অথৈ ও চলে যায়। সাগর হাঁটু মুরে বসে পড়ে।
___
নিধিকে এনেছে আশা বেগম। নিধির সাথে কথা বলবে। কেনো সে অর্ণবকে এতো লাই দিচ্ছে? বিয়ের জন্য কেনো চাপ দিচ্ছে না।
আনোয়ার ছেলের জন্য বাইক কিনে সেটা বাড়ির সামনে রেখে বাড়িতে আসে।
আশাকে ডেকে ঠান্ডা পানি দিতে বলে। আজকে রোদটা একটু বেশেই কড়া ছিলো। আর গরমটাও প্রচন্ড।
নিধিকে কিচেনে বসিয়ে আশা শরবত বানাতে থাকে।
এমন সময় অর্ণব হুরমুরিয়ে ঢুকে যায়। আনোয়ারের সামনে থাকা কাঁচের টি-টেবিল এক লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলে। আনোয়ার লাফ দিয়ে সোফায় উঠে যায়।
আশা আর নিধি দৌড়ে আসে। আশা কাঁপা-কাঁপা গলায় অর্ণবকে জিজ্ঞেস করে
“কি হয়েছে আব্বা?
অর্ণব চিৎকার করে বলে
” অথৈয়ের তন্নিকে আমি বিয়ে করেছি। ভালোবাসি তাকে আমি। ওকে এনে দাও আমায়। আমার এখুনি চায় অথৈয়ের তন্নিকে। আমার তাকে লাগবে।
আশার চোখদুটো বড়বড় হয়ে যায়। বিয়ে করেছে মানে? নিধি দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে শান্ত করে৷
এমনটাই আন্দাজ করেছিলো সে।
আনোয়ার আশার দিকে তাকায়।
অর্ণব বাবা মায়ের কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে আবারও বলে ওঠে
“দুই ঘন্টার মধ্যে অনির মাম্মাকে এখানে এনে হাজির করবা তোমরা।
আমি তুলে আনতে চাইছি না। দুই পরও যদি ওকে এখানে না দেখি তাহলে আগুন জ্বালিয়ে দিবো আমি এই বাড়িতে।
আশা ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। আনোয়ার শুকনো ঢোক গিলে।
অর্ণব এবার চিৎকার করে দারোয়ানকে ডাকে। সে দৌড়ে আসে।
আনোয়ারের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে সেখান থেকে কিছু টাকা নিয়ে সেই টাকা দারোয়ানের হাতে দেয় অর্ণব৷
” বাজারে যত গাঁধা আর গোলাপ আছে নিয়ে আসো। রেড, ইয়েলো, ব্লাক যত কালার গোলাপ আছে সব আনবা।
দারোয়ান টাকা হাতে নিয়ে দৌড়ে চলে যায়।
“নিধি আর্থি আর অথৈকে সাথে নিয়ে ফুলসজ্জার খাটটা সাজিয়ে দিবা।
বলেই সে হনহনিয়ে চলে যায়। নিধি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে তাকিয়ে থাকে।
আনোয়ার বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ে। তার ছেলেই পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি যে প্রাক্তনকে দিয়ে নিজের বাসর খাট সাজাচ্ছে।
ইতিহাসের পাতায় অর্ণব নামটা বড়বড় করে লিখে রাখা উচিত।
চলবে