মায়াবতী
পর্ব:৪৪
তানিশা সুলতানা
নিঃসন্দেহে অথৈ একজন যত্নশীল মেয়ে। সে খুব যত্ন নিয়ে সাগরের শরীর মুছিয়ে দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে তার হাত কেঁপে উঠছে। নার্ভাস হচ্ছে। এটা সাগর বুঝতে পারছে। কিন্তু অথৈ স্বীকার করতে নারাজ। সে শক্ত হয়ে তার কাজ করে যাচ্ছে।
বুকের বা পাশে খানিকটা ছিলে গেছে। সেখানে ফু দিয়ে মুছে দেয়। সাগর একটু হাসে।
মেয়েটাকে এখন আর বাচ্চাবাচ্চা লাগছে না। শাড়ি পড়ে বেশ বড়বড় লাগছে। সামনের কপাল সমান কাটা চুল গুলো বড় হয়ে গেছে। চুল গুলো একটু এলোমেলো। হয়ত অনেক দিন পার্লারে যায় না। মেয়েটার যত শখ সব চুলের ওপর। সে কখনো পার্লারে মুখ ফেসিয়াল করে নি। এমনিতেই সুন্দর সে। কিন্তু চুল?
চুলকে কেটে কুটে রং করে একাকার করে ফেলে। যেটা সাগরের ভালো লাগে না। আগেও বলতে চেয়েছে কিন্তু কি ভাববে ভেবে বলে নি।
গা মোছানো হয়ে গেলে অথৈ বালতি টেনে পানি ফেলে দিয়ে আসে। এই টুকুতেই হাঁপিয়ে গেছে মেয়েটা।
সাগর একা একা শার্ট পড়ার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। শেষে বাধ্য হয়েই অথৈয়ের জন্য অপেক্ষা করে।
অথৈ হাত মুখ ধুয়ে আসে। মুখে তার বিন্দু বিন্দু পানি লেগে আছে। সে এসে সাগরকে শার্ট পড়িয়ে দেয়। তারপর চিরুনি এনে আস্তে আস্তে চুল ঠিকঠাক করে দেয়।
সাগর বলে ওঠে
“এতো যত্নশীল কবে হলে?
” আগে থেকেই ছিলাম। কিন্তু মানুষটা আমার ছিলো না।
“এখন হয়েছে কি?
অথৈ হাসে। সাগরের কপালের ব্যান্ডেজের ওপর আলতো করে হাত বুলিয়ে বলে
” ইয়েস পার্মানেন্টি
“সিরিয়াসলি?
অথৈয়ের হাসি মুখটা কালো হয়ে যায়। সিরিয়াসলি বলে কি বুঝাতে চাচ্ছে? পার্মানেন্টলি হয় নি? ভালোবাসে না বলে এভাবে বলছে?
” আমার ভালোবাসা টালোবাসার দরকার নাই। সেসব না হয় তন্নির জন্য থাক৷ আপনি শুধু আমার নামের শুরুতে আপনার নামটা লিখতে পারলেই হলো। আর কিচ্ছু লাগবে না।
সাগর অবাক হয়। মেয়েটা বড্ড বড়বড় কথা বলতে জানে।
“খিধে পেয়েছে।
অথৈ তারাহুরো করে খাবারের থালা হাতে নেয়। সুন্দর করে ভাত মেখে সাগরের মুখের সামনে ধরে।
” চামচ দিলে আমি একাই খেতে পারতাম।
অথৈ মাথা নিচু করে বলে
“আমাদের বাড়িতে চামচ নেই।
” তাহলে কি আছে?
“অথৈয়ের হাত
সাগর মুচকি হেসে খাবার মুখে নেয়। অথৈ বিশ্বজয়ের হাসি হাসে।
কিন্তু পরমুহূর্তেই মন খারাপ হয়ে যায়। অথৈ যে খায় নি সেই দিকে তো খেয়াল দিলো না সাগর? একবারও তো জিজ্ঞেস করলো না ” অথৈ তুমি খেয়েছো? আজকে এখানে তন্নি থাকলে ঠিকই জিজ্ঞেস করতো।
কয়েক লোকমা খাওয়ার পরে সাগর বলে
“আর খেতে পারবো না।
” এইটুকুতে তো পেট ভরলো না আপনার।
“এই খাবারটা তুমি শেষ করো। বরের এঁটো খেলে ভালোবাসা বাড়ে।
তারপর আমাকে সুপ বানিয়ে দাও।
শক্ত খাবার গিলতে কষ্ট হচ্ছে।
অথৈ সাথে সাথে খেতে শুরু করে।
” আরে আরে বসে খাও
অথৈ সাগরের পাশে বসে। তারপর খেতে থাকে। সাগর বা হাত দিয়ে অথৈকে পানি ভরে দেয় গ্লাসে। কারণ তার মনে হচ্ছিলো এখনই গলায় আটকাবে খাবার। হলোও তাই। অথৈ কেশে ওঠে।
সাগর পানি এগিয়ে দেয়।
“আস্তে খাও ইডিয়ট
অথৈ ঢক ঢক করে পানি খেয়ে নেয়। সাগর অথৈয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। পানি খেয়ে অথৈ শান্ত হয়। গ্লাস নামিয়ে সাগরের দিকে তাকায়।
” আমাকে এরকমই কেয়ার করবেন। আর একটু বেশি বেশি কেমন?
আমি আপনার বউ
সাগর ভ্রু কুচকে তাকায়।
“এভাবে তাকাবেন না। আমি আপনার বউ।
” যাও সুপ বানিয়ে আনো। খেয়ে ঔষধ খেতে হবে।
“হুমম যাচ্ছি আমি আপনার বউ।
বলেই অথৈ চলে যায়। সাগর হেসে ফেলে
” পাগল মেয়ে।
তখনই মনে পড়ে তন্নির কথা। তন্নি খেয়েছে? সে কি করছে এখন? অথৈয়ের সামনে আর তন্নির নামটা উচ্চারণ করা যাবে না। মেয়েটা কষ্ট পায়। মেয়েটাকে কষ্ট দেওয়া ঠিক হবে না। সে যে খুব ভালোবাসে সাগরকে।
__
অর্ণব তন্নির পাশে গিয়ে বসে। তন্নি গাল ফুলিয়ে আছে।
“তন
অর্ণবের কথা শেষ হওয়ার আগেই তন্নি অর্ণবের কলার টেনে ধরে
” আমি অনির মাম্মা। তন্নি বলবে মুখ সেলাই করে দিবো।
অর্ণব বাঁকা হাসে। তন্নির কোমর জড়িয়ে ধরে
‘বাহহ খুব সাহস বেড়ে গেছে দেখছি।
“বাড়বে না?
” বাড়বে কেনো?
“বলুন কি হয়েছে?
” মেয়ে হয়েছে।
“ধ্যাত
তন্নি অর্ণবের থেকে সরে যায়।
অর্ণব টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে।
” যাও আর্থির রুমে।
তন্নি আরও শক্ত হয়ে বসে বলে।
“যাবো না।
” সিরিয়াসলি?
“ইয়েস
তখন আশা বেগম আসে অর্ণবের রুমে। সে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলে
” খেয়ে যা আব্বা
অর্নব লাফ দিয়ে উঠে বসে বলে
“তোমার আম্মাকে খেতে বলবে না?
আশা তন্নির দিকে আড়চোখে তাকায় এক পলক।
” এসো
খেয়ে বাসায় যাও। তোমার মা চিন্তা করবে।
“মাম্মা শুনো না
বলতে বলতে উঠে মায়ের কাছে যায়। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আশা বেগমকে।
” মাম্মা তোমার একটা সুইট কিউট নাতনি চাই না? ছোট ছোট হাত পা নেড়ে তোমার সাথে খেলা করবে? ভালো হবে না?
তন্নি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। আশা অর্ণবের সরিয়ে দেয়।
“তুই চাইলে ভালোই হবে।
অর্ণব হাসে।
” অনির মাম্মা যাও মাম্মার সাথে খেতে যাও। দুজন এক সাথে খাবে। আর বাকি কাজ মাম্মার হাতে হাতে করে দিবে।
আশা বলে
“কোনো কাজ পড়ে নেই।
” থালাবাসন ধোঁয়া বাকি আছে। জানি আমি।
আশা চলে যায়। তন্নি অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে।
“মাম্মা তোমার ওপর অসন্তুষ্ট। মাম্মাকে খুশি করো।
” পারবো না
তন্নি মুখ ঘুরিয়ে বলে
অর্ণব তন্নির পাশে গিয়ে বসে
“পারতে হবে অনির মাম্মা। বউ আর মা দুজনকেই হ্যাপি রাখতে চাই আমি। আর চাই তোমার বাবা দেশে আসার আগে আমার মাম্মা আমার মতোই তোমাকে ভালোবাসুক। দেন আরামসে বিয়ে করে আরামসে সংসার করবো।
তন্নি ভেংচি কাটে। অর্ণব তন্নির দুই গালে হাত দেয়। যত্ন করে তন্নির কপালে চুমু খায়।
” ভেংচি না মায়াবতী। আমার কথা শুনবে৷
চলবে