মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি পর্ব ৭
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা
|৭|
জ্বীন মহাশয়ের পরিচয় পেয়ে তরুর মাঝে বিশেষ কোনো ভাবাবেগ দেখা গেলো না। তবে হৃদয়ের ভেতর যে ভূমিকম্পের সূচনা হয়েছিলো। তা ধীরে ধীরে রিখটার স্কেলের অংক পেরিয়ে অসীমে গিয়ে স্থির হলো। গায়ে ভর করলো জ্বলন্ত উনুনের ন্যায় অস্থিরতা৷ তরু দেওয়ালের এপাশের অন্ধকার থেকে ঘাড় কাত করে বসার ঘরে উঁকি দিলো। সাথে সাথেই চুড়োখোঁপা খুলে এলিয়ে পড়লো ভারী কেশের মেলা। সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট গায়ে চড়িয়ে একেবারে ভদ্র বাবু সেজে থাকা জ্বীন মহাশয় তখন সোফায় বসে জুতোর ফিতে খুলছেন। তরুর ভারী কেশ পতনের মিহি শব্দেই কী-না কে জানে? ফিতে খুলতে খুলতেই আলগোছে চোখ তুলে সিঁড়ির নিচের অন্ধকারে চাইলেন। মেঝেয় লুটোপুটি খাওয়া চুলের দিকে নজর স্থির রেখে ধীরে ধীরে তরুর মুখের উপর দৃষ্টি করলেন। একদম অপরিচিত সময়ে অপরিচিত দুটো মানুষের চোখে চোখ পড়লো। পরিচিতের সুতোয় দূরত্বটা অসীম হলেও সম্পর্কের সুতোয় সব থেকে কাছের মানুষ দুটো প্রথমবারের মতো একে-অপরকে দেখলো। উপন্যাসের পাতার মতো হাওয়া থমকে গেলো না। ফুলেল বর্ষণ হলো না। কেবল তরু জানলো, তার নিঃশ্বাস আটকে গেলো। খুব সাধারণ এক জোড়া চোখের নজর হৃদয়ে অদ্ভুত এক দোলা দিয়ে গেলো। এই মানুষটা তার! একান্তই নিজস্ব! তরুর মান, অপমান, লজ্জা আড়াল করার দায় কেবল এই পুরুষটির। তার পুরুষ। তার একার অধিকার। ইশ! কী আশ্চর্য অনুভূতি! অথচ মাহবুবের মাঝে কোনো হেলদোল নেই। এইযে তার প্রতিমার মতো সুন্দরী বউ দেওয়ালের এপাশ থেকে অধীর চোখে তাকে দেখছে তাতে সে মুহূর্তের জন্যও চমকালো না। এক নজর চেয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলো, দ্বিতীয়বার তাকালো না। যেন তরুর মতো সুন্দরী রমণী সে হরহামেশাই দেখছে। তরু এই বাড়ির আনাচেকানাচে ঘুরে বেড়াবে। রাত বারোটায় বরের শার্ট গায়ে চড়িয়ে ছাদে বসে জ্বীন হাজির করবে, এসব খুবই নিত্যনৈমত্তিক বিষয়। এতে চমকে যাওয়ার মতো কোনো ব্যাপার নেই। তরু ভ্রু কুঁচকে ফেললো। এই গরু মাহবুব তো শেয়ালের থেকেও ধূর্ত! তরুর সাথে বেশ আয়োজন করেই খেলায় নেমেছে। বেত্তমিজ! মাহবুব তরুর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি খেয়াল করলো না। হালকা কণ্ঠে শুধালো,
‘ তরু কোথায় মা? ঘুমিয়ে পড়েছে?’
তরুর প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হলো। এই প্রথম তার ঠোঁটের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। মাহবুবের সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকে তার সবকিছুই উলোটপালোট হচ্ছে। এই যেমন, তরু জানে সে চমকে দেওয়ার মতো সুন্দর। যেকোনো পুরুষকে ক্ষণে ক্ষণে চমকে দেওয়ার ক্ষমতা তরুর আছে। মাহবুবের চোখে সেই পরিচিত চমক দেখবে বলেই নিজেকে আড়াল করার বিন্দুমাত্র প্রচেষ্টা করেনি তরু। অথচ মাহবুব চমকালো না। মাহবুব যদি চমকে গিয়ে মিনিটখানেক দৃষ্টি ফেরাতে ভুলে যেতো তবে কী এমন ক্ষতি হতো? তরুর খুব অভিমান হলো। অভিমানে অভিমানে থমথমে হয়ে গেলো মুখ। শাশুড়ী মা চোখে-মুখে সহজ মায়া নিয়ে বললেন,
‘ তরু তো সেই সন্ধ্যাবেলায় ঘুমিয়ে গিয়েছে। শরীরটা বোধহয় ভালো নেই। খেতে ডেকেছিলাম, উঠেনি। ও তো জানে না তুই আসবি।’
মাহবুব কিছু বললো না। জুতো জোড়া খোলে পাশে গুছিয়ে রেখে বললো,
‘ আর সরব? সরবও ঘুমিয়েছে নাকি?’
‘ হ্যাঁ। ও তো দশটা বাজতেই বই-খাতা গুছিয়ে ঘুম। তার নাকি ঘুমিয়ে পড়াটা খুব দরকার। আজ থেকে ভোর রাতে উঠে পড়তে বসবে। বেশি রাত জেগে জেগেই নাকি তার মাথা আউলে গিয়েছে, অংক মনে থাকে না।’
মাহবুব ভ্রু কুঁচকে ফেললো। মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
‘ বাহ! সরব তো দেখি খুব ভদ্র হয়ে গিয়েছে আজকাল?’
বড়ো ভাইয়ের এমন মন্তব্যে ফ্যাকাশে হয়ে গেলো সরবের মুখ। ভাইয়া যে ঘরে ঢুকেই তাকে ভাবির পেছনে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফেলেছে, তা সরব জানে। সব জেনেশুনেই ভাইয়া এমন ঠাণ্ডা ব্যবহার করছে। হঠাৎ এতো ঠাণ্ডা ব্যবহারের পেছনে নিশ্চয় গভীর কোনো তাৎপর্য আছে। সরবের কপালের লিখন অনুযায়ী, নিশ্চয় গভীর কোনো মাইর আছে। সরবের গলা শুকিয়ে গেলো। বিরস কণ্ঠে বললো,
‘ কালকে হেব্বি একটা ঢলা খেতে চলেছি ভাবী। আমাকে অভিনন্দন জানাও।’
তরু চোখ-মুখ গম্ভীর করে অভিনন্দন জানালো। সরব ফিসফিস করে বললো,
‘ ভাবী? আমি ভাবছি, ভোর হতেই বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যাবো। ময়মনসিংহ থেকে বেরিয়ে পঞ্চগড়৷ পঞ্চগড় থেকে বর্ডার পাড় হয়ে একেবারে হিমালয়ে। এখানে কোনো শান্তি নেই। সবাই এই এক অংক বই নিয়ে পড়ে আছে। যেখানে একটা জ্বীন বন্দী করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় সেখানে কেন এতো বাড়াবাড়ি?’
তরু গম্ভীর মুখে মাথা নাড়লো। সে-ও বুঝতে পারছে না কেন এতো বাড়াবাড়ি? বাবা বিয়ে করতে বলেছে, বিয়ে করেছে। ব্যস! ফিনিশ। পৃথিবীর যেকোনো হাদা-গাধা তার স্বামী হতে পারতো। তরুর কোনো আপত্তি ছিলো না। সেখানে কেন তার বরকেই এতো চালাকচতুর হতে হলো? তরুর থেকেও বেশি চালাক চতুর? আর তরুরই-বা কেন দুই দিনের মাথায় বরের প্রেমে পড়ে হাড়গোর মটকে ফেলতে হলো? তাও আবার একেবারে কোলে উঠে বসতে চাওয়ার মতো প্রেম, অসহ্য! তরু গুনগুন করে গাইলো,
‘ সখী তোরা প্রেম করিও না।
পিরিতি ভালা না,
সখী তোরা করিও না।
পিরিত করছে যে জন,
জানে সে জন,
পিরিতের কী বেদনা…’
মাহবুবকে উঠে দাঁড়াতে দেখেই তরু-সরবের ফিসফিসানি বন্ধ হয়ে গেলো। সরব ভীত হয়ে তরুর আঁচল চেপে দাঁড়িয়ে রইলো। মাহবুব অবশ্য সেদিকে আর চাইলো না। মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো মা। আমি তরুকে ডাকছি, ও আমাকে খাবার দিয়ে দিবে।’
‘ ওকে আবার ডাকবি? মেয়েটা ঘুমোচ্ছে, ঘুমুক না?’
মাহবুব হাসলো,
‘ একদিন একটু কম ঘুমালে কিছু হবে না মা।’
মাহবুব নিজের ঘরে অদৃশ্য হয়ে যেতেই সোজা হয়ে দাঁড়ালো সরব। একটু উঁকিঝুঁকি দিয়ে বিস্ময় নিয়ে বললো,
‘ ভাইয়া যে আজ আমাকে একটা ধমকও দিলো না। আম্মুর কাছে ধরা খাইয়েও দিলো না, আশ্চর্য!’
তরু ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। সরবের বাহু জড়িয়ে ধরে রহস্যময় হাসি হেসে বললো,
‘ কোনো আশ্চর্য ফাশ্চর্য নয়। এটা হলো ভাবীর জাদু। বিয়ে করলেই ভাইয়েরা এমন চেঞ্জ হয়ে যায়। চিন্তা করো, যদি প্রেমে পড়ে তবে কী হবে?’
সরব ভাবনা চিন্তার আশেপাশেই গেলো না। তার সবকিছু ভেবে রাখা। সে ফট করেই বললো,
‘ আমার অনেক লাভ হবে। ভাইয়া তোমার প্রেমে পড়লে, সর্বপ্রথম আমি হিমালয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বদলে ফেলবো। তুমি আমাকে একটা ডিএসএলআর কিনে দিবে। তুমি দেখতে সুন্দর। ভাইয়া নিশ্চয় আজ রাতের মাঝেই তোমার প্রেমে পড়ে যাবে। অল দ্য বেস্ট ভাবী!’
সরবের কথায় আশ্চর্য হয়ে গেলো তরু। চোখ-মুখ গম্ভীর করে বললো,
‘ ধুর বোকা! প্রেম এতো সহজ নাকি? সুন্দর হলেই প্রেম হয় না। কাউকে প্রেমে ফেলতে হলো সাধনা করতে হয়। কঠিন সাধনা। এক রাতে কিছু হবে না। সাধনা করতে হবে।’
সরব উদাস চোখে চেয়ে রইলো৷ তার মানে হিমালয়ে তাকে যেতেই হবে। পরিকল্পনায় কোনো নড়চড় হবে না।
তরু শোবার ঘরে ফিরে গিয়ে সর্বপ্রথম যে সত্যটা আবিষ্কার করলো তা হলো, সরব ভয়াবহ মিথ্যেবাদী। মাহবুবের সাথে তার চেহারায় কোনো মিল নেই, কথাটা ভয়ংকর মিথ্যে কথা। নীরব-সরব নামে বৈপরীত্য থাকলেও তাদের চেহারাতে আশ্চর্য রকম মিল। দুই ভাইয়েরই জোড়া ভ্রু। তীক্ষ্ণ নাসা। দু’জনকে আলাদা আলাদাভাবে দেখলেও বুঝে ফেলা যাবে তাদের মধ্যকার সম্পর্কের কথা। তরু দীর্ঘশ্বাস ফেললো। শোবার ঘরে ঢুকে ধপ করে বিছানার উপর বসে পড়লো। গায়ে পেঁচিয়ে রাখা ওড়নাটা পাশে খুলে রেখে শার্টের উপরের বোতাম খুলে ফেললো। মাহবুব আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতঘড়ি খুলছিলো, তরুকে এমন ধুপধাপ করে আসতে দেখে চোখ তুলে আয়নায় তাকালো। তাকিয়ে রইলো অনেকটাক্ষণ। তরু আড়চোখে একবার চাইলো। থাকুক চেয়ে। স্কার্ট উঠে তার মোমের মতো পা বেরিয়ে এসেছে। আসুক বেরিয়ে। তরুর অভিমান তো এতো ঠুনকো না। যখন তাকানোর তখন না তাকিয়ে এখন তাকালেই সে তাকানোকে তরু নেবে কেনো? নেবে না৷ এই তাকানো বয়কট। তরু দুই হাতের উপর ভর ছেড়ে পা ঝুলাতে ঝুলাতে বললো,
‘ এইযে স্বামী, চলে তো এলে। আমার জন্য কী এনেছো?’
বরের সাথে প্রথম সাক্ষাতে নববধূর মুখে এরূপ আলাপে বর মহাশয়ের কিছুটা বিস্মিত হওয়া কর্তব্য। মাহবুব বোধহয় সে কর্তব্যকে খুব একটা গুরুত্ব দিলো না। শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বিস্মিত না হয়ে, যেন বহুকাল সংসার করে আসছে এমন আন্তরিক কণ্ঠে বললো,
‘ স্বামী এনেছি।’
তরু পা ঝুলানো বন্ধ করে আগ্রহ নিয়ে চাইলো। আলমারির পোশাক গুলোতে সে খুবই সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, সে সৃজনশীলতা সম্পর্কে ডিউটিওয়ালার ব্যক্তিগত মতামত জানতে আগ্রহী তরু। তরু মিহি কণ্ঠে শিষ বাজালো,
‘ একা ছিলাম, ছিলাম ভালো
ছিলো নাতো জ্বালা।
তোমার সনে প্রেম করিয়া,
অন্তর হইলো কালা।
একা ছিলাম, ছিলাম ভালো…’
মাহবুব অবশ্য তরুর কালা অন্তর নিয়ে কোনো রকম মন্তব্য করলো না। রাগ করলো না, খুশি হলো না, বিরক্তও হলো না। আলমারি বন্ধ করে সাথে আনা ব্যাগ থেকে সাদা রঙের একটা টি-শার্ট গায়ে চড়ালো। তরুর দিকে চেয়ে বললো,
‘ ফ্রেশ হয়ে ভাত খাবো, টেবিলে খাবার দাও তো। এই মুহূর্তে তোমার স্বামী প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত তরু।’
অত্যন্ত শ্লেষাত্মক কথা। তরুকে খোঁচা মারার হালকা প্রয়াস। অথচ মাহবুবের মুখে বিদ্রুপের লেশমাত্র নেই। তরুকে রাগাতে যে সে ইচ্ছে করেই সাদা টি-শার্টটা পরলো, সেই দুরন্তপনারও ছিটেখানি নেই মুখে। এমন শ্লেষাত্মক বাক্য ও কাণ্ড দুটোই সে ঘটালো খুব গম্ভীর মুখে। জোড়া ভ্রু’জোড়া কুঁচকে রইলো। ব্যাগ থেকে তোয়ালে বের করে ইচ্ছে করেই তরুর গা ছুঁই ছুঁই হয়ে ওয়াশরুমে গেলো। তরু বুঝলো, তরুকে প্রলুব্ধ করার প্রচেষ্টা। সবথেকে জঘন্য বিষয় হলো, এতোকিছু বুঝার পরও তরু প্রলুব্ধ হলো। দুশমন মন তরুকে না চেয়ে মাহবুবকে চাইলো। কোথা থেকে উড়ে এলো চিমটি খানেক লজ্জা। সাদা রঙের প্রতিও মমতায় গদগদ হয়ে উঠলো মন। ইশ, পিরিতি! বিরক্তিতে চোখ-মুখ লাল হয়ে গেলো তার। তরুর মাঝে রাগের সিস্টেম নেই। অথচ এই প্রথমবারের মতো রাগে তার শরীরটা জ্বলে গেলো। বিয়ের পর তার এতো অধঃপতন হবে জানলে সে কী কখনো এমন গরুমার্কা বিয়েটা করতো? কক্ষনো করতো না। নৈব নৈবচ!
তরু অপটু হাতে খাবার গুছালো টেবিলে। মাহবুব চেয়ার টেনে বসে নিজে নিজেই খাবার নিলো থালায়। নিজের জন্য নিয়ে অন্য একটি থালা টানতেই তরু বললো,
‘ তুমি খাও। আমি খাবো না।’
মাহবুব যেন তরুর কথা গ্রাহ্যই করলো না। অন্য থালাটা তার মুখোমুখি চেয়ারের সামনে রেখে নিজের খাবার নিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ পর তরুকে সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। আশ্চর্য হয়ে বললো,
‘ খাচ্ছো না কেন?’
তরুর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। নিজের ভেতর এতো এতো পরিবর্তনে কিছুটা বিস্মিতও হলো। মাহবুব খাওয়া শেষ করেই চুপচাপ উঠে গেলো। তরু খাবার টেবিল গুছিয়ে আসতে আসতে মাহবুব আলো নিভিয়ে ঘুমে বিভোর। তরু শান্ত চোখে বিছানার দিকে চাইলো। ক্ষণ কয়েক চেয়ে থেকে বিছানার পাশের জানালাটা খুলে দিলো। মাহবুবদের বাড়ির জানালাগুলো প্রাচীন কাঠের। বিশাল বিশাল তার পাট্টা। চৈত্রের মাঝরাত্তিরে কোথাও কোনো হাওয়া নেই। ভ্যাপসা গরম পুষিয়ে দিতে গাছের পাতা পর্যন্ত নড়ছে না। কেবল নিঃসঙ্গ চাঁদটা পলকহীন চোখে চেয়ে দেখছে তরুর পালঙ্কে শুয়ে থাকা পুরুষটিকে। তরু চাঁদের দিকে কড়া চোখে চাইলো৷ শয্যা কাঁপিয়ে শয্যায় গিয়ে বসলো। দীর্ঘ কেশের মেলা ছুঁড়ে দিলো পেছনে। উদ্দেশ্য মাহবুবকে বিরক্ত করা। তরুকে ব্যর্থ করে এবারও বিরক্ত হলো না মাহবুব। চুলগুলো আলগোছে সরিয়ে দিয়ে আগের মতোই একহাত বুকে আরেক হাত কপালের উপর রেখে টানটান হয়ে শুয়ে রইলো। নিঃসঙ্গ তরুর মন খারাপ হলো। বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে অনেকটা সময় নিয়ে আকাশ দেখলো৷ তরুর খুব আকাশ প্রিয়। সবথেকে প্রিয় অন্ধকার। বেশ কিছুক্ষণ এক ধ্যানে চেয়ে থেকে শোয়ার প্রস্তুতি নিতেই পাশে শুয়ে থাকা পুরুষের দিকে দৃষ্টি পড়লো। ছিপছিপে, মেদহীন, লম্বাদেহী পুরুষ। সুন্দর পুরুষ। কাটা কাটা নাক-মুখের উজ্জ্বল চেহারা। প্রশ্বস্ত কপালে মৃদু ঘামের ছাপ। তরু চিন্তিত মুখে পাখার দিকে চাইলো। ইশ! গরম লাগছে নাকি ওর? পাখা থেকে চোখ সরানোর আগেই একটা রুক্ষ হাত চেপে ধরলো তার কোমর। চোখের পলকে নিজের উপর টেনে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘ আমার শার্ট গায়ে তোমার বোধহয় খুব গরম লাগছে তরু। খুলে ফেলি?’
তরু হতভম্ব হয়ে গেলো। কথা হারিয়ে ফেললো। বিদ্রোহ করে বসলো কণ্ঠনালী, শরীর, মন। তরু কেবল বিড়বিড় করে বলতে পারলো, দুশমন মন! দুশমন মন! দুশমন মন!
#চলবে….