মায়াবতী পর্ব ৬
তানিশা সুলতানা
নিধি মেয়েটার সাথে অর্ণবের সম্পর্ক পাঁচ বছরের। দুই বছর ফ্রেন্ড শিপ আর তিন বছর রিলেশনের।
মূলত অর্ণব বিদেশে যাওয়ার পরেই রিলেশন হয়েছে দুজনের।
আগের নিধি আর এখনকার নিধির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। আগের নিধি ছিলো সাধারণ। কামিজ পড়ে দুই কাঁধে ব্যাগ চাপিয়ে চোখে মোটা করে কাজল টেনে অর্ণবের সামনে আসতো। মুখে থাকতো লাজুক হাসি।
ভালো লাগতো অর্ণবের।
কিন্তু বিদেশ থেকে ফিরে নিধির সাথে দেখা করার পরে কেনো জানি ভালো লাগলো না।
তবে মানিয়ে নিয়েছে। ভালোবাসা তো। চরিত্র, পছন্দ, কথা বলার ধরণ, জামাকাপড়ের ধরণ পাল্টেছে। কিন্তু ভালোবাসা তো পাল্টে নি।
অর্ণব খুব প্রসেসিভ একজন মানুষ। সে নিজের পার্সোনাল লাইফ সম্পর্কে কখনোই কোনো বন্ধু বান্ধবের সাথে ডিসকাস করে না।
অর্ণব ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে। এখনো চোখের সামনে তন্নির চুল খোপা করার দৃশ্যটা ভাসছে। ইচ্ছে করছে ছুটে চলে যেতে তন্নির কাছে। কোমর জড়িয়ে চোখে চোখ রাখতে।
কয়েক মিনিটের ব্যবধানে কি হয়ে গেলো এটা? অর্ণব কি ক্রাশ খেলো? এরকম তো কখনো হয় নি। কি আছে ওই মেয়েটার মাঝে?
কি করলো মেয়েটা?
চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস টানে অর্ণব। অদ্ভুত যন্ত্রণা হচ্ছে। বুকটা এখনো কাঁপছে। হৃদপিণ্ড লাফাচ্ছে। অদ্ভুত সব ইচ্ছেরা মস্তিষ্কে হানা দিচ্ছে।
কাউকে একবার দেখাতে এমন হতে পারে?
এই মেয়েটাকে তো আগেও দেখেছে অর্ণব। তবুও কেনো মনে হচ্ছে আজকেই প্রথম দেখলো?
নিজেকে শান্ত করতে ফোন হাতে বেলকানিতে যায়।
উদ্দেশ্য নিধির সাথে কথা বলে মনকে শান্ত করা। নিধিকে ভিডিও কল দিবে তখনই চোখ পড়ে বাগানে। সেখানে তন্নিকে বিভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড় করিয়ে পিক তুলে দিচ্ছে আর্থি। মেয়েটাও খুব সুন্দর পোস দিচ্ছে। খিলখিল করে হাসছে। নিধিকে কল করার কথা ভুলেই যায় অর্ণব।রেলিং এ দুই হাত ঠেকিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে তন্নিকে।
“তন্নি চল চল
এমনিতেই অনেকটা লেট হয়ে গেছে।
অথৈ তারাহুরো করে শাড়ির কুঁচি ধরে বের হতে হতে বলে।
অর্ণব চমকে ওঠে। তন্নির থেকে চোখ ফিরিয়ে তাকায় অথৈয়ের দিকে।
” হেই পেত্নী আর অথৈয়ের তন্নি
জাস্ট ফাইভ মিনিট ওয়েট করো।
আমি আসছি।
অর্ণব নিজের বেলকনি থেকে চিৎকার করে বলে। তন্নি চমকে এক পলক তাকিয়ে নেয়। অর্ণব তাকিয়েই ছিলো তাই চোখাচোখি হয়ে যায়। অথৈ ছোটছোট চোখ করে তাকায় অর্ণবের দিকে।
“তোর না আজকে নিধিপুর সাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা? তুই এখনো বাড়িতে যে?
অথৈ বুকে হাত গুঁজে বলে।
” আসছি আমি।
অর্ণব অথৈয়ের কথা কানে না তুলে বলে। আর্থি বোনের দিকে তাকায়।
“নিধিপু কে?
” আমাদের ভাবি। গুণোধর ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড। দারুণ দেখতে কিন্তু। কাল মিট করিয়েছে আমায়।
অথৈ হেসে বলে।
“আমাকে করালো না?
আর্থি মন খারাপ করে বলে।
” কালকেই বাড়িতে নিয়ে আসবো আমি। তখন সবার সাথেই দেখা হয়ে যাবে। বাবা মাকেও দেখানো হয়ে যাবে।
“এটা দারুণ। শেষমেষ ভাইয়ের বিয়ে খাবো বল?
” হ্যাঁ।তা তো খাবোই। ভাবিও পাবো ফ্রীতে।
দুই বোন হেসে ওঠে। তন্নি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণব কেনো যাবে সাথে? তন্নির বেশ লজ্জা করছে। কেনো জানি মনে হচ্ছে লোকটা তন্নিকে গভীর ভাবে দেখছে।
“অথৈ চল না আজ রিকশা করে যাই। গাড়িতে আমার ভালো লাগে না। মাথা ঘুরে।
তন্নি রিনরিনিয়ে বলে।
“এটা কোনো বেপার হলো? তুই সামনে বসিস তাই আর মাথা ঘুরবে না।
অথৈ তন্নির চুলে ফুল গুঁজে দিয়ে বলে৷
” চুল খোঁপা করে নেই? তারপর ফুল লাগিয়ে দিস।
বলেই ফুলটা খুলতে যায় তন্নি।
“কাকের বাসার মতো চুল খোপা করে মানুষকে বিরক্ত করতে চাইছো?
অর্ণব পেছন থেকে বলে ওঠে। চমকে মাথা থেকে হাত নামিয়ে ফেলে তন্নি।
” তন্নির চুল প্রচন্ড সফট স্লিক আর লম্বা। এই রকম চুল হাজারে একজনের থাকে। তুই সেটাকে কাকের বাসা বলছিস? চোখ কি আছে তোর?
আর্থি বুকে হাত গুঁজে বলে।
“সফট? দেখি কেমন?
অর্ণবের এমনিতেই তন্নির চুল গুলো একটু ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছিলো। তাই সুযোগ টা একদম হাত ছাড়া করলো না। ফট করে তন্নির চুল গুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। শরীরে একটুও টাচ লাগে না। তবুও তন্নি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। শ্বাস আটকে আসছে বেচারির। প্রচন্ড অস্বস্তিতে পড়ে গেছে।
অর্ণব ফট করেই চুল ছেড়ে দেয়।
” জলদি আয়।
বলেই এক প্রকার দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে যায়।
তন্নি বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস টানে।
“ভাই আমার পাগল হয়ে যাচ্ছে মনে হয়।
অথৈ হেসে বলে।
অর্ণব ড্রাইভিং সিটে বসে আছে।
” ভাইয়া তন্নির পেছনে বসলে মাথা ঘুরে। তোর পাশে বসুক?
অথৈ পেছনে বসতে বসতে বলে।
“না করেছি কখন?
বলেই দরজা খুলে দেয়। তন্নি শুকনো ঢোক গিলে কাচুমাচু হয়ে বসে পড়ে।
” চুল আর আঁচল ঠিক করো অথৈয়ের তন্নি।
তন্নি চমকে চুল আর আঁচল ঠিক করে নেয়।
“সিট বেল্ট বাঁধো।
তন্নি এবার বিপাকে পড়ে যায়। কারণ সে সিট বেল্ট বাঁধতে জানে না। আমতা আমতা করে শুকনো ঢোক গিলে।
ঘাড় ঘুড়িয়ে একবার পেছনে তাকায়। অথৈ কানে হেডফোন গুঁজে ভিডিও কলে কথা বলছে। তাকে তো ডিস্টার্ব করা যাবে না।
” অথৈয়ের তন্নি কিছু বলেছি আমি।
অর্ণব তন্নির মুখের সামনে হাত নারিয়ে বলে। তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে।
“আআমি পারি না।
তন্নির বলতে দেরি অর্ণবের ঝুঁকে সিট বেল্টে হাত দিতে দেরি নেই। তন্নি চমকে পেছনে সরতে যায়। কিন্তু পারে না। অর্ণব মনোযোগ দিয়ে সিটবেল্ট বাঁধে। তারপর সরে যায়।
তন্নির বুক ধুপধাপ করছে। হাই আল্লাহ এ কোন মসিবত?
এই লোকটা আজ এমন করছে কেনো?
” পারফিউমের স্মেলটা বাজে। শেম্পুটাও বাজে। শাড়িতে তোমাকে আরও বাজে লাগছে। চোখে কাজল দিয়ে একদম পারফেক্ট বাজে লাগছে।
সব গুলো বাজে মিলিয়ে আস্ত একটা মায়ার খনী।
নেক্সট টাইম এমন সেজে আমার সামনে আসবা না। নাহলে বড় গাছের সব থেকে উঁচু ডালে ঝু*লি*য়ে রাখবো তোমায়। মাইন্ড ইট।
গম্ভীর গলায় বলে গাড়ি স্ট্রাট করে করে অর্ণব।
তন্নির কান্না পায়। এতোটাই বাজে লাগছে ওকে? কলেজে যাওয়ার পরে যদি সবাই বাজে বলে। তখন কতোটা লজ্জা পাবে তন্নি। আর জীবনেও শাড়ি পড়বে না। জীবনেও না।
চোখের কুর্নিশ বয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে তন্নির। হাতের উল্টো পিঠে মুছে নেয়। অর্ণব আর চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
“বর একটু বেশি দুষ্টুমি করলেও কাঁদবে, কম করলেও কাঁদবে। ধমক দিলেও কাঁদবে, চুমু খেলেও কাঁদবে। সারাক্ষণ কাঁদতেই থাকবে। বেপারটা কিন্তু দারুণ? আই লাইক ইট।
মুহুর্তেই তন্নির কান্না থেমে যায়। চোখ দুটো ছোটছোট করে এক পলক তাকায় অর্ণবের দিকে।
” তাতে আপনার কি?
বিরবির করে বলে তন্নি।
চলবে….